ঈদের দিনটা কেটে যায় কাজে, নিজের জন্য আর কিছুই থাকে না
Published: 31st, March 2025 GMT
জীবনের পড়ন্তবেলায় এসে ঈদের উৎসবকে যখন রোমন্থন করি, তখন স্মৃতির গভীরে হারিয়ে যাই। ছোটবেলায় ঈদ ছিল এক অন্য রকম আনন্দের উৎসব। নতুন জামা বানাতে দরজির দোকানে মাপ দিতে যাওয়া, তারপর নতুন জামা হাতে পাওয়ার পর সেটি লুকিয়ে রাখা, যেন কেউ আগে দেখে না ফেলে! ঈদের দিন সইদের সঙ্গে গ্রামে ঘুরে বেড়ানো, ভাই–বোনদের সঙ্গে স্টুডিওতে ছবি তুলতে যাওয়া—এসব আনন্দের মুহূর্ত আজও হৃদয়ে জাগরূক। মনে হয়, সময় যেন আটকে গেছে, আমি এখনো সেই শৈশব–কৈশোরের রঙিন দিনগুলোর মধ্যেই আছি। কিন্তু যখন বাস্তবতায় ফিরি, তখন সবকিছু বিমূর্ত হয়ে যায়, ধূসর ও বিবর্ণ মনে হয়। মনের অজান্তেই চোখের কোণে জল এসে জমে।
আমাদের ছোটবেলার ঈদ আজকের মতো জৌলুশময় ছিল না। মধ্যবিত্ত যৌথ পরিবারে ছিল আর্থিক টানাপোড়েন, ছিল পরিমিত জীবনের শিক্ষা। দাদা–দাদার ভাইদের বিশাল পরিবারের সদস্যদের জন্য রান্না হতো বড় বড় পাতিলে। ঈদের এক সপ্তাহ আগেই শুরু হতো প্রস্তুতি। পুরোনো শাড়ির পাড় জোড়া লাগিয়ে দরজা–জানালার পর্দা বানানো হতো, সোডা দিয়ে কাপড় ধোয়ার আয়োজন চলত। মুড়ি, চিড়া ও খই সংগ্রহ করে রাখা হতো ঈদের সকালে মলিদা তৈরির জন্য। ময়দার সঙ্গে রং মিশিয়ে কাঁঠালপাতায় গোলা লেপে শুকিয়ে বানানো হতো পিঠা। এত কাজ, এত পরিশ্রমের মধ্যেও ক্লান্তি ছিল না; বরং ঈদের প্রস্তুতিই ছিল এক অন্য রকম আনন্দ।
ঈদের দিন ভোরে সাবান দিয়ে গোসল করে নতুন ছাপা থান কাপড়ের ফ্রক পরার আনন্দ আজও মনে পড়ে। তারপর পরিবারের মুরব্বিদের সালাম করে বয়সভেদে চার আনা থেকে এক টাকা পর্যন্ত ঈদের সালামি পাওয়া ছিল আমাদের কাছে বিরাট প্রাপ্তি! ঈদের সকালের শুরু হতো মলিদা দিয়ে, এরপর গুড়ের পায়েস কিংবা গুড়ের সেমাই। দুপুরের খাবারে থাকত মুরগির মাংস আর আলুর ঝোল, যার স্বাদ আজও স্মৃতির পাতায় অমলিন।
তারুণ্যে পা রাখার পর ঈদের উৎসব বদলে গেল। বরিশালে পড়াশোনার সময় ঈদ পায় নতুন রূপ—সেমাই, ফিরনি, জর্দা, পোলাও–কোরমার ভিড়ে ঈদ যেন ভোজন উৎসবে পরিণত হলো। এরপর কর্মজীবন, বিয়ে ও সংসারের দায়িত্ব এসে ঈদের রং পাল্টে দিল। নারীদের জন্য ঈদ মানে তখন শুধুই স্বামী–সন্তান ও সংসারের তাগিদ।
আজকের ঈদ আর আমাদের শৈশবের ঈদের মধ্যে বিস্তর ব্যবধান। একসময় ঈদ মানে ছিল সীমিত সম্পদের মধ্যেও অপরিসীম আনন্দ। এখন ঈদের বাহারি আয়োজন, নতুন কাপড়–গয়না, খাবারের জৌলুশ বেড়েছে; কিন্তু সেই আনন্দ কোথায় যেন হারিয়ে গেছে! আগে একটা সাধারণ ফ্রকেই যে আনন্দ লুকিয়ে ছিল, এখন অসংখ্য পোশাকের মধ্যেও তা খুঁজে পাওয়া যায় না। কারণ, নারীদের ঈদ শুরু হয় গভীর রাতে—ফিরনি, সেমাই, হালিম, জর্দা, চটপটিসহ বাহারি রান্নার আয়োজন করে। সকালে রান্নার কাজ শেষ হতেই দুপুরের ও রাতের খাবারের প্রস্তুতি নিতে হয়। ফলে ঈদের দিনটাই কেটে যায় কাজে, নিজের জন্য কিছুই আর থাকে না।
অধ্যাপক শাহ্ সাজেদা.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ঈদ র দ ন র জন য আনন দ
এছাড়াও পড়ুন:
আবুধাবীতে বৈশাখী উৎসব উদযাপন
সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবিতে বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদযাপন উপলক্ষ্য আবুধাবী শেখ খলিফা বিন জায়েদ বাংলাদেশ ইসলামিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় বৈশাখী উৎসব ও বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠান।
বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে জাঁকজমকভাবে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে বাংলা বর্ষবরণ ও বৈশাখী উৎসব ১৪৩২ উদযাপন করা হয়।
১৯ এপ্রিল (শনিবার) দিনব্যাপী আয়োজনে আমিরাতের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে প্রবাসীরা উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠানকে প্রাণবন্ত করে তোলে। স্কুলের অডিটোরিয়াম ছাড়াও পুরো মাঠ জুড়ে প্রবাসীদের আনন্দ উল্লাস ছিল দেখার মতো।
স্টলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ দূতাবাসের ‘দূতাবাস কর্নার’, বাংলাদেশ সমিতি আবুধাবি, জনতা ব্যাংক, বাংলাদেশ বিমান আবুধাবি, ইনডেক্স মানি এক্সচেঞ্জ, আহলিয়া এক্সচেঞ্জ সহ নানান সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের স্টলগুলো ছিল বেশ আকর্ষণীয়। প্রতিটি স্টল সাজানো হয় দেশীয় সাজে। উৎসব ঘিরে নানান ধরনের পিঠাপুলি, দেশীয় আসবাবপত্র দিয়ে সাজানো ছিল দেশীয় স্টলগুলো। দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে স্থানীয় শিল্পী ও স্কুলের শিক্ষার্থীরা পরিবেশন করেন নাচ ও গান। সকাল ১০টা হতেই মেলায় জমে মানুষের ভিড়। ফিতা কেটে এই মেলার শুভ উদ্বোধন করেন মান্যবর রাষ্ট্রদূত।
রাষ্ট্রদূত তারেক আহম্মেদের সভাপতিত্বে ও মিশন উপ প্রধান শাহানাজ আক্তার রানুর উপস্থাপনায় অনুষ্ঠিত বৈশাখী উৎসবে দূতাবাস ও কনস্যুলেট কর্মকর্তা, নিউজিল্যান্ড, মালেশিয়া, আর্মেনিয়া, গাম্বিয়া, বসনিয়াসহ ১২টি দেশের রাষ্ট্রদূত পত্নী উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। এছাড়াও স্কুল শিক্ষক, ছাত্রছাত্রী, সাধারণ প্রবাসীরা উপস্থিত হন অনুষ্ঠানে, মেলা দেখতে অনেকে আসেন প্রবাসে থাকা পরিবারের নিয়েও।
আয়োজন শেষে পুরস্কার বিতরণীর মাধ্যমে শেষ হয় দিনব্যাপী এই আয়োজন। রাষ্ট্রদূত তারেক আহম্মেদ বর্ষবরণের আয়োজনকে সকলের সহযোগিতায় সাফল্যমণ্ডিত করার জন্য সকলকে ধন্যবাদ ও আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
শাহ জাহান/হাসান/ফিরোজ