অন্যান্য দিন থেকে আলাদা হয়ে ঝটকা দিয়ে যেদিন সকালবেলা ঘুম ভাঙত আলাদা এক ঘ্রাণে, সেটা ঈদের দিন। রান্নার নানা রকম মসলা, আতর, গোলাপজল, আগরবাতি—সব ঘ্রাণ মিলে বাড়িটিকে দিত আলাদা এক মাত্রা। সে আমার দিগন্তের কাছাকাছি শৈশবের কথা।

আগের সন্ধ্যায় রেডিওতে বেজেছিল, ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এল খুশির ঈদ।’ সে গান শুনে মায়ের শেষ মুহূর্তের কাজ যেত বেড়ে। আমাদের বোনদের জামার ফিনিশিঙের কাজ। ছেলেদের পাঞ্জাবি ঠিক করা। রান্নার কিছুটা এগিয়ে রাখা। মসলার ভাগ ভাগ করা থালা ভরে উঠত নিত্যব্যবহারের বাইরের কিছু সুগন্ধি মসলায়। তুলে রাখা চাদর ও টেবিলক্লথ বের করা; সেসব থেকে ছড়িয়ে পড়ত ন্যাপথলিনের গন্ধ। আলোর মুখ দেখত শোকেসে তুলে রাখা বনেদি চেহারার বাসনকোসন। প্রতিদিনের আটপৌরে জীবন থেকে বের হয়ে নতুন শব্দ, গন্ধ ও স্বাদের অনন্য এই দিন! আহা, দশভুজা মা আমার-আমাদের চমৎকার একটি দিন উপহার দিতে, তার ছোটাছুটিতে ছিল ব্যালে নর্তকীর বিভঙ্গ! সর্বত্র মাময়! সেই শৈশবে বুঝিইনি মায়ের খুব পরিশ্রম হচ্ছে বা বিশ্রামের প্রয়োজন রয়েছে তার; বরং ভাবতাম, সে বুঝি বড্ড খুশি এত এত কাজ করতে পেয়ে!

সত্তরের দশকে বাসায় না ছিল ফ্রিজ, না ছিল টিভি। আমাদের খাবার হতো টাটকা। আমাদের বিনোদন ছিল পুতুল খেলা, দৌড়ঝাঁপ। সারা মাস রোজা রেখেও ঈদের প্রায় সারা দিন মা কীভবে রান্নাঘরে কাটাত, সে মা–ই জানে। সকালে মা বানাতেন নানা পদের মিষ্টি খাবার। সে–ও পরিমাণে এতটাই বেশি যে অনেক ভিখারি তার ভাগ পেত। বাসার ছেলেরা ঈদগাহে যাওয়ার আগেই খেতে দিতে হবে শরবত আর খোরমা। ঈদের নামাজ থেকে ছেলেরা ফেরার আগেই বাড়ির মেয়েদের নিয়ে মা নামাজ পড়তেন। আশেপাশের বাসা থেকেও নারীরা যোগ দিত মায়ের সঙ্গে। সে দিনটিতে মা বাড়তি কিছু গয়না পরতেন, চোখে সুরমা দিতেন ঝকঝকে মাজা সুরমাদান থেকে। ঈদের আগের দিনই আগরদান, আতরদান, সুরমাদান, গোলাপপাশ সব মেজেঘষে তকতকে করে রাখতেন মা নিজেই।

মনিরা মিঠি.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

স্বামী-স্ত্রীর গতিরোধ করে যুবক বললেন, ‘বিশ্বাসের মেয়েকে নিয়ে পালাচ্ছিস কোথায়? দাঁড়া সমন্বয়ক আসছে’

কুড়িগ্রামের রাজীবপুরে শ্লীলতাহানি, অপহরণচেষ্টা ও মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টার মামলায় মেহেদী হাসান নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে উপজেলার বটতলা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। 

এর আগে, সকালে রাজীবপুর থানায় চারজনের নাম উল্লেখসহ আরও ৪-৫ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করে মামলা করেন ভুক্তভোগী নারীর বাবা আব্দুল লতিফ বিশ্বাস। 

গ্রেপ্তার মেহেদী হাসান রাজীবপুর সদর ইউনিয়নের মরিচাকান্দি এলাকার আলীর ছেলে। 

মামলার বাদী আব্দুল লতিফ বিশ্বাস অভিযোগ করে বলেন, ‘মেয়ে, মেয়ের স্বামী, ননদ ও দেবর দাওয়াত খেয়ে সন্ধ্যার পর বাড়ি ফিরছিল। তারা উপজেলার বটতলা এলাকা থেকে তাদের পিছু নেয় মেহেদী হাসান, নিশাত, মো. আশাসহ আরও কয়েকজন যুবক। পরে মরিচাকান্দি এলাকায় একটি সেতুর ওপর তাদের বহনকারী ইজিবাইকটি গতিরোধ করে তারা। এ সময় মেহেদী হাসান মেয়ে জামাই শিহাবকে বলেন, বিশ্বাসের মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছ কোথায়? তখন শিহাব উত্তরে বলেন, আমি আমার স্ত্রীকে পালিয়ে নিয়ে যাব কেন? প্রয়োজনে আমার শ্বশুরের মোবাইল ফোনে কল দিয়ে নিশ্চিত হন। এ নিয়ে বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে মেহেদী হাসান, রঞ্জু মিয়া নামের আরেকজনকে মোবাইল ফোনে কল দিয়ে দলবল নিয়ে ঘটনাস্থলে আসতে বলে। এ সময় তাঁর জামাই শিহাব অভিযুক্তদের কাছে জানতে চান, কাকে ডাকছেন? তখন মেহেদী বলেন, দাঁড়া আমার বড় ভাই সমন্বয়ক, সে আসছে। একপর্যায়ে আমাদের আত্মীয়-স্বজনদের বহনকারী আরেকটি ইজিবাইক ঘটনাস্থলে পৌঁছালে অভিযুক্তরা পালিয়ে যায়।’

ভুক্তভোগী শিহাব বলেন, ‘মরিচাকান্দি এলাকায় সেতুর ওপর গতিরোধ করে বেশ কয়েকজন যুবক। এ সময় তারা নিজেদের ‘সমন্বয়ক’ পরিচয় দিয়ে আমার স্ত্রী ও চাচাতো বোনের শ্লীলতাহানি করে এবং অপহরণের চেষ্টা করে। তারা মুক্তিপণও চায়। একপর্যায়ে তাদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়। পরে আমাদের আরও একটি ইজিবাইক সেখানে এলে তারা পালিয়ে যায়।’

রাজীবপুর থানার দায়িত্বরত এসআই আতিকুর জামান বলেন, ‘অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু করা হয়েছে। আসামি মেহেদী হাসানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরে তাকে কুড়িগ্রাম আদালতে পাঠানো হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয় দিয়েই চলেন তারা (মামলার আসামিরা)।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ