ওসিকে দেশে থাকতে না দেওয়ার হুমকি বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর
Published: 31st, March 2025 GMT
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মজিবুর রহমানকে দেশে থাকতে না দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আসলাম চৌধুরী। সোমবার সকালে সীতাকুণ্ড সরকারি আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ে মাঠে আয়োজিত ঈদের নামাজ আদায় করতে গিয়ে স্থানীয় মুসল্লিদের উদ্দেশে বক্তব্য দেওয়ার সময় এই হুঁশিয়ারি দেন তিনি। তাঁর এমন বক্তব্যের একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
গত বুধবার উপজেলার বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নে উপজেলা কৃষক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মো.
চার নেতাকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ঈদের নামাজ পড়তে আসা প্রশাসন, রাজনৈতিক ব্যক্তি ও স্থানীয় মুসল্লিদের উদ্দেশে বক্তব্য দিতে গিয়ে আসলাম চৌধুরী বলেন, ‘আমি থানা প্রশাসনকে বলতে চাই। বিশেষ করে আমাদের ওসি সাহেব। কিছুদিন আগে একটা মার্ডার ঘটেছে, নাসির হত্যা। এই হত্যার মামলাটা ওসি সাহেবের রুমে বসে পরিকল্পিতভাবে আমাদের কিছু লোককে ইচ্ছাকৃতভাবে আসামি করা হয়েছে। আমাদের দলের যে লোক হোক আপনি সঠিক আসামি চিহ্নিত করবেন। অন্যথায় আপনি কোনো প্রকার বায়াসড হয়ে মামলা করেন, আপনাকে আমি বলে দিচ্ছি এই ঈদগাহের মাধ্যমে। আপনি বাংলাদেশে থাকতে পারবেন না। যেখানেই থাকেন সেখান থেকেই আপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব ইনশাল্লাহ সামনের দিনগুলোতে। এই ছেলেগুলো বিগত অনেক সময় আমার সঙ্গে জেলে কাটিয়েছে। হ্যাঁ! তাদের অনেক ছোটখাটো অপকর্ম আছে। কয়েকজনের অনেক অপকর্ম আছে। আমি জানি তাদের এই অপকর্মগুলো এ রকম সিরিয়াস কোনো অপকর্ম তাদের নেই। সুতরাং ওসি সাহেব, বিষয়টি আমার মাথায় নিয়েছি আমি। আমাদের অনেক মিডিয়াও ইচ্ছাকৃতভাবে কথাগুলো অন্যায়ভাবে প্রচারণা করে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সীতাকুণ্ড থানার ওসি মো. মুজিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বাদীপক্ষ নিজেরা মামলা করেছে। এখানে তাঁদের (পুলিশের) কোনো ভূমিকা নেই। আর দেশে থাকতে দেওয়া হবে না এ ধরনের কথা (আসলাম চৌধুরী) বলেছেন কি না, তা জানা নেই। রাজনীতিবিদরা অনেক ধরনের রাজনৈতিক বক্তব্য দেন। এটি নিয়ে তাঁর কিছু বলার নেই। কাজটি অন্যায় নাকি ন্যায় করেছেন সেটি হচ্ছে মূল বিষয়।
অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে আসলাম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বাদীকে ডেকে নিয়ে প্রকৃত আসামিদের বাদ দিয়ে দলের নেতা-কর্মীদের আসামি করেছেন ওসি। তাই অন্যায়ভাবে কাউকে হয়রানি করা হলে, গ্রেপ্তার করা হলে দেশের যে জায়গায় থাকুক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন তিনি। দেশে থাকতে দেওয়া হবে না, এমন কথা বলেননি।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আসল ম চ ধ র ইউন য ন অপকর ম আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
ইনজেকশন পুশ করেন আয়া
আবদুল্লাহপুর ইউনিয়নের আসমা বেগম ঠান্ডায় আক্রান্ত এক দিন বয়সী শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। ব্যবস্থাপত্র নিয়ে নার্সের সন্ধানে গেলে জোসনা বেগম নামে এক নারী তাঁর সন্তানকে ইনজেকশন পুশ করেন। বিনিময়ে ২০০ টাকা দাবি করলে তাঁকে ১০০ টাকা দেওয়া হয়। পরে আসমা জানতে পারেন, নার্স পরিচয় দেওয়া জোসনা হাসপাতালের আয়া।
জাহানপুর ইউনিয়নের আবুল কাশেম ফরাজী এসেছিলেন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত সন্তানকে নিয়ে। তাঁর সন্তানকেও জোসনা বেগম স্যালাইন পুশ করেছেন।
শুধু আসমা বেগম বা কাশেম ফরাজীর ক্ষেত্রে নয়, চরফ্যাসন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা এমন অনেক রোগীকেই স্যালাইন ও ইনজেকশন পুশ করছেন জোসনা বেগম ও রোকেয়া বেগমের মতো আয়া-ঝাড়ুদার। বিষয়টি কয়েকজন চিকিৎসক ও নার্স স্বীকার করে বলেন, জনবল সংকটের সুযোগ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালে এ ধরনের কাজ চলছে।
আয়া জোসনা বেগম ও রোকেয়া বেগম জানান, নার্সদের কাছ থেকে ক্যানোলা ও স্যালাইন পুশ করা শিখেছি। রোগীর চাপ থাকলে তারা কুলিয়ে উঠতে পারেন না। তখন রোগীর স্বজনরাই ডেকে সাহায্য করতে বলেন। এতে তাদের উপকার হয়। তাই বিনিময়ে খুশি হয়ে টাকাও দেন।
উপজেলার সাত লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ২০২৩ সালে হাসপাতালটি ৫০ থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। বাড়ানো হয়নি জনবল ও অবকাঠামো। এ সুযোগে হাসপাতালে কর্মরত আয়া ও আউটসোর্সিং কর্মীরা অপকর্ম করে থাকেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের কয়েকজন কর্মচারী জানান, ১৭ জন নার্স রয়েছেন। এর পরও আয়া ও ঝাড়ুদার দিয়ে চলছে শিশু, কিশোর ও বয়স্কদের চিকিৎসাসেবা। কর্তব্যরত নার্সদের দায়িত্বে অবহেলার কারণেই রোগীরা না জেনে বা বাধ্য হয়ে আয়া ও ঝাড়ুদারের কাছ থেকে সেবা নিচ্ছেন। নার্সদের দাবি, রোগীর তুলনায় নার্স কম। এ কারণে রোগীর স্বজনরা না বুঝে আয়াদের শরণাপন্ন হন। আয়ারা তাদের না জানিয়ে গোপনে এসব অপকর্ম করছেন। কর্মতর্কাদের বিষয়টি জানালেও কোনো প্রতিকার মেলেনি।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. হানিফের অভিযোগ, রোগী এলে নার্সদর খুঁজে পাওয়া যায় না। পেলেও ২০০ থেকে ৩০০ টাকা ছাড়া সেবা দেন না। এ সুযোগে আয়া ও ঝাড়ুদাররা গ্রাম থেকে আসা সহজ-সরল মানুষকে ভুল বুঝিয়ে ১০০ টাকা নিয়ে স্যালাইন ও ইনজেকশন পুশ করছেন।
চরফ্যাসন হাসপাতালে দায়িত্বপ্রাপ্ত নার্স অপরাজিতা রানী জানান, জনবল সংকটের কারণে অনেক সময় আয়াদের সহায়তা নিতে হয়। তবে তারা নিজেরা একা এ কাজ করতে পারেন না। টাকা নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অনেকে সেবা পেয়ে নার্সদের খুশি হয়ে টাকা দিয়ে থাকেন। টাকা দিয়ে পরে কেউ অভিযোগ করলে কিছু করার নেই।
স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শোভন বসাক বলেন, আয়া বা ঝাড়ুদার এসব কাজ করতে পারেন না। বিষয়টি জানতে পেরে রোকেয়া বেগম নামে আউটসোর্সিংয়ের এক আয়াকে শোকজ নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তাঁর জবাব পেলে সে অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।