বাতাসের প্রতিটি ঝাপটায় ভেসে আসছে লাশের গন্ধ, মিয়ানমারের সাগাইংয়ের বাসিন্দা থার এনগি সেখানকার বর্তমান পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে এ কথা বলেন।

গতকাল রোববার এনগি বলেন, ‘এখন জীবিতদের চেয়ে মৃতদেহ বেশি পাওয়া যাচ্ছে।’

গত শুক্রবার ৭ দশমিক ৭ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছিল মিয়ানমার। ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল সাগাইং অঞ্চলে। স্বাভাবিকভাবেই সেখানে ক্ষয়ক্ষতি সবচেয়ে বেশি হয়েছে। কিন্তু ইরাবতী নদীর ওপর একটি সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় উদ্ধারকর্মীরা সেখানে পৌঁছাতে পারছিলেন না।

থার বলেন, ইরাবতী নদীর ওপর ইয়াদানাবন সেতু আবার খুলে দেওয়ার পর রোববার সকালে কাছের মান্দালয় শহর থেকে উদ্ধারকর্মীরা সাগাইংয়ে আসেন।

কাছেই আভা নামে আরেকটি সেতু ভূমিকম্পে ধসে পড়েছে। প্রায় ৯০ বছর আগে ব্রিটিশ আমলে এই সেতু তৈরি করা হয়েছিল।

ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত অন্তত ১ হাজার ৭০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও প্রায় ৩ হাজার ৪০০ জন। বহু মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন।

নিখোঁজদের মধ্যে একজন থারের ছেলে। তিনি বলেন, ছেলেকে জীবিত উদ্ধারের আশা তিনি প্রায় ছেড়ে দিয়েছেন। নগরীর অনেকে প্রিয়জনদের হারিয়েছেন বলেও জানান তিনি।

থার বলেন, তাঁদের এলাকায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৯০টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। বিপরীতে ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছেন ৩৬ জনকে।

সাগাইং থেকে ২২ কিলোমিটার পূর্বে মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহৎ নগরী মান্দালয়। প্রাচীনকালে এটি মিয়ানমারের রাজধানী ছিল। ভূমিকম্পে মান্দালয়েও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, বহু অবকাঠামো ধসে পড়েছে। কিন্তু ভারী যন্ত্রপাতির অভাবে উদ্ধারকর্মীরা ঠিকমতো উদ্ধারকাজ চালাতে পারছেন না। খালি হাতেই তাঁরা জীবিতদের খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

ভূমিকম্পের পর মান্দালয় এবং সাগাইংয়ের বেশির ভাগ অংশ বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। উভয় শহরেই রোববার তাপমাত্রা ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল।

মিয়ানমারের অগ্নিনির্বাপক বাহিনীর সদস্য তেত ওয়াই রোববার ইয়াঙ্গুন থেকে মান্দালয়ে পৌঁছান।

আরও পড়ুনমিয়ানমারে ভূমিকম্প: ৬০ ঘণ্টা পর চারজনকে জীবিত উদ্ধার১৫ ঘণ্টা আগে

তেত ওয়াই বলেন, মান্দালয়ে তাঁরা প্রথম যেখানে উদ্ধার অভিযানে যান, সেখান থেকে একটি মৃতদেহ উদ্ধার করেছেন।

প্রচণ্ড গরমের মধ্যে জীবিত মানুষের চেয়ে মৃতদেহ বেশি পাওয়া যাবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। তবে মানুষের জীবন রক্ষায় তাঁরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাবেন বলেও জানান তেত ওয়াই।

তেত ওয়াই বলেন, ‘আমরা যে মৃতদেহটি খুঁজে পেয়েছি, সেটি পচতে শুরু করেছে। এটা খুবই হৃদয় বিদারক। এই দুর্যোগ আমাদের পক্ষে একা মোকাবিলা করা সম্ভব নয়।’

আরও পড়ুনপ্রাণহানি বেড়ে ১৭০০, উদ্ধার তৎপরতায় ধীরগতি১৮ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ভ ম কম প

এছাড়াও পড়ুন:

৮ গোলের রুদ্ধশ্বাস ম্যাচ জিতে ফাইনালে রিয়াল

রিয়াল সোসিয়েদাদের বিপক্ষে স্প্যানিশ কোপা ডেল রের সেমিফাইনাল প্রথম লেগে ১-০ ব্যবধানে জয় পেয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ। ফুটবলপ্রেমীরা ধরেই নিয়েছিল মঙ্গলবার (০১ এপ্রিল) দিবাগত রাতে ফিরতি লেগে ঘরের মাঠে অনায়াস জয় পাবে লস ব্লাঙ্কোসরা। কিন্তু সবার ভাবনা আর কল্পনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে রুদ্ধশ্বাস এক ম্যাচ উপহার দিলো সোসিয়েদাদ। কয়েক দফা এগিয়ে গিয়েও শেষ পর্যন্ত তারা অতিরিক্ত সময় পেরিয়ে ৪-৪ গোলে ড্র করে রিয়ালের সঙ্গে। প্রথম লেগে জয় পাওয়া রিয়াল দুই লেগ মিলিয়ে ৫-৪ ব্যবধানের জয়ে ফাইনালে নাম লেখায় ১২০ মিনিট শেষে।

এদিন ম্যাচের ১৬ মিনিটেই লিড নেয় সোসিয়েদাদ। এ সময় হেডে পাবলো মারিনের বাড়িয়ে দেওয়া বল পেয়ে ডান পায়ের শটে গোল করেন সোসিয়েদাদের আন্দের বার্নেছেয়া। ৩০ মিনিটের মাথায় ভিনিসিউস জুনিয়রের বাড়িয়ে দেওয়া বল ডি বক্সের সামনে পেয়ে যান এন্ড্রিক। তখন তার সামনে ছিলেন কেবল সোসিয়েদাদের গোলরক্ষক। তার মাথার ওপর দিয়ে বল মেরে গোল করে সমতা ফেরান এন্ড্রিক। তাতে ১-১ গোলের সমতায় শেষ হয় প্রথমার্ধের খেলা।

বিরতির পর ৭২ মিনিটে ডেভিড আলবা নিজেই নিজেদের জালে বল জড়িয়ে দেন। তাতে আবারও এগিয়ে যায় সোসিয়েদাদ। ৮০ মিনিটে মাইকেল ওয়ারজাবাল গোল করে ব্যবধান ১-৩ করে ফেলেন। তবে ৮২ মিনিটে ভিনিসিউস জুনিয়রের বাড়িয়ে দেওয়া বল থেকে জুদ বেলিংহ্যাম গোল করে ব্যবধান কমান (২-৩)। আর ৮৬ মিনিটে ওরেলিয়াঁ চুয়ামেনি গোল করে সমতা ফেরান (৩-৩)। তাতে ধরা নেওয়া হচ্ছিল রিয়াল দুই লেগ মিলিয়ে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে যাচ্ছে। কিন্তু যোগ করা সময়ে (৯০+৩) সোসিয়েদাদের ওয়ারজাবাল নিজের জোড়া গোল পূর্ণ করে আবারও দলকে এগিয়ে নেন (৩-৪)। তাতে দুই লেগ মিলিয়ে ৪-৪ সমতা থাকায় অতিরিক্ত সময়ে যায় ম্যাচ। আর সেই অতিরিক্ত সময়ের ১১৫ মিনিটের মাথায় অ্যান্তোনিও রুদিগার কর্নার থেকে আসা বলে হেড নিয়ে জালে জড়িয়ে রিয়ালের জয় নিশ্চিত করেন। নিশ্চিত করেন দলের সেমিফাইনাল।

এ নিয়ে ৪১তম বারের মতো কোপা ডেল রের সেমিফাইনালে উঠলো রিয়াল। সবশেষ ২০২২-২০২৩ মৌসুমে তারা ফাইনাল খেলেছিল এবং ২০তম শিরোপা জিতেছিল এই টুর্নামেন্টের শিরোপা। অন্যদিকে সোসিয়েদাদ সবশেষ ২০১৯-২০২০ মৌসুমে ফাইনাল খেলে দ্বিতীয় শিরোপা জিতেছিল।

রিয়াল মাদ্রিদ ২৬ এপ্রিলের ফাইনালে হয় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনা নতুবা নগর প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদকে পাবে। প্রথম লেগে বার্সা ও অ্যাটলেটিকো ৪-৪ গোলে ড্র করেছে। আজ অ্যাটলেটিকোর মাঠে ফিরতি লেগের লড়াইয়ে নামবে তারা।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ