এক মাস সিয়াম সাধনার পর সোমবার পবিত্র ঈদুল ফিতর উদ্যাপন করবেন দেশের মুসলিমরা। ইতিমধ্যে ঢাকাসহ দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে ঈদুল ফিতরের আবহ। সন্ধ্যায় চাঁদ দেখার পরপরই রেডিও-টেলিভিশনে বেজে চলেছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কালজয়ী সেই গান, ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এল খুশীর ঈদ...।’
ইসলামের ধর্মীয় বিধান অনুসরণ করা হয় সাধারণত হিজরি বর্ষপঞ্জির চান্দ্র মাসের হিসাবে। সেই মোতাবেক এবার রমজান মাসের সিয়াম সাধনা শুরু হয়েছিল খ্রিষ্টীয় দিনপঞ্জির ২ মার্চ রোববার।
২৯ রমজান রোববার সন্ধ্যায় বাংলাদেশে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির বৈঠকে বসে। বাংলাদেশের আকাশে শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা যায়। এরপর সোমবার ঈদুল ফিতর উদ্যাপনের ঘোষণা দেওয়া হয়।
ঈদ উপলক্ষে আজ পরিবারগুলোতে সাধ্যমতো ভালো খাবার রান্নার চেষ্টা করা হবে। শিশুরা নতুন পোশাক পরে বেড়াতে যাবে নিকটাত্মীয়দের বাড়িতে। ঈদের দিন ঘুম থেকে উঠে গোসল-অজু করে দিনের শুরুতে সেমাই, মিষ্টিমুখ করে মুসল্লিরা যাত্রা শুরু করবেন ঈদের জামাতে অংশ নিতে। নামাজ আদায় শেষে ঈদগাহ ময়দানে বুকে বুক মেলাবেন। নামাজ আদায় শেষ করে মুসল্লিরা যাবেন কবরস্থানে প্রিয়জনের বিদেহী আত্মার শান্তির জন্য প্রার্থনা করতে। কবরস্থান থেকে মুসল্লিরা বাসায় ফিরে খাবার খেয়ে বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা করবেন। প্রিয়জনের সঙ্গে আনন্দ–আড্ডায় মেতে উঠবেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা।
প্রধান উপদেষ্টার শুভেচ্ছা
এক ভিডিও বার্তায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘সকলকে আনন্দময় ঈদ মোবারক জানাচ্ছি। আশা করি, ঈদের সময় আপনারা শান্তিপূর্ণভাবে আপনাদের বাড়িতে যেতে পারবেন এবং আপনাদের পরিবারের সঙ্গে আনন্দের সাথে ঈদ উদ্যাপন করবেন।’
প্রধান উপদেষ্টা দেশের জনগণকে তাদের আত্মীয়স্বজনের কবর জিয়ারত করার, দরিদ্র পরিবারের খোঁজখবর নেওয়ার এবং তাদের ভবিষ্যৎ কীভাবে উন্নত করা যায় সে সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করার আহ্বান জানান।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আপনার সন্তানদের আত্মীয়স্বজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিন—এটাই আমার ইচ্ছা।’
এ ছাড়া তিনি ঈদের নামাজের সময় যেকোনো মতপার্থক্য থাকা সত্ত্বেও পরাজিত শক্তির সব উসকানির মুখে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ ও দৃঢ় থাকার আহ্বান জানান।
অধ্যাপক ইউনূস প্রার্থনা করেন, ‘সকলের জীবন অর্থপূর্ণ ও আনন্দে ভরে উঠবে। আল্লাহ আমাদের সকলকে সাহায্য করবেন।’
ঈদ করতে বাড়ির পথে এক পরিবার। রোববার কমলাপুর রেলস্টেশনে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
নেতার নামের খেলার মাঠ গ্রাম বদলে দিল স্থানীয়রা
আওয়ামী লীগ নেতা ইব্রাহিমের নামে নামকরণ করা খেলার মাঠ ও তাঁর পূর্বপুরুষের গ্রামের নামে নামকরণ করা ভাতকুড়া চালা গ্রামের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। সম্প্রতি এলাকাবাসী ওই দুটি নাম পরিবর্তন করে আগের নাম বহাল রেখে নামফলক সেঁটে দেন। ইব্রাহিম সখীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য।
জানা গেছে, গ্রামটির প্রকৃত নাম বহুরিয়া চতলবাইদ। গ্রামটির আয়তন বড় হওয়ায় ওই অংশটির নাম চতলবাইদ মধ্যপাড়া হিসেবে পরিচিত। আওয়ামী লীগ নেতা ইব্রাহিম তাঁর পূর্বপুরুষের গ্রামের নামে ওই অংশটির নামকরণ করেন ‘ভাতকুড়া চালা’। এ নিয়ে গ্রামবাসী সংক্ষুব্ধ হলেও ওই সময় ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়নি। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হওয়ায় চতলবাইদ গ্রামবাসী ভাতকুড়া চালা নামটি বাতিল করে চতলবাইদ মধ্যপাড়া নাম বহাল করেছেন।
আওয়ামী লীগ নেতা ইব্রাহিমের নামে নামকরণ করা খেলার মাঠটির আগের নাম ছিল মঙ্গল খাঁর মাঠ। স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সুবাদে একক প্রভাব খাটিয়ে ইব্রাহিম ওই খেলার মাঠটি তাঁর নিজ নামে ‘ইব্রাহিমের মাঠ’ হিসেবে নামকরণ করেন। সম্প্রতি এলাকাবাসী ইব্রাহিমের মাঠের নাম পরিবর্তন করে মঙ্গল খাঁর মাঠ পুনর্বহাল করেছেন। সপ্তাহ খানেক আগে ওই দুটি নাম খোদাই করা ইট-পাথরের ফলকে লিখে মাঠঘেঁষা পাকা সড়কের পাশে সেঁটে দিয়েছেন এলাকাবাসী।
টাঙ্গাইল বন বিভাগের হতেয়া রেঞ্জের বহুরিয়া চতলবাইদ মৌজার সংরক্ষিত বনের ২৮৩১ নম্বর দাগের একই জমিতে ওয়াক্ত নামাজের জন্য নির্মিত পাকা ভবনটিতে ইব্রাহিম তাঁর বাবা হাজি হাতেম আলীর নামে সাইনবোর্ড সেঁটে দিয়ে সামাজিক মসজিদে রূপান্তর করেন। এলাকাবাসী সভা করে ওই মসজিদের দেয়ালে সেঁটে দেওয়া হাজি হাতেম আলী নামটি পরিবর্তন করে চতলবাইদ মধ্যপাড়া নামকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ ছাড়া বনের একই দাগের জমিতে ইব্রাহিম তাঁর বাবা হাজি হাতেম আলী নামে ঈদগাহ মাঠ ও সামাজিক কবরস্থান নির্মাণের পরিকল্পনা করেছিলেন। এলাকাবাসী ইব্রাহিমের সেই পরিকল্পনা বাতিল করে চতলবাইদ মধ্যপাড়া গ্রামটির নামেই ঈদগাহ মাঠ ও কবরস্থান নির্মাণকাজ শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা রেজাউল করিম।
চতলবাইদ গ্রামের বাসিন্দা সোমেস উদ্দিন সমকালকে বলেন, আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ইব্রাহিমের খুবই দাপট ছিল। ইব্রাহিম শালগজারির সব বন উজাড় করে ফেলেছে। বন বিভাগও তাঁর বিরুদ্ধে এক পা এগোয়নি। শালগজারির সব টাকা ইব্রাহিমের পকেটে। কেউই তাঁর অপকর্মের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পায়নি। সমকালে সংবাদটি প্রকাশের পর থেকে গ্রামবাসী ঐক্যবদ্ধ হয়ে সম্প্রতি গ্রামের নামটি ফিরিয়ে এনেছে। মাঠের নামটিতেও পরিবর্তন আনা হয়েছে।
পলাতক আওয়ামী লীগ নেতা ইব্রাহিম মোবাইল ফোনে সমকালকে বলেন, ‘আমি রাজনৈতিক রোষানলের শিকার। আমার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মামলা থাকার সুযোগে গ্রামের কতিপয় ব্যক্তি যা-ইচ্ছে তাই করছে।’
হতেয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা এস এম আবদুর রশীদের ভাষ্য, বনের জমি উদ্ধারে উচ্ছেদ মামলা দেওয়া হয়েছে। আইন অনুযায়ী বনের জমি থেকে সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে।