ক্ষমতার ৫০ দিনে ৩১৬ বার বাইডেনের নাম নিয়েছেন ট্রাম্প, বেশির ভাগ সময় দোষারোপ করতে
Published: 31st, March 2025 GMT
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম ৫০ দিনে প্রতিদিন গড়ে ৬ দশমিক ৩২ বার জো বাইডেনের নাম নিয়েছেন। সেই হিসাবে ৫০ দিনে তিনি ৩১৬ বার বাইডেনের নাম নিয়েছেন। এর অধিকাংশ সময় তিনি দোষারোপ করতে বাইডেনের নাম নিয়েছেন।
নিউইয়র্ক টাইমসের এক বিশ্লেষণে এ তথ্য জানানো হয়েছে। ওই বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ট্রাম্প যতবার বাইডেনের নাম নিয়েছেন, ওই সময়ে ততবার তিনি আমেরিকা শব্দটিও বলেননি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিজেদের সৃষ্ট বিশৃঙ্খলায় ডুবে গেছে ট্রাম্প প্রশাসন। এ জন্য কাকে দোষারোপ করতে হবে, তা খুব ভালো করেই জানেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
গত বুধবার সিগন্যালগেট কেলেঙ্কারির দুই দিন পর ট্রাম্প নিজের ডেস্কে বসে সাংবাদিকদের বলেন, এই ব্যর্থতার পেছনে আসল অপরাধী জো বাইডেন ছাড়া আর কেউ নন।
ট্রাম্প বলেন, ‘জো বাইডেনের উচিত ছিল ইয়েমেনে হামলা করা। এটা জো বাইডেনের করা উচিত ছিল এবং এটা করা হয়নি।’
প্রেসিডেন্ট বলেছেন, বাইডেন শুরুতেই হুতিদের ওপর হামলা করলে ট্রাম্পের প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে এ হামলার বিষয়ে পরিকল্পনা করতে হতো না এবং সিগন্যাল অ্যাপে একটি গ্রুপে এটি নিয়ে বার্তা আদান–প্রদান করতে হতে না। ওই গ্রুপে দ্য আটলান্টিকের সম্পাদকও সংযুক্ত ছিলেন।
সম্প্রতি ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের ওপর বড় ধরনের হামলা শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। হুতিদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের এই হামলার একটি পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে গেছে। ট্রাম্প প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ভুলে ওই পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে যায়। তাঁরা সিগন্যালের মেসেজিং গ্রুপে এ-সংক্রান্ত বার্তা আদান–প্রদান করেছিলেন।
হোয়াইট হাউস থেকে পরিকল্পনা ফাঁস হওয়ার খবর প্রকাশের পর এ ঘটনায় সঙ্গে সঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতারা। তাঁরা বলেছেন, এটি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার লঙ্ঘন এবং এতে আইনের ব্যত্যয় ঘটেছে। ঘটনাটি অবশ্যই কংগ্রেসকে তদন্ত করতে হবে।
বরাবরের মতো এ ঘটনায়ও ট্রাম্প তাঁর পূর্বসূরি বাইডেনকেই দোষারোপ করেছেন। এবার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে ট্রাম্প সবকিছুর জন্য বাইডেনকে দোষারোপ করছেন। এমনকি ছোটখাটো কোনো বিষয়েও তিনি বাইডেনকে দোষারোপ করা থেকে বিরত থাকেননি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাইডেন প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর প্রথম বছরে ট্রাম্পের নাম নিতেই অনাগ্রহী ছিলেন। তিনি ট্রাম্পের কথা বলতে গিয়ে বেশির ভাগ সময় সাবেক ব্যক্তি বলতেন।
ট্রাম্প কেন বাইডেনকে বারবার দোষারোপ করেন, এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন ডেমোক্রেটিক পার্টির সাবেক নীতিনির্ধারক জেমস কারভিল। তিনি বলেন, ‘ট্রাম্পের মনে ঠিক কী চলে, সেটা আমি জানি বলেই আমার মনে হয়। তিনি জনগণকে অস্থিতিশীল অর্থনীতির জন্য প্রস্তুত করার চেষ্টা করছেন। তাঁর নিজের বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে এই অস্থিতিশীল অর্থনীতি এখন চোখের সামনে। কী ঘটতে চলেছে, তা তিনি দেখতে পাচ্ছেন এবং তিনি নিজেকে দোষারোপ করতে পারবেন না। তাই তাঁকে বাইডেনকেই দোষারোপ করতে হবে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ ষ র প করত দ ষ র প কর
এছাড়াও পড়ুন:
খুলনায় তুহিন চেয়ারম্যান কারাগারে, এলাকায় মিষ্টি বিতরণ
খুলনায় মুক্তিযোদ্ধা ও ছাত্র হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামি ও আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসর শেখ পরিবারের আস্থাভাজন ডুমুরিয়া উপজেলার গুটুদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ তুহিনুর ইসলাম তুহিনকে কারাগারে প্রেরণ করায় এলাকায় বৃষ্টি বিতরণ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তারা চেয়ারম্যান শেখ তুহিনুল ইসলাম তুহিনের অপসারণের দাবি জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) গুটুদিয়ায় বিক্ষোভ করে মিষ্টি বিতরণ করেন চেয়ারম্যানের কাছে নির্যাতিতরা।
এর আগে খুলনা মহানগর শাখা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনার বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাটের মামলায় ১৭ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) আদালতে আত্মসর্মপন করে জামিন চাইলে আদালত জামিন না মঞ্জুর করে চেয়ারম্যান শেখ তুহিনুল ইসলাম তুহিনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। তিনি কারাগারে থাকায় ইউনিয়ন পরিষদ পরিচালনার নির্দেশনা চেয়ে ইউপির প্রশাসনিক কর্মকর্তা এমদাদুল হক রোববার (২০ এপ্রিল) উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট চিঠি দিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, জুলাই আন্দোলনের ছাত্র-জনতার বিপরীতমুখী অবস্থানে থাকা গুটুদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ তুহিনুল ইসলাম তুহিন সরকারের পতনের পর আত্মগোপনে চলে যান।
২০২৪ সালের ১১ ডিসেম্বর বিএনপি খুলনা মহানগর শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনার বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের মামলার ৪৬ নম্বর আসামি তিনি।
তার বিরুদ্ধে ২০২৪ সালের ২১ নভেম্বর আন্তজার্তিক অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে ছাত্রদল কর্মী রকিবুল হাসানকে হত্যার অভিযোগে তার পিতা রফিকুল ইসলাম হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার ১৫৬ নম্বর আসামি তিনি। বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাদাৎ হোসেন মোল্লা হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি তুহিন।
এসব মামলায় তিনি উচ্চ আদালত থেকে অর্ন্তবর্তীকালীন জামিনে ছিলেন। জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ায় গত ১৭ এপ্রিল আদালতে আত্মসর্মপন করে জামিন চাইলে আদালত জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কারাগারে থাকায় ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. এমদাদুল হক রোববার (২০ এপ্রিল) ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর চিঠি লিখেছেন। ওই চিঠিতে ইউনিয়ন পরিষদ পরিচালনার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। এছাড়া ইতোপূর্বে নির্বাচিত তিনজন প্যানেল চেয়ারম্যানের নামও উল্লেখ করেছেন ওই পত্রে।
এলাকাবাসীর দাবি, প্যানেল চেয়ারম্যানরা চেয়ারম্যান তুহিনের আজ্ঞাবহ। তারা যদি দায়িত্ব পায় তবে অদৃশ্যভাবে তুহিনের হাতেই থেকে যাবে ক্ষমতা। তাই গুটুদিয়া ইউনিয়নে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
এ বিষয়ে ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আল আমিন বলেন, “গুটুদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান করাগারে বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদ পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে যদি প্যানেল চেয়ারম্যানদের নিয়ে কোনো আপত্তি না থাকে তবে তাদের মধ্য থেকে দায়িত্ব দেওয়া হবে। এতে জটিলতা হলে বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সহ-সম্বয়ক ও খুলনা জেলার সদস্য সচিব সাজিদুল ইসলাম বাপ্পি বলেন, “শুধু গুটুদিয়ার চেয়ারম্যান নয়, খুলনায় বিভিন্ন উপজেলার প্রায় ৪০টা ইউনিয়নে এখনও পর্যন্ত ফ্যাসিবাদের দোসর ও খুনি-সন্ত্রাসীরা চেয়ারম্যান হিসাবে বসে আছেন। আমরা জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট ইউএনওদের বারবার এবিষয়ে সতর্ক করতেছি। তারা আমাদের কথা শুনছে না। তারা এলাকার মানুষের কথায় কোনোরূপ কর্নপাত করছেন না। জেলা প্রশাসক ও সংশ্লিষ্ট ইউএনওদের অভ্যুত্থানের চেতনাবিরোধী এরূপ কার্যক্রমে আমরা চরমভাবে উদ্বিগ্ন।”
কে এই তুহিন
ঢাকায় বিমান বন্দরে চুক্তিভিত্তিক নিরাপত্তা কর্মীর কাজ করতেন এই তুহিন। সেখানে নারী পাচারের সাথে যুক্ত হওয়ায় চাকরি যায় তার। খুলনা মহানগীর শেরেবাংলা রোডের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচাতো পাঁচ ভাইয়ের বাড়ি শেখ বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে ক্রমান্বয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেন তুহিন।
শেখ হেলাল, শেখ জুয়েল, শেখ সোহেল, শেখ রুবেল ও শেখ বেলালের ভাগ্নে পরিচয় দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা কাজী কামালের সাথে বন্ধুত্ব করেন গুটুদিয়াসহ খুলনার আশপাশের এলাকায়। চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জুলুমের শিকার ওই এলাকার মানুষ। ওয়ারেস কাম সার্টিফিকেটের জন্য ঘুষ, জমি-খাল দখল, চাঁদাবাজি, বালু ও জমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় আর সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন তিনি।
সাবেক ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দের ঘনিষ্ঠ সহচর ও অনুসারী এবং শেখ বাড়ির আত্মীয় পরিচয়ে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন তুহিন। ডুমুরিয়ার বাসিন্দা না হয়েও ভোটার হয়ে আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগ খুলনা জেলার সহ-সভাপতি তুহিন ২০২১ সালে বিনা ভোটে চেয়ারম্যান হন।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তিনি আওয়ামী লীগের বিভিন্ন মিটিং মিছিলে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। চেয়ারম্যান তুহিন টিআর, কাবিখা, জিআর, কাবিটা, ভিজিডি, এডিবি, এলজিএসপি, ইউপি ট্যাক্স নিজের মতো করে চালাতেন। জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন ফি নিজের খেয়ালখুশি মতো আদায় করতেন। ষড়যন্ত্র করে মানুষকে বিপদে ফেলে টাকা আদায় করতেন।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন কেউ তার এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পেতেন না। গুটুদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ১১ নং ইউপি সদস্য মো. ইজ্জত আলী মোড়ল চেয়ারম্যান তুহিনের এসব অপকর্মের সহযোগী ছিলেন।
ঢাকা/নুরুজ্জামান/এস