ইস্তাম্বুলে কখনো এমন দমন-পীড়ন দেখিনি
Published: 30th, March 2025 GMT
রাষ্ট্রপতি রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীর কারাবরণ তুরস্কের দীর্ঘ এক দশকের স্বৈরতন্ত্রের দিকে যাত্রার সর্বনিম্ন পর্যায়। কিন্তু প্রতিবাদকারীরাও এখনো হাল ছাড়েনি।
এ মাসের শুরুতে রাষ্ট্রপতি এরদোয়ানের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী, ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগলুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিযোগ—তিনি দুর্নীতি ও সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু স্পষ্টতই এ অভিযোগ সাজানো। এর পর থেকে ইস্তাম্বুলের সবচেয়ে বড় পর্যটনকেন্দ্র ও রাজনৈতিক বিক্ষোভের কেন্দ্রস্থল তাকসিম স্কয়ার ফাঁকা পড়ে আছে। পুরো এলাকা পুলিশ দিয়ে ঘেরা।
আমি পঞ্চাশ বছর ধরে ইস্তাম্বুলে বসবাস করছি। কিন্তু কখনো শহরের রাস্তায় এত বেশি তথাকথিত নিরাপত্তাব্যবস্থা দেখিনি, যতটা গত কয়েক দিনে দেখছি। তাকসিম মেট্রোস্টেশন এবং শহরের আরও বহু ব্যস্ত স্টেশন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আঞ্চলিক প্রশাসন ইস্তাম্বুলে গাড়ি ও আন্তনগর বাস চলাচল সীমিত করেছে। পুলিশ শহরে প্রবেশকারী যানবাহন চেক করছে। সন্দেহ হলে বিক্ষোভে যোগ দিতে আসা মানুষদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে। শহরের সব জায়গায় এবং দেশজুড়ে মানুষের টেলিভিশন চালু রাখা হয়েছে, যেন তারা সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ঘটনাগুলো অনুসরণ করতে পারে।
এক সপ্তাহ ধরে ইস্তাম্বুলের গভর্নরের কার্যালয় জনসমক্ষে প্রতিবাদ ও রাজনৈতিক সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে। অথচ এগুলো সংবিধান স্বীকৃত অধিকার। কিন্তু তবুও স্বতঃস্ফূর্ত, অনুমোদনবিহীন প্রতিবাদ থেমে নেই। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ চলছে। সরকার মানুষকে একত্রিত হতে বাধা দিতে ইন্টারনেট সংযোগ সীমিত করে দিয়েছে। পুলিশ নির্মমভাবে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ছে। গ্রেপ্তার করেছে অসংখ্য মানুষকে।
এক দশক ধরে তুরস্ক প্রকৃত অর্থে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ছিল না। তুরস্কে আছে কেবল একটি নির্বাচনী গণতন্ত্র। মানুষ এখানে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারে; কিন্তু তাদের বাক্স্বাধীনতা বা মতপ্রকাশের অধিকার থাকে না।একটা দেশ, যা ন্যাটোর সদস্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদ পেতে আগ্রহী, সেই দেশে কীভাবে এত অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটে? বিস্ময়ের ব্যাপার না? পুরো পৃথিবী এখন ডোনাল্ড ট্রাম্প, ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধ, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ নিয়ে ব্যস্ত। এমন সময় তুরস্কের গণতন্ত্রের সামান্য অবশিষ্ট অংশ টিকে থাকার জন্য লড়াই করছে।
ব্যাপক জনসমর্থন পাওয়ার ক্ষমতা রাখেন বহাল রাষ্ট্রপতির সেই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীকে জেলে পাঠিয়ে এরদোয়ানের কঠোর, স্বৈরাচারী শাসন এমন এক স্তরে গেছে, যা আগে কখনো দেখা যায়নি। তুরস্কের প্রধান বিরোধী দল আনুষ্ঠানিকভাবে ইমামোগলুকে তাদের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিতে যাচ্ছিল। ঠিক সেই সময় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হলো। সরকারপন্থী থেকে সরকারবিরোধী—উভয় পক্ষই এই বিষয়ে মোটামুটি একমত যে ইমামোগলুকে এরদোয়ান রাজনৈতিক হুমকি হিসেবে দেখেন। ইমামোগলুর হাত থেকে এরদোয়ান নিষ্কৃতি চান।
ইমামোগলু ইস্তাম্বুলের গত তিনটি মেয়র নির্বাচনে এরদোয়ানের দল, জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির চেয়ে বেশি ভোট পেয়েছেন। ২০১৯ সালের এপ্রিল নির্বাচনে তিনি এরদোয়ানের দলের মনোনীত প্রার্থীকে পরাজিত করলে এরদোয়ান কারচুপির অজুহাতে ফলাফল বাতিল করে দেন। দুই মাস পর আবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ইমামোগলু ফের জয়ী হন আগের চেয়ে বড় ব্যবধানে।
পাঁচ বছর মেয়র থাকার পর ২০২৪ সালের স্থানীয় নির্বাচনে ইমামোগলু আবারও এরদোয়ানের দলের প্রার্থীকে হারিয়ে তৃতীয়বারের মতো ইস্তাম্বুলের মেয়র নির্বাচিত হন। তাঁর নির্বাচনী সাফল্য ধারাবাহিক। জনপ্রিয়তা দিনে দিনে বাড়ছে। সব মিলিয়ে ইমামোগলু পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এরদোয়ানকে চ্যালেঞ্জ জানাতে সক্ষম একজন প্রধান বিরোধী নেতা হয়ে উঠেছেন।
এখন এই সীমিত গণতন্ত্রও শেষ করে দেওয়া হচ্ছে। এটা কোনোভাবেই মানা যায় না। আর এ কারণেই আরও বেশি মানুষ সাম্প্রতিক আন্দোলনে যোগ দিচ্ছে।.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এরদ য় ন র র জন ত ক ত রস ক
এছাড়াও পড়ুন:
জনগণের স্বার্থে আঘাত এলে আবারও মাঠে নামবে বিএনপি: মির্জা ফখরুল
দল ও দেশের জনগণের স্বার্থে আঘাত এলে বিএনপি আবার মাঠে নামবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে যেকোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে বিএনপি সফল হবে।
আজ শনিবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে ঈদ উপহার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিকেলে রাজধানীর মাদানী অ্যাভিনিউর ১০০ ফিটের বেরাইদ ঈদগাহ মাঠে দলটির ঢাকা মহানগর উত্তর শাখা এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশি ও বিদেশি ষড়যন্ত্র চলছে, কোনোভাবে কোনো চক্রান্ত সফল হতে দেওয়া হবে না। ফ্রান্স, লন্ডন, আমেরিকা থেকে কেউ যদি দেশের মানুষকে উত্তেজিত করার চেষ্টা করেন, তবে তা রুখে দেওয়া হবে। দেশে কোনো অস্থিতিশীল পরিবেশ মেনে নেওয়া হবে না। মানুষের ভোটের অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ে লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে।
বিএনপি বাংলাদেশের পক্ষে জানিয়ে ফখরুল বলেন, ‘আমরা ভারতের পক্ষেও না, পাকিস্তানের পক্ষেও না। আবার আমরা আমেরিকার পক্ষেও না ইংল্যান্ডের পক্ষেও না, আমরা বাংলাদেশের পক্ষে। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেছেন সবার আগে বাংলাদেশ।’
বিএনপি সব পরিবর্তন এনেছে দাবি করে দলটির মহাসচিব বলেন, সংস্কার করেছে বিএনপি, একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাতিল করে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাও প্রতিষ্ঠা করেছে তার দল।
বিগত ১৭ বছরে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি করে এমন ৯৯ শতাংশ মানুষ নির্যাতনের শিকার হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকার প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ড. ইউনূসকে দেশের মানুষ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বানিয়েছে স্বল্প সময়ের মধ্যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে নির্বাচন দেওয়ার জন্য। সব সংগ্রাম হয়েছে নির্বাচনের জন্য, সে জন্য বিএনপি নির্বাচনের কথাই বলে। তবে অনির্দিষ্টকালের জন্য এই সরকার ক্ষমতায় বসে থাকবে, জনপ্রতিনিধিত্বে কেউ থাকবে না, এমনটা মেনে নেওয়া হবে না।
একটি মহল দেশে বিশৃঙ্খলা তৈরির জন্য নির্বাচনকে পেছাতে চাইছে অভিযোগ করে তিনি দ্রুত নির্বাচন দিয়ে জনপ্রতিনিধির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করার আহ্বান জানান।
ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক তহিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ক্ষুদ্র ঋণবিষয়ক সম্পাদক এম এ কাইয়ুম, ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক।