দিনাজপুরের গোর-এ শহীদে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত
Published: 31st, March 2025 GMT
দিনাজপুরের গোর-এ শহীদ ময়দানে সুষ্ঠুভাবে ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় হয়েছে। আজ সোমবার সকাল ৯টায় অনুষ্ঠিত হওয়া এই ঈদের জামাতে ইমামতি করেন মাওলানা মাহফুজুর রহমান। নামাজ শেষে দেশ, জাতি ও বিশ্বের মঙ্গল কামনায় মোনাজাত করা হয়।
এর আগে সকালেই জনসাধারণের জন্য মাঠে প্রবেশের গেটগুলো খুলে দেওয়া হয়। এ সময় প্রতিটি মানুষকে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশি করে প্রবেশ করানো হয়। পুরো মাঠটি ছিল সিসি ক্যামেরার নিয়ন্ত্রণাধীন। ছিল ওয়াচ টাওয়ার ও ড্রোন। যার মাধ্যমে সার্বক্ষণিক মাঠটিকে নজরদারিতে রাখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মাঠে র্যাব, পুলিশ, আনসার ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা মোতায়েন ছিল। এছাড়াও প্রতিটি কাতারে সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন ছিল।
এই জামাতে বিভিন্ন জেলার ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা অংশগ্রহণ করতে পেরে উচ্ছাস প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, দিনাজপুরের গোর-এ শহীদ ময়দান ইতিমধ্যেই বড় ঈদের ময়দান ও জামাত হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। বড় জামাতে অংশগ্রহণ করে তাদের অনুভুতিও ছিল বেশ। ঈদ জামাতকে কেন্দ্র করে মাঠে ছিল কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সবার সহযোগিতায় সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানিছেন প্রশাসনের কর্মকর্তা।
গাইবান্ধা থেকে আগত জাহিদ হাসান বলেন, এটাই গোর-এ শহীদ ময়দানে আমার প্রথম ঈদের নামাজ। অনুভুতিটা অনেক সুন্দর। এখানকার আয়োজনসহ সব বিষয় ভালো লেগেছে। আল্লাহর কাছে চাওয়া ছিল যে ফিলিস্তিনি ভাইদের জন্য চাওয়া ও দেশের জন্য। আমার ইচ্ছে ছিল যে এখানে নামাজ আদায় করবো, এবারে তা করতে পেরেছি।
গাজীপুর থেকে আসা ইমরান হোসেন বলেন, এই মাঠে নামাজ পড়ার জন্য এসেছি। এত বড় জামাতের কথা শুনেছি, টিভিতে দেখেছি। এই প্রথম এখানে নামাজ আদায় করলাম। আমাকে খুব ভালো লাগছে।
দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা থেকে আসা তারেক রহমান বলেন, এখানে লাখো মুসল্লির সমাগম হয়। এটা জেনে আমি এখানে এসেছি। এবারে রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ছিল এবং লোডশেডিং ছিল না। সেদিক দিয়ে রমজান এবং সর্ববৃহৎ ঈদগাহ মাঠে নামাজ আদায় করতে পারলাম, সব মিলিয়ে আলহামদুলিল্লাহ।
জয়পুরহাটের জাহিদ হোসেন বলেন, দিনাজপুরে আমার দাদার বাড়ি। এখানে নামাজ করতে পেরেছি এবং এখানে কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য ছিল না। রাজনৈতিক বক্তব্য থাকলে অনেকেই বিরক্ত হয়। এখানে সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নামাজ আদায় হয়েছে। এখানে আমরা ফিলিস্তিনি ভাইদের জন্য দোয়া কামনা করেছি।
দিনাজপুর শহরের লালবাগ এলাকার সৈয়দ সুলতান আহমেদ বলেন, এখানে নামাজ আদায় করতে এসেছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর ছিল, সবাইকে তল্লাশি করে প্রবেশ করিয়েছেন।
দিনাজপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মারুফাত হুসাইন বলেন, বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী এ গোর-এ শহীদ ঈদগাহ ময়দান। কথিত আছে, বাংলাদেশের মধ্যে সর্ববৃহৎ জামাত এখানে অনুষ্ঠিত হয়। আমি সর্বপ্রথম এই জামাতে অংশগ্রহণ করেছি। আমি দেখেছি, দিনাজপুরবাসী ও পার্শ্ববর্তী জেলা থেকেও মানুষজন এখানে নামাজ আদায় করতে এসেছেন। আনন্দ, উৎসাহ, উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে নামাজ আদায় হয়েছে। বিগত বছরগুলোর তুলনায় এ বছর সুশৃঙ্খলভাবে এবং বেশি মুসল্লির উপস্থিতিতে এই নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই নামাজে আমাদের পুলিশ নিরাপত্তার বলয়ে ঢেকে রেখেছিল। আমরা এক সপ্তাহ ধরে এই মাঠকে নিরাপত্তা দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করে রেখেছিলাম। কোনো ধরনের অঘটন ঘটতে পারেনি।
দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক রফিকুল ইসলাম বলেন, সর্বসাধারণ জেলা প্রশাসনকে সহযোগিতা করেছে। আমরা চেষ্টা করেছি, যেন সবাই সুষ্ঠুভাবে নামাজ আদায় করতে পারেন। এখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষজন আসেন। তাদের জন্য একটা অনুকূল বা নামাজের উত্তম পরিবেশ আমরা তৈরি করতে চাই।
দিনাজপুর জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গোর-এ শহীদ বড় ময়দানের আয়তন প্রায় ২২ একর। ২০১৭ সালে নির্মিত ৫২ গম্বুজের ঈদগাহ মিনার তৈরিতে খরচ হয়েছে ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা। ঈদগাহ মাঠটি ঐতিহাসিক নিদর্শন ও মনোরম কৃতির সৌন্দর্য ও নান্দনিক হিসেবে নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। এই ৫০ গম্বুজের দুই ধারে ৬০ ফুট করে দুটি মিনার, মাঝের দুটি মিনার ৫০ ফুট করে। ঈদগাহ মাঠের মিনারের প্রথম গম্বুজ অর্থাৎ মেহেরাব (যেখানে ইমাম দাঁড়াবেন) তার উচ্চতা ৪৭ ফিট। এর সঙ্গে রয়েছে আরও ৪৯টি গম্বুজ। এছাড়া ৫১৬ ফিট লম্বায় ৩২টি আর্চ নির্মাণ করা হয়েছে। উপমহাদেশে এত বড় ঈদগাহ মাঠ দ্বিতীয়টি নেই। পুরো মিনার সিরামিক্স দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিটি গম্বুজ ও মিনারে রয়েছে বৈদ্যুতিক লাইটিং। রাত হলে ঈদগাহ মিনার আলোকিত হয়ে উঠে।
২০১৭ সাল থেকেই প্রতিবারে এখানে ঈদের নামাজ আদায় করছেন দিনাজপুর জেলাসহ পাশ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা-উপজেলার ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। তবে করোনার প্রকোপের ফলে গত দুই বছরে এই মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়নি। করোনার প্রকোপ কমে যাওয়ার পর আবারও পরিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ঈদের জামাত।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ঈদ র জ ম ত ঈদগ হ ম ঠ পর ব শ ন বল ন র জন য গম ব জ প রথম ময়দ ন
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকায় ইইউভুক্ত দেশের ভিসা সেন্টার খোলার অনুরোধ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্ট
ঢাকা থেকে যেসব ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) সদস্য দেশের ভিসা ইস্যু করা হয় না, সেসব দেশের জন্য ঢাকায় একটি একক ভিসা সেন্টার খোলার অনুরোধ জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
সোমবার (২১ এপ্রিল) সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত মিচেল মিলারের সঙ্গে বৈঠককালে তিনি এ অনুরোধ জানান।
বৈঠকে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, রোহিঙ্গা সংকট, অভিবাসন, মানবপাচার, চোরাচালান রোধ এবং বাংলাদেশের চলমান প্রশাসনিক সংস্কার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “ইইউভুক্ত দেশগুলোতে বাংলাদেশ একটি অন্যতম প্রধান জনশক্তি রপ্তানিকারক দেশ। শিক্ষা, চিকিৎসা, ব্যবসা ও পর্যটনসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে বাংলাদেশিরা নিয়মিত এসব দেশে যাতায়াত করেন। কিন্তু ভিসা পেতে নয়াদিল্লি যেতে হওয়ায় তা সময়সাপেক্ষ, ব্যয়বহুল ও ভোগান্তিকর। ঢাকায় একটি ইইউভুক্ত দেশের ভিসা সেন্টার স্থাপন সময়ের দাবি।”
উত্তরে রাষ্ট্রদূত মিচেল মিলার জানান, তিনি এ প্রস্তাব ইইউভুক্ত দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবেন।
বৈঠকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরো বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী ও অন্যতম অংশীদার। ইইউর সহায়তায় অবকাঠামো ও অর্থনৈতিক খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে।
রাষ্ট্রদূত জানান, ইইউ বাংলাদেশের চলমান সংস্কার প্রক্রিয়াকে সমর্থন করে এবং এ ক্ষেত্রে দক্ষতা, প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা দিয়ে সহযোগিতার আগ্রহ রাখে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বাংলাদেশি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণে ইইউভুক্ত দেশে কর্মশালা আয়োজনের অনুরোধ জানান।
আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে রাষ্ট্রদূতের এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, “বর্তমানে দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সন্তোষজনক। ধীরে ধীরে এটি আরো উন্নত হচ্ছে।”
এ সময় রাষ্ট্রদূত বলেন, “বাংলাদেশে সংঘবদ্ধ অপরাধ ও অপরাধ পরিসংখ্যান নিয়ে অনেক ভুল তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। সঠিক তথ্য সরবরাহই গুজব প্রতিরোধের প্রধান উপায়।”
রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, “সরকারিভাবে বাংলাদেশে ১২ লাখ রোহিঙ্গা নিবন্ধিত হলেও বাস্তবে এর চেয়ে বেশি শরণার্থী কক্সবাজারে অবস্থান করছে, যা ওই অঞ্চলের আইনশৃঙ্খলার জন্য হুমকি। রোহিঙ্গাদের জীবনমান উন্নয়নে দেশি-বিদেশি সংস্থাগুলো কাজ করছে।”
মানবপাচার ইস্যুতে রাষ্ট্রদূত বলেন, “প্রতি বছর বাংলাদেশ ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে বিপুলসংখ্যক মানুষ ইউরোপে পৌঁছানোর চেষ্টা করে, যাদের অনেকে দালালচক্রের খপ্পরে পড়ে প্রাণ হারায় বা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।” তিনি বাংলাদেশ, লিবিয়া ও ইইউর মধ্যে ত্রিপক্ষীয় সংলাপ এবং ভবিষ্যতে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের প্রস্তাব দেন। উপদেষ্টা এতে সম্মতি প্রকাশ করে ইইউকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের অনুরোধ জানান।
বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রাজনৈতিক ও আইসিটি) খন্দকার মো. মাহাবুবুর রহমান, যুগ্মসচিব মো. জসীম উদ্দিন খান এবং ইইউ ডেলিগেশনের কাউন্সেলর জুরেট স্মলসকেট মারভেল, ফার্স্ট সেক্রেটারি (পলিটিক্যাল) সেবাস্টিয়ান রাইগার-ব্রাউনসহ উভয় পক্ষের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এনএইচ