‘বাইচ্চান্তরে লইয়া বড়া ও হান্দেশ খাইমু, ইলাই আমরার ঈদ’
Published: 31st, March 2025 GMT
দলা পাকানো চালের গুঁড়া চ্যাপটা করে ছোট ছোট বড়া বানানোর পর সেগুলো কড়াইয়ে দিচ্ছিলেন লাভলী বেগম (২৫)। চুলায় খড়ের আগুন কমে আসছিল বারবার। মাথা নিচু করে চুলার নিচ দিকে ফুঁ দিতে দিতে ধোঁয়ায় নাস্তানাবুদ অবস্থা। কুলায় যে পরিমাণ চালের গুঁড়া, তাতে ২০ থেকে ৩০টা বড়া হবে।
ঈদের আয়োজন বলতে কি শুধু এই কয়টি বড়া? লাভলী বলেন, ‘মাইয়ে (মা) কিছু গুড় আনছিলা। গুড়ের হান্দেশ (সন্দেশ) করছি। আর কিতা করমু। সকালে বাইচ্চান্তরে লইয়া বড়া ও হান্দেশ খাইমু। ইলাই আমরার ঈদ।’ কথা শেষের সঙ্গে সঙ্গে লাভলী বেগমের একটা দীর্ঘশ্বাস যেন হাওরের বাতাসে মিশে গেল। তাঁর পাশে তখন পাখির ছানার মতো বসা দুই সন্তান সাহানা (৫) ও আবির (৩)। তাদের চোখ কড়াইয়ে, তেলের ওপর ভাসতে থাকা বড়ার দিকে।
লাভলী বেগমের বাড়ি সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার দেখার হাওরপারের কান্দাহাটি গ্রামে। গতকাল রোববার পড়ন্ত বিকেলে ওই গ্রামে গিয়ে কথা হয় লাভলী ও তাঁর পরিবারের অন্যদের সঙ্গে। এর আগে গত বছরের জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে বন্যার সময় ওই গ্রামের যাওয়ার পর প্রথম দেখা হয়েছিল। বন্যা সব শেষ করে দিয়ে গেছে তাঁদের। হাওরের ঢেউয়ে তখন ঘরটি ভেঙে পড়ে।
লাভলী তিন সন্তান নিয়ে মা সবুরা বেগমের সংসারে আছেন। বাবা নেই; নেই মানে অন্য আরেকজনকে বিয়ে করে চলে গেছেন বহু আগে। লাভলীরও একই অবস্থা, স্বামী আরেকটা বিয়ে করে আলাদা থাকেন। এখন সবুরার আটজনের সংসার। ছেলে জহুরুল ইসলামের (২০) স্ত্রী ও এক মেয়ে আছে। এই সংসার মূলত সবুরা বেগম ও ছেলে জহুরুল ইসলামের শ্রম-ঘামে চলে। সবুরা, জহুরুল দুজনই শ্রমিক। যখন যে কাজ পান, সেটাই করেন, কিন্তু অভাব যায় না।
ঘরের চুলায় তেলের বড়া ভাজছেন লাভলী বেগম। সুনামগঞ্জের দেখার হাওরপারের কান্দিগাঁও গ্রাম থেকে গতকাল রোববার বিকেলে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
হাওরে মাছ ধরা নিয়ে ঝগড়া, চাচার ছুরিকাঘাতে ভাতিজা খুন
কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলায় হাওরে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে চাচার ছুরিকাঘাতে ভাতিজা নিহত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল সোমবার রাত সাড়ে আটটার দিকে উপজেলার চৌগাংগা ইউনিয়নের বিড়ার ভিটা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত মোকারিম মিয়া (২০) একই এলাকার ফারুক মিয়ার ছেলে। ঘটনার পর তাঁর চাচা বাবুল মিয়া পলাতক।
পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল রাত সাড়ে আটটার দিকে বাড়ির উঠানে বাবুল মিয়া ও তাঁর ভাতিজা মোকারিমের মধ্যে হাওরে মাছ ধরা নিয়ে ঝগড়া শুরু হয়। একপর্যায়ে ধারালো ছুরি নিয়ে মোকারিমকে আঘাত করেন বাবুল মিয়া। এ সময় গুরুতর আহত হন মোকারিম। আহত অবস্থায় মোকারিমকে স্বজনেরা উদ্ধার করে কিশোরগঞ্জ সদর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়।
খবর পেয়ে ইটনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাফর ইকবাল গতকাল দিবাগত রাত ১২টার দিকে ঘটনাস্থলে যান। ওসি বলেন, মাছ ধরা নিয়ে চাচা-ভাতিজার মাঝে ঝগড়ার সময়ে ছুরিকাঘাতে মোকারিম মারা গেছেন। লাশ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।