দলের চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা, পাচ্ছেন ২৪৩ কোটি টাকা
Published: 30th, March 2025 GMT
বেচারা জেক গ্লিসন, ২০১৮ সাল থেকে অসহ্য যন্ত্রণায় কাটছে একেকটি দিন। হাঁটলেই দুই পায়ে শুরু হয় তীব্র ব্যথা। প্রায় সাড়ে ৬ বছর এমন অসহ্য যন্ত্রণার মধ্যে কাটানো মেজর লিগ সকারের (এমএলএস) দল পোর্টল্যান্ড টিম্বার্সের সাবেক গোলকিপার গ্লিসনের মুখে অবশেষে একটা ‘যুদ্ধ’ জয়ের হাসি ফুটেছে।
আরও পড়ুনব্রাজিল কেন কোচ খুঁজে পাচ্ছে না ১ ঘণ্টা আগেগ্লিসন নিজের দুরবস্থার জন্য টিম্বার্সের চিকিৎসক রিচার্ড এইচ এডেলসনের বিরুদ্ধে চিকিৎসাজনিত অবহেলার মামলা করেছিলেন। সেই মামলায় জিতে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ২ কোটি ডলার ( প্রায় ২৪৩ কোটি টাকা) পাচ্ছেন নিউজিল্যান্ডের সাবেক এ গোলকিপার। সম্প্রতি মাল্টনোমাহর ওরেগন সার্কিট আদলত গ্লিসনের পক্ষে এ রায় দিয়েছেন।
ঘটনাটা ২০১৮ সালের। দুই পায়ের হাড়েই চির ধরে গ্লিসনের। সেই সময় ২৮ বছরের টগবগে যুবক গ্লিসনকে যেতে হয় এডেলসনের অস্ত্রোপচারের টেবিলে। অস্ত্রোপচার করে তাঁর দুই পায়েই প্লেট বসান এডেলসন। কিন্তু কিছুদিন পরই গ্লিসনের পায়ে সংক্রমণ শুরু হয়।
সেই সংক্রমণ থেকে বাঁচতে একে একে আরও ১৩ বার দুই পায়ে অস্ত্রোপচার করাতে হয়েছে গ্লিসনকে। ছাড়তে হয়েছে ফুটবল খেলাও। জীবনের সুখশান্তি, খেলা—সবই যেন হারিয়ে ফেলেন তিনি। সেই সব দিনের কথা মনে করে ৩৪ বছর বয়সী গ্লিসন বলেছেন, ‘খুব কঠিন সাড়ে ছয়টা বছর। কয়েক সপ্তাহ বা কয়েকটা দিন ভালো কাটে। আবার কঠিন সময় যায়।’
আরও পড়ুনআমাকে এসবে জড়াবেন না: ব্রাজিলের নতুন কোচ কে হবেন, তা নিয়ে নেইমার ৩ ঘণ্টা আগেআদালত প্রমাণ পেয়েছেন, অস্ত্রোপচার করে গ্লিসনের পায়ে চিকিৎসক এডেলসন যে প্লেট বসিয়েছিলেন, সেগুলো যথাযথভাবে জীবাণুমুক্ত করা হয়নি। গ্লিসনের দুই পায়ের সংক্রমণ এ কারণেই হয়েছে। বিবাদী পক্ষের কৌঁসুলি অবশ্য এটা অস্বীকার করে বলেছেন, এমন প্লেট বসানোর ক্ষেত্রে সংক্রমণের ঝুঁকি থেকেই সব সময়ই থাকে।
গ্লিসন যেসব খাতে ২ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ পাবেন, সেগুলো এ রকম—এত দিন ধরে চিকিৎসা করানো বাবদ খরচ, ভবিষ্যতে চিকিৎসা বাবদ খরচ, এই অবস্থার জন্য সাড়ে ছয় বছর খেলতে না পেরে যে বেতন হারিয়েছেন, সেই খরচ, ভবিষ্যতেও আয় করতে না পারার জন্য ক্ষতিপূরণ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ক রমণ
এছাড়াও পড়ুন:
সড়কে রক্তের দাগ
ঈদের সময় সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে যায়। দুর্ঘটনায় প্রাণহানি সংক্রান্ত সংবাদপত্রের সাম্প্রতিক খবরগুলো বড় বেদনার। স্বাভাবিক সময়েই অনেক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। শহীদ রওশনের মায়ের চোখের পানি এখনও শুকায়নি। ২০১৮ সালের সেই জুলাইয়ের সকালে তিনি তাঁর ছেলেকে স্কুলে পাঠিয়েছিলেন স্বপ্ন নিয়ে। ফিরে পেয়েছিলেন রক্তাক্ত দেহ। একটি বেপরোয়া বাসের চাকায় শুধু একটি প্রাণই নয়, একটি পরিবারের সব স্বপ্ন চূর্ণ হয়ে গিয়েছিল।
প্রতিদিন বাংলাদেশের সড়কে গড়ে ২২ জন প্রাণ হারান। প্রতিটি মৃত্যুর পেছনে রয়েছে একটি পরিবারের অশ্রু আর অপূরণীয় ক্ষতি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য বলছে, গত দশকে আমরা হারিয়েছি ৭৫ হাজার প্রাণ, যা একটি ছোট শহরের জনসংখ্যার সমান।
আমাদের সড়কগুলো যেন মৃত্যুর মিছিল চলার উন্মুক্ত প্রান্তর। প্রতি ১০০টি গাড়ির মধ্যে ৩৫টি মেয়াদোত্তীর্ণ। ৪০ শতাংশ চালক বিনা লাইসেন্সে গাড়ি চালায়। এর পেছনে রয়েছে জটিল নেটওয়ার্ক– দুর্নীতি, অদক্ষতা। সর্বোপরি আমাদের সামাজিক অবক্ষয়।
২০১৮ সালের ছাত্র আন্দোলন ছিল এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে এক জোরালো প্রতিবাদ। কিন্তু ছয় বছর পর আমরা কতটুকু এগিয়েছি? ডিজিটাল লাইসেন্সিং সিস্টেম চালু হয়েছে, কিন্তু অনেক আবেদনকারী এখনও
দালালের কারণে হয়রানির শিকার। আইন হয়েছে, কিন্তু প্রয়োগ দুর্বল।
আমাদের সমস্যা শুধু প্রযুক্তিগত নয়। এটি মূলত সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয়। প্রতিটি সড়ক দুর্ঘটনার পেছনে রয়েছে সামাজিক অবক্ষয়ের ছাপ। আমরা যেখানে দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন করছি, সেখানে আমাদের মানবিক মূল্যবোধ পিছিয়ে পড়ছে।
সরকারের নতুন উদ্যোগগুলোকে স্বাগত জানাই। পাশাপাশি আমাদের প্রয়োজন সামাজিক বিবেককে জাগ্রত করা। প্রত্যেক চালক যেন বুঝতে পারে, তার হাতে শুধু স্টিয়ারিং নয়, অসংখ্য প্রাণের দায়িত্বও রয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার গুরুত্বপূর্ণ। লাইসেন্স প্রদান থেকে শুরু করে গাড়ি পরিদর্শন– সর্বক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। সমন্বিত পরিকল্পনা নিতে হবে। শুধু সড়ক নয়, আমাদের প্রয়োজন একটি সমন্বিত যানবাহন ব্যবস্থা, যেখানে প্রত্যেক নাগরিকের নিরাপত্তা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাবে।
২০১৮ সালের সেই নিরাপদ সড়ক আন্দোলন আমাদের দেখিয়েছিল– পরিবর্তন সম্ভব। আজ আমাদের প্রয়োজন সেই চেতনাকে আবার জাগিয়ে তোলা। প্রতিটি প্রাণ অমূল্য, প্রতিটি দুর্ঘটনা অপ্রয়োজনীয়। রওশনের মায়ের মতো চোখের জল যেন আর কোনো মাকে ফেলতে না হয়। সড়কগুলো যেন আর না হয় কবরস্থান। এটি শুধু একটি স্বপ্ন নয়, অধিকার। আসুন,সবাই মিলে গড়ে তুলি এমন এক বাংলাদেশ, যেখানে সড়ক দুর্ঘটনা হবে অতীতে ঘটে যাওয়া করুণ ইতিহাস, যা বর্তমানে নেই।
মো. রাইসুল ইসলাম: স্বেচ্ছাসেবক, চট্টগ্রাম