ঈদের আনন্দ পরিবারের সঙ্গে ভাগ করে নিচ্ছেন ক্রীড়াবিদরা। কেউ স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে, কেউবা বাবা-ভাইয়ের সঙ্গে কাটাচ্ছেন ঈদের বিশেষ মুহূর্ত। ভক্ত-সমর্থকদের শুভেচ্ছা জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঈদ উদযাপনের ছবি শেয়ার করেছেন তারা।

 

ঈদের এই উৎসবে প্রিয়জনদের সঙ্গে সময় কাটিয়ে, ভক্তদের শুভেচ্ছা জানিয়ে আনন্দ ভাগাভাগি করছেন ক্রীড়াবিদরা।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

ভল্টবন্দী টাকার নতুন নোট, ভোগান্তিতে গ্রাহক

চাহিদার তুলনায় ব্যাংকগুলোকে নতুন নোট দিতে পারছে না বাংলাদেশ ব্যাংক। গত আগস্টে দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এই সংকট প্রকট হয়েছে। কারণ, সব ধরনের টাকা ও ধাতব মুদ্রায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি থাকায় গত এপ্রিলের শুরুতে হঠাৎ নতুন নোট বাজারে ছাড়া বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক ও ব্যাংকগুলোর হাতে থাকা বঙ্গবন্ধুর ছবি–সংবলিত নতুন নোট বাজারে আসছে না। তাই মানুষের হাতে, দোকানে ও ব্যাংকে ছেঁড়াফাটা ও পুরোনো ময়লা নোটে সয়লাব হয়ে গেছে। এতে ভোগান্তির পাশাপাশি আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন নাগরিকেরা।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, নতুন নকশার নোট আগামী মাসে ছাপানো শুরু করবে দ্য সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশন বা টাঁকশাল। প্রথম ধাপে নতুন নকশার ২০, ৫০ ও ১০০০ টাকার নোট ছাপানো হবে। এরপর তা ব্যাংকের মাধ্যমে বাজারে দেওয়া হবে।

এদিকে আগে ছাপানো হয়েছে, এমন নোট বাজারে না দেওয়ার সিদ্ধান্তে বড় অঙ্কের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কারণ, শেখ মুজিবুর রহমানের ছবিসহ প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার সমমূল্যের কাগুজে নোট ছাপানো আছে। যদিও এ নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলতে রাজি হচ্ছেন না ব্যাংক কর্মকর্তারা। তবে তাঁদের অনেকেই নাম প্রকাশ করার শর্তে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নতুন নোট নেওয়া একটা দীর্ঘদিনের রীতি। এটা হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়ায় বাজারে সংকট তৈরি হয়েছে। একদিকে ছাপানো টাকা ব্যবহার না করে অপচয় করা হচ্ছে, অন্যদিকে গ্রাহক ভোগান্তি বাড়ছে।

বঙ্গবন্ধুর ছবিযুক্ত লাখ লাখ নোট এখনো বিভিন্ন ব্যাংকের ভল্টে পড়ে আছে। একসঙ্গে সব নোট বাতিল করে নতুন নোট ছাপানোর সক্ষমতা টাঁকশালের নেই। মানুষের ভোগান্তি কমাতে যেসব নোট ছাপানো আছে, সেগুলো বাজারে ছাড়া উচিত জিয়াউদ্দীন আহমেদ, সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক, টাঁকশাল

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও সহকারী মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাঁরা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অন্য একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সরকারের উচ্চ পর্যায়ে নির্দেশ এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাই এ নিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত সরকারের পক্ষ থেকেই আসতে হবে।

গ্রাহক ভোগান্তি

রাজধানীর মতিঝিলের প্রধান কার্যালয়সহ সারা দেশে বাংলাদেশ ব্যাংকের ১০টি কার্যালয় রয়েছে। নগদ টাকার প্রয়োজন হলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বিদ্যমান ব্যবস্থার আওতায় এসব কার্যালয় থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ করে। যেখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যালয় নেই, সেখানে সোনালী ব্যাংক সেই দায়িত্ব পালন করে। সাধারণত বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে থাকা নিজস্ব হিসাবের বিপরীতে নতুন টাকা নিয়ে থাকে ব্যাংকগুলো। কখনো কখনো ছেঁড়াফাটা নোট পরিবর্তন করে ও ধার হিসেবেও নগদ টাকা সংগ্রহ করে ব্যাংকগুলো। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পুরোনো নোটের পাশাপাশি নতুন নোট বাজারে সরবরাহ করে থাকে।

শেখ মুজিবুর রহমানের ছবিসহ নোট নিয়ে বিতর্ক ওঠায় গত ১০ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সব ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের চিঠি দিয়ে নতুন নোট বিনিময় কার্যক্রম বন্ধ রাখতে বলা হয়। পাশাপাশি ব্যাংকের শাখায় যেসব নতুন নোট গচ্ছিত রয়েছে, তা বিনিময় না করে সংশ্লিষ্ট শাখায় সংরক্ষণের কথা বলা হয়। এরপর থেকে নতুন নোট বিনিময় পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় এবং বাজারে নতুন নোটের সংকট দেখা দেয়।

বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা শফিউল আলম থাকেন রাজধানীর মিরপুরে। গত মঙ্গলবার বাসার পাশের বিসমিল্লাহ ভ্যারাইটিজ স্টোরে ৪২০ টাকা কেনাকাটা করে এক হাজার টাকার নোট দেন। বিক্রেতা তাঁকে দুটো ২০০ টাকার নোট, একটি ১০০ টাকা, একটি ৫০ টাকা, একটি ২০ টাকা ও একটি ১০ টাকার নোট ফেরত দেন। এর মধ্যে একটি ২০০ টাকার নোট ও ২০ টাকার নোট দুটি ছিল প্রায় অচল। দোকানদার তাঁকে আশ্বাস দেন, পরের মাসে ছেঁড়া টাকা নিয়ে এলে পরিবর্তন করে দেবেন। এখন এ ছাড়া কোনো উপায় নেই।

বিসমিল্লাহ ভ্যারাইটিজ স্টোরে দিনে প্রায় দেড় লাখ টাকার পণ্য বিক্রি হয় জানিয়ে ব্যবস্থাপক মকবুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আগে ব্যাংক থেকে প্রতিসপ্তাহে নতুন খুচরা নোট আনা যেত। গত মাস থেকে সেটি বন্ধ হয়ে গেছে। ব্যাংক থেকে পুরোনো নোট যা মিলছে, সেগুলোর বেশির ভাগই ছেঁড়াফাটা। এসব নোট গ্রাহককে দিলে তাঁরা নিতে চান না।

শুধু ব্যাংক নয়, ব্যাংকের এটিএম বুথগুলো থেকেও এখন বেশ পুরোনো ও প্রায় অচল নোট বের হচ্ছে। এটিএম বুথে টাকা ফেরত দেওয়ার সুযোগ না থাকায় এতে ভোগান্তিতে পড়ছেন গ্রাহকেরা। এ বিষয়ে আজমল হোসেন নামের ঢাকা ব্যাংকের এক গ্রাহক প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকা ব্যাংকের কার্ড দিয়ে ওয়ান ব্যাংকের এটিএম থেকে ২০ হাজার টাকা তুলেছি। এর মধ্যে তিনটি এক হাজার টাকার নোট প্রায় অচল। এখন এসব নোট ফেরত দিতে গেলেও ব্যাংকগুলো নিতে চাচ্ছে না।

নতুন নোট আসবে কবে

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, নতুন নকশার নোট ছাপাতে এক থেকে দেড় বছর সময় লাগে। গত বছরের আগস্টে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নতুন সরকার গঠিত হলেও তাৎক্ষণিকভাবে বঙ্গবন্ধুর ছবি–সংবলিত টাকার নোটের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেননি। গত ডিসেম্বরে নতুন নকশার নোট বাজারে আনার সিদ্ধান্ত হয়। তারই ধারাবাহিকতায় আগামী মে মাসে টাঁকশালে নতুন নকশার নোট ছাপানো শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। তবে একসঙ্গে তিনটি নোটের বেশি ছাপানোর সক্ষমতা নেই টাঁকশালের। এ জন্য প্রথম ধাপে ২০, ৫০ ও ১০০০ টাকার নোট ছাপানো হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর বিভিন্ন মূল্যমানের ১৫০ কোটি পিস নতুন টাকার চাহিদা রয়েছে। তবে টাঁকশাল ছাপাতে পারে ১২০ কোটি পিস। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে টাঁকশাল বিভিন্ন মূল্যমানের ১০৫ কোটি পিস নতুন নোট ছাপে। সাধারণত একটি নোট চার থেকে পাঁচ বছর স্থায়ী হয়।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এখন সিদ্ধান্ত নিলেও বঙ্গবন্ধুর ছবিসহ নোট এখনই বাজার থেকে সরানো যাবে না। নতুন নকশার নোট বাজারে ছাড়ার পর পুরোনো সব নোট বাজার থেকে তুলে নিতেও পাঁচ থেকে সাত বছর লেগে যাবে।

ছাপানো টাকা কত

বাংলাদেশে এখন ২, ৫, ১০, ২০, ৫০, ১০০, ২০০, ৫০০ ও ১০০০ টাকার কাগুজে নোট ব্যবহৃত হচ্ছে। পাশাপাশি ১, ২ ও ৫ টাকার ধাতব মুদ্রাও বাজারে রয়েছে। সব ধরনের মুদ্রায় বঙ্গবন্ধুর ছবি রয়েছে। গত ফেব্রুয়ারিতে বাজারে থাকা টাকার পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৬০২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২ লাখ ৭১ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা ছিল মানুষের হাতে। ব্যাংকের ভল্টে ছিল ২৬ হাজার ৮৮৭ কোটি টাকা। তখন বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে ব্যাংকগুলোর ৭৬ হাজার ২২০ কোটি টাকা জমা ছিল।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও টাঁকশালের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিয়াউদ্দীন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, জণগণের করের অর্থে কাগজ–কালি কিনে বিভিন্ন মূল্যমানের টাকার নোট ছাপানো হয়। বঙ্গবন্ধুর ছবিযুক্ত লাখ লাখ নোট এখনো বিভিন্ন ব্যাংকের ভল্টে পড়ে আছে। একসঙ্গে সব নোট বাতিল করে নতুন নোট ছাপানোর সক্ষমতা টাঁকশালের নেই। তাই বঙ্গবন্ধুর ছবিযুক্ত নোট চাইলেই হুট করে বাতিল করা যাবে না। এ অবস্থায় মানুষের ভোগান্তি কমাতে যেসব নোট ছাপানো আছে, সেগুলো বাজারে ছাড়া উচিত। নতুন নকশার নোট বাজারে এলে ধীরে ধীরে পুরোনো নোটগুলো তুলে নিতে হবে। সাধারণত একবার ছাপানো নোট সর্বোচ্চ চার থেকে পাঁচ বছর ব্যবহার করা যায়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ