জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার কোনও অধিকার নেই। দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা এই মুহূর্তে বাংলাদেশের মানুষের গণদাবি। 

আজ সোমবার দুপুরে জুরাইন কবরস্থানে জুলাই গণঅভ্যূত্থানের শহিদদের কবর জিয়ারত শেষে তিনি এ কথা বলেন।

নাহিদ বলেন, আওয়ামী লীগের বিষয়ে অবস্থান খুবই স্পষ্ট। আগেও বলেছি, এখনও বারবার করে বলছি, আওয়ামী লীগের এ দেশে রাজনীতি করার কোনও অধিকার নেই। আওয়ামী লীগ বাংলার মাটিতে আর রাজনীতি করতে পারবে না। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ ও মুজিববাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণ রায় দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এখন সেই রায় কোন প্রক্রিয়ায় কার্যকর হবে, সেটা হচ্ছে আলোচনার বিষয়। যেহেতু বিচার চলছে, আমরা বিচারের প্রতি আস্থাশীল। আমরা মনে করি, বিচার এবং রাজনৈতিক ঐকমত্যের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের যে বিষয়টি সেটি সুরাহা হতে পারে।

এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, ঈদে আনন্দের মাঝেও আমাদের মধ্যে দুঃখ রয়েছে, কারণ গণঅভ্যুত্থানে আমরা যেসব ভাইবোনকে হারিয়েছি, তাদের ছাড়া অনেকগুলো পরিবার ঈদ পালন করছে। সেই কষ্ট, সেই বেদনার ভাগ নিতেই জুরাইন কবরস্থানে এসেছি। এখানে ১০–১২ জন শহীদের কবর রয়েছে। আমরা কবর জিয়ারত করেছি। পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি, এই ঈদের আনন্দের মাঝে পরিবারগুলো কেমন আছে, সেই শহিদদের স্মরণ করা এবং সেই পরিবারগুলোর কষ্ট ভাগ করা যার জন্য মূলত আজকে এখানে আসা।

আওয়ামী লীগের বিচারের বিষয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি বরাবরের মতোই বলে আসছি। এই পরিবারগুলোর সামনে তো আমরা দাঁড়াতে পারব না। জাতি হিসেবে আমরা যদি তাদের ন্যায়বিচার দিতে না পারি, প্রত্যেক মা-বাবার কাছে সরকার থেকে সহযোগিতা; এগুলো তাদের কাছে বড় বিষয় না, মূলত ন্যায়বিচারটা তারা যাতে পায়, তাদের সন্তানকে যারা গুলি করেছে, হত্যা করেছে এবং আমাদের দলীয় এজেন্ডার মধ্যে বিচার, সংস্কার, গণপরিষদ নির্বাচন তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের মধ্যে বিচারটাকে আমরা প্রথমে রেখেছি এবং গুরুত্ব দিচ্ছি।

নাহিদ ইসলাম বলেন, আপাৎকালীন আমরা বলছি যে, আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল করা উচিত। আওয়ামী লীগ মার্কা আগামী নির্বাচনে থাকবে না। এটাই শহিদ, আহত পরিবারসহ গণদাবি আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।

অভ্যুত্থানে আহত ও নিহতের পরিবারকে সহযোগিতার বিষয়ে তিনি আরও বলেন, আর সরকারের পক্ষ থেকে পাশে দাঁড়ানো ও সহযোগিতার যে কমতি রয়েছে, সেটা আরও বাড়ানো উচিত, আমি যখন দায়িত্বে ছিলাম, আমি আমার জায়গা থেকে চেষ্টা করেছি, যে পরিবারকে যেটা সহযোগিতা মাসিক ভাতার যে ঘোষণা হয়েছিল সেটা ঈদের আগে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আমরা যোগাযোগ করেছি, খুব কম পরিমাণ পরিবারের কাছে সেটি পৌঁছাতে পেরেছে। আমরা আশা করব, সরকার এসব বিষয়ে যে প্রতিশ্রুতি বা ঘোষণা দিয়েছে, তা দ্রুতগতিতে বাস্তবায়ন করবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জ ত য় ন গর ক প র ট এনস প ন হ দ ইসল ম সহয গ ত র জন ত পর ব র আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

নেতার নামের খেলার মাঠ গ্রাম বদলে দিল স্থানীয়রা

আওয়ামী লীগ নেতা ইব্রাহিমের নামে নামকরণ করা খেলার মাঠ ও তাঁর পূর্বপুরুষের গ্রামের নামে নামকরণ করা ভাতকুড়া চালা গ্রামের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। সম্প্রতি এলাকাবাসী ওই দুটি নাম পরিবর্তন করে আগের নাম বহাল রেখে নামফলক সেঁটে দেন। ইব্রাহিম সখীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য।
জানা গেছে, গ্রামটির প্রকৃত নাম বহুরিয়া চতলবাইদ। গ্রামটির আয়তন বড় হওয়ায় ওই অংশটির নাম চতলবাইদ মধ্যপাড়া হিসেবে পরিচিত। আওয়ামী লীগ নেতা ইব্রাহিম তাঁর পূর্বপুরুষের গ্রামের নামে ওই অংশটির নামকরণ করেন ‘ভাতকুড়া চালা’। এ নিয়ে গ্রামবাসী সংক্ষুব্ধ হলেও ওই সময় ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়নি। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হওয়ায় চতলবাইদ গ্রামবাসী ভাতকুড়া চালা নামটি বাতিল করে চতলবাইদ মধ্যপাড়া নাম বহাল করেছেন।
আওয়ামী লীগ নেতা ইব্রাহিমের নামে নামকরণ করা খেলার মাঠটির আগের নাম ছিল মঙ্গল খাঁর মাঠ। স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সুবাদে একক প্রভাব খাটিয়ে ইব্রাহিম ওই খেলার মাঠটি তাঁর নিজ নামে ‘ইব্রাহিমের মাঠ’ হিসেবে নামকরণ করেন। সম্প্রতি এলাকাবাসী ইব্রাহিমের মাঠের নাম পরিবর্তন করে মঙ্গল খাঁর মাঠ পুনর্বহাল করেছেন। সপ্তাহ খানেক আগে ওই দুটি নাম খোদাই করা ইট-পাথরের ফলকে লিখে মাঠঘেঁষা পাকা সড়কের পাশে সেঁটে দিয়েছেন এলাকাবাসী।
টাঙ্গাইল বন বিভাগের হতেয়া রেঞ্জের বহুরিয়া চতলবাইদ মৌজার সংরক্ষিত বনের ২৮৩১ নম্বর দাগের একই জমিতে ওয়াক্ত নামাজের জন্য নির্মিত পাকা ভবনটিতে ইব্রাহিম তাঁর বাবা হাজি হাতেম আলীর নামে সাইনবোর্ড সেঁটে দিয়ে সামাজিক মসজিদে রূপান্তর করেন। এলাকাবাসী সভা করে ওই মসজিদের দেয়ালে সেঁটে দেওয়া হাজি হাতেম আলী নামটি পরিবর্তন করে চতলবাইদ মধ্যপাড়া নামকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ ছাড়া বনের একই দাগের জমিতে ইব্রাহিম তাঁর বাবা হাজি হাতেম আলী নামে ঈদগাহ মাঠ ও সামাজিক কবরস্থান নির্মাণের পরিকল্পনা করেছিলেন। এলাকাবাসী ইব্রাহিমের সেই পরিকল্পনা বাতিল করে চতলবাইদ মধ্যপাড়া গ্রামটির নামেই ঈদগাহ মাঠ ও কবরস্থান নির্মাণকাজ শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা রেজাউল করিম।
চতলবাইদ গ্রামের বাসিন্দা সোমেস উদ্দিন সমকালকে বলেন, আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ইব্রাহিমের খুবই দাপট ছিল। ইব্রাহিম শালগজারির সব বন উজাড় করে ফেলেছে। বন বিভাগও তাঁর বিরুদ্ধে এক পা এগোয়নি। শালগজারির সব টাকা ইব্রাহিমের পকেটে। কেউই তাঁর অপকর্মের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পায়নি। সমকালে সংবাদটি প্রকাশের পর থেকে গ্রামবাসী ঐক্যবদ্ধ হয়ে সম্প্রতি গ্রামের নামটি ফিরিয়ে এনেছে। মাঠের নামটিতেও পরিবর্তন আনা হয়েছে।
পলাতক আওয়ামী লীগ নেতা ইব্রাহিম মোবাইল ফোনে সমকালকে বলেন, ‘আমি রাজনৈতিক রোষানলের শিকার। আমার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মামলা থাকার সুযোগে গ্রামের কতিপয় ব্যক্তি যা-ইচ্ছে তাই করছে।’
হতেয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা এস এম আবদুর রশীদের ভাষ্য, বনের জমি উদ্ধারে উচ্ছেদ মামলা দেওয়া হয়েছে। আইন অনুযায়ী বনের জমি থেকে সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নেতার নামের খেলার মাঠ গ্রাম বদলে দিল স্থানীয়রা