গাজায় যুদ্ধবিরতির নতুন প্রস্তাব মিসর-কাতারের
Published: 30th, March 2025 GMT
মিসর ও কাতারের কাছ থেকে পাওয়া গাজা যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে হামাস। ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠনটির প্রধান খলিল আল–হায়া গত শনিবার জানিয়েছেন, দুই দিন আগে মধ্যস্থতাকারী মিসর ও কাতারের কাছ থেকে যুদ্ধবিরতির নতুন প্রস্তাব পেয়েছেন তাঁরা। এ প্রস্তাবে তাঁরা ইতিবাচক সম্মতি দিয়েছেন। টেলিভিশনে দেওয়া এক বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
হায়া বলেন, ‘আমরা আশা করি, দখলদার ইসরায়েল এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করবে না।’
হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পরোক্ষ আলোচনায় হামাসের আলোচক দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন খলিল আল–হায়া।
একটি নিরাপত্তা সূত্র বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, নতুন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে ইসরায়েলের কাছ থেকে ইতিবাচক ইঙ্গিত পেয়েছে মিসর। এ প্রস্তাবের মধ্যে বিভিন্ন রূপান্তরের ধাপ রয়েছে। প্রস্তাবে প্রতি সপ্তাহে হামাসের পক্ষ থেকে পাঁচজন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার বিষয়টি যুক্ত রয়েছে।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে, মধ্যস্থতাকারীদের নতুন প্রস্তাব নিয়ে তারা কয়েক দফা আলোচনা করেছে। এরপর ইসরায়েলের পক্ষ থেকে একটি পাল্টা প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ইসরায়েলের নতুন প্রস্তাবের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন রয়েছে।
ধাপে ধাপে যুদ্ধবিরতি
গাজায় ১৫ মাস ধরে নির্বিচার হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। এই যুদ্ধ বন্ধে প্রথম যুদ্ধবিরতি গত ১৯ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়। এ সময় হামাসের পক্ষ থেকে কয়েকজন জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হয়। ইসরায়েলও কয়েক শ ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেয়। তিন ধাপের যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপে অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি ও গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের বিষয়টি যুক্ত ছিল। হামাস বলছে, যেকোনো প্রস্তাবে দ্বিতীয় ধাপে যুদ্ধবিরতির বিষয়টি যুক্ত থাকতে হবে। অন্যদিকে ইসরায়েল প্রথম ধাপে ৪২ দিনের যুদ্ধবিরতির বিষয়টি আরও বাড়াতে চায়।
ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে হামাসের পরিপূর্ণ নিরস্ত্রীকরণ বিষয়টি চাওয়া হচ্ছে। এর জবাবে হায়া বলেন, হামাসের নিরস্ত্রীকরণ হচ্ছে চূড়ান্ত রেখা। যতক্ষণ ইসরায়েলি দখলদারত্ব বিদ্যমান থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত হামাসকে নিরস্ত্রকরণ করা যাবে না।
ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, যুদ্ধপরবর্তী গাজা পুনর্গঠনে হামাসের কোনো ভূমিকা থাকতে পারবে না।
ইসরায়েলি হামলা চলছে
যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনার কথা চললেও গাজায় হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শনিবার ইসরায়েলি হামলায় আরও ২০ জন নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা জেইনা ও রাফা এলাকায় স্থল অভিযান শুরু করেছে।
১৮ মার্চ প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতি ভেঙে গাজায় হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ইসরায়েল বলছে, হামাসের হাতে থাকা জিম্মিদের মুক্তিতে চাপ দিতে তারা এ হামলা শুরু করেছে। এ ছাড়া সেখানে ত্রাণসহায়তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ ছাড়া গাজার বেশ কিছু এলাকা খালি করার নির্দেশ দিয়েছে তারা। এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় ৫০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশ নারী ও শিশু।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় হামাস। এতে ১ হাজার ২০০ জন নিহত হন। এ ছাড়া বন্দী করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয় ২৫১ জনকে। এর পর থেকে গাজায় পাল্টা হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল।
নেতানিয়াহুর দাবি
নেতানিয়াহু গতকাল রোববার দাবি করেছেন যে গাজায় হামাসের ওপর ইসরায়েলের তীব্র সামরিক চাপ কার্যকর হয়েছে। তিনি মন্ত্রিসভার বৈঠকে বলেন, হামাসকে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে।
নেতানিয়াহু এমন সময়ে এই মন্তব্য করলেন যখন মধ্যস্থতাকারীরা জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। নেতানিয়াহু বলেন, অস্ত্র সমর্পণ করে হামাসের নেতাদের গাজা ছেড়ে চলে যেতে হবে। ইসরায়েল গাজার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এবং ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী স্বেচ্ছাসেবী অভিবাসন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে।
দায়িত্ব গ্রহণের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজার ২০ লাখের বেশি বাসিন্দাকে প্রতিবেশী মিসর ও জর্ডানে স্থানান্তরিত করার একটি পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিলেন।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বেশির ভাগ এ ঘোষণার নিন্দা জানায়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ইসর য় ল ইসর য় ল র র ব ষয়ট
এছাড়াও পড়ুন:
বৈষম্যবিরোধীর ব্যানারে কতিপয় সন্ত্রাসী ক্যাম্পাসে দখলদারিত্ব কায়েম করেছে: ছাত্রদল
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কতিপয় সন্ত্রাসী বিভিন্ন ক্যাম্পাসে রক্ষীবাহিনীর মতো সন্ত্রাস ও দখলদারিত্ব কায়েম করেছে বলে অভিযোগ করেছে ছাত্রদল। সংগঠনটি বলছে, তারা বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের কর্মীদের মবের ভয়ভীতি দেখিয়ে ছাত্রলীগের স্টাইলের সন্ত্রাসের পুনরাবৃত্তি করছে।
রোববার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনের পর নয়াপল্টনে ছুরিকাঘাতে নিহত ছাত্রদল নেতা জাহিদুল ইসলাম পারভেজের জানাজা সম্পন্ন হয়। তাকে ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা উপজেলার বিরুনিয়া ইউনিয়নে নিজ গ্রামে দাফন করা হবে।
রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রদলের কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কতিপয় সন্ত্রাসী রক্ষীবাহিনীর মতো সন্ত্রাস ও দখলদারিত্ব কায়েম করেছে। তারা বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের কর্মীদের মবের ভয়ভীতি দেখিয়ে ছাত্রলীগের স্টাইলের সন্ত্রাসের পুনরাবৃত্তি করছে। ক্যাম্পাস তো বটেই, এমনকি ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণের বাইরে গিয়ে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের কার্যক্রম পরিচালনায়ও বাধা দেওয়া হচ্ছে, যা গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সুস্পষ্ট লংঘন।’
তিনি বলেন, ‘এটা নতুন নামে সেই পুরাতন ফ্যাসিবাদ। এই চলমান দখলদারিত্ব ও সন্ত্রাসই এই হত্যার পেছনে খুনি-সন্ত্রাসীদের সাহস ও মদদ যুগিয়েছে। দিনে দিনে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ডিহিউম্যানাইজ করার যে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র, এটা অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে সাজানো হয় শহীদ পারভেজদের হত্যাকাণ্ডের বৈধতা উৎপাদনের জন্য। পারভেজের খুনিদের রাজনৈতিক প্রশ্রয়দাতাসহ খুন ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত সকলের যথাযথ বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’
রাকিব বলেন, ‘আমরা নিদারুণ কষ্ট ও ক্ষোভের সঙ্গে জানাচ্ছি, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মী ও প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২৩ ব্যাচের টেক্সটাইল বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজকে সন্ত্রাসীরা ছুরিকাঘাত করে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। শনিবার বিকেল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সামনে এ বর্বর ঘটনা ঘটে। মরহুম জাহিদুল ইসলাম পারভেজ ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা উপজেলার বিরুনিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা। আমরা মরহুমের পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও সহপাঠীদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা জেনেছি, ঘটনার সূত্রপাত হয় যখন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও দুই-তিনজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বসে সিঙাড়া খাচ্ছিলেন। এমন সময় মেহেরাজ ইসলাম এবং আরও দুইজন ছাত্রীসহ কয়েকজন ওই পথে হেঁটে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ করেই তারা পারভেজকে উদ্দেশ্য করে ‘এদিকে তাকাচ্ছ কেন?’, ‘এদিকে তাকালে চোখ তুলে দেব’-এ ধরনের টিজিং ও উস্কানিমূলক মন্তব্য করতে থাকেন। পারভেজ জবাবে বলেন, ‘কী দোষ করেছি ভাই?’ এতে তারা আরও উত্তেজিত হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে উভয়পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। বিষয়টি মীমাংসার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. আব্দুস সালাম হস্তক্ষেপ করেন এবং উভয়পক্ষকে মীমাংসা করে দেন।
রাকিব বলেন, ‘আমরা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি-পারভেজ ইসলামের ওপর চালানো এই হামলা ছিল পূর্বপরিকল্পিত। নতুবা তুচ্ছ একটি ঘটনার জেরে, প্রক্টর কর্তৃক মীমাংসার পরও একজন মেধাবী ছাত্রকে প্রকাশ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করার প্রশ্নই আসে না। আমরা এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে এই হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আবারও এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী, ইন্ধনদাতা, হুকুমদাতা এবং হামলাকারী সন্ত্রাসীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। ছাত্রনেতাদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে জোরালো দাবি জানাচ্ছি। তাদেরকে বিভিন্ন বিষয়ে একপাক্ষিক আচরণের বদলে সমতা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছি।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রদলের সিনিয়র সহ সভাপতি আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহিয়া, সহ সভাপতি এইচ এম আবু জাফর, ইজাজুল কবির, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক শ্যামল মালুম, যুগ্ম সম্পাদক মো. সারোয়ার হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক আমান উল্লাহ আমান, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি আবু হুরায়রা, সাধারণ সম্পাদক রাজিবুল আলম বিন্দু প্রমুখ।