শেষ মুহূর্তের ঈদযাত্রায় ঢাকার ঐতিহ্যবাহী লঞ্চঘাটে সবার মুখে স্বস্তির হাসি দেখা গেছে। ঈদের আগের দিন রবিবারও দক্ষিণাঞ্চলের অসংখ্য মানুষকে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল ছেড়ে যেতে দেখা গেছে। 

সোমবার (৩১ মার্চ) পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন হবে দেশজুড়ে। এরই মধ্যে ঈদের অগ্রিম আনন্দ শুরু হয়েছে দেশে। তবে নানা কারণে ঈদের আগের দিন রবিবারও ঢাকা ছেড়েছে মানুষ।

ঈদযাত্রায় এবার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের যাত্রীদের শুরু থেকেই স্বস্তি প্রকাশ করতে দেখা গেছে, যারা ধারাবাহিকতা ছিল রবিবারও। 

আরো পড়ুন:

কড়া নাড়ছে ঈদ, চলছে শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা

‘ধর্ম-বর্ণ ও দলমত নির্বিশেষে সবার জন্য ডিএনসিসির ঈদ আনন্দ উৎসব’

এদিন সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে গিয়ে সেখানে ঘরমুখো মানুষের ঢল দেখা যায়। যাত্রীরা বলেন, স্বাচ্ছন্দ্যে ঈদযাত্রার জন্য তারা লঞ্চ বেছে নিয়েছেন; কারণ পরিবারের নারী সদস্য ও শিশুদের নিয়ে গাড়ির চেয়ে লঞ্চ যাত্রা করা তাদের বিবেচনায় বেশি নিরাপদ।

লঞ্চ যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য এবার সরকারের পক্ষ থেকে ব্যতিক্রমী কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- প্রতিটি লঞ্চে যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে চারজন করে আনসার সদস্য মোতায়েন রয়েছে। 

লঞ্চ টার্মিনালে ডিএমপি, নৌ পুলিশ, র‌্যাব, সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য এবং সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও বিআইডাব্লিউটিএর সদস্যদের সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ রয়েছে। বিভিন্ন রুটের লঞ্চ সদরঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়ার আগে অতিরিক্ত যাত্রী ও ভাড়া নেওয়ার বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করছেন তারা। অভিযোগ পেলে বিআইডাব্লিউটিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিচ্ছেন। যার ফলে অন্যবারের চেয়ে এবারের ঈদযাত্রা দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য বেশি স্বস্তিদায়ক হয়েছে। 

রবিবার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের দৃশ্য। ছবি: রাইজিংবিডি

বরিশালগামী এমভি সুন্দরবন-৯ লঞ্চের যাত্রী আফসানা মিম বলেন, “পদ্মা সেতু চালুর পরও আমাদের বরিশালের মানুষ ঈদে পরিবার-পরিজন নিয়ে  লঞ্চে যেতে পছন্দ করে। এই সময় বাসে ভাড়া বেশি থাকে। তাই বেশিরভাগ মানুষ স্বস্তির যাত্রার জন্য সড়ক ছেড়ে নৌপথ বেছে নেয়। আমি সবসময়ই লঞ্চে যাওয়া-আসা করি। লঞ্চের মতো শান্তির যাত্রা আমার কাছে আর কিছুতেই হয় না।”

ভোলাগামী এমভি কর্ণফুলী লঞ্চের যাত্রী তানজিল চৌধুরী বলেন, “আমাদের ভোলায় যাওয়ার জন্য একমাত্র পথ হল নৌপথ। লঞ্চগুলোও খুব আরামদায়ক। এবারের যাত্রাটা আমার কাছে অন্যবারের তুলনায় একটু ব্যতীক্রম মনে হলো। আগে এই শেষ সময়ে এসে বাড়িতে ফিরতে হলে আমাদের বাড়তি ভাড়া গুনতে হতো। কিন্তু এবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় লঞ্চ মালিকরা বেশি সুবিধা করতে পারছে না।”

“লঞ্চের ধারণ ক্ষমতার বেশি যাত্রীও তারা নিতে পারছে না। ফলে সাধারণ যাত্রীরা নির্বিঘ্নে, স্বাচ্ছন্দ্যে ঈদযাত্রা করছে। এজন্য অবশ্য সরকার ধন্যবাদ পেতে পারে,” বলেন তানজিল চৌধুরী।

এমভি সুন্দরবন-১৫ লঞ্চের সুপারভাইজার মো.

দুলাল হোসেন বলেন, “যাত্রীদের নিরাপদে গন্তব্য পৌঁছে দেওয়ার জন্য আমাদের লঞ্চ সব সময় সেবা দিয়ে থাকে। তবে এবার গতবারের তুলনায় যাত্রীদের চাপ বেশি। এখনো শেষ সময়ে এসে বেসরকারি চাকরিজীবী ও অন্যান্য ব্যবসায়ী যারা রয়েছেন, তারা বাড়ি ফিরছেন। যার জন্য আমাদের বাড়তি লঞ্চ বিভিন্ন রুটে চালু করতে হয়েছে।”

“আমাদের টার্গেট অনুযায়ী টিকিট বিক্রি হয়েছে। এবার কোনো লঞ্চ-মালিকই বাড়তি ভাড়া নিচ্ছেন না। সরকার নির্ধারিত ভাড়া দিয়ে যাত্রীরা তাদের গন্তব্যে যাচ্ছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অনেক তৎপর রয়েছেন,” বলেন দুলাল হোসেন।

বাংলাদেশ লঞ্চ মালিক সমিতির সদস্য সচিব সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, “এবারের ঈদ যাত্রায় যাত্রীরা স্বস্তি প্রকাশ করছেন, এটা আমাদের জন্য ভালো খবর। কোনো লঞ্চ-মালিক বাড়তি ভাড়া নেননি। আমরা অভিযোগ পেলে তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নিয়েছি।” 

“সাধারণত লঞ্-মালিকরা দুই ঈদের দিকে চেয়ে থাকেন। সাধারণ সময়ে আগের মতো যাত্রী পাওয়া যায় না। ঈদে পরিবার-পরিজন নিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ গাড়ির চেয়ে লঞ্চে যেতে পছন্দ করেন, তাই আমাদের জন্য ঈদ একটি আশীর্বাদ স্বরূপ। এখন পর্যন্ত ঈদের লঞ্চ-যাত্রায় কোনো সমস্যা হয়নি। আশা করি, শেষ মুহূর্তেও এর ব্যতিক্রম হবে না।”

বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক মুহাম্মদ মোবারক হোসেন বলেন, “ঈদযাত্রাকে নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক করার জন্য আমাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা সার্বক্ষণিক নজরদারি রেখেছেন। যাতে কোনো ধরনের বাড়তি চাপ না পড়ে, সে জন্য অতিরিক্ত লঞ্চ পরিচালনা করা হচ্ছে। গতবারের মতো এবার বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ সেভাবে পাইনি। লঞ্চ-যাত্রা নিরাপদ করার জন্য সেনাবাহিনীর পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে এখন পর্যন্ত সবকিছু ঠিকঠাক আছে।”

এবারের ঈদযাত্রার সার্বিক নিরাপত্তা বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ নৌ পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আব্দুল ওয়ারীশ বলেন, “আমরা যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। আমরা নদীতে নিয়মিত তদারকি করছি। আমাদের পুলিশ সদস্যরা সার্বক্ষণিক নজরদারি বজায় রেখেছেন সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে। যাত্রীদের কোনো অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যাত্রীদের মুখে স্বস্তির কথা শুনেছি।”

ঢাকা/রাসেল 

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ঈদ র র জন য র সদস য ঈদয ত র আম দ র রব ব র ন র পদ সরক র ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

টাঙ্গাইলে ঈদের মা‌ঠে সংঘর্ষ এড়া‌তে ১৪৪ ধারা জা‌রি

টাঙ্গাইলে ঈদের মা‌ঠে সংঘর্ষ এড়া‌তে ১৪৪ ধার‌া জা‌রি ক‌রে‌ছে জেলা প্রশাসন। টাঙ্গাইল সদর উপজেলার বড় বাসালিয়া ঈদগাহ মাঠে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায়কে কেন্দ্র করে গ্রামের লোকজনের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার আশঙ্কায় এ নি‌র্দেশ জা‌রি ক‌রেন জেলা ম‌্যা‌জি‌স্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক শরীফা হক। 

আদে‌শে বলা হয়, বড় বাসালিয়া গ্রামের ঈদগাহ মাঠের ৪০০ গজ পরিসীমার মধ্যে সকল প্রকার সমাবেশ, স্লোগান, মিছিল, শোভাযাত্রা, পিকেটিং, মাইক্রোফোন ব্যবহার, ঢাকঢোল পিটানো, গোলযোগ সৃষ্টি, লাঠিসোঁটা, অস্ত্রশস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্যাদি পরিবহন এবং সর্বসাধারণের বেআইনি অনুপ্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।

জেলা ম‌্যা‌জি‌স্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক শরীফা হক জানান, বড় বাসালিয়া ঈদগা মাঠে ঈদের দিন ভোর ৫টা হতে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। 
 

আরো পড়ুন:

নান্দাইলে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ, ১৪৪ ধারা জারি 

সুনামগঞ্জের মধ্যনগরে অনির্দিষ্টকালের ১৪৪ ধারা জারি

ঢাকা/কাওছার/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দিনাজপুরের গোর-এ শহীদে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত
  • আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আরও কঠোর হোক
  • ঈদের আগের রাতে নদী পথে বাড়ি ফিরছে মানুষ
  • রংপুরের প্রধান ঈদের জামাত সকাল সাড়ে ৮টায় 
  • টাঙ্গাইলে ঈদের মা‌ঠে সংঘর্ষ এড়া‌তে ১৪৪ ধারা জা‌রি
  • লঞ্চে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক ও পলিথিন নিরুৎসাহিত করতে মোবাইল কোর্ট
  • নৌপথে ঘরমুখো যাত্রীর ভিড়
  • নৌপথে ঘরমুখো যাত্রীদের ভিড়
  • ঈদে র‌্যাবের বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা