বেলুচিস্তানে জাতিগত অসন্তোষ অনেক দিনের। সেই অসন্তোষ এখন ক্রমে অগ্নিকাণ্ডের আকার নিচ্ছে।

মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে ট্রেন ছিনতাইয়ের ঘটনায় পাকিস্তানের এ প্রদেশ বিশ্বজুড়ে বেশ নজর কেড়েছিল। এখন চলছে, বড় আকারে নাগরিক প্রতিবাদ।

ছিনতাই হওয়া জাফর এক্সপ্রেস নামের ট্রেন ও তার যাত্রীদের উদ্ধার অভিযানে বিপুল মানুষ মরেছে সেখানে। সরকার বলছে, সংখ্যাটা প্রায় ১০০। বিএলএ (বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি) গেরিলারা বলছে, তারা সরকারি জওয়ানই মেরেছে প্রায় ২০০। ট্রেনে সাড়ে ৪৫০ যাত্রীর অর্ধেক ছিলেন বিভিন্ন রক্ষীদলের সদস্য।

বিশ্বজুড়ে জাফর এক্সপ্রেস হাইজ্যাকের ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল। বেলুচ গেরিলারা সমরবিদ্যায় কীভাবে এত দক্ষ হলো, সে নিয়ে অনুসন্ধানের শেষ নেই। পাকিস্তান সরকারের ইঙ্গিত ভারত ও আফগান সরকারের দিকে।

ছিনতাইয়ের ঘটনার পর বেলুচিস্তানজুড়ে শুরু হয়েছে ব্যাপক দমন-পীড়ন। ছিনতাই অধ্যায় দমনকালে নিহত বেলুচদের জানাজা পড়ায়ও বাধা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তাতে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হলে পুলিশ সেখানেও গুলি করে। তাতেও অনেক মানুষ মরেছেন। দ্বিতীয় দফা রক্তপাতের প্রতিবাদে এখন শুরু হয়েছে কোয়েটামুখী লংমার্চ। এরই মধ্যে বেলুচ নাগরিক আন্দোলনের বিখ্যাত নেত্রী মাহরাঙ বেলুচকে আটক করা হয়েছে।

গ্রেপ্তারের আগে ডা.

মাহরাঙ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলেন। বাংলাদেশে যাকে হরতাল বলে, বেলুচিস্তানে সেটাকে বলে ‘শাটার বন্ধ’ ও ‘চাক্কা জ্যাম’ কর্মসূচি। মাহরাঙ সেটাই ঘোষণা করেছেন। তাঁর আটকের মানে সরকার অহিংস ধারার আন্দোলন-সংগ্রামের আর সুযোগ রাখছে না। টেলিফোন বন্ধ থাকায় ট্রেন ছিনতাইয়ের পর প্রদেশজুড়ে ঠিক কী ঘটছে, তার বিস্তারিত জানার উপায় নেই। পুরো প্রদেশ ‘সার্ভিলেন্স স্টেটে’ পরিণত হয়েছে।

বর্তমান অবস্থায় নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর অহিংস উপায়ে কাজ চালানো কঠিন এখানে। বেলুচ ন্যাশনাল পার্টির একটা অংশের প্রধান হলেন আখতার মেঙ্গল। এ সপ্তাহের লংমার্চের তারাই আয়োজক। ট্রেন হাইজ্যাক–পরবর্তী পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি দৈনিক ডনকে বলছিলেন, ‘আমাদের প্রতি পশুর মতো আচরণ করা হচ্ছে।’ বেলুচিস্তানে প্রাদেশিক সরকার চালাচ্ছে এখন ভুট্টোদের পিপলস পার্টি। জুলফিকার আলী ভুট্টো এ দলের প্রধান থাকাকালেই ১৯৭০–এর নির্বাচনের পর পূর্ব পাকিস্তানে দমন-পীড়ন শুরু হয়েছিল। এ কারণেও কেউ কেউ বলছেন, বেলুচিস্তান ‘দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বাংলাদেশ’ হচ্ছে কি না।

চলমান পরিস্থিতির একটা বড় কারণ বেলুচরা পাকিস্তানের জাতীয় নীতিনির্ধারণে প্রত্যাশিত গুরুত্ব পায়নি। আবার নিজ প্রদেশ কীভাবে পরিচালিত হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার বেলাতেও ইসলামাবাদের মতামতই শেষ কথা।

এখানকার আজকের সংকটে ১৯৭১ সালের কথা বারবার এলেও উভয় বাস্তবতার সবটুকু একরকম নয়। পূর্ব পাকিস্তান ছিল পশ্চিম পাকিস্তান থেকে কয়েক শ কিলোমিটার দূরে। বেলুচিস্তান সে রকম বিচ্ছিন্ন নয়। পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শাসকেরা ও সশস্ত্র বাহিনী যোগাযোগের যে সমস্যায় পড়ত, বেলুচিস্তানে সেটা নেই। ফলে এখানে তারা কোণঠাসা হতে প্রস্তুত নয়।

পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও চীনের নাগরিকদের বিরুদ্ধে চোরাগোপ্তা হামলায় কিছু সফলতা পেলেও বিএলএ গেরিলাদের একটা মুশকিলের দিক হলো বড় আকারে গেরিলা বাহিনী গড়ার মতো জনশক্তি তাদের নেই। তাদের শক্তির তুলনায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী অনেক বড় প্রতিপক্ষ। আশপাশের কোনো শক্তিশালী দেশ থেকে তাদের সাহায্য পাওয়ারও সুযোগ নেই। ফলে গেরিলাযুদ্ধকে একটা জাতীয় মুক্তিযুদ্ধে রূপান্তর করে বিজয়ী হওয়া বেলুচদের জন্য দুরূহ।

আবার বেলুচিস্তানে যুদ্ধ করার মতো বেলুচ জনবল পাকিস্তানের অ-বেলুচদের তুলনায় সামান্য। এলাকাটা পূর্ব পাকিস্তানের মতো বন-ঝোপঝাড়-নদীনালাময়ও নয়। মূলত মরুভূমিধর্মী এবং খোলামেলা পাহাড়ি এলাকা। গেরিলাদের লুকিয়ে থাকার মতো জায়গা কম। এ রকম বেলুচিস্তান ‘দ্বিতীয় বাংলাদেশ’ হওয়া একটা অতিদূরবর্তী কল্পনা। তবে জাফর এক্সপ্রেস ছিনতাই হওয়ার পর থেকে পাকিস্তানের আর্মি ও সরকার উভয়ে এ ঘটনার পেছনে ভারতের ভূমিকার কথা বলছে। তারা এ–ও বলছে, ১৯৭১ সালে ভারত যেভাবে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের সহায়তা করেছে, এখন সেটাই করছে বেলুচদের।

এ রকম দাবিতে মুশকিলের দিক হলো, পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের তিন দিকে সীমান্ত ছিল। সহযোগিতা করতে পেরেছিল তারা। কিন্তু বেলুচিস্তানের সঙ্গে ভারতের সরাসরি সীমান্ত নেই। বেলুচদের সীমান্ত হলো ইরান ও আফগানিস্তানের সঙ্গে।

ইরান রাষ্ট্র হিসেবে তার এলাকার বেলুচ স্বাধীনতাকামীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত। ফলে সে পাকিস্তানভুক্ত বেলুচদের একই লক্ষ্যে সাহায্য করবে, এমন ভাবা যায় না। আফগানিস্তানের এখনকার শাসকদেরও বেলুচ স্বাধীনতাকামীদের পছন্দ করার কারণ নেই। আদর্শ ও সংস্কৃতিতে বেলুচদের সঙ্গে পশতু তালেবানদের মিল নেই। বেলুচ স্বাধীনতাসংগ্রামীরা অনেকটাই ধর্মনিরপেক্ষ জায়গায় দাঁড়িয়ে লড়ছে। তালেবানদের সেটা পছন্দ হওয়ার কারণ নেই। আবার ইরান ও আফগানিস্তানের এখনকার শাসকেরা ভারতের এতটা ঘনিষ্ঠও নয় যে ভারতের সাহায্য নিয়ে তারা বেলুচদের হাতে দেবে। সুতরাং পাকিস্তানের এ দাবি তেমন সাক্ষ্যপ্রমাণ পায়নি যে জাফর এক্সপ্রেস ছিনতাই বা অন্যান্য গেরিলা আক্রমণে ভারত সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।

পাকিস্তানের দিক থেকে বেলুচ গেরিলাদের দমনে একটা মুশকিলের দিক হলো ইরান ও আফগানিস্তানের সঙ্গে তার সম্পর্ক এখন মোটেও ভালো নেই। ফলে তেহরান ও কাবুলের শাসকদের সঙ্গে মিলে যৌথভাবে বেলুচদের দমন করা যাচ্ছে না। বিশেষ করে পশতুপ্রধান আফগান তালেবান সরকারের সঙ্গে ইসলামাবাদের সম্পর্ক খুব খারাপ যাচ্ছে। বেলুচদের নিয়ে কিছুদিন আগে ইরান ও পাকিস্তানের মধ্যেও মিসাইল ছোড়াছুড়ি হয়ে গেল। এসব মিলে বলা যায়, আঞ্চলিকভাবে গণচীন ছাড়া বেলুচ প্রশ্নে পাকিস্তানের শাসক ও সেনাবাহিনীর পাশে আর কেউ নেই। বিপরীতে বেলুচদের পাশে ইরান ও আফগানিস্তানের বেলুচদের সহানুভূতি আছে। আর ভারত সুযোগ পেলে সরাসরি না হোক, পরোক্ষ কিছু সহায়তা বেলুচদের যে করবেই, তাতে সন্দেহ নেই। সেটা তার পাকিস্তানবৈরী পররাষ্ট্রনীতির কারণে হবে।

বেলুচ বিদ্রোহ প্রশ্নে চীন পাকিস্তানের পাশে আছে। প্রদেশটিতে রয়েছে চীনের বিপুল বিনিয়োগ। তারা সেখানে অর্থনৈতিক করিডর বানিয়েছে। তাদের বৈশ্বিক বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের বড় এক ইউনিট এটা। বেলুচদের গদার সমুদ্রবন্দর চীনাদের কাজেই বেশি ব্যবহৃত হয়। এসব অর্থনৈতিক স্বার্থ নির্বিঘ্ন রাখতেই বেইজিং এখানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সফলতা চায়। তারা এখানে নিজ সৈনিকদেরও আনতে চায় নিজেদের জানমাল রক্ষায়। তাদের বিনিয়োগ রক্ষার জন্য পাকিস্তান সরকার যে বেলুচদের সঙ্গে সংঘাত বাড়িয়ে চলেছে, অসংখ্য বেলুচ তরুণ-তরুণী যে গুম হয়ে যাচ্ছে, সে বিষয়ে চীনের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা যায় না।

বেলুচিস্তান পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় প্রদেশ। দেশের প্রায় ৪৪ শতাংশ। জায়গার তুলনায় এখানে লোকসংখ্যা কম—এক কোটি মতো। অথচ মাটির নিচে খনিজ আছে অনেক। আছে সুন্দর একটা সমুদ্র উপকূল। খনিজগুলো তোলা এবং বন্দর ব্যবহার করে ব্যবসাপাতি বাড়াতে বড় বিনিয়োগ দরকার ছিল। সে জন্যই চীনকে এখানে এনেছে ইসলামাবাদের সরকার। কিন্তু স্থানীয় এতসব অর্থনৈতিক সুবিধা কাজে লাগাতে গিয়ে পাকিস্তানের শাসকেরা বেলুচদের তাতে যুক্ত করেনি। দরিদ্র বেলুচরা তাই পাকিস্তানের শাসকদের পাশাপাশি চীনেরও বিরুদ্ধে। চীন এখানে খুবই অপছন্দের শিকার। অনেক চীনা নাগরিক বেলুচদের হাতে মারাও পড়েছেন।

তবে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও চীনের নাগরিকদের বিরুদ্ধে চোরাগোপ্তা হামলায় কিছু সফলতা পেলেও বিএলএ গেরিলাদের একটা মুশকিলের দিক হলো বড় আকারে গেরিলা বাহিনী গড়ার মতো জনশক্তি তাদের নেই। তাদের শক্তির তুলনায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী অনেক বড় প্রতিপক্ষ। আশপাশের কোনো শক্তিশালী দেশ থেকে তাদের সাহায্য পাওয়ারও সুযোগ নেই। ফলে গেরিলাযুদ্ধকে একটা জাতীয় মুক্তিযুদ্ধে রূপান্তর করে বিজয়ী হওয়া বেলুচদের জন্য দুরূহ। কিন্তু সেই অধরা স্বপ্নের পেছনে ছুটতে বেলুচ তরুণ-তরুণীদের বাধ্য করছে প্রদেশটির অসহনীয় বাস্তবতা। পাকিস্তান অন্তর্ভুক্তিমূলক একটা রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে না ওঠা এ বাস্তবতা তৈরি করেছে। এ রকম সংকট দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সব রাষ্ট্রে আছে। এ সংকটে পড়েই একদা পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন হয়ে বাংলাদেশ হলো। ১৯৭১-এর মার্চ ও ২০২৪-এর মার্চের শিক্ষাটা প্রায় একই আছে।

উপনিবেশিক অতীতের ভেতর বেলুচদের স্বাধীনতার দাবির আরেকটা শক্ত সমর্থন আছে। ব্রিটিশ আমলে তাদের এলাকায় আপেক্ষিক স্বাধীনতা ছিল। তিনটি প্রিন্সলি স্টেট ছিল এখানে। কালাত নামের রাজ্যটি ছিল বেশ বড়সড়, ১৯৪৮ সালে যাকে ‘জোরপূর্বক’ পাকিস্তান রাষ্ট্রভুক্ত করা হয় বলে স্থানীয়দের দাবি। পাশাপাশি বেলুচরা এ–ও মনে করে, বেলুচিস্তান বলতে যে ভূখণ্ড বোঝায়, সেটা তিনটি দেশে বিভক্ত হয়ে আছে। সেই পুরোনো অঞ্চল এক করাও তাদের অধরা স্বপ্নের অংশ।

এ রকম স্বপ্নের জাল বুনে চলেছে আফগানিস্তান থেকে বার্মা পর্যন্ত বহু জাতি। এসবই হলো সাত থেকে আট দশক আগে কৃত্রিম সীমান্ত সৃষ্টির বেদনাদায়ক জের।

ঐতিহাসিক সেই বেদনার সূত্রে এ অঞ্চল সংঘাত-সংহতির নতুন বিশ্ব–ভরকেন্দ্র হয়ে ওঠার লক্ষণ আছে। কিন্তু এ অঞ্চলের ‘রাষ্ট্রনায়কেরা’ সেই শঙ্কা কমাতে জাতিগত অসন্তোষ থামাচ্ছেন না কেন?

আলতাফ পারভেজ গবেষক

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ব ধ নত ন সরক র ছ নত ই এ রকম র একট

এছাড়াও পড়ুন:

পঞ্চগড়ে মামলার রায় শুনে আদালত চত্বরে বিক্ষোভের ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ

পঞ্চগড়ে হত্যা মামলার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আদালত চত্বরে বাদীপক্ষের লোকজনের বিক্ষোভ, আদালতের বিষয়ে সম্মানহানি ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য এবং গণমাধ্যমকর্মীদের মিথ্যা তথ্য দেওয়ার বিষয়ে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে জেলা আইনজীবী সমিতি। বুধবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে পঞ্চগড় জেলা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মো. আদম সুফি তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ প্রতিবাদ জানান।

এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার সকালে আইনজীবী সমিতির জরুরি সভা আহ্বান করা হয়েছিল। মো. আদম সুফির সভাপতিত্বে ওই সভায় জেলা জজ আদালতের আইনজীবী আইবুল আলম আঙ্গুরকে প্রধান করে চারজন আইনজীবীর সমন্বয়ে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে জেলা জজ আদালতের গভর্নমেন্ট প্লিডার (জিপি) আব্দুল বারী, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) খলিলুর রহমান, পঞ্চগড় জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি মির্জা নাজমুল ইসলাম কাজলসহ অন্য আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন। লিখিত বক্তব্যে মো. আদম সুফি বলেন, গত ২০ মার্চ পঞ্চগড় জেলা ও দায়রা জজ আদালতে একটি মামলার রায় প্রকাশের পর উচ্ছৃঙ্খল কিছু ব্যক্তি আদালতের বিষয়ে সম্মানহানিকর ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দেন। ওই বক্তব্যে পঞ্চগড় জেলা আইনজীবী সমিতি দুঃখ প্রকাশসহ তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটি বস্তুনিষ্ঠ নয়। কিছু উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তি আদালত ও আইনজীবীদের সম্মান ক্ষুণ্ন করার হীন উদ্দেশ্যে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন।

গত রোববার দুপুরে পঞ্চগড় জেলা জজ আদালত চত্বরে জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে মারামারির ঘটনায় পক্ষে-বিপক্ষে করা দুটি মামলার আসামিদের বেকসুর খালাসের রায় শুনে আদালত চত্বরে বিক্ষোভ করেন হত্যা মামলার বাদীপক্ষের লোকজন। বিক্ষোভে হত্যা মামলার বাদীপক্ষের লোকজন ন্যায়বিচার পাননি দাবি করে আদালতের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় আদালতে আসা উৎসুক লোকজন সেখানে ভিড় করেন। বেশ কিছুক্ষণ চেষ্টার পর পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

সংবাদ সম্মেলনে মো. আদম সুফি আরও বলেন, রায় ঘোষণার পর আদালতের উদ্দেশে বিক্ষোভকারী যে ধরনের স্লোগান দিয়েছেন, তা আদালতকে অসম্মান করার শামিল। এ ছাড়া বিভিন্ন সাংবাদিকদের কাছে যেভাবে টাকাপয়সা লেনদেনের কথা বলছিলেন, তা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। পঞ্চগড়ে বিচারকেরা সুশৃঙ্খল পরিবেশে তাঁদের বিচারকার্য পরিচালনা করবেন এবং জেলার মানুষ ন্যায়বিচার পাবেন এমনটাই তাঁদের কামনা। কিন্তু কেউ যদি এই সম্মান আর আস্থার জায়গাটিতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করে, তা খুবই দুঃখজনক। এ ব্যাপারে তিনি গণমাধ্যমকর্মীদেরও সহায়তা চান।

আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালের ৩০ মার্চ জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার দেবনগর ইউনিয়নের ঝালিঙ্গিগছ এলাকায় কসির উদ্দিনের পরিবারের সঙ্গে প্রতিবেশী সামসুল হকের পরিবারের লোকজনের জমি নিয়ে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অনেকে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। পরদিন সকালে কসির উদ্দিনের ছেলে মো. এরশাদ রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ওই দিনই রাতে এরশাদের বাবা কসির উদ্দিন বাদী হয়ে তেঁতুলিয়া থানায় ওই ঘটনায় সামসুল হক পক্ষের ২১ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন।

ঘটনার প্রায় আড়াই মাস পর ২০১১ সালের ১৪ জুন অপর পক্ষ সামসুল হকের স্ত্রী রনজিনা বেগম পঞ্চগড় আদালতে কসির উদ্দিন পক্ষের ১৯ জনকে আসামি করে একই ঘটনায় একটি পাল্টা মামলা করেন। দুটি মামলার কার্যক্রম একই আদালতে চলছিল। দীর্ঘদিন আইনি প্রক্রিয়া শেষে কোনো পক্ষই অভিযোগ প্রমাণ করতে না পারায় গত রোববার দুপুরে পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এস এম রেজাউল বারী দুটি মামলার সব আসামিকেই বেকসুর খালাসের রায় দেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ