কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী, ভারতজুড়ে ঈদ উদযাপন
Published: 31st, March 2025 GMT
টানা সিয়াম সাধনার পর এসেছে খুশির ঈদ। ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর। কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী ভারতজুড়ে উৎসবের আবহে এই ঈদ উদযাপন করা হচ্ছে।
সোমবার (৩১ মার্চ) ঈদের দিনেও রাজনীতির বাইরে থাকতে পারলে না পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতায় ঈদের জামাত থেকে সম্প্রীতি রক্ষার বার্তা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যাযের। নাম না করে বিজেপিকে ‘দাঙ্গাকারী দল’ বলেও আক্রমণ করেন তিনি। যদিও রাজনীতির বাইরে বেরিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সমাজে আশা, সম্প্রীতি এবং দয়ার চেতনা বৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা করে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের জানিয়েছেন ঈদের শুভেচ্ছা।
আরো পড়ুন:
নাগপুর দাঙ্গা নিয়ে অবশেষে মুখ খুললেন মমতা
বিজেপির আয়ু আর ২-৩ বছর: মমতা
আসাম, মণিপুর, বাংলা, বিহার, উত্তরপ্রদেশ এবং দিল্লিসহ ভারতের রাজ্যে রাজ্যে সোমবার সকাল থেকেই উৎসবের আমেজ দেখা যায়।
সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয় রাজধানী নয়াদিল্লিতে, জামা মসজিদে নামাজ পড়ার জন্য বিপুলসংখ্যক মানুষ সমবেত হন।
নয়াদিল্লির ফতেহপুরী মসজিদ প্রাঙ্গণে মুসলিম সম্প্রদায়ের অসংখ্য মানুষ জড়ো হয়ে ঈদের নামাজ আদায় করেন। বিজেপি নেতা শাহনওয়াজ হুসেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ফখরুদ্দিন আলী আহমেদ স্মৃতিসৌধে নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে একে অপরকে ঈদের শুভেচ্ছা জানান তারা।
চলতি সপ্তাহের শুরুতে, এক্স-এর একটি টুইটে ভারতের জাতীয় রাজধানীর পুলিশকে ৩১ মার্চ থেকে ১ এপ্রিল পর্যন্ত ঈদের সময় বিস্ফোরণের সতর্কবার্তা দিয়ে সতর্ক থাকার জন্য হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছিল। টুইটে বলা হয়েছিল, “কিছু অবৈধ রোহিঙ্গা, বাংলাদেশি, পাকিস্তানি মুসলিম চাঁদনী চক, জামা মসজিদ, জাহাঙ্গীরপুরীতে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা বা বোমা বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে।” ফলে সকাল থেকেই উৎসব শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার জন্য রাজধানীর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়।
অন্যদিকে কলকাতায় ঈদের বৃহত্তম জামাত অনুষ্ঠিত হয় রেড রোডে। প্রতিবছরের মতো সেখানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রেড রোডের জামাত থেকে বাংলার সম্প্রীতি রক্ষার বার্তা দেন তিনি। নাম না করে বিজেপিকে ‘দাঙ্গাকারী দল’ বলেও আক্রমণ শানান তিনি।
মমতা বলেন, “একটা বিশেষ দল বাংলায় দাঙ্গা বাঁধানোর চেষ্টা করে। ওদের একটাই আওয়াজ দাঙ্গা করো, কিন্তু এখানে আমরা হিন্দু-মুসলিম সবাই ভাই ভাই। এখানে বিভাজনের রাজনীতি বরদাস্ত করব না।”
বাম-বিজেপিকে আক্রমণ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ওরা একসঙ্গে টিকিট কেটে ওখানে (লন্ডনে) গিয়ে ধর্মের রাজনীতি করতে চেয়েছিল। এখানেও নতুন করে আবার দাঙ্গা বাঁধানোর চেষ্টা করবে। প্ররোচণায় পা দেবেন না। মনে রাখবেন, আপনাদের সঙ্গে দিদি রয়েছে। বাংলায় বিভাজনের রাজনীতি বরদাস্ত করব না।”
এদিকে ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বাইতে জুমা মসজিদ এবং মাহিম দরগার মতো ধর্মীয় স্থানগুলোতে বিশাল জামাত দেখা গেছে। মুম্বাইতেও সুষ্ঠুভাবে ঈদ আয়োজনে কঠোর নিরাপত্তার বলযয়ে শহরকে মুড়ে ফেলে মুম্বাই পুলিশ।
রাজস্থানের আজমিরি শরীফে খাজা মঈনুদ্দীন চিশতীর মাজারে প্রার্থনা এবং উৎসব উদযাপনের জন্য সমবেত হন লক্ষাধিক মুসল্লি।
সোমবার ঈদুর ফিতর উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সমাজে আশা, সম্প্রীতি এবং দয়ার চেতনা বৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা করেছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী মোদি তার সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে সকলকে ‘ঈদ মোবারক’ বলে শুভেচ্ছা বার্তা দিয়েছেন।
তিনি লিখেছেন, “ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা। এই উৎসব আমাদের সমাজে আশা, সম্প্রীতি এবং দয়ার চেতনা বৃদ্ধি করুক। আপনার সকল প্রচেষ্টায় আনন্দ এবং সাফল্য আসুক। ঈদ মোবারক!”
রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, জোর দিয়ে বলেছেন, এই উৎসব ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে শক্তিশালী করে এবং করুণা ও দানশীলতাকে উৎসাহিত করে।
সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ রাষ্ট্রপতি মুর্মু বলেন, “ঈদুল ফিতরের শুভ উপলক্ষে সকল দেশবাসীকে, বিশেষ করে মুসলিম ভাই-বোনদের শুভেচ্ছা। এই উৎসব ভ্রাতৃত্ববোধকে শক্তিশালী করে এবং করুণা ও দানশীলতা গ্রহণের বার্তা দেয়। আমি কামনা করি যে, এই উৎসব সকলের জীবনে শান্তি, সমৃদ্ধি এবং সুখ বয়ে আনুক এবং সকলের হৃদয়ে কল্যাণের পথে এগিয়ে যাওয়ার চেতনাকে শক্তিশালী করুক।”
প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং তার শুভেচ্ছা বার্তা শেয়ার করে বলেছেন, “ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা। এই উৎসব সকলের জন্য সুখ, শান্তি এবং সমৃদ্ধি বয়ে আনুক। আশা করি, এই দিনটি সমাজের সর্বত্র সম্প্রীতি এবং ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে আরো দৃঢ় করবে। ঈদ মোবারক!”
উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের কার্যালয় থেকে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রাজ্যবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও শুভকামনা জানানো হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ঈদুল ফিতর আনন্দ ও সম্প্রীতির বার্তা নিয়ে আসে। এই আনন্দের উৎসব সামাজিক ঐক্যকে শক্তিশালী করে এবং পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ববোধ বৃদ্ধি করে। এই উৎসব শান্তি ও সম্প্রীতির বার্তা দেয়। এই উৎসবে সকলের উচিত সম্প্রীতি ও সামাজিক সম্প্রীতি আরো জোরদার করার অঙ্গীকার নেওয়া।”
এদিকে সোমবার ঈদের দিনেও গরমের দাপট রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ঝাড়খণ্ড, উত্তরপ্রদেশের মতো পূর্ব ও মধ্য ভারতের বেশ কিছু রাজ্যে। রাজ্যগুলোর অধিকাংশ জেলার তাপমাত্রা মোটামুটি ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রির মধ্যেই থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর। হিট ওয়েভের সতর্কবার্তা দিয়ে আবহাওয়া অফিস বলছে, একাধিক জেলার তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির গণ্ডি পেরিয়ে যেতে পারে।
ঢাকা/সুচরিতা/রাসেল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ঈদ ম খ যমন ত র ই উৎসব উপলক ষ র জন য র র জন মন ত র র জন ত স মব র সকল র মসজ দ
এছাড়াও পড়ুন:
কিংবদন্তিরা ‘চুল আঁচড়ানো–শেভ করা’ নিয়ে কথা বলায় ঈদ আড্ডায় নাসিমের বিরক্তি
সাম্প্রতিক সময়ে একেবারেই ভালো ক্রিকেট খেলতে পারছে না পাকিস্তান। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতেও বাজেভাবে ব্যর্থ হয়েছে। ব্যর্থতার কারণে সাবেকদের বেশ সমালোচনার মুখেও পড়তে হয়েছে বর্তমান ক্রিকেটারদের।
সমালোচনায় আপত্তি না থাকলেও অনেক সময় সমালোচনা মাত্রা ছাড়িয়ে যায় বলে অভিযোগ বর্তমান ক্রিকেটারদের। ঈদ উপলক্ষে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) উদ্যোগে আয়োজিত এক আড্ডায় সাবেক ক্রিকেটারদের একহাত নিয়েছেন পাকিস্তানি পেসার নাসিম শাহ। দেশের কিংবদন্তি ক্রিকেটাররা খেলায় ভুল ধরার পরিবর্তে ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে বেশি কথা বলেন বলে মন্তব্য করেছেন নাসিম।
ঈদ উপলক্ষে আড্ডাটিতে নাসিম ছাড়াও অতিথি হিসেবে ছিলেন পাকিস্তান অধিনায়ক মোহাম্মদ রিজওয়ান ও ব্যাটসম্যান ফখর জামান। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন সাবেক পাকিস্তানি পেসার ওয়াহাব রিয়াজ।
আরও পড়ুনপাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একমত নন পেসার নাসিম শাহ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫অনুষ্ঠানের শেষ দিকে টেলিভিশন টক শোতে হওয়া সমালোচনার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নাসিম বলেছেন, ‘একজন ভক্ত যখন এমন কিছু বলেন (ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে মন্তব্য), আপনি ভাবতে পারেন, “ওহ, এই লোক কখনো ক্রিকেট খেলেনি।” আমরা যখন বাসায় যাই, তখন আমাদের ভাইয়েরাও অনেক সময় এমন এমন কথা বলে, যা শুনে আমরা বলি, “আচ্ছা ঠিক আছে, সে কখনো ক্রিকেট খেলেনি।”’
নাসিম আরও যোগ করে বলেন, ‘কিন্তু এমন, কেউ যিনি ১০ থেকে ১৫ বছর ক্রিকেট খেলেছেন (তাঁদের বলাটা দুঃখজনক)। দেখুন, পারফরম্যান্স নিয়ে আপনি কথা বলুন, কেউ ভালো বোলিং করছে না সেটা নিয়ে কথা বলুন, কেউ ভালো ব্যাটিং করছে না সেটা নিয়েও বলতে পারেন। কীভাবে ভালো হতে পারে, কোথায় ভুল ছিল, সেসব নিয়ে আলাপ হোক। কিন্তু অনেক বেশি ব্যক্তিগত বিষয় কথা বলা (উচিত নয়)।’
আরও পড়ুন‘৮ কেজি খাসির মাংস খাওয়া’ বাবরদের ফিল্ডিংকে ‘অর্ডিনারি’ বললেন গম্ভীর ২৫ অক্টোবর ২০২৩সাবেক ক্রিকেটাররা কী ধরনের সমালোচনা করেন, তা জানিয়ে নাসিম বলেন, ‘কেউ চুল কীভাবে আঁচড়েছে, কথা কীভাবে বলছে, শেভ কীভাবে করছে—এসব নিয়ে কথা বলাটা ব্যক্তিগতভাবে আঘাত করে। অথচ তাদের আমরা কিংবদন্তি হিসেবে দেখি। এখন আমরা কি তাদের এড়িয়ে যেতে শুরু করব? কারণ, তারা ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে কথা বলে। আমাদের মনে হয়, “আরে এরাও আমার ভাই বা সাধারণ দর্শকদের মতো কথা বলছে।” সমর্থকদের বিষয়টা মানা যায়। কিন্তু ১০ থেকে ১৫ বছর খেলার পর এভাবে যদি কেউ কথা বলে, তবে সেটা মানা যায় না।’