তামিম-সেলিনাদের এবার অন্য রকম ঈদ
Published: 31st, March 2025 GMT
এখনো কৈশোর পার হয়নি মোহাম্মদ তামিমের। তার আগেই শুরু হয়ে গেছে জীবিকার যুদ্ধ। দিনের বেশির ভাগ সময় কেটে যায় কারখানায়। ছোট্ট এই জীবনে খুশি-আনন্দের সময় তেমন আসে না। বছর ঘুরে যখন ঈদ আসে, তখন কিছুটা আনন্দ ধরা দেয় তামিমের কাছে। তবে এবার তার ঈদ অনেক বেশি বর্ণিল ও উৎসবমুখর।
শুধু তামিম নয়, তার মতো অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত কয়েক শ শিশুর ঈদের আনন্দ আরও রঙিন করে তুলতে দারুণ এক উদ্যোগ নিয়েছে স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।
সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য চট্টগ্রাম নগরের দুই নম্বর গেটের বিপ্লব উদ্যানে আয়োজন করা হয়েছে ‘সবাইকে নিয়ে ঈদ আনন্দ’ অনুষ্ঠান, চলবে ঈদের দিন ও পরদিন।
দুই দিনের আয়োজনে শিশু-কিশোরদের ঈদের খুশি দ্বিগুণ করতে নানা ধরনের রাইড, অস্থায়ী সুইমিং পুল, নাগরদোলাসহ নানা ধরনের খেলার আয়োজন করেছে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। এসব খেলায় অংশ নিয়ে পুরস্কার জেতারও সুযোগ রাখা হয়েছে। পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হচ্ছে আটা, ময়দা, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। ঈদে ঘুরতে বের হওয়া শিশু-কিশোর ও তাদের অভিভাবকদের জন্য বিরিয়ানি, পায়েস, সেমাইসহ বিভিন্ন ধরনের খাবারের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।
চট্টগ্রাম নগরের কসমোপলিটন এলাকায় মা-বাবা ও ভাইদের সঙ্গে থাকে মোহাম্মদ তামিম। এক বছর আগে ভোলা থেকে চট্টগ্রাম নগরে আসে তার পরিবার। পরিবারে আর্থিক অনটনের কারণে পড়াশোনা বেশি দূর এগোয়নি তামিমের। এখন কাজ করে একটি গ্রিল তৈরির ওয়ার্কশপে।
ঈদের দিন সকালে তামিম বাসা থেকে একা একাই চলে আসে দুই নম্বর গেটের বিপ্লব উদ্যানে। পরনে নতুন শার্ট-প্যান্ট। নাগরদোলায় চড়া শেষ করেছে, অপেক্ষা করছে খেলায় অংশ নেওয়ার জন্য। এ সময় সে প্রথম আলোকে বলে, শহরে এসেছে এক বছর হচ্ছে। আগে ভোলায় গ্রামের বাড়িতে ছিল। এ ধরনের রাইড, সুইমিং পুল দেখেনি। পার্কেও যাওয়ার সুযোগ হয়নি। এবারের ঈদটা অন্য রকম কাটছে। এ ধরনের আয়োজনে এসে সে খুব খুশি। তবে একটি কারণে মন খারাপ। ছোট ভাই অসুস্থ, এ জন্য আসতে পারেনি। সে যদি আসত, তাহলে আরও বেশি ভালো লাগত।
আট ও ছয় বছর বয়সী দুই মেয়েকে নিয়ে উদ্যানে ঘুরছিলেন সেলিনা বেগম। ঈদের দিনে এমন আয়োজনে দারুণ খুশি তিনি। পোশাক কারখানার এই কর্মী বলেন, তাঁদের আর্থিক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তাই চাইলেও মেয়েদের নিয়ে পার্কে যাওয়ার সুযোগ হয়নি। মাঝেমধ্যে মেয়েদের বিদ্যালয় থেকে পার্কে নিয়ে যায়। তবে তখন তাঁর যাওয়া হয় না। আজকে ঈদের দিনে দুই মেয়েকে নিয়ে এখানে এসেছেন। মেয়েরা সুইমিং পুলে সাঁতার কেটেছে। নাগরদোলায় চড়েছে। মেয়েদের খুশিতে তাঁরও আনন্দ লাগছে।
সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য চট্টগ্রাম নগরের দুই নম্বর গেটের বিপ্লব উদ্যানে আয়োজন করা হয়েছে ‘সবাইকে নিয়ে ঈদ আনন্দ’ অনুষ্ঠান.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ঈদ র দ ন র জন য ধরন র আনন দ
এছাড়াও পড়ুন:
শরীরে ছ্যাঁকা দিয়ে হাতের নখ উপড়ে প্রতিবন্ধী বানিয়ে করানো হতো ভিক্ষা
ছয় মাস আগে অপহৃত হয় ৬ বছরের শিশু সোয়াইব হোসেন। এরপর তার উপর চালানো হয় অমানুষিক নির্যাতন। সারা শরীরে সিগারেট আর কয়েলের ছ্যাঁকা দিয়ে, হাতের নখ উপড়িয়ে, না খাইয়ে রেখে বানানো হয় প্রায় প্রতিবন্ধী। রাতে চলতো নির্যাতন আর দিনের বেলায় তাকে দিয়ে করানো হতো ভিক্ষা।
অপহরণের পর তথ্য প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে অবশেষে মৃতপ্রায় শিশুটিকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয়েছে রফিকুল ইসলাম বিপ্লব (৩০) নামে একজনকে।
উদ্ধারের পর প্রথম দেখায় মা সোহানা জাহান চিনতে পারেননি তার আদরের সন্তানকে। যে ছেলে ছিল স্বাস্থ্যবান আর মাথা ভর্তি চুল। মাত্র ৬ মাসে সেই সন্তান এখন কঙ্কালসার। এখন পাবনা জেনারেল হাসপাতালের বিছানায় যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে ৬ বছরের সোয়াইব।
পাবনা জেনারেল হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স বিভাগে চিকিৎসাধীন সোয়াইব
সোয়াইব পাবনা সদর উপজেলার চক ছাতিয়ানী এলাকার আমিনুল ইসলাম ও সোহানা জাহানের সন্তান। বাবা অন্যত্র বিয়ে করায় মায়ের কাছেই রয়েছে সে। গত বছরের ২ অক্টোবর একই উপজেলার শানির দিয়ার এলাকার আমজাদ হোসেনের ছেলে রফিকুল ইসলাম বিপ্লব শিশুটিকে বিস্কুট কিনে দেওয়ার কথা বলে অপহরণ করে।
সন্তানের খোঁজ না পেয়ে ওই বছরের ৭ অক্টোবর পাবনা সদর থানায় একটি জিডি করেন তার মা সোহানা জাহান। আত্মগোপনে থাকা অভিযুক্ত রফিকুল ইসলাম বিপ্লব শিশু সোয়াইবের মাকে ফোন করে অপহরণ করেছে বলে জানিয়েছিল। বেশিরভাগ সময় তার ফোন বন্ধ থাকতো। জিডির পর ফোন নম্বর ট্র্যাক করে তার লোকেশন শনাক্তের চেষ্টা করে পুলিশ। ঘটনার ৬ মাস পর গত ১৮ এপ্রিল খুলনার রুপসা ফেরিঘাট এলাকা থেকে ভিক্ষা করানো অবস্থায় শিশুটিকে উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় অভিযুক্ত রফিকুল ইসলাম বিপ্লবকেও আটক করা হয়।
এরপরই বেরিয়ে আসে শিশুটির উপর বর্বর নির্যাতনের চাঞ্চল্যকর তথ্য। সোয়াইব জানায়, রাতে তাকে একটি কক্ষে বন্দি করে রাখতো রফিকুল। সহজে কিছু খেতে দিতো না। তার শরীরে দাঁতের কামড় বসিয়ে চামড়া তুলে ফেলতো। সারা শরীরে দেওয়া হতো সিগারেট ও কয়েলের আগুনের ছ্যাঁকা। বাম হাতের একটি আঙুলের নখ প্লাস দিয়ে উপড়ে ফেলা হয়েছে। দিনের বেলায় বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে তাকে দিয়ে ভিক্ষা করাতো বিপ্লব।
গ্রেপ্তারকৃত রফিকুল ইসলাম বিপ্লব
সোয়াইবের মা বলেন, “পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরে সেদিন বিপ্লব আমার কাছ থেকে ছেলেটাকে নিয়ে যায় বিস্কুট কিনে দেবে বলে। তারপর থেকে ছেলেকে আর খুঁজে পাইনি। পরে সে ফোন করে জানিয়েছিল যে আমার ছেলেকে সে অপহরণ করেছে। তারপর থেকে তার ফোনও বন্ধ। এরপর সদর থানায় গিয়ে ঘটনা জানিয়ে জিডি করি।”
মা বলেন, “উদ্ধারের পর প্রথম দেখায় তো আমার ছেলেকে চিনতেই পারিনি। দিনের পর দিন কিভাবে আমার শিশু সন্তানকে নির্যাতন করেছে ভাবতেই বুকটা ফেটে যায়। প্রায় প্রতিবন্ধী বানিয়ে ফেলেছে আমার ছেলেকে। কঙ্কালসার শরীর নিয়ে ছেলেটা নড়াচড়াও করতে পারছে না। আমি বিপ্লবের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ফাঁসি চাই।”
এ বিষয়ে পাবনা জেনারেল হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স বিভাগের প্রধান ডা. মাসুদুর রহমান প্রিন্স বলেন, “দিনের পর দিন না খাইয়ে রাখায় ও অব্যাহত শারীরিক নির্যাতনের কারণে সোয়াইবের এই অবস্থা। তার শারীরিক অবস্থা খুব একটা ভাল নয়। তার হাতের একটা আঙুল কেটে ফেলতে হবে। আমরা আমাদের সাধ্যমতো প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিচ্ছি। ঠিকমতো চিকিৎসা নিশ্চিত করা গেলে আশা করছি দুই মাসের মধ্যে শিশুটি সুস্থ হয়ে উঠবে।”
পাবনা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এ এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, “মূলত অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে শিশুটিকে এক প্রকার প্রতিবন্ধী বানিয়ে তাকে ভিক্ষা করাতেন অভিযুক্ত বিপ্লব। অমানবিক একটি ঘটনা। আমরা তথ্য প্রযুক্তি ও খুলনার রুপসা ফেরিঘাট ফাঁড়ি পুলিশের সহায়তায় তাকে গ্রেপ্তার এবং শিশুটিকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি। ইতিমধ্যে এ ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করে অভিযুক্ত বিপ্লবকে ১৯ এপ্রিল আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আর শিশু সোয়াইব হোসাইন পাবনা জেনারেল হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স বিভাগে চিকিৎসাধীন রয়েছে।”
ঢাকা/টিপু