দেশের সব জায়গায় সব মোবাইল অপারেটরের নেটওয়ার্ক শক্তিশালী নয়। এ কারণে গ্রামে গিয়ে অনেকে নেটওয়ার্ক সমস্যায় ভোগেন। মুঠোফোনে ঘরে বসে কথা বলা কঠিন হয়ে পড়ে। ইন্টারনেট পাওয়া যায় না। অবশ্য চাইলে মুঠোফোন নম্বর ঠিক রেখে অপারেটর বদলে নেওয়া যায়। এ সুবিধার নাম মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটি (এমএনপি)। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ২০১৮ সালের অক্টোবরে মোবাইল নম্বর অপরিবর্তিত রেখে অপারেটর বদলের এই সেবা চালু করে। ঘটা করে এমএনপি সেবা চালু করলেও তা জনপ্রিয় হয়নি।

এমএনপিতে গ্রাহকের মুঠোফোন নম্বর পুরোপুরি ঠিক থাকবে। শুধু গ্রাহক যে অপারেটরে যাবেন, সেই অপারেটরের মিনিট, ইন্টারনেট ও খুদেবার্তার (এসএমএস) প্যাকেজ কিনতে হবে। এতে সুবিধা হলো, গ্রাহকের অনেক দিনের পুরোনো নম্বরটি পাল্টাতে হবে না। পাশাপাশি গ্রাহকের এলাকায় যে অপারেটরের নেটওয়ার্ক শক্তিশালী, সেই অপারেটরের সেবা নিতে পারবেন।

দেশে চারটি মোবাইল অপারেটর রয়েছে—গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক ও টেলিটক। এর মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল নেটওয়ার্ক টেলিটকের। আবার শহরে এবং গ্রামে কিছু কিছু নির্দিষ্ট জায়গায় সব অপারেটরের নেটওয়ার্ক সমানভাবে শক্তিশালী নয়। যেমন বরিশালের উজিরপুর উপজেলার বাসিন্দা সামিউর রহমানের বাড়িতে তিনি যে অপারেটরের নম্বর ব্যবহার করেন, সেটির নেটওয়ার্ক দুর্বল। আরেকটি অপারেটরের নেটওয়ার্ক মোটামুটি ভালো।

সামিউর বলেন, তিনি নিজের একটি সিমের অপারেটর বদলে নিয়েছেন। ছুটিতে বাড়ি গেলে ওই নম্বরে ইন্টারনেট প্যাকেজ কিনে নেন।

এমএনপির নিয়ম

নম্বর ঠিক রেখে অপারেটর বদল করতে হলে যে অপারটরে যেতে চান সেই অপারটেরের সার্ভিস সেন্টার বা সেবাকেন্দ্রে যেতে হবে। ওই সেবাকেন্দ্র থেকে আগের অপারেটরের সঙ্গে অনলাইনে যোগাযোগ করে অন্য অপারেটর যাওয়ার আবেদন করতে হবে। পুরোনো অপারেটর ছাড়পত্র দিলে নম্বর পোর্টেবিলিটি ক্লিয়ারিং হাউস নম্বর পোর্টিং করে দেবে। এ সময় আঙুলের ছাপের মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিত করা হবে।

জাতীয় পরিচয়পত্র প্রয়োজন না হলেও তার একটি ফটোকপি সঙ্গে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়। মনে রাখতে হবে, মুঠোফোন নম্বর বদলের সময় সংশ্লিষ্ট নম্বরে ইমার্জেন্সি ব্যালেন্স বা ধার নেওয়া থাকলে অথবা পোস্ট পেইডে বকেয়া থাকলে বদল কার্যক্রম আটকে যাবে। এই প্রক্রিয়ায় খুব বেশি সময় না লাগলেও নতুন অপারেটরের সিম সক্রিয় হতে অন্তত ৭২ ঘণ্টা সময় লাগে। অপারেটর পরিবর্তনের জন্য গ্রাহককে ৪০৮ টাকা ফি দিতে হয়।

এমএনপিতে পুরোনো অপারেটরে থাকা টাকা বা ব্যালেন্স (স্থিতি) ও ডেটা নতুন অপারেটরে যুক্ত হয় না। তবে বিটিআরসির নির্দেশনা হচ্ছে, আগের অপারেটরে থাকা ব্যালেন্স ও ডেটা অপারেটরকে অন্তত দুই বছর রেখে দিতে হবে। কারণ, এর মধ্যে গ্রাহক আগের অপারেটরে ফেরত আসতে পারেন।

একবার অপারেটর পরিবর্তন করলে ৯০ দিনের মধ্যে অপারেটর বদল করা যায় না (গ্রামীণফোনের ক্ষেত্রে ৬০ দিন)। এক অপারেটর থেকে অন্য অপারেটরে প্রি-পেইড গ্রাহকেরা শুধু প্রি-পেইডে যেতে পারবেন এবং পোস্ট পেইড গ্রাহকেরা পোস্ট-পেইডে স্থানান্তরিত হতে পারবেন।

উচ্চ ব্যয়, জনপ্রিয়তা কম

২০১৮ সালে বিটিআরসি ঘটা করে এমএনপি সেবা চালু করলেও তা জনপ্রিয় হয়নি। এর কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা উচ্চ ব্যয় ও কঠিন শর্তকে দায়ী করেন।

শুরুতে অপারেটর বদলে খরচ ছিল ১৫৮ টাকা। এর মধ্যে ছিল অপারেটর বদলাতে গ্রাহকের ফি ৫০ টাকা, এর ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট এবং সিম পরিবর্তন বা রিপ্লেসমেন্টের ওপরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ১০০ টাকা কর।

এমএনপি চালুর পর উচ্চ ব্যয় নিয়ে সমালোচনার মুখে বিটিআরসির অনুরোধে এনবিআর ১০০ টাকা সম্পূরক শুল্ক তুলে নেয়। যদিও পরে তা আরোপ করা হয়। এখন সিমকর ৩০০ টাকা। আর সব মিলিয়ে খরচ ৪০৮ টাকা।

দেশের একটি অপারেটরের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, মানুষ তাঁর পুরোনো নম্বর ফেলে দিয়ে নতুন নম্বর ব্যবহার শুরু করতে চান না। তাই সেবায় সন্তুষ্ট না হলেও অপারেটর বদল করা হয় না। এমএনপির খরচ যদি কম হতো, যদি শর্ত শিথিল থাকত, তাহলে বাংলাদেশেও এমএনপি জনপ্রিয় হতো।

তিনি বলেন, এমএনপির সর্বোচ্চ খরচ ৫০ টাকা হওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে সিমকর নেওয়া অন্যায়। কারণ গ্রাহক তো নতুন সিম কিনছেন না, তাহলে কেন কর দেবেন। আর অপারেটর বদল করে সেখানে অন্তত ৯০ দিন থাকার শর্ত এমএনপিকে নিরুৎসাহিত করছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ র হক র ব ট আরস জনপ র য়

এছাড়াও পড়ুন:

মুঠোফোন নম্বর ঠিক রেখে অপারেটর বদলের সুযোগ, কিন্তু জনপ্রিয় হয়নি কেন

দেশের সব জায়গায় সব মোবাইল অপারেটরের নেটওয়ার্ক শক্তিশালী নয়। এ কারণে গ্রামে গিয়ে অনেকে নেটওয়ার্ক সমস্যায় ভোগেন। মুঠোফোনে ঘরে বসে কথা বলা কঠিন হয়ে পড়ে। ইন্টারনেট পাওয়া যায় না। অবশ্য চাইলে মুঠোফোন নম্বর ঠিক রেখে অপারেটর বদলে নেওয়া যায়। এ সুবিধার নাম মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটি (এমএনপি)। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ২০১৮ সালের অক্টোবরে মোবাইল নম্বর অপরিবর্তিত রেখে অপারেটর বদলের এই সেবা চালু করে। ঘটা করে এমএনপি সেবা চালু করলেও তা জনপ্রিয় হয়নি।

এমএনপিতে গ্রাহকের মুঠোফোন নম্বর পুরোপুরি ঠিক থাকবে। শুধু গ্রাহক যে অপারেটরে যাবেন, সেই অপারেটরের মিনিট, ইন্টারনেট ও খুদেবার্তার (এসএমএস) প্যাকেজ কিনতে হবে। এতে সুবিধা হলো, গ্রাহকের অনেক দিনের পুরোনো নম্বরটি পাল্টাতে হবে না। পাশাপাশি গ্রাহকের এলাকায় যে অপারেটরের নেটওয়ার্ক শক্তিশালী, সেই অপারেটরের সেবা নিতে পারবেন।

দেশে চারটি মোবাইল অপারেটর রয়েছে—গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক ও টেলিটক। এর মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল নেটওয়ার্ক টেলিটকের। আবার শহরে এবং গ্রামে কিছু কিছু নির্দিষ্ট জায়গায় সব অপারেটরের নেটওয়ার্ক সমানভাবে শক্তিশালী নয়। যেমন বরিশালের উজিরপুর উপজেলার বাসিন্দা সামিউর রহমানের বাড়িতে তিনি যে অপারেটরের নম্বর ব্যবহার করেন, সেটির নেটওয়ার্ক দুর্বল। আরেকটি অপারেটরের নেটওয়ার্ক মোটামুটি ভালো।

সামিউর বলেন, তিনি নিজের একটি সিমের অপারেটর বদলে নিয়েছেন। ছুটিতে বাড়ি গেলে ওই নম্বরে ইন্টারনেট প্যাকেজ কিনে নেন।

এমএনপির নিয়ম

নম্বর ঠিক রেখে অপারেটর বদল করতে হলে যে অপারটরে যেতে চান সেই অপারটেরের সার্ভিস সেন্টার বা সেবাকেন্দ্রে যেতে হবে। ওই সেবাকেন্দ্র থেকে আগের অপারেটরের সঙ্গে অনলাইনে যোগাযোগ করে অন্য অপারেটর যাওয়ার আবেদন করতে হবে। পুরোনো অপারেটর ছাড়পত্র দিলে নম্বর পোর্টেবিলিটি ক্লিয়ারিং হাউস নম্বর পোর্টিং করে দেবে। এ সময় আঙুলের ছাপের মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিত করা হবে।

জাতীয় পরিচয়পত্র প্রয়োজন না হলেও তার একটি ফটোকপি সঙ্গে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়। মনে রাখতে হবে, মুঠোফোন নম্বর বদলের সময় সংশ্লিষ্ট নম্বরে ইমার্জেন্সি ব্যালেন্স বা ধার নেওয়া থাকলে অথবা পোস্ট পেইডে বকেয়া থাকলে বদল কার্যক্রম আটকে যাবে। এই প্রক্রিয়ায় খুব বেশি সময় না লাগলেও নতুন অপারেটরের সিম সক্রিয় হতে অন্তত ৭২ ঘণ্টা সময় লাগে। অপারেটর পরিবর্তনের জন্য গ্রাহককে ৪০৮ টাকা ফি দিতে হয়।

এমএনপিতে পুরোনো অপারেটরে থাকা টাকা বা ব্যালেন্স (স্থিতি) ও ডেটা নতুন অপারেটরে যুক্ত হয় না। তবে বিটিআরসির নির্দেশনা হচ্ছে, আগের অপারেটরে থাকা ব্যালেন্স ও ডেটা অপারেটরকে অন্তত দুই বছর রেখে দিতে হবে। কারণ, এর মধ্যে গ্রাহক আগের অপারেটরে ফেরত আসতে পারেন।

একবার অপারেটর পরিবর্তন করলে ৯০ দিনের মধ্যে অপারেটর বদল করা যায় না (গ্রামীণফোনের ক্ষেত্রে ৬০ দিন)। এক অপারেটর থেকে অন্য অপারেটরে প্রি-পেইড গ্রাহকেরা শুধু প্রি-পেইডে যেতে পারবেন এবং পোস্ট পেইড গ্রাহকেরা পোস্ট-পেইডে স্থানান্তরিত হতে পারবেন।

উচ্চ ব্যয়, জনপ্রিয়তা কম

২০১৮ সালে বিটিআরসি ঘটা করে এমএনপি সেবা চালু করলেও তা জনপ্রিয় হয়নি। এর কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা উচ্চ ব্যয় ও কঠিন শর্তকে দায়ী করেন।

শুরুতে অপারেটর বদলে খরচ ছিল ১৫৮ টাকা। এর মধ্যে ছিল অপারেটর বদলাতে গ্রাহকের ফি ৫০ টাকা, এর ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট এবং সিম পরিবর্তন বা রিপ্লেসমেন্টের ওপরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ১০০ টাকা কর।

এমএনপি চালুর পর উচ্চ ব্যয় নিয়ে সমালোচনার মুখে বিটিআরসির অনুরোধে এনবিআর ১০০ টাকা সম্পূরক শুল্ক তুলে নেয়। যদিও পরে তা আরোপ করা হয়। এখন সিমকর ৩০০ টাকা। আর সব মিলিয়ে খরচ ৪০৮ টাকা।

দেশের একটি অপারেটরের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, মানুষ তাঁর পুরোনো নম্বর ফেলে দিয়ে নতুন নম্বর ব্যবহার শুরু করতে চান না। তাই সেবায় সন্তুষ্ট না হলেও অপারেটর বদল করা হয় না। এমএনপির খরচ যদি কম হতো, যদি শর্ত শিথিল থাকত, তাহলে বাংলাদেশেও এমএনপি জনপ্রিয় হতো।

তিনি বলেন, এমএনপির সর্বোচ্চ খরচ ৫০ টাকা হওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে সিমকর নেওয়া অন্যায়। কারণ গ্রাহক তো নতুন সিম কিনছেন না, তাহলে কেন কর দেবেন। আর অপারেটর বদল করে সেখানে অন্তত ৯০ দিন থাকার শর্ত এমএনপিকে নিরুৎসাহিত করছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ