দেশের শান্তি-সমৃদ্ধি কামনা করে বিভিন্ন স্থানে ঈদ উদযাপন
Published: 30th, March 2025 GMT
সৌদি আরব ও মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মিল রেখে দেশের বিভিন্ন স্থানে বরিবার (৩০ মার্চ) পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করা হয়েছে। তারা সৌদির আরবের সঙ্গে মিল রেখে রোজা পালন শেষে ঈদ উদযাপন করছেন।
ঈদ উদযাপনে তারা সকালে ঈদের নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে মোনাজতে মুসলিম উম্মাহর শান্তি এবং দেশের শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করা হয়। পরে সেমাইসহ মিষ্টিমুখ করে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেন।
ফেনী
ফেনী জেলার তিনটি স্থানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। ফেনী সদর উপজেলার ফরহাদনগর ইউনিয়নের পূর্ব সুলতানপুরের দুটি পাড়া ও পরশুরাম পৌরসভার কোলাপাড়া এলাকায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
আরো পড়ুন:
এক টাকায় ১৮ পণ্যের ঈদ উপহার
১০ টাকার ঈদবাজারে ৪০০ পরিবারের মুখে হাসি
পূর্ব সুলতানপুরের শাহ আমানিয়া জাহাগিরিয়া দরবার শরীফের পীর মাওলানা মোহাম্মদ গোলাম নবীর ইমামতিতে ঈদের নামাজ আদায় করেন। একই সময় গ্রামের অপর একটি অংশ পূর্ব সুলতানপুর রশিদিয়া দরবার শরীফের মরহুম মাওলানা গোলাম কিবরিয়া পীরমিয়ার ছেলে মুহাম্মদ সুলতান মাহমুদের নেতৃত্বে ঈদের নামাজ আদায় করেন।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জাহাঙ্গীর আলম জানান, দুইশত বছরের বেশি সময় ধরে তারা সৌদি আরব ও মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উদযাপন করছেন।
পূর্ব সুলতানপুর শাহ আমানিয়া জাহাগিরিয়া দরবার শরীফের পীর মাওলানা মোহাম্মদ গোলাম নবী বলেন, সকাল থেকে মুসল্লিরা উৎসবমুখর পরিবেশে ঈদগাহে আসতে শুরু করে। সুশৃঙ্খলভাবে নামাজ শেষ হয়েছে।
এ দিন পরশুরাম উপজেলার পৌর এলাকার কোলাপাড়া ছয়ঘরিয়া এলাকায় একটি স্থানেও ঈদুল ফিতরের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।
গাজীপুর
গাজীপুরের সদর উপজেলার ডগরি এলাকায় একটি মসজিদে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল ৭টার দিকে এই নামাজ হয়। যেখানে কয়েকটি পরিবারের সদস্যরা নামাজে অংশ নেয়।
নামাজ শেষে মোনাজতে দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও কল্যাণ কামনা করা হয়। এ সময় অনেক মুসল্লিকে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে। নামাজ শেষে পরস্পরের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন এবং মিষ্টিমুখ করেন।
নামাজে অংশ নেওয়া মুসল্লিরা জানান, তারা দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উদযাপন করছেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। রোজার পর এই দিনে তারা আনন্দে মেতে ওঠে।
মুন্সীগঞ্জ
মুন্সীগঞ্জের দুই উপজেলার ১৫টি গ্রামে ঈদ উদযাপন করা হচ্ছে। সকাল ৮টা থেকে সাড়ে ৯টার মধ্যে ওই সব এলাকায় ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।
জেলা সদরের শিলই ইউনিয়নের উত্তরকান্দি মাঝিবাড়ি ঈদগাহে জাহাগিরিয়া মাঠে সকাল ৯টায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে স্থানীয় শতাধিক ব্যক্তি অংশ নেয়।
জাহাগিরিয়া তরিকার অনুসারীদের মতে, পৃথিবীর যে কোনো স্থানে চাঁদ দেখা গেলে ঈদ উদযাপন করা উচিত। তাই সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে তারা ঈদ উদযাপন করেন।
শিলই ইউনিয়ন পরিষদ ৩নং ওয়ার্ডের সদস্য দিল মোহাম্মদ বেপারী বলেন, তাদের ইউনিয়নের জাহাগিরিয়া তরিকার লোকজন ঈদের জামাত পড়েছে।
বগুড়া
বগুড়ার তিন উপজেলার কিছু এলাকায় ঈদ উদযাপন করা হয়েছে। ধুনট উপজেলার হাশুখালী গ্রামে, সোনাতলা উপজেলার কালাইগাটা গ্রামে এবং গাবতলী উপজেলার রেল স্টেশন এলাকা ঈদের নামাজ আদায় করা হয়।
ধুনট ও সোনাতলা উপজেলার দুটি গ্রামের কয়েক বাড়ির মুসল্লিরা সকাল সাড়ে ৭টায় ঈদের নামাজ আদায় করেন। আর গাবতলী উপজেলার রেল স্টেশনের একটি মাঠে সকাল ৮টায় ঈদের অর্ধশত মুসল্লি জামাতের আয়োজন করেন। নামাজ শেষে তারা একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি করেন।
ঝিনাইদহ
ঝিনাইদহের কয়েকটি গ্রামের মুসল্লিরা ঈদ উদযাপন করেন। সকাল ৮টায় সদর উপজেলা শহরের ফুটবল মাঠ এলাকায় এ ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। নামাজের ইমামতি করেন মাওলানা রেজাউল ইসলাম।
মুসল্লিরা জানান, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার চোরকোল, শ্যামনগর, যাদবপুর; হরিণাকুণ্ডু উপজেলার দখলপুর, নারায়নকান্দি, বৈঠাপাড়া, বোয়ালিয়া, চটকাবাড়ীয়া, পারফলসী, পায়রাডাঙ্গা এবং শৈলকুপা উপজেলার ভাটইসহ জেলাশহর থেকে আগত মুসল্লিরা এ ঈদের নামাজ আদায় করেন।
নামাজ শেষে দেশের শান্তি, সমৃদ্ধি ও মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
দিনাজপুর
দিনাজপুরে ৬ উপজেলার কিছু সংখ্যক গ্রামের বাসিন্দাদের একটি অংশ ঈদ উদযাপন করছেন।
দিনাজপুর শহরের বাসুনিয়া পট্টি পার্টি সেন্টারে; চিরিরবন্দর উপজেলার রাবার ড্যাম এলাকায়; বিরামপুর উপজেলার বিনাইল ইউনিয়নের আয়রা গ্রামের নুরুলহুদা মাদ্রাসা মাঠে, ৬ জোদবানি ইউনিয়নের খয়েরবাড়ী আমগাছি ঈদগা মাঠে; নবাবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের রাঘবেন্দপুর বাজার মাদ্রাসা মাঠে; কাহারোল উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়নের ভবানীপুর গোরস্থান ঈদগাঁ মাঠে; বিরল থানাধীন ধর্মপুর ইউনিয়নের বনগাঁও গ্রামে বনগাঁও জামে মসজিদে নামাজ আদায় করেন কয়েক শতাধিক পরিবার।
সকাল ৯টায় দিনাজপুর চিরিরবন্দর উপজেলায় সাইতাঁড়া ইউনিয়নের রাবারড্যাম চিরিনদী ঈদগাহ মাঠে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেন আশপাশের কয়েকটি পরিবারের মানুষ। এই জামাতে পুরুষ, মহিলা ও শিশুসহ অর্ধশতাধিক মুসল্লি অংশ নেয়। জামায়াতে ইমামতি করেন মোহাম্মদ আব্দুল আলীম।
চিরিনদী ঈদগাহ মাঠের সভাপতি হাসান আলী জানান, তারা ২০০৯ সাল থেকে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে রোজা পালন ও ঈদ উদযাপন করেন।
বাগেরহাট
বাগেরহাটের মোংলায় শতাধিক পরিবার ঈদ উদযাপন করছেন। উপজেলার চটের হাট এলাকার ১০০টি পরিবার সকাল ৮টায় চটের হাট জামে মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করেন। জামাতে নারী-পুরুষ অংশ নেয়। নামাজ শেষে মুসল্লিরা একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি ও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
তারা মসজিদ প্রাঙ্গণে মিষ্টি ও সেমাই খেয়ে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করেন।
চটের হাট জামে মসজিদের সভাপতি ইয়াসিন শেখ বলেন, ‘‘যারা সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উদযাপন করেননি, তাদের সঙ্গে আমাদের বিরোধ নেই। আমরা সব মুসলমানের ঐক্য কামনা করি। এ কারণে চটের হাট জামে মসজিদে পরপর দুই দিন ঈদের জামাতের আয়োজন করা হয়েছে। যারা আজ ঈদ করছেন, তারা আজ নামাজ পড়েছেন। আর যারা সোমবার বা মঙ্গলবার ঈদ উদযাপন করবেন, তাদের জন্য আলাদা ইমামের নেতৃত্বে জামাতের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।’’
ফরিদপুর
ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার ১৩টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ ঈদ উদযাপন করছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বোয়ালমারী উপজেলার শেখর ও রুপাপাত ইউনিয়নের সহস্রাইল, দড়ি সহস্রাইল, ভুলবাড়িয়া, বারাংকুলা, বড়গাঁ, মাইটকুমড়া, গঙ্গানন্দপুর, রাখালতলী, কাটাগড়, কলিমাঝি, বন্ডপাশা, জয়দেবপুর ও দিঘীরপাড় গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ ঈদ উদযাপন করছেন।
সকাল ৮টা থেকে ১০টার মধ্যে বিভিন্ন স্থানে ঈদের নামাজ আদায় করা হয়। মাইটকুমরা জামে মসজিদের ইমাম মো.
এই ১৩টি গ্রামের সবাই একসঙ্গে ঈদ উদযাপন করেন না। বেশিরভাগ মানুষ বাংলাদেশে চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ঈদ উদযাপন করবেন। মাইটকুমরা গ্রামের আবুল হাসান শেখ বলেন, তাদের গ্রামের কিছু মানুষ আজ ঈদ পালন করছেন। বাকিরা আগামীকাল করবেন।
শেখর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামাল আহমেদ জানান, এখানকার কিছু মানুষ সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উদযাপন করেন। এটি তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস ও ঐতিহ্যের অংশ।
ঢাকা/সাহাব/রেজাউল/তামিম/মোসলেম/শহীদুল/এনাম/সোহাগ/রতন/বকুল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ঈদ উৎসব র ন ম জ অন ষ ঠ ত সদর উপজ ল উপজ ল র র র উপজ ল র ম হ ম মদ পর ব র য় ঈদ র এল ক য় ন কর ন ঈদগ হ মসজ দ
এছাড়াও পড়ুন:
ইউক্রেনে ট্রাম্পের ১০০ দিনের ব্যর্থতা
ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ফিরে আসার প্রায় ১০০ দিন পার হয়ে গেছে। কিন্তু এখনো রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ইউক্রেনের সাধারণ মানুষের ওপর আঘাত হানছে। ট্রাম্প ‘প্রথম দিনেই’ যুদ্ধ বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিলেও এখনো কোনো শান্তির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। প্রশ্ন হলো, ট্রাম্প প্রশাসন কবে স্বীকার করবে যে তারা ব্যর্থ হচ্ছে?
শুরুতে ট্রাম্পের দাবি ছিল খুব সহজ, ‘যুদ্ধ থামাও, আলোচনায় বসো।’ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে প্রথম ফোনালাপের পর তিনি বলেছিলেন, খুব দ্রুত যুদ্ধ বন্ধ হবে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও সেই সম্ভাবনাকে স্বাগত জানিয়েছিলেন।
কিন্তু এরপর যা ঘটেছে, তা হলো পুতিন ও তাঁর ক্রেমলিনের ছোট একটি দল ট্রাম্পের অনভিজ্ঞ আলোচক স্টিভ উইটকফকে এমন এক জটিল ও অসম্ভব শর্তের গোলকধাঁধায় ফেলেছেন, যেখান থেকে বেরোনো কঠিন। এত দিন ধরে এই নাটক চলার পর এমনকি সবচেয়ে বোকা আলোচকেরও বোঝার কথা, পুতিনের যুদ্ধ থামানোর কোনো ইচ্ছা নেই। তিনি ট্রাম্পের পরিকল্পনা বা সময়সূচিও মানবেন না।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে পুতিন যখন ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রায় হামলা শুরু করেন, তখন থেকেই তিনি মূলত রুশ সামরিক শক্তির ওপর ভরসা করেছিলেন, যাতে তিনি ইউক্রেনের ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারেন। প্রথমে তাঁর সেনাবাহিনীতে প্রায় দুই লাখ ভাড়াটে সৈনিক ছিলেন। এরপর তিনি কয়েক দফা আংশিক মোতায়েন এবং বিশাল আর্থিক প্রণোদনার মাধ্যমে সেনাসংখ্যা বাড়িয়ে তা প্রায় ছয় লাখে নিয়ে যান।
এই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত রাশিয়ার সাত–আট লাখ সেনা হতাহত হয়েছেন, যার মধ্যে দুই লাখের বেশি নিহত হয়েছেন। এত বড় ক্ষয়ক্ষতির পরও কথিত শক্তিশালী রুশ সেনাবাহিনী এখন ইউক্রেনের আগের চেয়ে কম ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছে। সুনির্দিষ্টভাবে বললে, মাত্র ১৮ দশমিক ৩ শতাংশ ভূখণ্ড রুশ সেনারা নিয়ন্ত্রণ করছে।
এই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে সামরিকভাবে পুতিনের যুদ্ধকে এক ভয়াবহ ব্যর্থতা বলা যেতে পারে। হয়তো তিনি এখনো বিশ্বাস করেন, তাঁর বাহিনী ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়ে কোনো না কোনো বড় সাফল্য অর্জন করবে। কিন্তু নিরপেক্ষ বিশ্লেষকেরা মনে করেন, এর সম্ভাবনা খুবই কম।
রাশিয়া হয়তো ইউক্রেনের তুলনায় যুদ্ধে বেশি সংখ্যায় সেনা পাঠাতে পারবে, বেশি বোমাও ফেলতে পারবে, কিন্তু যুদ্ধের ময়দানে থাকা সেনাদের মধ্যে লড়াই করার মানসিকতা জাগিয়ে তুলতে পারবে না। এখন পর্যন্ত দেখা গেছে, আত্মরক্ষা যত সহজ, আক্রমণ করা ঠিক ততটাই কঠিন। এর মানে দাঁড়ায়, শেষ পর্যন্ত পুতিন কোনো ধরনের বিজয়ের ছবি তুলে ধরতে চাইলে তাঁকে রুশ সেনাবাহিনীর চেয়ে ট্রাম্পের ওপর বেশি ভরসা করতে হবে।
তাত্ত্বিকভাবে ট্রাম্প চাইলে নিজেই নিজের অবস্থান বদলে পুতিনের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারেন এবং ইউক্রেনকে আরও সহায়তা দিতে পারেন। যদি তিনি এটা করেন, তাহলে হয়তো সেই যুদ্ধবিরতি আদায় করতে পারবেন, যার প্রতিশ্রুতি তিনি দিয়েছেন। তা না হলে তিনি ব্যর্থই হবেন, আর পুতিন ও তাঁর ঘনিষ্ঠরা তাঁর পেছনে বসে হেসেই যাবেন।এ কারণে ট্রাম্পকে প্রভাবিত করার জন্য পুতিন তাঁর হাতে থাকা সব কৌশল কাজে লাগাচ্ছেন। সবাই জানে, ট্রাম্প প্রশংসায় দুর্বল হয়ে পড়েন। আর সেই সুযোগ নিয়েই পুতিন বাড়াবাড়ি রকমের চাটুকারিতা করছেন। তিনি দাবি করেছেন, ২০২০ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ‘চুরি’ হয়েছিল এবং যদি ট্রাম্প তখন ক্ষমতায় থাকতেন, তাহলে এই যুদ্ধ কখনোই হতো না।
এমনকি পুতিন বলেছেন, ২০২৪ সালে ট্রাম্পের ওপর হামলার পর তিনি তাঁর ব্যক্তিগত প্রার্থনাকক্ষে গিয়ে ট্রাম্পের জন্য প্রার্থনা করেছেন। শুধু তা–ই নয়, তিনি ক্রেমলিনের দরবারি শিল্পীকে দিয়ে ট্রাম্পের একটি প্রতিকৃতি আঁকিয়ে তা উপহার হিসেবে পাঠিয়েছেন।
শুধু প্রশংসা নয়, পুতিন ট্রাম্প ও তাঁর প্রতিনিধি স্টিভ উইটকফকে ব্যবসার প্রলোভনও দেখাচ্ছেন। রিয়াদে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার প্রথম আলোচনায় পুতিনের দল একটি বিশাল বিনিয়োগ সম্ভাবনার তালিকা নিয়ে আসে, যেগুলো নাকি বাস্তবায়ন করা হবে যদি ট্রাম্প ইউক্রেনকে ছেড়ে দেন এবং রাশিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন।
উইটকফ জানিয়েছেন, পুতিনের সঙ্গে তাঁর সাম্প্রতিক বৈঠকের একটি বড় অংশ এই বিনিয়োগ পরিকল্পনা নিয়েই আলোচনা হয়েছে।
আরও পড়ুনট্রাম্পকে রুখতে চীন-ইউরোপ কি হাত মেলাবে১৯ এপ্রিল ২০২৫দুই ধরনের কৌশলই স্পষ্টভাবে কাজ করেছে। পুতিন জানেন, কীভাবে কাজ করতে হয় এবং তিনি জানেন, কার সঙ্গে কীভাবে ব্যবহার করতে হয়। এখন পর্যন্ত কোনো যুদ্ধবিরতি হয়নি এবং পুতিন যে এমন কিছুতে রাজি হবেন, তার কোনো লক্ষণও নেই। তিনি নির্দ্বিধায় ইউক্রেনের শহরগুলোতে বেসামরিক লক্ষ্যে হামলা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এই তথাকথিত আলোচনায় ক্রেমলিন মূলত দুটি দাবি তুলেছে। প্রথম দাবি হলো, ইউক্রেন যেন লুহানস্ক, দোনেৎস্ক, জাপোরিঝঝিয়া ও খেরসন—এই চারটি অঞ্চল রাশিয়ার হাতে তুলে দেয়। উইটকফ এ বিষয়ে ইতিমধ্যে একপ্রকার রাজিও হয়ে গেছেন: যুক্তরাষ্ট্র নাকি রাশিয়ার দখল করা এই চার অঞ্চলের ওপর রাশিয়ার মালিকানা মেনে নিতে প্রস্তুত।
কিন্তু রাশিয়া এখনো এ চার অঞ্চলের পুরোটা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি।
জাপোরিঝঝিয়া ও খেরসনের আঞ্চলিক রাজধানীগুলোতে (যেখানে যুদ্ধের আগে এক মিলিয়ন লোকের বসবাস ছিল) এখনো ইউক্রেনীয় পতাকা উড়ছে। কিয়েভের কোনো সরকার এসব শহর হেলায় ছেড়ে দিলে টিকে থাকতে পারবে না। হয়তো ইউক্রেন বর্তমান যুদ্ধরেখাকে কেন্দ্র করে একধরনের ‘জমে থাকা’ সংঘাত মেনে নিতে পারে, কিন্তু এর চেয়ে বেশি নয়।
রাশিয়ার দ্বিতীয় দাবি হলো, ইউক্রেনের ওপর নিরাপত্তাগত কর্তৃত্ব বজায় রাখা। অর্থাৎ ভবিষ্যতে ইউক্রেনে পশ্চিমা সামরিক উপস্থিতি বা সহায়তা যেন না থাকে। ট্রাম্প ইতিমধ্যেই ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ ন্যাটো সদস্য পদ প্রশ্নে হার মানিয়েছেন এবং তিনি সম্ভবত পুতিনকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সহায়তা পুরোপুরি বন্ধ করার প্রতিশ্রুতিও দিতে যাচ্ছেন।
কিন্তু এখানেই ইউরোপীয়দের ভূমিকা শুরু হয়। পুতিন ও ট্রাম্প—দুজনেই ইউরোপীয়দের আলোচনার টেবিলে আনতে চাননি। কিন্তু এটাই ভালো হয়েছে। ইউরোপীয়রা যদি ইউক্রেনকে আর্থিক ও সামরিক সহায়তা অব্যাহত রাখার ব্যাপারে দৃঢ় অবস্থানে থাকেন, তাহলে পুতিন ও ট্রাম্প যা-ই নিয়ে নিজেদের মধ্যে একমত হোন না কেন, তা বাস্তব মাটিতে কোনো প্রভাব ফেলবে না।
এ অবস্থায় ইউরোপের হাতে রয়েছে সবচেয়ে বড় তাস। যদি তারা রাজনৈতিক সদিচ্ছা দেখাতে পারে, তাহলে ইউক্রেনকে ‘মিউনিখ চুক্তি’র মতো লজ্জাজনক বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হওয়া থেকে রক্ষা করা সম্ভব। ইউরোপীয় নেতাদের স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া উচিত, যেভাবেই হোক তাঁরা ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা ও সার্বভৌমত্বের পক্ষে তাদের সহায়তা অব্যাহত রাখবেন।
তাত্ত্বিকভাবে ট্রাম্প চাইলে নিজেই নিজের অবস্থান বদলে পুতিনের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারেন এবং ইউক্রেনকে আরও সহায়তা দিতে পারেন। যদি তিনি এটা করেন, তাহলে হয়তো সেই যুদ্ধবিরতি আদায় করতে পারবেন, যার প্রতিশ্রুতি তিনি দিয়েছেন। তা না হলে তিনি ব্যর্থই হবেন, আর পুতিন ও তাঁর ঘনিষ্ঠরা তাঁর পেছনে বসে হেসেই যাবেন।
● কার্ল বিল্ডট সুইডেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী
স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট, অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ