১৯৭১ সাল, তখন আমি রাজশাহী পিটিআইয়ের চারু ও কারুকলা বিষয়ের শিক্ষক। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের সরাসরি ছাত্র ছিলাম। পৈতৃক বাড়ি রাজশাহী নগরের হেতেমখাঁ এলাকায়। বাড়িতে মা–বাবা, বড় ভাই ও আমার পরিবার একসঙ্গে থাকতাম। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। এলাকায় বারবার পাকিস্তানি সেনাদের তল্লাশির মুখে পড়তে হয়। সেই তল্লাশি বড়ই বিব্রতকর ছিল। আমার শ্বশুরবাড়ি ছিল কুষ্টিয়ার গোলাপনগর এলাকায়। একদিন স্ত্রী ও শিশুসন্তানকে নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে চলে যাই। সেখানকার পরিবেশ খুব নির্বিঘ্ন ছিল। পরিবার চাইছিল, যত দিন যুদ্ধ চলে আমরা নিরাপদে সেখানে থাকি।

এরই মধ্যে পবিত্র রমজান শেষে এল ঈদের দিন। গোলাপনগর স্টেশনের এক পাশে শ্বশুরবাড়ি আর অন্য পাশে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। মাঝখান দিয়ে চলে গেছে রেললাইন। সকালে উঠেই খুঁজছিলাম ঈদের নামাজ পড়ার কোনো আয়োজন হয় কি না। একটু বেলা হতেই দেখি, স্থানীয় মসজিদের কয়েকজন মুসল্লি ওই বিদ্যালয়ের মাঠে ঈদের নামাজ পড়ার আয়োজন করছেন। তাঁদের সঙ্গে রেললাইন পার হয়ে নামাজের কাতারে গিয়ে দাঁড়াই। কিন্তু ঈদের দিনে মনটা ভীষণ খারাপ ছিল। কিছুতেই ভালো লাগছিল না। কী করব, ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না। বরাবরই বোহেমিয়ান মানুষ আমি। না বলে, না কয়ে যেখানে ভালো লাগে, সেখানে যাই।

সেদিন নামাজ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মনে হলো এখানে আর থাকব না। রেললাইনটা পার হয়ে শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে স্ত্রীকে কথাটা বলে আসার দরকার ছিল। মনের অবস্থাটা এমনই ছিল যে ওইটুকু রাস্তাও আর পার হয়ে শ্বশুরবাড়ি যেতে মন চাইল না। অবশ্য স্ত্রী আমাকে জানতেন, তাঁর কাছে না বলে আমার এখানে–ওখানে চলে যাওয়াটা খুব একটা বিচলিত হওয়ার বিষয় নয়। আগেও এমন ঘটনা বেশ কয়েকবার ঘটেছে। তবে এই সময় তো স্বাভাবিক নয়, তাই বিচলিত হলেন স্ত্রী।

আরও পড়ুনপাকিস্তানি এক সেনা ডেকে বলেছিল, ‘ঈদ মোবারক নেহি বোলগে?’ ২৬ মার্চ ২০২৫

এদিকে আমি পদ্মা নদীর ঘাটে এলাম। দেখি, মাঝিরা বেশ কয়েকটা নৌকা নিয়ে অপেক্ষায় রয়েছেন পারাপারের জন্য। তার মধ্যে একটি নৌকা যাত্রীদের নিয়ে খানিকটা দূরে চলে গিয়েছিল। আমাকে আসতে দেখে নৌকাটা আবার ফিরে এল, কারণ পরের খেয়া কখন পাওয়া যাবে, তার ঠিক নেই। এলাকায় লোকজন নেই। ফাঁকা ফাঁকা। নদী পার হয়ে পাকশী এসে নামলাম। তখন পাকশী থেকে ঈশ্বরদী পর্যন্ত একটা পাইলট ট্রেন চলত, খুব ধীরে ধীরে যেত সেটা। ট্রেনে ওঠা মাত্রই ছেড়ে দিল। ঈশ্বরদীতে এসে বসে রইলাম রাজশাহীর ট্রেনের জন্য। ঠিক করেছি বাড়িতে যাব। কারণ, মায়ের জন্য মনটা খুব খারাপ লাগছে। ঈদের দিন আর মায়ের সঙ্গে দেখা হবে না!

রাজশাহীর ট্রেনে উঠে প্রায় ভয় পেয়ে গেলাম। একেবারে ফাঁকা। একেবারে হাতে গোনা দু–একজন যাত্রী নিয়ে ট্রেনটি রাজশাহীর উদ্দেশে ছাড়ল। ভীষণ গা ছমছম করতে লাগল। এভাবে একসময় ট্রেন রাজশাহী স্টেশনে এল। আন্দাজ, তখন বেলা দুইটা বা তার কাছাকাছি কোনো একটা সময় হবে। বাসায় ফেরার জন্য রিকশা খুঁজছিলাম। দেখলাম, রাজশাহী রেলস্টেশনও প্রায় ফাঁকা, রিকশাওয়ালারাও কম। কিছুক্ষণ পর একটা রিকশা পেলাম, তাতে চড়ে এলাম আমাদের হেতেমখাঁর বাসায়। বাড়িতে পৌঁছার কথা মনে হলে এখনো চোখ ভিজে যায়, দরজায় টোকা দিয়েই মা বলে ডেকে উঠলাম। আমার কণ্ঠ শুনতে পেয়ে বাসার সবাই হকচকিয়ে উঠল। মা এসে জড়িয়ে ধরল। বলল, ‘আমি জানি ও আসবেই। ঈদের দিন আমাকে ছেড়ে থাকতে পারবে না।’

অনুলিখন: আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ, রাজশাহী

আরও পড়ুনযে ভাস্কর্য মনে করিয়ে দেয়, এই যুদ্ধ ছিল সবার২৬ মার্চ ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ঈদ র দ ন এল ক য র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

মিরপুরে সড়কে নির্মিত অবৈধ আট গেট গুঁড়িয়ে দিল ডিএনসিসি

মিরপুরের রূপনগরে সড়কে অবৈধভাবে নির্মিত আটটি গেট গুঁড়িয়ে দিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি)। বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর মিরপুর সেকশন-২ এর রূপনগর আবাসিক এলাকার বিভিন্ন রোডে অবৈধভাবে নির্মিত গেটগুলো উচ্ছেদ করা হয়।

এছাড়া ফুটপাত ও রাস্তার প্রায় শতাধিক অবৈধ দোকান ও হকার উচ্ছেদ করে প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তা ও ফুটপাত দখলমুক্ত করা হয়। ফুটপাত দখল করে দোকান পরিচালনা করায় একটি ফার্নিচারের দোকান ও একটি খাবারের দোকান মালিককে তিন হাজার করে মোট ৬ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

অভিযান পরিচালনা করেন ডিএনসিসির অঞ্চল-২ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. জিয়াউর রহমান এবং ডিএনসিসির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাহীদুল ইসলাম। 

সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জিয়াউর রহমান বলেন, জনগণের নির্বিঘ্নে চলাচল নিশ্চিত করতে রাস্তা ও ফুটপাতের অবৈধ যেকোনো স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান ডিএনসিসির নিয়মিত কার্যক্রম। এটি চলমান আছে। এলাকাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে তাদের চলাচলে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে রাস্তায় অবৈধভাবে নির্মিত গেটগুলো আমরা ভেঙে দিয়েছি। এই গেটগুলো বিনা অনুমতিতে লাগানো হয়েছে, যার ফলে জনগণের ভোগান্তি সৃষ্টি হয়েছে। অন্যান্য সকল রাস্তার অবৈধ গেটগুলো অপসারণে আমাদের অভিযান চলবে।

 

 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মিরপুরে সড়কে নির্মিত অবৈধ আট গেট গুঁড়িয়ে দিল ডিএনসিসি