সেই জোড়া গাবগাছের নিচে দাঁড়ালে বুকের ভেতর এক অদ্ভুত শূন্যতা অনুভব করি
Published: 31st, March 2025 GMT
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এবং তাদের দোসরেরা সরকারি বাঙলা কলেজকে এক ভয়াবহ নির্যাতনকেন্দ্রে পরিণত করেছিল। কলেজ প্রাঙ্গণে স্থাপন করা হয়েছিল সামরিক ক্যাম্প, যেখান থেকে পরিচালিত হতো বিভিন্ন দমন-পীড়ন ও বর্বর হত্যাযজ্ঞ।
এখনো কলেজ চত্বরে আছে গণকবর, শহীদের রক্তমাখা গাবগাছ এবং সেই কুয়া, যেখানে নির্বিকার নিষ্ঠুরতায় মৃতদেহ ফেলে দিত পাকিস্তানি সেনারা। কলেজের মূল ভবনের নির্যাতনকক্ষ, হোস্টেলের পাশের ব্রাশফায়ারের স্থান কিংবা অধ্যক্ষের বাগানে গাছের গোড়ায় জবাই করার নির্মম ঘটনাগুলো শুধু ইতিহাসের পাতায় বন্দী নয়, আজও এই মাটির প্রতিটি কণা তার সাক্ষ্য বহন করে। বিজয়ের মুহূর্তে ক্যাম্পাসজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা কঙ্কাল, রক্ত, পচাগলা দেহ হয়ে উঠেছিল সেই নৃশংসতার নীরব প্রমাণ।
পাকিস্তানি বাহিনীর ৯ মাসের দখলদারিত্বে সরকারি বাঙলা কলেজের নাম বদলে রাখা হয়েছিল ‘উর্দু কলেজ’। কিন্তু বিজয়ের পর প্রতিষ্ঠানটি আবার ফিরে পায় তার পরিচিতি, সম্মান ও দায়িত্ব।
আরও পড়ুনএকজন শামসুজ্জোহা আজও অনুপ্রেরণা২৩ মার্চ ২০২৫আমি যখন কলেজের সেই জোড়া গাবগাছের নিচে দাঁড়াই, বুকের ভেতর এক অদ্ভুত শূন্যতা অনুভব করি। এই গাছের গোড়ায় কত মানুষ শেষনিশ্বাস ফেলেছেন, কত স্বপ্ন ধুলায় মিশে গেছে। শহীদ মিনারের সামনে দাঁড়িয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সেই সাহসী আত্মত্যাগের কথা ভাবলে গর্বে বুক ভরে যায়, আবার বেদনাও ছুঁয়ে যায় হৃদয়ে।
কলেজের বিভিন্ন সেমিনার, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক আলোচনায় একাত্তরের স্মৃতি তুলে ধরা হয়, যেখানে অংশ নিতে পারাটা আমার জন্য গর্বের। এমনই এক অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বক্তব্য শুনে মনে হয়েছিল, তাঁদের জীবন্ত স্মৃতিগুলো যেন আমাদের চোখের সামনে এক নতুন ইতিহাস রচনা করছে।
সরকারি বাঙলা কলেজের বধ্যভূমি শুধু মিরপুর নয়, গোটা বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। আজকের প্রজন্মের দায়িত্ব এই ইতিহাসকে শুধু জানা নয়, তা থেকে শিক্ষা নেওয়া, চেতনায় ধারণ করা। কারণ, মুক্তিযুদ্ধ শুধুই অতীত নয়, এটি আমাদের আত্মপরিচয়ের শিকড়। এই শিকড় ভুলে গেলে হারিয়ে যাবে পথ, মুছে যাবে চেতনা।
সরকারি বাঙলা কলেজের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী সুফিয়ান ইসলাম.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সম্প্রচারে বিঘ্ন ঘটায় সিনেমা হলে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে সম্প্রচারে বিঘ্ন ঘটায় সিনেমা হলে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ চালিয়েছে বিক্ষুব্ধ দর্শকরা।
মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৮টার দিকে পৌর শহরের মাছ মহালে সোনালী টকিজ সিনেমা হলে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঈশ্বরগঞ্জ পৌর শহরের সোনালী টকিজ সিনেমা হলে ঈদ উপলক্ষে বরবাদ সিনেমা চলছে। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার শোতে বিভিন্ন এলাকার দর্শক আসেন। সাড়ে ৭টা পর্যন্ত সিনেমা ঠিকঠাক চললেও এরপর যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে সাউন্ড সিস্টেম বন্ধ হয়ে যায়। ৩০ মিনিট সময় নিয়েও সাউন্ড সিস্টেম ঠিক না হওয়ায় ক্ষুব্ধ হন দর্শকরা। পরে হামলা চালিয়ে সিনেমা হলের চেয়ার, বেঞ্চ ভাঙচুর করে। পাশাপাশি সিনেমা হলের পোস্টার ছিড়ে নিচের কক্ষে অগ্নিসংযোগ করে। পরে স্থানীয় একদল যুবক বিক্ষুব্ধদের ধাওয়া দিলে সিনেমা হল এলাকা ত্যাগ করেন তারা।
এ প্রসঙ্গে বিক্ষুব্ধ দর্শকরা জানান, যান্ত্রিক ত্রুটির সময় হল কর্তৃপক্ষ কলাপসিবল গেটে তালা দিয়ে চলে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে তারা ভাঙচুর চালায়।
এ বিষয়ে জানতে সিনেমা হল পরিচালনাকারী হারুনুর রশিদকে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি। তবে, হারুনুর রশিদের ছেলে লিমন জানান, তার বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ায় বাসায় চলে গেছেন।
ঈশ্বরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) প্রজিত কুমার দাস বলেন, “সিনেমা চলার সময় সাউন্ড সিস্টেমে ত্রুটি দেখা দেয়। সেটি মেরামত করতে না পারায় কর্তৃপক্ষ বাইরে থেকে সাউন্ড সিস্টেম ভাড়া করে আনতে যায়। কিন্তু বাইরে কলাপসিবল গেটে তালা দেখে দর্শকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ভাঙচুর চালায়।”
ঢাকা/মিলন/ইভা