দেশের শান্তি-সমৃদ্ধি কামনা করে বিভিন্ন স্থানে ঈদ উদযাপন
Published: 30th, March 2025 GMT
সৌদি আরব ও মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মিল রেখে দেশের বিভিন্ন স্থানে বরিবার (৩০ মার্চ) পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করা হয়েছে। তারা সৌদির আরবের সঙ্গে মিল রেখে রোজা পালন শেষে ঈদ উদযাপন করছেন।
ঈদ উদযাপনে তারা সকালে ঈদের নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে মোনাজতে মুসলিম উম্মাহর শান্তি এবং দেশের শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করা হয়। পরে সেমাইসহ মিষ্টিমুখ করে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেন।
ফেনী
ফেনী জেলার তিনটি স্থানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। ফেনী সদর উপজেলার ফরহাদনগর ইউনিয়নের পূর্ব সুলতানপুরের দুটি পাড়া ও পরশুরাম পৌরসভার কোলাপাড়া এলাকায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
আরো পড়ুন:
এক টাকায় ১৮ পণ্যের ঈদ উপহার
১০ টাকার ঈদবাজারে ৪০০ পরিবারের মুখে হাসি
পূর্ব সুলতানপুরের শাহ আমানিয়া জাহাগিরিয়া দরবার শরীফের পীর মাওলানা মোহাম্মদ গোলাম নবীর ইমামতিতে ঈদের নামাজ আদায় করেন। একই সময় গ্রামের অপর একটি অংশ পূর্ব সুলতানপুর রশিদিয়া দরবার শরীফের মরহুম মাওলানা গোলাম কিবরিয়া পীরমিয়ার ছেলে মুহাম্মদ সুলতান মাহমুদের নেতৃত্বে ঈদের নামাজ আদায় করেন।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জাহাঙ্গীর আলম জানান, দুইশত বছরের বেশি সময় ধরে তারা সৌদি আরব ও মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উদযাপন করছেন।
পূর্ব সুলতানপুর শাহ আমানিয়া জাহাগিরিয়া দরবার শরীফের পীর মাওলানা মোহাম্মদ গোলাম নবী বলেন, সকাল থেকে মুসল্লিরা উৎসবমুখর পরিবেশে ঈদগাহে আসতে শুরু করে। সুশৃঙ্খলভাবে নামাজ শেষ হয়েছে।
এ দিন পরশুরাম উপজেলার পৌর এলাকার কোলাপাড়া ছয়ঘরিয়া এলাকায় একটি স্থানেও ঈদুল ফিতরের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।
গাজীপুর
গাজীপুরের সদর উপজেলার ডগরি এলাকায় একটি মসজিদে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল ৭টার দিকে এই নামাজ হয়। যেখানে কয়েকটি পরিবারের সদস্যরা নামাজে অংশ নেয়।
নামাজ শেষে মোনাজতে দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও কল্যাণ কামনা করা হয়। এ সময় অনেক মুসল্লিকে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে। নামাজ শেষে পরস্পরের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন এবং মিষ্টিমুখ করেন।
নামাজে অংশ নেওয়া মুসল্লিরা জানান, তারা দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উদযাপন করছেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। রোজার পর এই দিনে তারা আনন্দে মেতে ওঠে।
মুন্সীগঞ্জ
মুন্সীগঞ্জের দুই উপজেলার ১৫টি গ্রামে ঈদ উদযাপন করা হচ্ছে। সকাল ৮টা থেকে সাড়ে ৯টার মধ্যে ওই সব এলাকায় ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।
জেলা সদরের শিলই ইউনিয়নের উত্তরকান্দি মাঝিবাড়ি ঈদগাহে জাহাগিরিয়া মাঠে সকাল ৯টায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে স্থানীয় শতাধিক ব্যক্তি অংশ নেয়।
জাহাগিরিয়া তরিকার অনুসারীদের মতে, পৃথিবীর যে কোনো স্থানে চাঁদ দেখা গেলে ঈদ উদযাপন করা উচিত। তাই সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে তারা ঈদ উদযাপন করেন।
শিলই ইউনিয়ন পরিষদ ৩নং ওয়ার্ডের সদস্য দিল মোহাম্মদ বেপারী বলেন, তাদের ইউনিয়নের জাহাগিরিয়া তরিকার লোকজন ঈদের জামাত পড়েছে।
বগুড়া
বগুড়ার তিন উপজেলার কিছু এলাকায় ঈদ উদযাপন করা হয়েছে। ধুনট উপজেলার হাশুখালী গ্রামে, সোনাতলা উপজেলার কালাইগাটা গ্রামে এবং গাবতলী উপজেলার রেল স্টেশন এলাকা ঈদের নামাজ আদায় করা হয়।
ধুনট ও সোনাতলা উপজেলার দুটি গ্রামের কয়েক বাড়ির মুসল্লিরা সকাল সাড়ে ৭টায় ঈদের নামাজ আদায় করেন। আর গাবতলী উপজেলার রেল স্টেশনের একটি মাঠে সকাল ৮টায় ঈদের অর্ধশত মুসল্লি জামাতের আয়োজন করেন। নামাজ শেষে তারা একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি করেন।
ঝিনাইদহ
ঝিনাইদহের কয়েকটি গ্রামের মুসল্লিরা ঈদ উদযাপন করেন। সকাল ৮টায় সদর উপজেলা শহরের ফুটবল মাঠ এলাকায় এ ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। নামাজের ইমামতি করেন মাওলানা রেজাউল ইসলাম।
মুসল্লিরা জানান, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার চোরকোল, শ্যামনগর, যাদবপুর; হরিণাকুণ্ডু উপজেলার দখলপুর, নারায়নকান্দি, বৈঠাপাড়া, বোয়ালিয়া, চটকাবাড়ীয়া, পারফলসী, পায়রাডাঙ্গা এবং শৈলকুপা উপজেলার ভাটইসহ জেলাশহর থেকে আগত মুসল্লিরা এ ঈদের নামাজ আদায় করেন।
নামাজ শেষে দেশের শান্তি, সমৃদ্ধি ও মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
দিনাজপুর
দিনাজপুরে ৬ উপজেলার কিছু সংখ্যক গ্রামের বাসিন্দাদের একটি অংশ ঈদ উদযাপন করছেন।
দিনাজপুর শহরের বাসুনিয়া পট্টি পার্টি সেন্টারে; চিরিরবন্দর উপজেলার রাবার ড্যাম এলাকায়; বিরামপুর উপজেলার বিনাইল ইউনিয়নের আয়রা গ্রামের নুরুলহুদা মাদ্রাসা মাঠে, ৬ জোদবানি ইউনিয়নের খয়েরবাড়ী আমগাছি ঈদগা মাঠে; নবাবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের রাঘবেন্দপুর বাজার মাদ্রাসা মাঠে; কাহারোল উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়নের ভবানীপুর গোরস্থান ঈদগাঁ মাঠে; বিরল থানাধীন ধর্মপুর ইউনিয়নের বনগাঁও গ্রামে বনগাঁও জামে মসজিদে নামাজ আদায় করেন কয়েক শতাধিক পরিবার।
সকাল ৯টায় দিনাজপুর চিরিরবন্দর উপজেলায় সাইতাঁড়া ইউনিয়নের রাবারড্যাম চিরিনদী ঈদগাহ মাঠে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেন আশপাশের কয়েকটি পরিবারের মানুষ। এই জামাতে পুরুষ, মহিলা ও শিশুসহ অর্ধশতাধিক মুসল্লি অংশ নেয়। জামায়াতে ইমামতি করেন মোহাম্মদ আব্দুল আলীম।
চিরিনদী ঈদগাহ মাঠের সভাপতি হাসান আলী জানান, তারা ২০০৯ সাল থেকে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে রোজা পালন ও ঈদ উদযাপন করেন।
বাগেরহাট
বাগেরহাটের মোংলায় শতাধিক পরিবার ঈদ উদযাপন করছেন। উপজেলার চটের হাট এলাকার ১০০টি পরিবার সকাল ৮টায় চটের হাট জামে মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করেন। জামাতে নারী-পুরুষ অংশ নেয়। নামাজ শেষে মুসল্লিরা একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি ও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
তারা মসজিদ প্রাঙ্গণে মিষ্টি ও সেমাই খেয়ে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করেন।
চটের হাট জামে মসজিদের সভাপতি ইয়াসিন শেখ বলেন, ‘‘যারা সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উদযাপন করেননি, তাদের সঙ্গে আমাদের বিরোধ নেই। আমরা সব মুসলমানের ঐক্য কামনা করি। এ কারণে চটের হাট জামে মসজিদে পরপর দুই দিন ঈদের জামাতের আয়োজন করা হয়েছে। যারা আজ ঈদ করছেন, তারা আজ নামাজ পড়েছেন। আর যারা সোমবার বা মঙ্গলবার ঈদ উদযাপন করবেন, তাদের জন্য আলাদা ইমামের নেতৃত্বে জামাতের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।’’
ফরিদপুর
ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার ১৩টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ ঈদ উদযাপন করছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বোয়ালমারী উপজেলার শেখর ও রুপাপাত ইউনিয়নের সহস্রাইল, দড়ি সহস্রাইল, ভুলবাড়িয়া, বারাংকুলা, বড়গাঁ, মাইটকুমড়া, গঙ্গানন্দপুর, রাখালতলী, কাটাগড়, কলিমাঝি, বন্ডপাশা, জয়দেবপুর ও দিঘীরপাড় গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ ঈদ উদযাপন করছেন।
সকাল ৮টা থেকে ১০টার মধ্যে বিভিন্ন স্থানে ঈদের নামাজ আদায় করা হয়। মাইটকুমরা জামে মসজিদের ইমাম মো.
এই ১৩টি গ্রামের সবাই একসঙ্গে ঈদ উদযাপন করেন না। বেশিরভাগ মানুষ বাংলাদেশে চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ঈদ উদযাপন করবেন। মাইটকুমরা গ্রামের আবুল হাসান শেখ বলেন, তাদের গ্রামের কিছু মানুষ আজ ঈদ পালন করছেন। বাকিরা আগামীকাল করবেন।
শেখর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামাল আহমেদ জানান, এখানকার কিছু মানুষ সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উদযাপন করেন। এটি তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস ও ঐতিহ্যের অংশ।
ঢাকা/সাহাব/রেজাউল/তামিম/মোসলেম/শহীদুল/এনাম/সোহাগ/রতন/বকুল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ঈদ উৎসব র ন ম জ অন ষ ঠ ত সদর উপজ ল উপজ ল র র র উপজ ল র ম হ ম মদ পর ব র য় ঈদ র এল ক য় ন কর ন ঈদগ হ মসজ দ
এছাড়াও পড়ুন:
বিদেশি গাড়ি আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক বসালেন ট্রাম্প
সব ধরনের বিদেশি গাড়ি আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। ওয়াশিংটনের স্থানীয় সময় বুধবার বিকেল চারটায় হোয়াইট হাউসে সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। খবর-বিবিসি
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্যের শুরুতেই ‘আজ খুব ভালো খবর’ থাকবে বলে জানান। ট্রাম্প তার বক্তব্যে আজকের এই দিনকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দিবস’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, এই দিনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষা করছে। আজকের দিনটি আমেরিকান শিল্পের ‘পুনর্জন্ম’। আমেরিকাকে ‘আবার সম্পদশালী’ করার দিন।
ট্রাম্প বলেন, বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কখনও ‘বন্ধু শত্রুর চেয়ে খারাপ হয়’। দক্ষিণ কোরিয়ায় যেসব গাড়ি উৎপাদন করা হয়, তার ৮০ শতাংশের বেশি সে দেশে বিক্রি হয়। আর জাপানে যেসব গাড়ি বিক্রি হয়, সেগুলোর ৯০ শতাংশের বেশি সে দেশে তৈরি হয়। এসব দেশে যুক্তরাষ্ট্রের গাড়ি বিক্রি হয় খুব সামান্য। ফোর্ড অন্যান্য দেশে খুব কম গাড়ি বিক্রি করে উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, অন্য যে দেশে তৈরি মোটরযানের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ হবে এবং এটা আজ মধ্যরাত থেকেই কার্যকর হবে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, দশকের পর দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য বাধার মুখে রয়েছে। অন্যান্য দেশ যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর ব্যাপক শুল্ক আরোপ করেছে। অনেক ক্ষেত্রে অশুল্ক বাধা আরও খারাপ অবস্থা তৈরি করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রে মোট বিক্রি হওয়া গাড়ির মাত্র ৫০ শতাংশ তৈরি হয় দেশে। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, আমদানিতে শুল্ক আরোপের ফলে দেশের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়বে। ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়েছে, এই শুল্ক থেকে বছরে আনুমানিক ১০০ বিলিয়ন ডলার আয় বৃদ্ধি হবে। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের গাড়ি উৎপাদনকারী সংস্থাগুলোর সূত্র জানিয়েছে, সারা পৃথিবী থেকে তারা গাড়ির যন্ত্রাংশ আমদানি করে। তাদের আশঙ্কা, ট্রাম্পের এই নতুন সিদ্ধান্তের ফলে গাড়ি উৎপাদনের খরচ বাড়বে এবং বিক্রি কমে যাবে। দ্য সেন্টার ফর অটোমোটিভ রিসার্চ এর আগেই জানিয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ধার্য করা করের ফলে গাড়ির দাম অনেকাংশেই বৃদ্ধি পাবে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, এই নতুন কর আরোপের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অন্যান্য দেশের বাণিজ্যিক লড়াই আরো জটিল হয়েছে। এর ফলে বিশ্ববাণিজ্য পরিস্থিতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। উপরন্তু সাধারণ মানুষের মধ্যেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন তাঁরা। এই শুল্কের বোঝা যদি তাদের ওপর আরোপিত হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রে গাড়ির গড় মূল্য সাড়ে ১২ হাজার ডলারের কাছাকাছি হবে। এ ছাড়া জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, কানাডা, মেক্সিকো, জার্মানিসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটতে পারে বলেও মনে করছে বিশেষজ্ঞদের একাংশ। কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি অসন্তোষ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, এই নতুন শুল্ক ঘোষণার ফলে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন গাড়ি শিল্পের সঙ্গে যুক্ত সে দেশের শ্রমিকরা।