গভীর রাত। চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। কোথাও কোনো সাড়া-শব্দ নেই। রাতের দীর্ঘ নামাজ শেষ করলেন আলী (রহ.)। তিনি জান্নাতের সরদার হুসাইন (রা.)-এর ছেলে। চতুর্থ খলিফা আলী (রা.) তার দাদা। জায়নামাজ গুটালেন আলী। পা বাড়ালেন গুদামঘরের দিকে। খুব সাবধানে কদম ফেললেন। অনর্থক কোনো শব্দ করলেন না। গুদামঘরের তালা খুললেন। বড় বস্তায় পর্যাপ্ত আটা নিলেন। আরেক বস্তায় নিলেন খেজুর। বস্তা দুটি ভালোভাবে বাঁধলেন। নিজেই কাঁধে তুললেন। এবার রওনা হওয়ার পালা।
বাড়ির সদর দরজায় এলেন তিনি। কপাট খুলতেই রাতের নিস্তব্ধতায় চিড় ধরল। এ বাড়ির বিশ্বস্ত গোলাম সাবেরের ঘুম ভেঙে গেল। দ্রুত বিছানা ছাড়ল সে। তারপর যা দেখল, তাতে রীতিমতো ভড়কে গেল। এ কী, যা দেখছে, তা সত্যি নাকি স্বপ্ন? এ যে সত্যিই তার মনিব, পিঠে তার দুটি বড় বস্তা। চুপি চুপি দরজার বাইরে পা রাখছেন।
সাবের দ্রুত পা ফেলল। সামনে এগিয়ে এল। মনিবের সাহায্যে নিজেকে পেশ করল। বলল, ‘আমাকে ডাকলেই পারতেন হুজুর!’
আরও পড়ুনসহজে জাকাতের হিসাব কীভাবে করবেন১৩ মার্চ ২০২৫‘না। আমার কাজ আমাকেই করতে দাও।’ শান্ত গলায় মনিবের জবাব।
সাবের বারবার অনুরোধ করল। তবু মনিব রাজি হলেন না। বোঝাগুলো নিজেই বহন করলেন। এগুতে লাগলেন ধীর পায়ে।
মনিবকে একা যেতে দিতে সাবেরের মন সায় দিল না। আল্লাহ না করেন, পথে যদি কোনো বিপদ হয়। জীর্ণশীর্ণ একটি কুঠির দেখা গেল। এখানেই মনিব থামলেন। গায়ের চাদরে মুখ ঢাকলেন। আস্তে আস্তে পা টিপে টিপে ভেতরে ঢুকলেন। নিঃশব্দে বস্তা দুটো নামালেন। এরপর দ্রুত বেরিয়ে পড়লেন। কিছুদূর এগোলেন। দেখা পেলেন সাবেরের।
কী সাবের, তুমি এখানে?
হুজুর, যদি আপনার কোনো প্রয়োজন হয়।
আচ্ছা, যাও। শোন, আজ যা দেখলে, তা কারও কাছে প্রকাশ করো না।
এরপর থেকে সাবের প্রায়ই দেখত, মনিব পিঠে বোঝা নিয়ে কোনো ফকির-মিসকিন, বিধবা কিংবা শহীদ পরিবারের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন। পূর্বসূরিদের ইলম-আমল সবটুকুই তিনি বহন করেছিলেন। সবার নেক গুণগুলোর বাস্তব প্রতিচ্ছবি ছিলেন তিনি। মৃত্যুর আগপর্যন্ত রাতের অন্ধকারে গোপন সদকার আমল করেছেন।
আরও পড়ুনআবু তালহার ইসলাম গ্রহণ২৫ মার্চ ২০২৫খাদ্যের বোঝা নিজেই বহন করতেন। সবার অজান্তে এ আমল করার জন্য খাদেম, গোলাম বা অন্য কারও সহযোগিতা নিতেন না। তার মৃত্যুর আগপর্যন্ত এসব পরিবারের কেউ জানতে পারেনি, তাদের ঘরে সদকার মাল কোত্থেকে আসে?
একদিন তার মৃত্যু হলো। শহরের লোকেরা বলাবলি করল, ‘আলী বিন হুসাইনের মৃত্যুর পর আমরা রাতের গোপন দান থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।’ মৃত্যুর পর যিনি তাকে গোসল দিয়েছেন, তিনি বললেন, ‘তার ঘাড়ে আমি ভারী বোঝা বহনের দাগ দেখতে পেয়েছি।’
সূত্র: হিলয়াতুল আউলিয়া: ৩/১৩৬, আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া: ৯/১১৪
আরও পড়ুনরাগ নিয়ন্ত্রণ করবেন কীভাবে২৫ মার্চ ২০২৫.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ভারতের জিডিপির এক-তৃতীয়াংশ শতকোটিপতিদের হাতে
ভারতে অতি ধনীদের বাড়বাড়ন্ত হচ্ছে। এই শ্রেণির মানুষের সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে এই শ্রেণির মানুষের হাতে থাকা সম্পদের পরিমাণ।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের শুরুতে ভারতে এই শতকোটিপতি বা বিলিয়নিয়ারের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮৪। দেখা যাচ্ছে, গত বছর এই সময় ভারতে শতকোটিপতির সংখ্যা ছিল ২৭১; অর্থাৎ এক বছরে ভারতে শতকোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে ১৩। সম্প্রতি প্রকাশিত দ্য হুরুন গ্লোবাল রিচ লিস্ট, ২০২৫-এ এই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের শতকোটিপতিদের সম্পদের পরিমাণ এখন ৯৮ লাখ কোটি রুপি। এই অঙ্ক ভারতের মোট দেশজ উৎপাদন বা মোট জিডিপির এক-তৃতীয়াংশ।
শতকোটিপতির সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে ভারতের এই শ্রেণির মানুষের সম্পদ বেড়েছে। দেশটিতে শতকোটিপতিদের হাতে থাকা সম্পদের পরিমাণ এখন সৌদি আরবের মোট জিডিপি বা দেশজ উৎপাদনের চেয়ে বেশি। দ্য হুরুন গ্লোবাল রিচ লিস্ট, ২০২৫-এ বলা হয়েছে, গত বছর ভারতের শতকোটিপতিদের সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ১০ শতাংশ। একই সঙ্গে সামগ্রিকভাবে ভারতের ধনীদের সম্পদের পরিমাণ গত এক বছরে ৬২ শতাংশ বেড়েছে। তাঁদের সম্পদের পরিমাণ লাখ কোটি ডলারের মাইলফলক ছুঁয়ে ফেলেছে। হুরুন গ্লোবালের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান গবেষক আনাস রহমান জুনাইদ এটিকে ভারতের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক আখ্যা দিয়েছেন।
প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, ২০২২ সালে ভারতে শতকোটিপতির সংখ্যা ছিল ২৪৯। কিন্তু ২০২৩ সালে তা কমে ১৮৭-তে নেমে আসে; গত বছর তা আবার বেড়ে ২৭১-এ ওঠে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে তা ৩০০ পেরিয়ে যাবে।
অতি ধনীদের সংখ্যার নিরিখে ভারতের অবস্থান এখন বিশ্বে তৃতীয়। ভারতের আগে আছে কেবল যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। ভারতের পরে আছে যথাক্রমে যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও সুইজারল্যান্ড। সেই সঙ্গে এশিয়ার শতকোটিপতিদের রাজধানী হিসেবে মুম্বাইকে হটিয়ে দিয়েছে চীনের সাংহাই শহর। সাংহাই শহরে এখন ৯২ জন শতকোটিপতির বসবাস, মুম্বাইয়ে ৯০ জন। এ ছাড়া বিশ্বের অন্য যেসব জায়গায় শতকোটিপতিদের সংখ্যা বাড়ছে সেগুলো হলো সিঙ্গাপুর, I রাশিয়া, কানাডা, তুরস্ক ও মেক্সিকো।
গত বছর ভারত ও এশিয়ার শীর্ষ ধনী মুকেশ আম্বানির সম্পদের পরিমাণ এক লাখ কোটি রুপি কমেছে। মূলত খঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় তাঁর সম্পদ কমেছে। প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, তাঁর সম্পদের পরিমাণ ৮ দশমিক ৬ লাখ কোটি রুপি।
ভারতের ধনীদের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে থাকা গৌতম আদানির সম্পদের পরিমাণ গত বছর প্রায় এক লাখ কোটি রুপি বেড়েছে। তাঁর সম্পদের পরিমাণ এখন ৮ দশমিক ৪ লাখ কোটি রুপি। তিনি এখন বিশ্বের ১৮তম শীর্ষ ধনী। গত বছর তিনি কিছু সময়ের জন্য এশিয়ার শীর্ষ ধনীর আসনে বসেছিলেন।
ভারতীয় অতি ধনীদের গড় বয়স ৬৮ বছর; বৈশ্বিক পর্যায়ে যা ৬৬ বছর; অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে ভারতীয় অতি ধনীরা কিছুটা পিছিয়ে আছেন।
এ বছর ভারতের সর্বকনিষ্ঠ অতি ধনী হিসেবে তালিকায় উঠে এসেছেন রাজোরপের সহপ্রতিষ্ঠাতা শশাঙ্ক কুমার ও হর্ষিল মাথুর। তাঁদের দুজনেরই বয়স মাত্র ৩৪ বছর।