ঈদের ছুটিতে ২ দিনে ঢাকা ছেড়েছেন প্রায় ৪১ লাখ সিমধারী
Published: 30th, March 2025 GMT
পবিত্র ঈদুল ফিতর উদ্যাপন করতে গত দুই দিনে (২৮ ও ২৯ মার্চ) রাজধানী ঢাকা ছেড়েছেন প্রায় ৪১ লাখ মোবাইল সিম ব্যবহারকারী।
আজ রোববার (৩০ মার্চ) বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এক ফেসবুক পোস্টে এ তথ্য তুলে ধরেন। তাঁর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত শুক্রবার (২৮ মার্চ) ঢাকা ছেড়েছেন ১৮ লাখ ৯৯ হাজার ৩৩৭ সিমধারী। আর শনিবার (২৯ মার্চ) ঢাকা ছাড়েন ২১ লাখ ৯৫ হাজার ৮৪টি সিমধারী ব্যক্তিরা। দুই দিন মিলিয়ে মোট ৪০ লাখ ৯৪ হাজার ৬২১ মোবাইল সিম ব্যবহারকারী ঢাকা ছাড়েন।
চার মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক ও টেলিটকের তথ্য তুলে ধরা হয় ওই পোস্টে।
শুক্রবার ঢাকা ছেড়ে যাওয়া মানুষদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৮ লাখ ১৬ হাজার ৫০২ গ্রামীণফোনের সিম ব্যবহারকারী। এ ছাড়া রবির ৪ লাখ ৪৭ হাজার ৬৭৬টি, বাংলালিংকের ৫ লাখ ৩৮ হাজার ২৯৬টি, টেলিটকের ৯৭ হাজার ৬৩টি সিম ব্যবহারকারী এদিন ঢাকা ছেড়েছেন।
তথ্য অনুযায়ী, ২৮ মার্চ রাত ১২টার পর থেকে ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা থেকে বাইরে গেছেন ১৮ লাখ ৯৯ হাজার ৫৩৭টি মোবাইল সিম ব্যবহারকারী। একই সময়ে ঢাকায় প্রবেশ করেছেন ৬ লাখ ১২ হাজার ৩৩২টি সিম ব্যবহারকারী।
প্রেস সচিবের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গতকাল শনিবার ঢাকা ছেড়েছেন ২১ লাখ ৯৫ হাজার ৮৪টি সিম ব্যবহারকারী। একই সময়ে ঢাকায় প্রবেশ করেছেন ৫ লাখ ৮৮ হাজার ৪টি সিম ব্যবহারকারী।
গত বছর ঈদুল ফিতর উদ্যাপিত হয় ১১ এপ্রিল। এর মধ্যে পবিত্র ঈদুল ফিতর সামনে রেখে ওই বছর চার দিনে (৬-৯ এপ্রিল) রাজধানী ছাড়েন ৫৭ লাখের মতো মুঠোফোন সিমধারী। মুঠোফোন অপারেটরদের সূত্রে এ তথ্য জানা গিয়েছিল।
সিমধারী বলতে একেকজন মানুষকে বোঝানো হয়েছে (ইউনিক ইউজার)। তাঁদের সঙ্গে প্রবীণ নারী-পুরুষ ও শিশুরা থাকতে পারে, যারা মুঠোফোন ব্যবহার করে না। ফলে প্রকৃতপক্ষে কত মানুষ ঢাকা ছেড়েছেন, সেই হিসাব পাওয়া কঠিন।
২০২৩ সালের ঈদুল ফিতরের ছুটিতে (১৮-২২ এপ্রিল) এক কোটির বেশি সিমধারী ঢাকা ছেড়েছিলেন। সেই সময় ঢাকায় প্রবেশ করেছেন ২৮ লাখের মতো সিমধারী। তখন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের ফেসবুক পেজে পোস্ট দিয়ে ওই তথ্য জানিয়েছিলেন।
পরিবহনবিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অন য য়
এছাড়াও পড়ুন:
সফটওয়্যার পাইরেসি বন্ধে দরকার সমন্বিত পদক্ষেপ
অধিকার হরণ ও অধিকার আদায় উভয়ের মাঝেই দুনিয়ার বহু কর্মকাণ্ড ঘটেছে। সামাজিক ভারসাম্য ও ন্যায়নিষ্ঠ সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মানুষের তৎপরতাও কম নয়। কিন্তু তার বিপরীত চেষ্টাও কোনো অংশে পিছিয়ে নেই। এ জন্য আধুনিক বিশ্বে কপিরাইট বা মেধাস্বত্ব আইনের উদ্ভব ঘটে। বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় সমাজের দুষ্টচক্র শুধু মেধাজাত সম্পদের অধিকারই হরণ করছে না, বরং পরিসর
বাড়িয়ে পাইরেসির মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে পুনরুৎপাদন করে মেধাসম্পদ, সৃজনশীলতা ও অর্থনৈতিক অধিকার ক্ষুণ্ন করছে। সাম্প্রতিক বিশ্বে কম্পিউটার প্রযুক্তিনির্ভর সফটওয়্যার খাতেও পাইরেসি জেঁকে বসেছে।
মোটাদাগে, সফটওয়্যার হলো এক ধরনের প্রোগ্রাম বা নির্দেশনার সমষ্টি, যা কম্পিউটার হার্ডওয়্যারকে বিভিন্ন কাজ করতে নির্দেশ দেয়। বর্তমান চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) যুগে মানুষ হিসাব-নিকাশ থেকে শুরু করে চলচ্চিত্র, সংগীতসহ নানা ক্ষেত্রে সফটওয়্যারের মাধ্যমে সৃজন প্রতিভার প্রসার ঘটিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের ২০২৩ সালে প্রণীত কপিরাইটে পূর্বতন আইনের সীমাবদ্ধতা কাটাতে আর্থসামাজিক অবস্থা আমলে নেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সফটওয়্যার পাইরেসির বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে। কপিরাইট আইন ২০২৩-এর প্রথম অধ্যায়ের ১০ নম্বর অনুচ্ছেদে বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়েছে।
সফটওয়্যার বানাতে সোর্স কোড লাগে, ভাষা লাগে। সোর্স কোডের মাধ্যমে বিষয়টি উপস্থাপিত হয়। এ জন্য এর সুরক্ষায় কপিরাইট প্রয়োজন। যে কোনো ধরনের সফটওয়্যার চাহিদার প্রয়োজনে উন্নত ভার্সনের দরকার পড়ে। আপগ্রেড করে নতুন সংযোজিত মেধার জন্য নবায়নকৃত সফটওয়্যারও কপিরাইট করা যেতে পারে। তবে পুরোনো সফটওয়্যার মোটাদাগে ৫০ শতাংশের বেশি নতুন সংযোজন না হলে কপিরাইট আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত হতে পারে।
সফটওয়্যারের ক্ষেত্রে সোর্স কোড বিন্যাস করে নতুন নামে সামনে আসে। তখন এর সুরক্ষার জন্যও কপিরাইট আবশ্যক। সফটওয়্যারের সুরক্ষার জন্যও ন্যারেটিভের কপিরাইট প্রয়োজন, পাশাপাশি বাণিজ্যিকীকরণের জন্য ব্র্যান্ড হিসেবে ট্রেডমার্ক রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। এই দুই সুরক্ষা কবচ সফটওয়্যারের সুরক্ষা দেয়। কিন্তু প্রযুক্তিনির্ভর সফটওয়্যার তৈরিতে প্রযুক্তিবিদরা যেমন মেধার কর্ষণে সৃজনের আনন্দ পান, বিপরীতক্রমে পর্দার আড়ালে থাকে পাইরেসি চক্র। তারাও প্রযুক্তির সহায়তায় পাইরেসির মাধ্যমে কপিরাইট লঙ্ঘন করে।
সফটওয়্যার পাইরেসির ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত নতুন কৌশল নেওয়া হচ্ছে। তাই আইনের মোটাদাগের পরিধির ভেতর সরল ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না। বাংলাদেশের কপিরাইট অফিস সফটওয়্যার পাইরেসির ক্ষেত্রে আইনের বিধির মান্যতার অনুশাসন ও অনুসরণ রক্ষা ছাড়াও কপিরাইট বোর্ড এবং বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে ইতোপূর্বে বিরোধ নিষ্পত্তির নজির রয়েছে। সফটওয়্যার পাইরেসির ক্ষেত্রে স্রষ্টা কিংবা বাণিজ্যিক ব্যবহারের স্বত্ব গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের জনতুষ্টির বিষয় অনেক সময় লোভী পাইরেট চক্রকে আরও প্রলুব্ধ করে।
উন্নয়নশীল দেশের জন্য বড় কিছু কোম্পানি অনেক সফটওয়্যার পাবলিক ডোমেন হিসেবে ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়। সেই সুযোগে সাধারণ গ্রাহক তুষ্ট হলেও অতিলোভী চক্র সংরক্ষিত সফটওয়্যার অবৈধ উপায়ে পাইরেসি করে আয় করতে চায়। বাংলাদেশে এই প্রবণতা এখন বেশ তীব্র। এ জন্য বর্তমান আইনের বুনন বেশ মজবুত ও প্রতিকার রক্ষায় সাজা ও দণ্ড পূর্বতন অবস্থার চেয়ে ঢের বেশি। কপিরাইট আইন ২০২৩-এর ষোড়শ অধ্যায়ে অনুচ্ছেদ ৭৮-এ দেওয়ানি, সপ্তদশ অধ্যায়ে ফৌজদারি প্রতিকারের বিধান আছে। ৮৫ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘যদি কোনো ব্যক্তি চলচ্চিত্রের কপিরাইট বা এই আইনে বর্ণিত অন্য কোনো অধিকার ইচ্ছাকৃতভাবে লঙ্ঘন করেন বা করিতে সহায়তা করেন, তাহা হইলে উহা হইবে একটি অপরাধ এবং তজ্জন্য তিনি অনধিক ৫ (পাঁচ) বৎসর কারাদণ্ড এবং অনধিক ১০ (দশ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।’
বর্তমানে সফটওয়্যার পাইরেসির ফলে প্রযুক্তিবিদদের সৃজনের বিনিময়ে আনন্দ, স্বস্তি, স্বীকৃতি ও যথার্থ বিনিময়মূল্য দেওয়া যাচ্ছে না। ফলে শুধু মেধাস্বত্বের স্রষ্টা নয়; পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার করে আপাতদৃষ্টিতে ব্যবহারকারী সুবিধা ভোগ করে, কিন্তু তারা দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির সম্মুখীন। অনেক ক্ষেত্রে সামান্য অর্থ প্রদান করে অরিজিনাল সফটওয়্যার পাওয়া গেলেও পাইরেটেড কপির প্রতি নজর বাড়ছে।
ব্যক্তিগত কাজে ড্রপবক্স অ্যাকাউন্ট খুলে তথ্য, ছবি, নথি ইত্যাদি ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটা অনেকাংশে গুগল ড্রাইভের চেয়ে সহজতর। ধারণা করা হচ্ছে, সফটওয়্যারের ওপর নির্ভরতা আমাদের যাপিত জীবনে আরও থিতু হবে। এই পরিপ্রেক্ষিতে শুধু কপিরাইট আইনের বিধিবিধানের কঠোরতা নয়; জনসমাজে কপিরাইট আইনের ফাঁকফোকর না খুঁজে বরং তা মেনে চলা জরুরি।
এ জন্য বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এ ব্যাপারে পাঠ্যক্রম ও আলাদা বিভাগের ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদবিষয়ক পাঠদানে তত্ত্বীয় দিকের চেয়ে প্রায়োগিক দিককে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে, যাতে অর্থনৈতিক বিষয়টির গুরুত্ব থাকে। তবেই পাইরেসি প্রতিরোধে জাগরণ ঘটবে জনসমাজে।
খান মাহবুব: কপিরাইট বিশেষজ্ঞ ও প্রাবন্ধিক