পদ্মা সেতুতে সর্বমোট টোল আদায় ২ হাজার ২৭৭ কোটি ৫৫ লাখ টাকা
Published: 31st, March 2025 GMT
পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের পর থেকে শনিবার পর্যন্ত উভয় প্রান্তের টোল প্লাজায় সর্বমোট টোল আদায় হয়েছে ২ হাজার ২৭৭ কোটি ৫৫ লাখ ৯১ হাজার ৪৫৯ টাকা। আর ঈদযাত্রার পাঁচ দিনে শনিবার পর্যন্ত পদ্মা সেতু হয়ে ১ লাখ ৫২ হাজার ৩২৭টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এ সময়ে ১৭ কোটি ৪২ লাখ ২১ হাজার ৭০০ টাকা টোল আদায় হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ।
সেতু কর্তৃপক্ষের পরিচালক আলতাফ হোসেন সাংবাদিকদের জানান, শেষ মুহূর্তের ঈদযাত্রায় পদ্মা সেতু অতিক্রম করে বাড়ি ফিরছেন দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার লাখ লাখ মানুষ। তবে মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় পদ্মা সেতুর টোল প্লাজায় যানবাহন ও যাত্রীদের চাপ নেই। কখনও কখনও একেবারেই ফাঁকা থাকছে টোল প্লাজা।
শনিবার পদ্মা সেতু দিয়ে ৩৬ হাজার ৯২৪ যান পারাপার হয়। এর মধ্যে মোটরসাইকেল ছিল ৮ হাজার ৭৫০টি। টোল আদায় হয়েছে ৪ কোটি ৭ লাখ ৯২ হাজার ২০০ টাকা।
এছাড়া শনিবার পর্যন্ত ঈদযাত্রার পাঁচ দিনে পদ্মা সেতু হয়ে ১ লাখ ৫২ হাজার ৩২৭টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এ সময়ে টোল আদায় হয়েছে ১৭ কোটি ৪২ লাখ ২১ হাজার ৭০০ টাকা।
সেতু কর্তৃপক্ষের পরিচালক আলতাফ হোসেন আরও জানান, লম্বা ছুটির কারণে এবার ঈদযাত্রায় চাপ অপেক্ষাকৃত কম। রোববার ভোরেও টোল প্লাজা ঘিরে যানবাহনের লম্বা লাইন ছিল। কিন্তু বেলা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তা কমতে থাকে।
টোল আদায়ে সংশ্লিষ্টরা জানান, রাত পোহালেই ঈদ, কর্মজীবী ও ব্যবসায়ী অনেকে পরিবার পরিজন নিয়ে বাড়ি যাচ্ছেন। তাই রোববারও অস্থায়ী টোল বুথটি চালু রাখা হয়। এখন ৯টি লেনে টোল আদায় করা হচ্ছে। তবে অনেকেই গরম এবং যানজট এড়াতে সেহেরির পরপরই বেরিয়ে পড়েন। তাই সকালে কিছুটা চাপ থাকলেও বেলা গড়ানোর পর চাপ কমতে থাকে।
একই চিত্র দেখা গেছে জেলার অপর মহাসড়ক ঢাকা-চট্টগ্রামের পথেও। রোববার সকাল থেকে এ মহাসড়কের মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার ১৩ কিলোমিটারে ছিল না কোনো যানজট।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পদ ম স ত ঈদয ত র ব র পর
এছাড়াও পড়ুন:
প্রতিবন্ধী নারীর অনন্য পাঠশালা
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের বন্যাবাড়ি গ্রাম। এ গ্রামে এক সাহসী নারীর হাত ধরে গড়ে উঠেছে অসাধারণ এক পাঠশালা। শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েও দারিদ্র্য, প্রতিবন্ধকতা আর সামাজিক সীমাবদ্ধতা জয় করে শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন জয়ন্তী রায়।
৪০ বছর বয়সী জয়ন্তীর জীবন কখনও সহজ ছিল না। তিনি কুঁজো, সোজা হয়ে চলতে পারেন না। ঝুঁকে চলতে হয়। এই প্রতিবন্ধকতার কাছে কখনও তিনি মাথা নিচু করেননি। এসএসসি পাস করেও অর্থাভাবে কলেজে যেতে পারেননি। কৃষক হরিচাঁন রায়কে বিয়ে করে আরও কঠিন এক সংসার জীবন শুরু হয়। একমাত্র সন্তানকে নিয়ে টানাপোড়েনের সংসারে এক দিন সিদ্ধান্ত নেন– শুধু নিজের জীবনের উন্নতি নয়, এলাকার শিশুদেরও পড়াতে হবে।
বাড়ির উঠানের এক গাছতলায় মাত্র ১০ জন শিশুকে নিয়ে শুরু হয় তাঁর পাঠশালা। শিশুপ্রতি মাসে ৩০০ টাকা করে নিলেও অনেকেই দিতে পারত ৫০ বা ১০০ টাকা। কিন্তু অর্থ নয়, জয়ন্তীর মূল লক্ষ্য ছিল শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়া। ঝড়-বৃষ্টি এলে গাছতলার পাঠশালা সরিয়ে নেওয়া হতো পাশের মন্দিরে।
২০২৪ সালের শুরুর দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মঈনুল হক বন্যাবাড়ি গ্রামে একটি রাস্তার কাজ পরিদর্শনে গিয়ে দেখে ফেলেন এই অনন্য পাঠশালা। এর পর থেকেই বদলে যেতে থাকে দৃশ্যপট। ইউএনও জয়ন্তীকে বলেন, অভিভাবকদের কাছ থেকে আর কোনো টাকা নিতে হবে না। উপজেলা অফিস থেকে তাঁর সম্মানী দেওয়া হবে।
২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর প্রতি মাসে ৩ হাজার টাকা করে পেয়েছেন জয়ন্তী। ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে তাঁর পাঠশালাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমে। এখন জয়ন্তী প্রতি মাসে পাচ্ছেন ৫ হাজার টাকা সরকারি বেতন। পাশাপাশি ইউএনওর উদ্যোগে টিআর প্রকল্পের
আওতায় ১ লাখ ১৪ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে একটি টিনশেড পাঠশালা। লাগানো হয়েছে তিনটি বৈদ্যুতিক পাখাও। জয়ন্তীর বিদ্যালয়ে এখন ৩০ জন শিশু পড়াশোনা করছে।
স্থানীয়রা জানান, এক সময় রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে শিশুদের পাঠ নিতে হতো। এখন সুন্দর ঘরে বিনামূল্যে চলছে পাঠদান।
অভিভাবক শিউলী বিশ্বাস ও সবিতা রায় বলেন, জয়ন্তীর পাঠশালায় তাদের ছেলেমেয়েরা অনেক ভালোভাবে পড়াশোনা করছে। আগে যা কল্পনাও করতে পারেননি তারা। দারিদ্র্যের কারণে তারা অনেকেই শিশুদের পড়ানোর জন্য জয়ন্তীকে টাকা দিতে পারতেন না। ইউএনওর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তারা বলেন, তিনি পাঠশালার
জন্য একটি ঘর ও জয়ন্তীর পারিশ্রমিকের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এখন বিনা বেতনে এ পাঠশালায় তাদের ছেলেমেয়েরা
পড়াশোনা করছে।
নিজেই এক সময় আলো থেকে দূরে সরে পড়া জয়ন্তী এখন অন্যদের জন্য বাতিঘর হয়ে উঠেছেন। তিনি বলেন, ‘কোনোদিন ভাবিনি আমার মতো একজন প্রতিবন্ধী নারীও এভাবে মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে। ইউএনও স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞ, যিনি আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছেন। যতদিন বাঁচি, ততদিন শিশুদের শিক্ষা দিয়ে যাব।’
টুঙ্গিপাড়ার ইউএনও মঈনুল হক বলেন, এটি একটি অনন্য পাঠশালা। জয়ন্তী যা করেছেন, তা এ সমাজের জন্য দৃষ্টান্ত। এ পাঠশালার শিশুদের জন্য একটি টিনশেড ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। গ্রীষ্মের গরমে শিশুদের কষ্টের কথা ভেবে প্রশাসন থেকে তিনটি পাখার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। জনকল্যাণে উপজেলা প্রশাসন এমন কাজ চালিয়ে যাবে বলে জানান তিনি।