চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী মহানগর এক্সপ্রেস ট্রেনে বৃদ্ধ এক যাত্রীকে মারধরের জেরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা রেলস্টেশন অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন স্থানীয় লোকজন। রোববার বিকেল চারটায় স্থানীয় লোকজন কসবা রেলস্টেশনে জড়ো হলে উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ ও সেনাসদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন। পরে অভিযুক্ত রেলওয়ের কর্মচারীকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।

ভুক্তভোগী যাত্রীর নাম ফুল মিয়া। তাঁর বাড়ি কসবার সায়েদাবাদ এলাকায়। তিনি চট্টগ্রাম থেকে মহানগর এক্সপ্রেস ট্রেনে কসবায় আসছিলেন। পথে ট্রেনে তাঁকে মারধর করেন ট্রেনের পাওয়ার কার অপারেটর কাউসার মিয়া। পরে তাঁকে বরখাস্ত করা হয়।

স্থানীয় লোকজন, উপজেলা প্রশাসন ও কসবা রেলস্টেশন সূত্রে জানা গেছে, ফুল মিয়া দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে মহানগর এক্সপ্রেস ট্রেনে কসবায় আসছিলেন। তিনি কসবা পর্যন্ত আসনবিহীন টিকিট কেটে ট্রেনের পাওয়ার কার বগিতে ওঠেন। বেলা আড়াইটার দিকে ট্রেন চট্টগ্রাম-ঢাকা রেলপথের ফেনী রেলস্টেশনে পৌঁছালে পাওয়ার কার অপারেটর কাউসার মিয়া তাঁর (ফুল মিয়া) কাছে এসে টিকিট আছে কি না জানতে চান। আসনবিহীন টিকিট থাকার কথা বললে কাউসার তাঁর কাছে ২০০ টাকা চান। টিকিট আছে টাকা কেন দেবেন বললে খেপে গিয়ে তাঁকে মারধর শুরু করেন তিনি। এরপর বৃদ্ধ ফুল মিয়ার কাছে ঘটনা শুনে মুঠোফোনে ভিডিও করে ফেসবুকে পোস্ট করেন ট্রেনে থাকা কসবার আরেক যাত্রী। স্থানীয় লোকজন ট্রেনের উপকূল ট্রেনের একটি ফেসবুক পেজেও সেই ভিডিও পোস্ট করেন। মুহূর্তের মধ্যেই ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ে।

বেলা সাড়ে তিনটার পর থেকে কসবার স্থানীয় লোকজন, শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক নেতা-কর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ কসবা রেলস্টেশনে জড়ো হন। বিকেল চারটার দিকে ট্রেন অবরোধসহ অভিযুক্ত ট্রেনের কর্মচারীর শাস্তি দাবিতে তাঁরা ট্রেনের জন্য অপেক্ষা শুরু করেন। তখন ট্রেনের চালক কসবার আগের স্টেশন মন্দবাগে ট্রেন দাঁড় করিয়ে রাখেন। ঘণ্টাখানেক অপেক্ষার পর বৃদ্ধ যাত্রীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কাউসারকে আটক করেন ট্রেনের নিরাপত্তাকর্মীরা।

খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো.

ছামিউল ইসলাম, থানা-পুলিশ ও সেনাসদস্যরা কসবা রেলস্টেশনে পৌঁছে পরিস্থিতি শান্ত করেন। বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে ট্রেন কসবা রেলস্টেশনে পৌঁছালে স্থানীয় লোকজন ও ট্রেনের পরিচালকসহ অন্যদের কথামতো কাউসার বৃদ্ধ ফুল মিয়ার কাছে ক্ষমা চান। কাউসারকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে জানালে স্থানীয় লোকজন শান্ত হন। পরে বিকেল পাঁচটার দিকে ট্রেন কসবা রেলস্টেশন ছেড়ে যায়।

একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ট্রেনের ভেতরে পুলিশের দুই সদস্য কাউসারকে আটক করেছেন। তখন কাউসারের হাতে হাতকড়া পরানো। স্থানীয় লোকজন তাঁকে ফুল মিয়ার কাছে ক্ষমা চাইতে বললে তিনি ফুল মিয়ার কাছে ক্ষমা চান।

ইউএনও মো. ছামিউল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ট্রেনের এক কর্মচারী কসবার বৃদ্ধ এক যাত্রীর সঙ্গে খারাপ আচরণসহ মারধর করেন। এ–সংক্রান্ত একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় জনতা, শিক্ষার্থী ও রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা একত্র হয়ে কসবা রেলস্টেশনে জড়ো হন। এটিকে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা উল্লেখ করে স্থানীয় লোকজনকে শান্ত করা হয়। পাশাপাশি ট্রেনের ওই কর্মচারীকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

কসবা রেলস্টেশনের মাস্টার মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ওই কর্মচারীকে চাকরি থেকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। স্থানীয় জনতা যখন স্টেশনে জড়ো হন, ট্রেন তখন কসবার আগের রেলস্টেশন মন্দবাগে অবস্থান করছিল।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স থ ন য় ল কজন ন কসব ম রধর কসব র

এছাড়াও পড়ুন:

গ্রিসের পর্যটন দ্বীপ সান্তোরিনির নিচে ঘুমিয়ে আছে ভয়ংকর আগ্নেয়গিরি

গ্রিসের জনপ্রিয় পর্যটন দ্বীপ সান্তোরিনি। যেখানে সাদা-নীল বাড়ি, সূর্যাস্ত আর নীল সমুদ্রের অসাধারণ প্রাকৃতিক দৃশ্যের টানে প্রতিবছর হাজার হাজার পর্যটক ভিড় করেন। কিন্তু অনেকের স্বপ্নের এই দ্বীপের নিচেই লুকিয়ে আছে এক ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি, যা আবারও ভয়াবহ বিস্ফোরণে ফেটে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা।

প্রায় ৩ হাজার ৬০০ বছর আগে আগ্নেয়গিরির বিশাল এক বিস্ফোরণে সান্তোরিনি দ্বীপের বর্তমান আকৃতি তৈরি হয়। সেই বিস্ফোরণে দ্বীপের মাঝখান দেবে গিয়ে একটি বিশাল গর্ত বা কালডেরা সৃষ্টি হয়। এর পর এই অঞ্চলটিতে বড় আকারের ভূমিকম্প আর দেখা যায়নি।

গত বছরের শুরুর দিক থেকে কয়েকবার ভূমিকম্পে দ্বীপটি কেঁপে ওঠায় নতুন করে সামনে এসেছে দ্বীপটির নিচে ঘুমিয়ে থাকা আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুৎপাতের সম্ভাবনা ও তার ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এ ধরনের ভূমিকম্প ভূগর্ভের ম্যাগমা চেম্বারে চাপ বাড়ার লক্ষণ হতে পারে।

ব্রিটেনের গবেষণা জাহাজ ‘আরআরএস ডিসকভারি’ থেকে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানীদের একটি দল সান্তোরিনির সমুদ্রতলের আগ্নেয়গিরি ও হাইড্রো-থার্মাল ভেন্ট নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন এখন। চলমান এ গবেষণার নেতৃত্ব দিচ্ছেন ব্রিটেনের ন্যাশনাল ওসিওগ্রাফি সেন্টারের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ইসাবেল ইয়ো। তিনি জানান, এই গবেষণার মূল উদ্দেশ্য হলো আগ্নেয়গিরির আচরণ বিশ্লেষণ করে কখন বড় বিস্ফোরণের আশঙ্কা তৈরি হতে পারে তা বুঝতে পারা। সান্তোরিনি দ্বীপের ৭ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে সাগরের নিচে থাকা আরেকটি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি কলোম্বো নিয়েও পর্যবেক্ষণ করছেন তারা।

চলমান এই গবেষণায় রোবটের মাধ্যমে সাগরের ৩০০ মিটার নিচ থেকে গরম পানি, গ্যাস ও আগ্নেয় পাথরের নমুনা সংগ্রহ করছেন তারা। এ ছাড়া ভূকম্পন এবং ভেতরে থাকা জ্বলন্ত লাভার গতিবিধি বোঝার জন্য ভূতাত্ত্বিক মানচিত্রও তৈরি করছেন গবেষকরা। এই গবেষণা শেষে পাওয়া তথ্য গ্রিস সরকারকে সরবরাহ করা হবে। গ্রিসের সিভিল প্রটেকশন এজেন্সি এই গবেষণার ফল বিশ্লেষণ করে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করছে। অধ্যাপক পারাস্কেভি নোমিকো– যিনি নিজে সান্তোরিনির বাসিন্দা এবং সরকারিভাবে জরুরি পরিকল্পনায় যুক্ত– বিবিসিকে বলেন, ‘এই গবেষণা আমাদের জানাবে, কোথায় কতটা ঝুঁকি এবং কোন এলাকায় আগ্নেয়গিরি জেগে উঠলে সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে হবে।’

সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের ফলে সান্তোরিনির ১১ হাজার বাসিন্দার প্রায় অর্ধেকই দ্বীপ ছেড়ে চলে গেছেন। পর্যটন খাতেও এর প্রভাব পড়েছে। অনেকেই তাদের পূর্বনির্ধারিত ভ্রমণ পরিকল্পনা বাতিল করেছেন। স্থানীয় ফটোগ্রাফার ইভা রেন্ডল বলেন, ‘আমার অনেক ক্লায়েন্ট তাদের শুটিং বাতিল করেছেন। আগে এপ্রিল থেকেই কাজ শুরু হতো; এবার মে পর্যন্ত কেউ আসেনি।’

তবে দ্বীপ ছেড়ে চলে যাওয়া অনেকেই জায়গাটির অতুলনীয় সৌন্দর্যের প্রেমে পড়ে আবার ফিরেও আসছেন। সান্তোরিনিতে বিয়ের ছবি তুলতে আসা এক নবদম্পতি বলেন, ‘আমরা ইচ্ছা করেই আগ্নেয়গিরির পাশে বিয়ে করতে চেয়েছি!’ এখন পর্যন্ত তাৎক্ষণিক বিস্ফোরণের আশঙ্কা না থাকলেও বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এটি ‘শুধু সময়ের ব্যাপার।’ বিবিসি।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ