প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘আজকের দিনটা সবাইকে আপন করে নেওয়ার দিন। আমরা এই বাণী মনে ধারণ করে প্রত্যেকে যেন পরস্পরকে ধারণ করি, যত রকম দূরত্ব ছিল সেই দূরত্ব থেকে আমরা যেন সরে আসতে পারি।’

সোমবার বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিশিষ্ট ব্যক্তি ও কূটনৈতিকদের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে বক্তব্য রাখেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

প্রধান উপদেষ্টা আমন্ত্রিত অতিথিদের ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘আজকে ঈদের দিন আমরা সবাই একত্র হতে পেরে অত্যন্ত আনন্দিত। সবার সঙ্গে দেখা করা আমার জন্য বড় কঠিন বিষয়। কাজেই আজ একসঙ্গে এতজনের সঙ্গে দেখা করার সৌভাগ্য হয়েছে, আমি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ।’

তিনি বলেন, ‘ঈদের বাণীটাই হলো নিজেদের মধ্যে সমঝোতা, অতীতকে পেছনে রেখে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া। সমাজে এরকম একটা দিন আমরা স্থির করতে পেরেছি, আমাদের ধর্ম আমাদের দিয়েছে। এটাই আমাদের জন্য একটা আশীর্বাদ। এটা যেমন-তেমন দিন না, যেমন-তেমনভাবে দেখা করলে হয় না, কোলাকুলি করতে হয়। এটাই ধর্মের বিধান। আমরা কোলাকুলি করি সবাইকে আপন করে নেই।’

এবারের ঈদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমরা পরস্পরের কাছে আসি, পরস্পরের দূরত্ব থেকে আমরা সরে আসতে পারি, জাতিকে-সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারি। এই ঐক্যবদ্ধ হওয়াটা আমাদের জন্য এই সময়ের জন্য বিশেষভাবে জরুরি।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আজকের এই মিলনমেলায় আমরা সেই বাণী আত্মস্থ করে সামনের পথে অগ্রসর হব, আমরা পরস্পরের প্রতি সহনশীল হব। শুধু সহনশীল নয়, তার চাইতেও বেশি আমরা পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করব। এর মাধ্যমেই সমাজে শান্তি আসবে।’

'বাংলাদেশের জন্য শান্তি অত্যন্ত জরুরি' উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আজকের দিনটা আমরা প্রতিদিন স্মরণ করি। আমরা দেশে শান্তি চাই, যেন মানুষ নিজ মনে নিজের আগ্রহে দিন চলতে পারে। কারও ভয়ে ভীত হয়ে তাকে যেন চলতে না হয়।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন য আম দ র আজক র

এছাড়াও পড়ুন:

গাজায় পরিকল্পিত ধ্বংসযজ্ঞ চলছে, বন্ধ মানবিক সহায়তাও

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার ঘরবাড়ি ও তাঁবুর মতো আশ্রয়কেন্দ্রও ইসরায়েলি বর্বরতা থেকে রেহাই পাচ্ছে না। বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের ওপর বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে দখলদার দেশটি। পাশাপাশি আট সপ্তাহ ধরে উপত্যকায় খাদ্য, ওষুধ ও ত্রাণসামগ্রী প্রবেশ বন্ধ করে রেখেছে। এ পরিস্থিতিকে জাতিসংঘ সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকট হিসেবে বর্ণনা করেছে। 

আলজাজিরার সংবাদদাতারা জানিয়েছেন, বুধবার রাতভর এবং বৃহস্পতিবার ভোরে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ১৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। মধ্য গাজার নুসেইরাতের কাছে একটি তাঁবুতে তিন শিশু এবং গাজা শহরের একটি বাড়িতে এক নারী ও চার শিশু নিহত হয়েছেন। সাম্প্রতিক এক হামলায় স্থানীয় সাংবাদিক সাঈদ আবু হাসানাইনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ নিয়ে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে কমপক্ষে ২৩২ সাংবাদিক নিহত হলেন।
 
গাজার দেইর এল-বালাহ থেকে আলজাজিরার তারেক আবু আযুম বলেন, অবরুদ্ধ উপত্যকা স্পষ্টতই ইসরায়েলি সেনা বৃদ্ধি এবং ক্রমবর্ধমান মানবিক সংকটের সাক্ষী হচ্ছে। এখানকার অক্ষত ও আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলোও গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। বেশির ভাগ সরঞ্জাম ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় উদ্ধারকারীরাও অসহায় হয়ে পড়েছেন। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়াদের কাছে পৌঁছানোর জন্য তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
 
অধিকৃত পশ্চিম তীর পরিচালনাকারী ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ বলছে, ‘ইসরায়েলের আক্রমণের কোনো বিরতি নেই, কোনো করুণা নেই, কোনো মানবতা নেই।’
 
প্রায় দুই মাস ধরে ইসরায়েল ত্রাণ সহায়তা অবরোধ করে রাখায় গাজার মানবিক সংকট আরও তীব্র হয়েছে। এটিকে জাতিসংঘের মানবিকবিষয়ক সমন্বয় অফিসের ভারপ্রাপ্ত প্রধান ‘ফিলিস্তিনি জীবনের ইচ্ছাকৃত ধ্বংসাবশেষ’ বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, গাজা উপত্যকা এখন সম্ভবত ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামলা শুরুর পর ১৮ মাসের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ মানবিক সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে।
 
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অপুষ্টির সম্মুখীন নারী ও শিশুদের বিপজ্জনক ও বিপর্যয়কর ক্ষতির কথা তুলে ধরেছে। তারা অনেকেই পর্যাপ্ত খাবার, পানীয় জল এবং শিশুর খাবারের অভাবের মুখোমুখি হয়েছে। ইসরায়েলের গাজায় সাহায্য পাঠাতে অব্যাহত অস্বীকৃতি ২০২৪ সালের মে মাসে আন্তর্জাতিক আদালতের একটি আদেশকে লঙ্ঘন করে। সেই আদেশে দুর্ভিক্ষ ও অনাহার রোধে জরুরি ভিত্তিতে উপত্যকায় সাহায্য পৌঁছানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
 
গাজায় ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ করে রাখা নিয়ে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালত (আইসিজে) আগামী সপ্তাহে হেগে অনুষ্ঠিত গণশুনানির একটি সূচি প্রকাশ করেছে। সেখানে গাজা ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে জাতিসংঘ, এনজিওর কার্যকলাপকে অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে ইসরায়েলের আইনি বাধ্যবাধকতা নিয়ে আলোচনা করা হবে। আগামী সোমবার শুরু হতে যাওয়া এ শুনানির আগে প্রায় ৪৫টি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা লিখিত বিবৃতি জমা দিয়েছে।
 
হাসপাতাল সূত্র আলজাজিরাকে জানিয়েছে, বুধবার গাজায় ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৪৫ জন নিহত এবং ১০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। এ নিয়ে গত ১৮ মাসে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৫১ হাজার ৩০৫ জন নিহত এবং ১ লাখ ১৭ হাজার ৯৬ জন আহত হয়েছেন। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ