রান্নাঘরে চাল-ডাল ধুয়ে আজ সোমবার ঈদের দিন দুপুরে স্বামীর বাড়িতে খিচুড়ি রান্নার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন গৃহবধূ রুনা আক্তার (২১)। শেষ পর্যন্ত খিচুড়ি রান্না তো হলোই না, বেলা আড়াইটার দিকে বসতঘরের শয়নকক্ষে পাওয়া গেল তাঁর লাশ। খবর পেয়ে পুলিশ লাশটি উদ্ধার করেছে। চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ঠেটালিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত রুনার বাবার বাড়ির স্বজনদের দাবি, রুনাকে হত্যা করে আত্মহত্যার নাটক সাজিয়েছেন তাঁর স্বামী হাকিম মোল্লা ও তাঁর পরিবারের লোকজন। ঘটনার পর থেকে তাঁরা পালাতক।

নিহত রুনা আক্তার উপজেলার ঠেটালিয়া গ্রামের দোকানি হাকিম মোল্লার স্ত্রী। রুনার পৈতৃক বাড়ি উপজেলার রসুলপুর ঢাকুরকান্দি গ্রামে। ওই গ্রামের রফিক ভূঁইয়ার মেয়ে তিনি। কিছুদিন আগে হাকিম মোল্লার সঙ্গে রুনার বিয়ে হয়েছিল।

স্বজন, পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কিছুদিন আগে পারিবারিকভাবে ঠেটালিয়া গ্রামের ব্যবসায়ী হাকিম মোল্লার সঙ্গে রুনা আক্তারের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে নানা বিষয়ে রুনার সঙ্গে তাঁর স্বামীর বিবাদ চলে আসছিল। আজ সকালেও স্বামীর সঙ্গে তাঁর বাগ্‌বিতণ্ডা হয়েছে। দুপুরে স্বামীর পরিবারের লোকজনের জন্য চাল-ডাল ধুয়ে খিচুড়ি রান্নার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। পরে বেলা আড়াইটার দিকে বসতঘরের শয়নকক্ষে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়না প্যাঁচানো অবস্থায় রুনার ঝুলন্ত লাশ পাওয়া যায়। খবর পেয়ে পুলিশ এসে লাশটি উদ্ধার করে।

নিহত রুনা আক্তারের ভাই শরিফুল ইসলাম অভিযোগ করেন, তাঁর বোনকে পরিকল্পিতভাবে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন হত্যা করেছেন। এটি ঢাকার জন্য লাশ ঘরে ঝুলিয়ে ‘আত্মহত্যা’র নাটক সাজানো হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা করবেন। ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন তিনি।

অভিযোগের বিষয়ে জানার জন্য নিহত রুনার স্বামী হাকিম মোল্লার মুঠোফোনে কল করা হলে নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। মতলব উত্তর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.

রবিউল হক বলেন, নিহত গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এটি হত্যাকাণ্ড নাকি আত্মহত্যা তা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে। আপাতত এটি একটি রহস্যজনক মৃত্যু বলেই মনে হচ্ছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

চাঁদপুরের অর্ধশত গ্রামে ঈদ উদযাপন

সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে রবিবার চাঁদপুরের অর্ধশত গ্রামে ধর্মীয় সকল আনুষ্ঠানিকতায় ঈদ পালন করা হয়েছে।

রবিবার (৩০ মার্চ) সকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেন হাজীগঞ্জের সাদরা দরবার শরীফের মুখপাত্র রাসেল মুন্সী।

তিনি বলেন, “বহু আগে থেকেই আমরা সাদরা দরবার শরিফের অনুসারীরা প্রতিবছরই সৌদিআরবের সাথে মিল রেখে রোজা ও ঈদ উদযাপন করি। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। আমরা ঈদের নামাজ আদায়ে প্যান্ডেল তৈরি করেছি। সেখানেই নামাজ আদায়ের মধ্য দিয়ে ঈদ উদযাপন করলাম।”

স্থানীয়রা জানান, ১৯২৮ সাল থেকে হাজীগঞ্জের সাদরা দরবার শরিফের মরহুম পীর মাওলানা ইসহাক (রহ.) সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে রোজা ও দুই ঈদ উদযাপনের প্রচলন করেন। তার দেখাদেখি হাজীগঞ্জ ছাড়াও ফরিদগঞ্জ ও মতলব উত্তরের বেশকিছু গ্রামসহ সবমিলিয়ে প্রায় অর্ধশত গ্রামে এভাবে রোজা ও ঈদ করা হয়।

এদিন সকালে দেখা যায়, নতুন পোশাক পরে শিশুসহ সব বয়সের মানুষ একে একে জড়ো হচ্ছেন দরবার শরীফের মাঠে। এরপর ওই দরবার শরিফ মাঠে ঈদের জামায়াত হয় সকাল ৯টায়। যেখানে ইমামতি করেন পীরজাদা জাকারিয়া চৌধুরী। 

পরে সকাল সাড়ে ৯টায় সাদরা হামিদিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসা মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ইমামতি করেন আরিফ চৌধুরী। ঈদের জামায়াতের আনুষ্ঠানিকতা শেষে সবাই একে অপরের সাথে কোলাকোলি করে কুশল বিনিময় করেন।

এদিন একই সাথে ঈদ করেন হাজীগঞ্জ উপজেলার সাদরা ছাড়াও সমেশপুর, অলিপুর, বলাখাল, মনিহার, প্রতাপুর ও বাসারার বাসিন্দারা।

এছাড়াও ফরিদগঞ্জ উপজেলার লক্ষ্মীপুর, কামতা, গল্লাক, ভুলাচোঁ, সোনাচোঁ, উভারামপুর, উটতলি, মুন্সিরহাট, কাইতাড়া, মূলপাড়া, বদরপুর, আইটপাড়া, সুরঙ্গচাইল, বালিথুবা, পাইকপাড়া, নূরপুর, সাচনমেঘ, শোল্লা, হাঁসা ও গোবিন্দপুর, মতলব উত্তরের দশানী, মোহনপুর, পাঁচানী এবং কচুয়া ও শাহরাস্তি উপজেলার অনেক গ্রামে ঈদ জামায়েত আদায় করা হয়।

এ বিষয়ে সাদরা দরবার শরিফের বর্তমান পীরজাদা মাওলানা আরিফ চৌধুরী বলেন, “সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর চন্দ্রমাস হিসাব করে আমরা রমজান, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা উদযাপন করে থাকি। এটি আমাদের দীর্ঘদিনের ধর্মীয় প্রচলন।”

তিনি আরও বলেন, “চাঁদপুরের এই বিশেষ ঐতিহ্য প্রতি বছরই আলোচনায় আসে। যা জেলার ধর্মীয় ও সামাজিক বৈচিত্র্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।”

ঢাকা/অমরেশ/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চাঁদপুরের অর্ধশত গ্রামে ঈদ উদযাপন