মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলায় দোকানের সামনে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা রাখাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। জেলা বিএনপির সদস্য ও সাবেক পৌর মেয়র মহসিন মিয়া (মধু) ও শ্রীমঙ্গল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য আনার মিয়ার সমর্থকদের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। উভয় পক্ষের অন্তত ৩৯ জনের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় মহসিন মিয়াসহ ১৪ জনকে আটক করেছে যৌথ বাহিনী।

গতকাল রোববার দিবাগত রাত একটার দিকে শহরের গদার বাজার এলাকায় অটোরিকশা রাখা নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত। এরপর দুই পক্ষের হয়ে লড়াই করতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে শহরে জড়ো হন সমর্থকেরা। একপর্যায়ে দুই পক্ষ মারমুখী অবস্থান নেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফাঁকা গুলি ছোড়ে পুলিশ। এ সময় শহরের বিভিন্ন মার্কেটে ঈদের কেনাকাটা করতে আসা লোকজন আটকা পড়েন। পরে দিবাগত রাত তিনটার সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, শহরের গদার বাজার এলাকায় সাবেক মেয়র মহসিন মিয়ার ‘বিনা লাভের বাজার’ নামে একটি স্টল আছে। ওই স্টলের সামনে টমটম (ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা) রাখা নিয়ে মহসিন মিয়ার সঙ্গে টমটম চালকদের বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। চালকদের পক্ষে মহসিন মিয়ার সঙ্গে কথা–কাটাকাটিতে জড়ান শ্রীমঙ্গল ইউপির সাবেক সদস্য আনার মিয়া। এ খবর টমটম চালকদের এলাকা পশ্চিম ভাড়াউড়া গ্রামে পৌঁছালে ৪০০ থেকে ৫০০ গ্রামবাসী লাঠিসোঁটা নিয়ে শহরে আসেন। অপর পক্ষে মহসিন মিয়ার লোকজনও শহরে জড়ো হন। দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাঁদানে গ্যাসের শেল ও ফাঁকা গুলি ছোড়ে পুলিশ। পরে সেনাবাহিনী মাঠে নেমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

উপজেলা প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় শহরে দোকানপাটে আটকে পড়া সাধারণ মানুষ নিরাপদে সরিয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় হাসপাতাল সূত্রে উভয় পক্ষের অন্তত ৩৯ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সংঘর্ষে উপজেলার সবুজবাগ এলাকার জয় চৌধুরী নামের একজন পথচারী গুরুতর আহত হয়েছেন। তাঁকে রাতেই সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শহরের একাধিক ব্যবসায়ী প্রথম আলোকে বলেন, রাত একটা থেকে শ্রীমঙ্গল শহর খালি হয়ে যাওয়া শুরু করে। তাঁরা প্রতিবছর ঈদের আগের রাতে সারা রাত দোকান খোলা রাখেন। এবার এমনিতেই বেচাবিক্রি কম। এর মধ্যে মারামারির কারণে অনেক মালামাল অবিক্রীত থেকে গেছে। অনেকেই ঈদের কেনাকাটা করতে পারেনি। এতে ব্যবসায়ীদের অনেক ক্ষতি হয়েছে।

শ্রীমঙ্গল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.

আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ায় শহরে বিশৃঙ্খলা তৈরি হলে পুলিশ ৫৬টি শটগানের ফাঁকাগুলি ছুড়ে দুই পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে পুলিশ ও যৌথ বাহিনীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। এ ঘটনায় অভিযান চালিয়ে সাবেক মেয়র, বিএনপি নেতা মহসিন মিয়াসহ ১৪ জনকে আটক করে থানায় হস্তান্তর করে যৌথ বাহিনী। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: মহস ন ম য় র পর স থ ত এ ঘটন য় উপজ ল শহর র

এছাড়াও পড়ুন:

পাঁচ দিনেও অপহৃত চবির ৫  শিক্ষার্থী উদ্ধার হয়নি

খাগড়াছড়ি জেলা শহরের গিরিফুল এলাকা থেকে অপহৃত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) পড়ুয়া পাঁচ শিক্ষাথী ও একজন টমটম চালকের পাঁচ দিনেরও হদিস মেলেনি। তবে তাদের উদ্ধার করার জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল বাতেন মৃধা। 

ওসি আব্দুল বাতেন মৃধা জানান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থী ও একজন টমটম চালক অপহরণের খবর পাওয়ার পর থেকে তাদের উদ্ধারের জন্য পুলিশ ও সেনা সদস্যরা অভিযানে নেমেছে। শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) খাগড়াছড়ির সদরের পানখাইয়া পাড়া, মধুপুর, নোয়াপাড়া, তেঁতুলতলা, খবং পড়িয়াসহ বিভিন্ন বাসাবাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়। পরের দিন খাগড়াছড়ি-পানছড়ি সড়কে ভাইবোন ছড়া এলাকায় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করা হয়। আর আজ রবিবারও (২০ এপ্রিল) জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হচ্ছে। তাদের উদ্ধার করতে না পারা পর্যন্ত অভিযান চলবে বলেও জানান তিনি।

তবে অপহরণের বিষয় নিয়ে অভিভাবকেরা থানায় অভিযোগ করেননি বলে জানান তিনি। ওসি জানান, অপহৃতরা কেউ খাগড়াছড়ির বাসিন্দা নয়।

আরো পড়ুন:

হাসপাতাল চালুর দাবিতে সুনামগঞ্জে মেডিকেল শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ

চবির অপহৃত শিক্ষার্থীদের মুক্তির দাবিতে খাগড়াছড়িতে সমাবেশ 

অপহৃত শিক্ষার্থীরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের মৈত্রীময় চাকমা, নাট্যকলা বিভাগের দিব্যি চাকমা, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের রিশন চাকমা, প্রাণীবিদ্যা বিভাগের লংঙি ম্রো এবং চারুকলা বিভাগের অলড্রিন ত্রিপুরা। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।

বুধবার (১৬ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৬টার দিকে খাগড়াছড়ি সদরের গিরিফুল এলাকা থেকে পাঁচ শিক্ষার্থীকে অপহরণ করা হয়। একইসঙ্গে তাদের বহনকারী গাড়ির চালককেও অপহরণ করা হয়।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) ছাত্র সংগঠন ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের (পিসিপি) চবি ইউনিট বুধবার (১৬ এপ্রিল) এক বিবৃতিতে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টকে (ইউপিডিএফ-প্রসীত) অপহরণের জন্য দায়ী করেছে।

পিসিপি চবি ইউনিটের প্রচার সম্পাদক রিবেক চাকমা স্বাক্ষরিত ওই বিবৃতিতে অপহৃতদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি করে বলা হয়েছে, বিজু উৎসব উপলক্ষে পাঁচ শিক্ষার্থী বন্ধুদের সঙ্গে রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে বেড়াতে যান। উৎসব শেষে মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) তারা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরার উদ্দেশে দীঘিনালা হয়ে খাগড়াছড়ি সদরে পৌঁছান। 

চট্টগ্রামগামী বাস না পাওয়ায় কুকিছড়া এলাকায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে রাত কাটান তারা। বুধবার (১৬ এপ্রিল) সকালে অটোরিকশায় করে শহরে ফেরার পথে গিরিফুল এলাকায় পৌঁছালে একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী তাদের অটোরিকশাসহ অপহরণ করে নিয়ে যায়।

ঢাকা/রূপায়ন/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চবির ৫ শিক্ষার্থীকে উদ্ধারে খাগড়াছড়িতে অভিযান চলছে
  • পাঁচ দিনেও অপহৃত চবির ৫  শিক্ষার্থী উদ্ধার হয়নি