ঈদে টানা ৯দিন ছুটি থাকায় সিলেটের পর্যটন স্পটগুলোতে অন্তত ১০ লাখ পর্যটকের সমাগম ঘটবে বলে মনে করছেন পর্যটন শিল্প সংশ্লিষ্টরা। তারা মনে করছেন দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এটাই প্রথম ঈদ। আইনশৃংখলাও পরিস্থিতি ভালো। ফলে পর্যটকদের সাড়া মিলেছে ব্যাপক। 

এতে শত কোটি টাকার ব্যবসা হবে দীর্ঘ দিন থেকে ঝিমিয়ে পড়া এই শিল্পে। অন্যদিকে পর্যটকবরণে প্রস্তুত করা হয়েছে সিলেটের সবকয়টি পর্যটনকেন্দ্র। ঈদুল ফিতরের ছুটিতে আসা পর্যটক দর্শনার্থীদের ভ্রমণ শান্তিপূর্ণ ও নির্বিঘ্নে করতে সব ধরনের প্রস্ততি নিয়েছ ট্যুরিস্ট পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসন।

পর্যটন সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানাগেছে, সিলেটের হযরত শাহজালাল (রহ:) এর মাজার, শাহপরান (রহ:) এর মাজার, জাফলং, পাংতুমাই ঝর্ণা, সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা, রাতারগুল সোয়াম ফরেস্ট, কুলুম ছড়া, মালনীছড়া চা বাগান, খাদিম জাতীয় উদ্যান, ডিবির হাওর, উৎমাছড়া ঝর্ণা, লোভাছড়া, লালাখাল, বিছানাকান্দিও ভোলাগঞ্জ সাদা পাথরসহ সুনমাগঞ্জ ও মৌলভীবাবাজারের বিভিন্ন পর্যটন স্পটে বেড়াতে আসেন দর্শনার্থীরা। 

ঈদ বা অন্য যেকোন ছুটিতে প্রথমেই সিলেটকে বেছে নেন ভ্রমণ পিপাসু লোকজন। এজন্য ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে জাফলং, বিছনাকান্দি, রাতারগুল, পান্তুমাই, সাদাপাথর, লোভাছড়াসহ সবকটি পর্যটন স্পটে এখন অন্যরকম আমেজ। বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও দোকানপাটসমূহেও প্রস্তুতি চলেছ। বিভিন্ন রিসোর্টসহ হোটেল মোটেলগুলোতেও সাজ সাজ রব।

ব্যবসায়ীরা বলেছেন, বিগত বছরগুলোতে দফায় দফায় বন্যা, রাজনৈতিক উত্তাল পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন কারণে তেমন ব্যবসা হয়নি। এবার ভালো ব্যবসা হওয়ার প্রত্যাশা তাদের।

অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব)-এর সাবেক সভাপতি ও সিলেট চেম্বারের সাবেক সভাপতি খন্দকার সিপার আহমদ বলেন, “সিলেটের পর্যটন খাত ছিল লোকসানের মুখে। এবার সেই ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা চলছে। এবার দীর্ঘ ছুটি হওয়ার কারণে পর্যটক উপস্থিতিও বাড়বে কয়েকগুণ। এই সময়টাতে ডাকাতি-ছিনতাই প্রতিরোধে পুলিশকে সতর্ক থাকতে হবে। অন্তত ১০ লাখ পর্যটক উপস্থিতির সম্ভাবনা রয়েছে এবার।”

সিলেটের পর্যটন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে জাফলং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেখানকার গ্রিন রিসোর্টের স্বত্বাধিকারী বাবলু বখত বলেন, “ঈদুল ফিতরে সাধারণত ঢল নামে পর্যটক দর্শনার্থীদের। এবারো পর্যটকদের আনাগোনা আগেকার মতো অথবা বেশি হতে পারে। এরই লক্ষ্যে আমাদের কাস্টমারদের কথা বিবেচনা করে আমরা বাড়তি ব্যবস্থা নিয়েছি।”

হোটেল ব্যবসায়ী আবুল কালাম জানান, ভ্রমণে আসা পর্যটক দর্শনার্থীদের নির্ভেজাল খাবার পরিবেশন করে থাকি। আমরা বহু লোকসান গুনেছি, এবার অন্তত লাভ দেখব বলে আশা করি।

যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ার কারণে সবচেয়ে বেশি পর্যটক সমাগম ঘটে সাদাপাথরে। কোম্পানীগঞ্জ ট্যুরিস্ট ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আবিদুর রহমান জানান, এবারো তাই হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তিনি সাদাপাথর পর্যটক বরণে প্রস্তুত বলে জানান।

সিলেট হোটেল অ্যান্ড গেস্ট হাউস ওনার্স গ্রুপের সাবেক সভাপতি সুমাত নূরী চৌধুরী জুয়েল জানান, এবার বিভিন্ন হোটেলে ব্যাপক হারে বুকিং হয়েছে। এরজন্য তারা ব্যবসা নিয়ে আশাবাদী। তিনি বলেন, “একসময় পদ্মা সেতু উদ্বোধনের প্রভাব পড়েছিল সিলেটে। আমরা মনে করি, মানুষ আবার সিলেটমুখী হয়েছে। এর সুফল পাবেন সিলেটের ব্যবসায়ীরা।”

দি সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) ফয়েজ হাসান ফেরদৌস জানান, এই ঈদে পর্যটন খাত থেকে শত কোটি টাকার ব্যবসার আশা করা হচ্ছে। 

তিনি বলেন, “আমরা মনে করি প্রবাসী অধ্যুসিত সিলেটে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটলে আমাদের প্রবাসী বর্তমান প্রজন্মকে সিলেটমুখি করা যাবে। এরজন্য রাস্তাঘাটের উন্নয়ন জরুরি।”

সিলেট জেলা পুলিশের মিডিয়া ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা মো.

সম্রাট তালুকদার জানান, পর্যটকদের নিরাপত্তায় প্রতিটি স্পটে থাকছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। টুরিস্ট পুলিশের সাথে সমন্বয় করে কাজ করা হবে। পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্য মোতায়ন করা হবে।

সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ বলেন, “সিলেটের পর্যটন স্পটসমূহে পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা বিধানে এবং তাদের ভ্রমণ নির্বিঘ্নকরণে সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসন পদক্ষেপ নিয়েছে। আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীও কাজ করছে। সকল মৌসুমে সিলেটের পর্যটন কেন্দ্রগুলো সজাগ থাকে। এবারো পর্যটকরা সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে পারবেন।”

ঢাকা/নূর/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রস ত ব যবস ভ রমণ

এছাড়াও পড়ুন:

গ্রিসের পর্যটন দ্বীপ সান্তোরিনির নিচে ঘুমিয়ে আছে ভয়ংকর আগ্নেয়গিরি

গ্রিসের জনপ্রিয় পর্যটন দ্বীপ সান্তোরিনি। যেখানে সাদা-নীল বাড়ি, সূর্যাস্ত আর নীল সমুদ্রের অসাধারণ প্রাকৃতিক দৃশ্যের টানে প্রতিবছর হাজার হাজার পর্যটক ভিড় করেন। কিন্তু অনেকের স্বপ্নের এই দ্বীপের নিচেই লুকিয়ে আছে এক ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি, যা আবারও ভয়াবহ বিস্ফোরণে ফেটে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা।

প্রায় ৩ হাজার ৬০০ বছর আগে আগ্নেয়গিরির বিশাল এক বিস্ফোরণে সান্তোরিনি দ্বীপের বর্তমান আকৃতি তৈরি হয়। সেই বিস্ফোরণে দ্বীপের মাঝখান দেবে গিয়ে একটি বিশাল গর্ত বা কালডেরা সৃষ্টি হয়। এর পর এই অঞ্চলটিতে বড় আকারের ভূমিকম্প আর দেখা যায়নি।

গত বছরের শুরুর দিক থেকে কয়েকবার ভূমিকম্পে দ্বীপটি কেঁপে ওঠায় নতুন করে সামনে এসেছে দ্বীপটির নিচে ঘুমিয়ে থাকা আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুৎপাতের সম্ভাবনা ও তার ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এ ধরনের ভূমিকম্প ভূগর্ভের ম্যাগমা চেম্বারে চাপ বাড়ার লক্ষণ হতে পারে।

ব্রিটেনের গবেষণা জাহাজ ‘আরআরএস ডিসকভারি’ থেকে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানীদের একটি দল সান্তোরিনির সমুদ্রতলের আগ্নেয়গিরি ও হাইড্রো-থার্মাল ভেন্ট নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন এখন। চলমান এ গবেষণার নেতৃত্ব দিচ্ছেন ব্রিটেনের ন্যাশনাল ওসিওগ্রাফি সেন্টারের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ইসাবেল ইয়ো। তিনি জানান, এই গবেষণার মূল উদ্দেশ্য হলো আগ্নেয়গিরির আচরণ বিশ্লেষণ করে কখন বড় বিস্ফোরণের আশঙ্কা তৈরি হতে পারে তা বুঝতে পারা। সান্তোরিনি দ্বীপের ৭ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে সাগরের নিচে থাকা আরেকটি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি কলোম্বো নিয়েও পর্যবেক্ষণ করছেন তারা।

চলমান এই গবেষণায় রোবটের মাধ্যমে সাগরের ৩০০ মিটার নিচ থেকে গরম পানি, গ্যাস ও আগ্নেয় পাথরের নমুনা সংগ্রহ করছেন তারা। এ ছাড়া ভূকম্পন এবং ভেতরে থাকা জ্বলন্ত লাভার গতিবিধি বোঝার জন্য ভূতাত্ত্বিক মানচিত্রও তৈরি করছেন গবেষকরা। এই গবেষণা শেষে পাওয়া তথ্য গ্রিস সরকারকে সরবরাহ করা হবে। গ্রিসের সিভিল প্রটেকশন এজেন্সি এই গবেষণার ফল বিশ্লেষণ করে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করছে। অধ্যাপক পারাস্কেভি নোমিকো– যিনি নিজে সান্তোরিনির বাসিন্দা এবং সরকারিভাবে জরুরি পরিকল্পনায় যুক্ত– বিবিসিকে বলেন, ‘এই গবেষণা আমাদের জানাবে, কোথায় কতটা ঝুঁকি এবং কোন এলাকায় আগ্নেয়গিরি জেগে উঠলে সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে হবে।’

সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের ফলে সান্তোরিনির ১১ হাজার বাসিন্দার প্রায় অর্ধেকই দ্বীপ ছেড়ে চলে গেছেন। পর্যটন খাতেও এর প্রভাব পড়েছে। অনেকেই তাদের পূর্বনির্ধারিত ভ্রমণ পরিকল্পনা বাতিল করেছেন। স্থানীয় ফটোগ্রাফার ইভা রেন্ডল বলেন, ‘আমার অনেক ক্লায়েন্ট তাদের শুটিং বাতিল করেছেন। আগে এপ্রিল থেকেই কাজ শুরু হতো; এবার মে পর্যন্ত কেউ আসেনি।’

তবে দ্বীপ ছেড়ে চলে যাওয়া অনেকেই জায়গাটির অতুলনীয় সৌন্দর্যের প্রেমে পড়ে আবার ফিরেও আসছেন। সান্তোরিনিতে বিয়ের ছবি তুলতে আসা এক নবদম্পতি বলেন, ‘আমরা ইচ্ছা করেই আগ্নেয়গিরির পাশে বিয়ে করতে চেয়েছি!’ এখন পর্যন্ত তাৎক্ষণিক বিস্ফোরণের আশঙ্কা না থাকলেও বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এটি ‘শুধু সময়ের ব্যাপার।’ বিবিসি।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ