মোঘল আমলের কায়দায় ঢাকায় ঈদ আনন্দ মিছিল
Published: 31st, March 2025 GMT
ঢাকায় সুলতানি মোঘল আমলের কায়দায় ঈদ আনন্দ মিছিল হয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই আনন্দ মিছিলে অংশ নেন অসংখ্য মানুষ, যারা একত্রিত হয়ে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করেন।
সোমবার (৩১ মার্চ) সকাল সাড়ে ৮টায় ঢাকার শেরে বাংলা নগরের পুরনো বাণিজ্যমেলার মাঠে ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। জামাত শেষে সকাল ৯টায় সেখান থেকেই শুরু হয় বর্ণাঢ্য ঈদ আনন্দ মিছিল।মিছিলটি আগারগাঁওয়ের পুরাতন বাণিজ্য মেলার মাঠের সামনে থেকে শুরু হয়ে প্রধান সড়ক ধরে খামারবাড়ি মোড় হয়ে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজার সামনে গিয়ে শেষ হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঈদের জামাত শেষ হতেই মিছিলের মধ্যে শুরু হয় ব্যান্ডপার্টির বাজনা, এবং বাজতে থাকে জনপ্রিয় ঈদ গান ‘ও মোর রমজানের ওই রোজার শেষে’। এতে হাজার হাজার মানুষ একত্রিত হয়ে ঈদের আনন্দে মেতে ওঠেন।
মিছিলে ছিল সুসজ্জিত পাঁচটি শাহী ঘোড়া, ১৫টি ঘোড়ার গাড়ি, ব্যান্ড পার্টি ও বাদ্যযন্ত্র। ঘোড়ার গাড়িগুলোর শোভায় মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা আনন্দ-উল্লাসে মেতে ওঠেন। এছাড়া, সুলতানি-মোঘল আমলের ইতিহাসচিত্র সম্বলিত পাপেট শো আয়োজন করা হয়, যা অংশগ্রহণকারীদের মাঝে বাড়তি আনন্দ যোগ করে। মিছিল শেষে অংশগ্রহণকারীদের সেমাই ও মিষ্টি খাওয়ানো হয়। পরে সংক্ষিপ্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে এই আয়োজন শেষ করা হয়।
অংশগ্রহণকারীরা জানিয়েছেন, এমন আয়োজন যদি প্রতিবছর হয়, তাহলে ঈদের আনন্দ আরো বহুগুণ বেড়ে যাবে।
মিছিলে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী তুষার আহমেদ বলেন, “এমন একটি আয়োজনে অংশ নিতে পেরে সত্যিই দারুণ লাগছে। আমাদের পুরনো ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতে এমন আয়োজন বারবার হওয়া উচিত।”
মিছিলে অংশ নেওয়া ইফতিয়াক আশিক নামের অপর একজন বলেন, “ঢাকায় অনেক বছর পর এভাবে ঈদ উদযাপিত হচ্ছে, খুবই ভালো লাগছে। আমি পুরো মিছিলজুড়েই ছিলাম।”
ঈদের এই আয়োজনকে ঘিরে পুরো এলাকায় ছিল নিরাপত্তার কড়াকড়ি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ছিলেন তৎপর।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, “আমাদের উদ্দেশ্য ঢাকার হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যগুলোও ফিরিয়ে আনা। এই ঈদ আনন্দ মিছিল তারই একটি অংশ। ভবিষ্যতে আরো বড় পরিসরে এই আয়োজন করা হবে।”
ঢাকা/হাসান/ইভা
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ঈদ আনন দ ম ছ ল
এছাড়াও পড়ুন:
পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুতে বাংলাদেশ কাথলিক মণ্ডলীর শোক প্রকাশ
কাথলিক খ্রিষ্টানদের প্রধান ধর্মগুরু এবং ভ্যাটিকান সিটির প্রধান পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুতে বাংলাদেশ খ্রিষ্টমণ্ডলী গভীর শোক প্রকাশ করছে। আজ বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ শোক প্রকাশ করা হয়। আর্চবিশপ বিজয় এন ডি’ক্রুজ এ শোকবার্তা পাঠান।
পোপ ফ্রান্সিস গত সোমবার (২১ এপ্রিল) ভাটিকানের নিজ বাসভবন কাজা সান্তা মার্তায় মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর বয়স ছিল ৮৮ বছর।
বাংলাদেশ খ্রিষ্টমণ্ডলীর শোকবার্তায় বলা হয়, পোপ ফ্রান্সিস ছিলেন এক অসাধারণ মানবতাবাদী নেতা। তিনি শান্তি, সহানুভূতি এবং সাম্যের বার্তা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর নেতৃত্বে কাথলিক চার্চ বিশ্বব্যাপী দরিদ্র, শরণার্থী, অভিবাসী এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়িয়েছে। তিনি ধর্মীয় সহাবস্থান এবং আন্তধর্মীয় সংলাপের এক গুরুত্বপূর্ণ কণ্ঠস্বর ছিলেন। বিশ্ব ধর্মীয় নেতৃত্বে তাঁর অবদান ও মানবিক মূল্যবোধ সবার অনুপ্রেরণা।
বিবৃতিতে বলা হয়, ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দে আর্জেন্টিনায় জন্মগ্রহণকারী পোপ ফ্রান্সিসই প্রথম লাতিন আমেরিকান ও অ-ইউরোপীয় পোপ। ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ মার্চ পোপীয় দায়িত্ব গ্রহণকারী পোপ ফ্রান্সিস বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে গিয়েছেন শান্তি-সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে দিতে। ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি এসেছিলেন সবুজ শ্যামল বাংলার বুকে। গভীর মমতা ও ভালোবাসায় শুনেছেন মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের কষ্টের কথা, প্রকাশ্যে নীরবে কেঁদেছেন আর নাড়িয়ে দিয়েছেন বিশ্বকে। এমনিভাবে অন্যায়-অন্যায্যতা, নিপীড়ন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে এবং প্রকৃতি ও দরিদ্রদের পক্ষে তাঁর দৃঢ় অবস্থানের কারণে তিনি হয়ে উঠেছিলেন বিশ্ববিবেক।
বিবৃতিতে বলা হয়, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে রোমের জেমেল্লি হাসপাতালে ভর্তি হন পোপ ফ্রান্সিস। দীর্ঘ ৩৮ দিন চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে নিজ বাসভবন ভ্যাটিকানের কাজা সান্তা মার্তায় থাকতে থাকেন। গত রোববার ইস্টার সানডেতে ভ্যাটিকানের সেন্ট পিটার্স বাসিলিকার বারান্দা থেকে হাত নেড়ে সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে সমবেত উচ্ছ্বসিত শত-সহস্র তীর্থযাত্রীকে শুভেচ্ছা জানান। পরদিন ২১ এপ্রিল রোমের সময় সকাল সোয়া সাতটায় পোপ ফ্রান্সিস মৃত্যুবরণ করেন। ভ্যাটিকান মৃত্যুর খবর প্রকাশ করলে বিশ্বের সব প্রান্তের সব স্তরের মানুষ শোক প্রকাশে একাত্ম হন। বাংলাদেশ কাথলিক মণ্ডলীও তাদের প্রিয় পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুতে ব্যথিত ও শোকাহত। তাঁর আত্মার কল্যাণে ভক্তকুল প্রার্থনারত।
শোকবার্তায় আর্চবিশপ বিজয় এন ডি’ক্রুজ বলেন, ‘পুণ্যপিতা পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যু শুধুমাত্র কাথলিকদের জন্যই বড় একটি ক্ষতি নয়; ধর্মীয় অঙ্গনে এক অপূরণীয় ক্ষতি। দরিদ্র, প্রান্তিক ও অসহায় মানুষের পাশে থাকার যে কৃষ্টি পোপ ফ্রান্সিস সৃষ্টি করেছেন, তা অব্যাহত থাকবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। প্রয়াত পোপ আমাদের আলোকবর্তিকা হয়ে থাকুন। আমরা তাঁর আত্মার চিরশান্তি কামনা করি।’