ঈদের দিনটা আর দশটা দিনের মতো নয়। আনন্দের এদিন কারাগারগুলোও কাটে ভিন্ন আবহে। কারাবন্দীদের জন্য আয়োজন করা হয় বিশেষ খাবারের। ঈদের নামাজের জামাতে শরিক হন কারাবন্দীরা। এবারও পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিনে কারাগারে থাকা সাধারণ বন্দীদের সঙ্গে ডিভিশন পাওয়া বন্দীদের ‘দূরত্ব’ ঘুচে যাবে। সবার জন্য থাকবে একই ব্যবস্থা।

গত বছরের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, সরকারি কর্মকর্তাদের অনেকেই গ্রেপ্তার হয়ে দেশের বিভিন্ন কারাগারে আছেন। এবার প্রথমবারের মতো তাঁদের ঈদুল ফিতরের দিন কাটবে কারাগারের চার দেয়ালের মধ্যে।

কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন সাধারণ বন্দীদের মতোই কারাগারে থাকা ভিআইপিসহ (বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি) ডিভিশন পাওয়া বন্দীদের একই ধরনের খাবার দেওয়া হবে। এদিন সকালের খাবারে থাকছে পায়েস, সেমাই ও মুড়ি। দুপুরে থাকছে পোলাও বা খিচুড়ি, মুরগির রোস্ট, গরু ও খাসির মাংস, সালাদ, মিষ্টি ও পান। আর রাতে দেওয়া হবে ভাত, আলুর দম ও ডিম।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ৫ আগস্টের পর হত্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগে করা মামলায় এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী, এমপি, শীর্ষস্থানীয় নেতা ও কর্মকর্তাদের মধ্যে ১৩১ জন কারাগারে আছেন। তাঁদের মধ্যে ডিভিশন পেয়েছেন ১০৮ জন, যাঁদের মধ্যে সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী ২৯ জন; সাবেক সংসদ সদস্য ২২ জন; সরকারি কর্মকর্তা ৪৪ জন এবং অন্যান্য পেশার ১৩ জন। ডিভিশন পাননি ভিআইপি হিসেবে কারাগারে থাকা ২৩ জন।

কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন সাধারণ বন্দীদের মতোই কারাগারে থাকা ভিআইপিসহ (বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি) ডিভিশন পাওয়া বন্দীদের একই ধরনের খাবার পরিবেশন করা হবে। এদিন সকালের খাবারে থাকছে পায়েস, সেমাই ও মুড়ি। দুপুরে থাকছে পোলাও বা খিচুড়ি, মুরগির রোস্ট, গরু ও খাসির মাংস, সালাদ, মিষ্টি ও পান। আর রাতে দেওয়া হবে ভাত, আলুর দম ও ডিম।

অন্যদিকে সারা বছর সাধারণ বন্দীদের সকালে দেওয়া হয় হালুয়া, রুটি ও ডিম। দুপুরের খাবারের তালিকায় থাকে ভাত, ডাল, সবজি। রাতে খাবার দেওয়া হয় ভাত, ডাল, মাছ বা গরুর মাংস। আর ডিভিশন পাওয়া বন্দীদের খাবার তাঁদের পছন্দ অনুযায়ী আলাদা রান্নার ব্যবস্থা করা হয়।

ঈদের দিন কারাগারগুলোর চার দেয়ালের মধ্যে বন্দীদের জন্য ঈদের নামাজের জামাত হয়। উন্নত মানের খাবার পরিবেশনের পাশাপাশি বন্দীদের জন্য তাঁদের স্বজনদের আনা খাবারও তাঁদের খেতে দেওয়া হয়। ঈদের পরদিন যথাযথ নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে কারাগারের ভেতরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে পারবে কারাগারগুলো।জান্নাত-উল ফরহাদ, সহকারী মহাপরিদর্শক (উন্নয়ন ও গণমাধ্যম), কারা অধিদপ্তর

কারা অধিদপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (উন্নয়ন ও গণমাধ্যম) জান্নাত-উল ফরহাদ গত শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, ঈদের দিন কারাগারগুলোর বন্দীদের জন্য ঈদের নামাজের জামাত হয়। উন্নত মানের খাবার পরিবেশনের পাশাপাশি বন্দীদের জন্য স্বজনদের আনা খাবারও তাঁদের খেতে দেওয়া হয়। ঈদের পরদিন যথাযথ নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে কারাগারের ভেতরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে পারবে কারাগারগুলো।

সারা দেশের ৬৮ কারাগারে এখন বন্দীর সংখ্যা ৬৭ হাজার ৭২৩। এর মধ্যে কেরানীগঞ্জের রাজেন্দ্রপুরে অবস্থিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দীর সংখ্যা ৮ হাজার ১০০।

আরও পড়ুনক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের ১৩১ ‘ভিআইপি বন্দী’ কেমন আছেন১৭ জানুয়ারি ২০২৫

এই কারাগারের জ্যেষ্ঠ কারা তত্ত্বাবধায়ক সুরাইয়া আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ঈদের সময় অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুয়ায়ী বন্দীদের জন্য আলাদা বন্দোবস্তের আয়োজন করা হয়। ঈদের পরদিন কারাগারের ভেতরে বন্দীদের জন্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে কারা কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া ঈদের পরদিন থেকে তিন দিন বন্দীদের সঙ্গে তাঁদের স্বজনদের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলতে দেওয়া হবে। এ সময় স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাৎও করতে পারবেন তাঁরা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক র গ রগ ল স বজনদ র ব যবস থ মন ত র র বন দ ভ আইপ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

মুঠোফোন বেজে চললেও কোনো জবাব আসছে না: ভবনের বাইরে উদ্বিগ্ন স্বজনদের অপেক্ষা

থাইল্যান্ডের ব্যাংককে বাঁকানো তার ও ধাতুর ধ্বংসস্তূপ সরাতে ব্যস্ত শত শত উদ্ধারকর্মী। এসব জঞ্জালের সামান্য দূরে অপেক্ষা করছেন অসংখ্য মানুষ। তাঁদের কারও বোন, কারও ভাই, কারও মা, কারও স্বামী বা কারও সহকর্মী মুহূর্তে ধসে পড়া নির্মাণাধীন ৩৩ তলা ভবনের নিচে চাপা পড়েছেন। এতে শতাধিক শ্রমিক নিখোঁজ রয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের তথ্যমতে, মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চল মান্দালয়ের কাছে গত শুক্রবার দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে ৭ দশমিক ৭ তীব্রতার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। ১১ মিনিটের মাথায় সেখানে ৬ দশমিক ৪ তীব্রতার আরেকটি পরাঘাত (আফটার শক) হয়। ভূপৃষ্ঠের প্রায় ১০ কিলোমিটার গভীরে ভূমিকম্পের উৎপত্তি। উৎপত্তিস্থল অগভীর হওয়ায় কম্পনের তীব্রতা বেশি ছিল।

মিয়ানমারের পর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ড। এ ছাড়া বাংলাদেশ, লাওস, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, দক্ষিণ-পশ্চিম চীন ও ভারতে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে।

আরও পড়ুনমিয়ানমারে ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা ১৬০০ ছাড়াল২১ ঘণ্টা আগে

গতকাল শনিবার মিয়ানমারের জান্তা সরকার জানায়, ভূমিকম্পে ১ হাজার ৬৪৪ জনের নিহতের খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন ৩ হাজার ৪০৮ জনের বেশি। তবে পরিসংখ্যানের বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে ইউএসজিএস পূর্বাভাস করেছে, মিয়ানমারে নিহতের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়াতে পারে। মোট ক্ষয়ক্ষতির পরিণাম দেশটির বার্ষিক আর্থিক উৎপাদনকে ছাড়িয়ে যেতে পারে।

গতকাল ব্যাংককের ডেপুটি গভর্নর বলেছেন, ‘আমাদের শহরে অন্তত ১০ ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।’

‘আমি টানা কল করে যাচ্ছি’

ব্যাংককের নির্মাণাধীন ৩৩ তলা ভবনের ধ্বংসস্তূপের এলাকাটি বিদেশি পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। এখানেই বিখ্যাত সাপ্তাহিক চাটুচক বাজার অবস্থিত। প্রতিবছর এখানে লাখ লাখ বিদেশি পর্যটক আসেন।

গতকাল শনিবার সকালে চাটুচক বাজার এলাকায় নিখোঁজ স্বজনের সন্ধানে অপেক্ষা করছিলেন অনেকে। তাঁদের একজন জুনপেন কাউনোই। তাঁর মা ও বোন ধসে পড়া আকাশচুম্বী ভবনটিতে রঙের কাজ করতেন।

কাউনোই সিএনএনকে বলেন, ‘আমি টানা কল করে যাচ্ছি, কিন্তু কোনো সাড়া পাচ্ছি না। কল করে প্রতিবার আমি কেবল টো...টো...আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি।’

কাউনোই বলছিলেন, ‘মনে হচ্ছে, আমার পেটে দলার মতো কিছু একটি হয়েছে। আমার খিদে চলে গেছে। গতকাল থেকে আমার মা ও বোন আটকা পড়ে আছেন, আমি তাঁদের নিয়ে উদ্বিগ্ন। তাঁদের কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না।’

কাজে যাওয়ার আগে শুক্রবার সকালে বোনের সঙ্গে শেষবার কথা হয়েছিল কাউনোইর। তখন তিনি তাঁর কাছে ‘দুপুরে কী খাবে, তা জানতে চেয়েছিলেন’।

ব্যাংককের এ দুর্যোগের মধ্য দিয়ে নগরের নানা সমস্যা নতুন করে সামনে এসেছে। এসব সমস্যার মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য সবচেয়ে বড়। ব্যাংককের নির্মাণশ্রমিকদের অধিকাংশই আসেন থাইল্যান্ডের গরিব অঞ্চলগুলো থেকে। বিশেষ করে কম ধনী উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে সেখানে অনেক শ্রমিক আসেন। এ ছাড়া প্রতিবেশী দেশ লাওস, কম্বোডিয়া ও মিয়ানমার থেকেও অনেক শ্রমিক ব্যাংককে কাজ করতে আসেন।

আরও পড়ুনশক্তিশালী ভূমিকম্পে কাঁপল আট দেশ, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি২৮ মার্চ ২০২৫ধসে পড়া নির্মাণাধীন ৩৩তলা ভবনের ধ্বংসস্তূপের পাশে উদ্ধারকর্মীরা। থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে, ২৮ মার্চ ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেই গুমের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা হবে: তথ্য উপদেষ্টা
  • ‘অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেই গুমের সঙ্গে জড়িতদের বিচার হবে’
  • রাঙামাটি কারাগারে কারাবন্দিদের ঈদ উদযাপন
  • মুঠোফোন বেজে চললেও কোনো জবাব আসছে না: ভবনের বাইরে উদ্বিগ্ন স্বজনদের অপেক্ষা
  • কারাগারে ঈদ কাটবে যেসব নেতার, পাবেন যে খাবার