চট্টগ্রাম নগরে ঈদের প্রধান জামাত আজ সোমবার সকাল আটটায় জমিয়াতুল ফালাহ জাতীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে অংশ নেন হাজারো মুসল্লি।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত প্রধান ঈদ জামাতে অন্তর্বর্তী সরকারের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন মেয়র শাহাদাত হোসেন, সাবেক মেয়র মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন। এ ছাড়া বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ জামাতে শরিক হন।

অন্যান্য বছর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদে ঈদের নামাজে অংশ নিলেও এবার তাঁদের কাউকে দেখা যায়নি।

ঈদের দিন প্রথম ও প্রধান জামাতে ইমামতি করেন জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদের খতিব সৈয়দ আবু তালেব মোহাম্মদ আলাউদ্দীন আল কাদেরী। নামাজ শেষে দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি, সমৃদ্ধি ও ঐক্য কামনা করে মোনাজাত করা হয়।

ঈদের প্রধান জামাত শুরুর আগে নগরের বিভিন্ন এলাকা থেকে শত শত মানুষ মসজিদে আসতে শুরু করেন। কেউ একা, কেউ কেউ দল বেঁধে ঈদের মসজিদে আসেন। শিশু-কিশোররা আসে অভিভাবকদের সঙ্গে। সবার পরনে ছিল নতুন পায়জামা-পাঞ্জাবি। ঈদের নামাজ শেষে মুসল্লিরা একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি ও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

ঈদের নামাজ শেষে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, মানুষ এবার সুষ্ঠুভাবে ঈদ উদ্যাপন করছে। বড় ধরনের কোনো ঝামেলা হয়নি। এবার মানুষ শান্তিতে রোজা পালন করেছেন। ঈদও নির্বিঘ্নে উদ্যাপন করতে পারছেন। এ জন্য আল্লাহের দরবারে শুকরিয়া জানান তিনি।

পরিচ্ছন্ন চট্টগ্রাম শহর ও জলাবদ্ধতামুক্ত নগর গড়তে চট্টগ্রামবাসীর সহায়তা চান চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, ঈদের আনন্দ সবখানে ছড়িয়ে পড়ুক। ধনী-গরিবের মধ্যে যাতে কোনো বৈষম্য না থাকে। সুখী, সমৃদ্ধিশালী ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে সবাই মিলে কাজ করার প্রত্যয় জানান। এ ছাড়া চট্টগ্রামকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার পাশাপাশি জলাবদ্ধতামুক্ত নগর গড়তে যেখানে-সেখানে ময়লা-আবর্জনা ও প্লাস্টিক সামগ্রী না ফেলতে নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানান মেয়র শাহাদাত হোসেন।

জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদে সকাল পৌনে ৯টায় ঈদের দ্বিতীয় জামাত অনুষ্ঠিত হয়। সেখানেও হাজারো ধর্মপ্রাণ মানুষ অংশ নেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ত মসজ দ

এছাড়াও পড়ুন:

গ্রিসের পর্যটন দ্বীপ সান্তোরিনির নিচে ঘুমিয়ে আছে ভয়ংকর আগ্নেয়গিরি

গ্রিসের জনপ্রিয় পর্যটন দ্বীপ সান্তোরিনি। যেখানে সাদা-নীল বাড়ি, সূর্যাস্ত আর নীল সমুদ্রের অসাধারণ প্রাকৃতিক দৃশ্যের টানে প্রতিবছর হাজার হাজার পর্যটক ভিড় করেন। কিন্তু অনেকের স্বপ্নের এই দ্বীপের নিচেই লুকিয়ে আছে এক ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি, যা আবারও ভয়াবহ বিস্ফোরণে ফেটে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা।

প্রায় ৩ হাজার ৬০০ বছর আগে আগ্নেয়গিরির বিশাল এক বিস্ফোরণে সান্তোরিনি দ্বীপের বর্তমান আকৃতি তৈরি হয়। সেই বিস্ফোরণে দ্বীপের মাঝখান দেবে গিয়ে একটি বিশাল গর্ত বা কালডেরা সৃষ্টি হয়। এর পর এই অঞ্চলটিতে বড় আকারের ভূমিকম্প আর দেখা যায়নি।

গত বছরের শুরুর দিক থেকে কয়েকবার ভূমিকম্পে দ্বীপটি কেঁপে ওঠায় নতুন করে সামনে এসেছে দ্বীপটির নিচে ঘুমিয়ে থাকা আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুৎপাতের সম্ভাবনা ও তার ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এ ধরনের ভূমিকম্প ভূগর্ভের ম্যাগমা চেম্বারে চাপ বাড়ার লক্ষণ হতে পারে।

ব্রিটেনের গবেষণা জাহাজ ‘আরআরএস ডিসকভারি’ থেকে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানীদের একটি দল সান্তোরিনির সমুদ্রতলের আগ্নেয়গিরি ও হাইড্রো-থার্মাল ভেন্ট নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন এখন। চলমান এ গবেষণার নেতৃত্ব দিচ্ছেন ব্রিটেনের ন্যাশনাল ওসিওগ্রাফি সেন্টারের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ইসাবেল ইয়ো। তিনি জানান, এই গবেষণার মূল উদ্দেশ্য হলো আগ্নেয়গিরির আচরণ বিশ্লেষণ করে কখন বড় বিস্ফোরণের আশঙ্কা তৈরি হতে পারে তা বুঝতে পারা। সান্তোরিনি দ্বীপের ৭ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে সাগরের নিচে থাকা আরেকটি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি কলোম্বো নিয়েও পর্যবেক্ষণ করছেন তারা।

চলমান এই গবেষণায় রোবটের মাধ্যমে সাগরের ৩০০ মিটার নিচ থেকে গরম পানি, গ্যাস ও আগ্নেয় পাথরের নমুনা সংগ্রহ করছেন তারা। এ ছাড়া ভূকম্পন এবং ভেতরে থাকা জ্বলন্ত লাভার গতিবিধি বোঝার জন্য ভূতাত্ত্বিক মানচিত্রও তৈরি করছেন গবেষকরা। এই গবেষণা শেষে পাওয়া তথ্য গ্রিস সরকারকে সরবরাহ করা হবে। গ্রিসের সিভিল প্রটেকশন এজেন্সি এই গবেষণার ফল বিশ্লেষণ করে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করছে। অধ্যাপক পারাস্কেভি নোমিকো– যিনি নিজে সান্তোরিনির বাসিন্দা এবং সরকারিভাবে জরুরি পরিকল্পনায় যুক্ত– বিবিসিকে বলেন, ‘এই গবেষণা আমাদের জানাবে, কোথায় কতটা ঝুঁকি এবং কোন এলাকায় আগ্নেয়গিরি জেগে উঠলে সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে হবে।’

সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের ফলে সান্তোরিনির ১১ হাজার বাসিন্দার প্রায় অর্ধেকই দ্বীপ ছেড়ে চলে গেছেন। পর্যটন খাতেও এর প্রভাব পড়েছে। অনেকেই তাদের পূর্বনির্ধারিত ভ্রমণ পরিকল্পনা বাতিল করেছেন। স্থানীয় ফটোগ্রাফার ইভা রেন্ডল বলেন, ‘আমার অনেক ক্লায়েন্ট তাদের শুটিং বাতিল করেছেন। আগে এপ্রিল থেকেই কাজ শুরু হতো; এবার মে পর্যন্ত কেউ আসেনি।’

তবে দ্বীপ ছেড়ে চলে যাওয়া অনেকেই জায়গাটির অতুলনীয় সৌন্দর্যের প্রেমে পড়ে আবার ফিরেও আসছেন। সান্তোরিনিতে বিয়ের ছবি তুলতে আসা এক নবদম্পতি বলেন, ‘আমরা ইচ্ছা করেই আগ্নেয়গিরির পাশে বিয়ে করতে চেয়েছি!’ এখন পর্যন্ত তাৎক্ষণিক বিস্ফোরণের আশঙ্কা না থাকলেও বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এটি ‘শুধু সময়ের ব্যাপার।’ বিবিসি।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ