নতুন চাঁদ রমজানের সিয়াম সাধনার পর ঈদের আনন্দের বার্তা নিয়ে আসে। ‘হিলাল’ অর্থ নতুন চাঁদ, যা বাংলা উচ্চারণে ‘হেলাল’। যে সন্ধ্যায় আকাশে চাঁদ দেখা যায়, সে রাত হলো চাঁদরাত। প্রতি মাসের চাঁদরাত গুরুত্বপূর্ণ। আরবি চান্দ্রবৎসরের নবম মাস রমজান, দশম মাস শাওয়াল। প্রতি মাসের ২৯ তারিখ নতুন চাঁদ দেখার চেষ্টা করা সুন্নত এবং সেদিন নতুন চাঁদ দেখা না গেলে ৩০ তারিখও নতুন চাঁদ দেখার চেষ্টা করা সুন্নত। চান্দ্র তারিখের হিসাব রাখা ফরজে কিফায়া।
রমজান মাসের শেষে পয়লা শাওয়াল ঈদুল ফিতর বা রমজানের ঈদ। শাওয়াল মাসের চাঁদরাত হলো ঈদের রাত। ঈদের রাত ইবাদতের ফজিলতপূর্ণ রাতগুলোর অন্যতম। চাঁদরাতের প্রথম সুন্নত ও ফরজে কিফায়া আমল হলো সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে চাঁদ দেখা। চাঁদ দেখলে বা চাঁদ দেখার সংবাদ পেলে বিশেষ দোয়া পড়া সুন্নত। (মুসনাদে আহমাদ: ১৪০০, রিয়াদুস সালেহিন: ১২৩৬)
হজরত তালহা ইবনে ওবায়দুল্লাহ (রা.
‘আল্লাহ মহান, হে আল্লাহ! এ নতুন চাঁদকে আমাদের নিরাপত্তা, ইমান, শান্তি ও ইসলামের সঙ্গে উদয় করো। আর তুমি যা ভালোবাসো এবং যাতে তুমি সন্তুষ্ট হও, সেটাই আমাদের তৌফিক দাও। আল্লাহ তোমাদের এবং আমাদের প্রতিপালক।’ (তিরমিজি, মিশকাত)
রমজানের শেষে পয়লা শাওয়াল চাঁদরাত তথা ঈদের রাতের আমল হলো মাগরিব, এশা ও ফজরের নামাজ যথাযথভাবে আদায় করা; রাতের ইবাদতের জন্য বিশেষভাবে পবিত্রতা অর্জন করা; সম্ভব হলে গোসল করা; ইবাদতের উপযোগী ভালো পোশাক পরা; সুগন্ধি ব্যবহার করা; মাগরিবের পর আওয়াবিন নামাজ পড়া এবং শেষ রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া; রাত জেগে নফল ইবাদত করা; নফল নামাজ পড়া (তাহিয়্যাতুল ওজু, দুখুলুল মসজিদ, তওবার নামাজ, সালাতুল হাজত, সালাতুত তাসবিহ, সালাতুশ শোকর ইত্যাদি); কোরআন তিলাওয়াত করা, দরুদ শরিফ পাঠ করা, ইস্তিগফার করা, তাসবিহ-তাহলিল, জিকির-আজকার ইত্যাদিতে মশগুল থাকা।
প্রিয় নবীজি (সা.) বলেন, ‘যখন ঈদের দিন তথা ঈদুল ফিতরের দিন আসে, তখন আল্লাহ বান্দাদের বিষয়ে ফেরেশতাদের সঙ্গে গর্ব করে বলেন, ‘হে আমার ফেরেশতারা! যে শ্রমিক তার কাজ পূর্ণ করেছে, তার বিনিময় কী?’ তারা বলবে, ‘তাদের বিনিময় হলো তাদের পারিশ্রমিক পরিপূর্ণভাবে প্রদান করা।’ আল্লাহ বলবেন, ‘হে আমার ফেরেশতারা! আমার বান্দা-বান্দিরা তাদের দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করেছে, তারপর সালাত ও দোয়ার উদ্দেশ্যে বের হয়েছে। আমার সম্মান, মহত্ত্ব, করুণা, মাহাত্ম্য ও উচ্চ মর্যাদার শপথ! আমি তাদের প্রার্থনা কবুল করব।’ এরপর আল্লাহ তাআলা বলবেন, ‘তোমরা ফিরে যাও, আমি তোমাদের ক্ষমা করে দিলাম এবং তোমাদের মন্দ আমলগুলো নেকিতে পরিবর্তন করে দিলাম।’ নবীজি (সা.) বলেন, তারা ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়ে ফিরে যাবে।’ (খুতবাতুল আহকাম, পৃষ্ঠা ১৬২-১৬৬)
ঈদের প্রস্তুতি ও ঈদের দিনের আমল হলো, নামাজের আগে শারীরিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অর্জন করা; হাত-পায়ের নখ কাটা, ক্ষৌরকর্ম করা, ঈদের রাতে ঘুমানোর আগে চোখে সুরমা ব্যবহার করা, ঈদের দিন খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠা, ফজরের নামাজ পুরুষেরা মসজিদে জামাতে আদায় করা এবং নারীরা নিজ গৃহে নিভৃতে আওয়াল ওয়াক্তে পড়া, ভোরে মিসওয়াক করা ও গোসল করা, সকালে খেজুর বা মিষ্টান্ন দ্বারা প্রাতরাশ গ্রহণ করা, সামর্থ্য অনুযায়ী সুন্দর ও উত্তম ইসলামি সুন্নতি পোশাক, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জামাকাপড় পরিধান করা, টুপি ও পাগড়ি পরিধান করা, আতর বা সুগন্ধি ব্যবহার করা, সদকাতুল ফিতর আদায় করা, ঈদের মাঠে যাওয়া-আসার পথে নিম্নস্বরে তাকবির বলা।
সম্ভব হলে ঈদগাহে বা খোলা মাঠে ঈদের নামাজ আদায় করা। সুযোগ থাকলে স্থানীয় কবর ও আত্মীয়স্বজনের কবর জিয়ারত করা। আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে যাওয়া, দেখা-সাক্ষাৎ করা ও খোঁজখবর নেওয়া এবং একে অপরকে আদর-আপ্যায়ন করা। আত্মীয়স্বজন ও প্রিয়জন যাঁরা দূরে অবস্থান করছেন, তাঁদের সঙ্গে ফোনে বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খোঁজখবর নেওয়া ও শুভেচ্ছা বিনিময় করা।
● মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী
যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম
[email protected]
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ঈদ র র ত রমজ ন র স ন নত আল ল হ নত ন চ
এছাড়াও পড়ুন:
এসএসসি ২০২৫ : তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তিতে বেশি নম্বর পাওয়ার কৌশল
তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিষয়টি বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা তিনটি শাখার ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষা দিতে হবে। এর মানে হলো সব শাখার ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। পরীক্ষা ২৩ এপ্রিলে। পরীক্ষার মোট নম্বর ৫০। বহুনির্বাচনি অংশে ২৫ নম্বর এবং ২৫ নম্বর ব্যবহারিক অংশে। মোট ২৫টি বহুনির্বাচনি প্রশ্ন থাকবে, উত্তর করতে হবে সব কটি প্রশ্নের। প্রতিটি প্রশ্নের মান ১ নম্বর।
*১ম অধ্যায়
প্রথম অধ্যায়টি হলো তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি এবং আমাদের বাংলাদেশ নিয়ে। প্রযুক্তির বিভিন্ন তথ্য ও বাংলাদেশে এই প্রযুক্তি কোথায় কোথায় কীভাবে রয়েছে তার ওপর বিভিন্ন তথ্য পড়তে হবে। ই-মেইল, ই-লার্নিং, ই-গভর্ন্যান্স, ই-কমার্স, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ডিজিটাল বাংলাদেশের ওপর দরকারি প্রশ্ন থাকবে। তাই এ অধ্যায়টি বারবার মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে।
তোমাকে মনে রাখতে হবে, একই ধরনের দুটি প্রশ্ন, কিন্তু উত্তর ভিন্ন যেমন একুশ শতকের সম্পদ হলো ‘জ্ঞান’ এবং পৃথিবীর সম্পদ হলো ‘সাধারণ মানুষ’। আবার বিনা তারে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বার্তা প্রেরণের প্রথম সফল বাঙালি বিজ্ঞানী হলেন ‘স্যার জগদীশচন্দ্র বসু।’ তেমনি আরেকটি প্রশ্ন হতে পারে—এক স্থান থেকে অন্য স্থানে তথ্য প্রেরণে বেতার তরঙ্গ ব্যবহার করেন—‘বিজ্ঞানী গুগলিয়েলমো মার্কনি।’ এ ধরনের প্রশ্নের উত্তর বুঝে পড়তে হবে।
আরও পড়ুনস্কুলে দীর্ঘ ছুটির ফাঁদে পড়াশোনা শিকেয় ওঠে১৯ এপ্রিল ২০২৫*২য় অধ্যায়
কম্পিউটার ও কম্পিউটার ব্যবহারকারীর নিরাপত্তা নিয়ে এই দ্বিতীয় অধ্যায়। তুমি কম্পিউটার ভাইরাস, অ্যান্টিভাইরাস, পাসওয়ার্ড, ইন্টারনেট ব্যবহারের অসাধ্য পাইরেসি, ট্রাবলশুটিং বিষয়ে অনেক প্রশ্ন থাকবে।
মনে রাখতে হবে, আইসিটি যন্ত্র বলতে কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট, স্মার্টফোন ইত্যাদি বোঝায়। এ ক্ষেত্রে জ্ঞানমূলক ও উচ্চতর দক্ষতার প্রশ্নের উত্তরের সময় বিষয়টি অবশ্যই মনে রাখতে হবে। সফটওয়্যার ডিলিট ও আনইনস্টল করা এক কথা নয়।
কম্পিউটার ভাইরাস ও অ্যান্টিভাইরাসের নামগুলোর পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে। সিডি, পেনড্রাইভ, মেমোরি কার্ড সহজে ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। সাধারণ ট্রাবলশুটিংয়ের প্রতিটি সমস্যা ও সমাধানের জন্য বাস্তব জ্ঞান থাকতে ভুল হবে। যেমন সিস্টেম চালু না হওয়ার কারণ, মনিটরে কিছু না দেখা, সিস্টেম গরম হয়ে যাওয়া, কম্পিউটার মাঝেমধ্যে শাটডাউন হওয়া, উইন্ডোজ চালুর সময় হ্যাং হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।
*৩য় অধ্যায়
তোমার পাঠ্যবইয়ের তৃতীয় অধ্যায় হলো আমার শিক্ষার ইন্টারনেট। এ অধ্যায়ে ডিজিটাল কনটেন্ট, ভিডিও, অ্যানিমেশন, ই-বুক, ফ্রিল্যান্স ইত্যাদি বিষয়ে ভালো করে রিভিশন দেবে। তবেই তোমার বহুনির্বাচনি প্রশ্ন কমন পড়বে।
ডিজিটাল কনটেন্ট ও এর প্রকারভেদের নাম ও উদাহরণগুলো ভালো করে পড়বে। এ অধ্যায়ে তোমরা প্রায়ই কিছু বিষয়কে একই বিষয় মনে করে ভুল থাকো। যেমন টেক্সট, ছবি, শব্দ, অডিও, ভিডিও, অ্যানিমেশন।
তা ছাড়া ই-বুক, ই-বুক রিডার, চৌকস ই-বুক, ভিডিও স্ট্রিমিং, কিন্ডল অ্যাপস সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখবে। কয়েকটি ক্যারিয়ারের নাম তোমরা জানো কম্পিউটার সায়েন্স, কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, রোবোটিকস ইঞ্জিনিয়ারিং, ডেটা কমিউনিকেশন।
আরও পড়ুনএসএসসি–২০২৫ পরীক্ষা, শিক্ষার্থীদের শেষ মুহূর্তের করণীয়০৬ এপ্রিল ২০২৫*৪র্থ অধ্যায়
আমার লেখালেখি ও হিসাব অধ্যায়টি চতুর্থ অধ্যায়। ওয়ার্ড প্রসেসর, স্পেস চেকার, ফ্রন্ট, টেবিল করা, স্প্রেডশিট প্রোগ্রামসহ তোমার লেখালেখি ও হিসাবের জন্য দরকারি।
অনেক সময় ব্যবহারিক কিছু অংশের বহুনির্বাচনি প্রশ্নের ক্ষেত্রে সফটওয়্যারের ভার্সন পরিবর্তনের কারণে তোমরা কিছু কিছু ভুল করে থাক। ওয়ার্ড ২০০৭-এর সঙ্গে ওয়ার্ড ২০১০-এর কিছু পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। এ ক্ষেত্রে ব্যবহারিক জ্ঞান থাকলে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। অফিস বাটনসহ এর বিভিন্ন অপশনগুলো যেমন নিউ, ওপেন, সেভ, সেভ এজ, ক্লোজ সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। হোম ট্যাব, ফন্ট স্টাইল, ফন্ট সাইজ, ইনসার্ট ট্যাব থেকে টেবিল তৈরি করার কৌশল জানতে হবে।
*৫ম অধ্যায়
তোমার পাঠ্যবইয়ের পঞ্চম অধ্যায় হলো মাল্টিমিডিয়া ও গ্রাফিকস। এখানে মাল্টিমিডিয়া, ভিডিও, প্রেজেন্টেশন, পিক্সেল, স্ট্রোক, ইলাস্ট্রেটর ইত্যাদি বিষয়ে ঠিক করলে তোমার এ অধ্যায়ের ভালো নম্বর পাবে।
এ অধ্যায়ে অন্তর্ভুক্ত বর্ণ বা টেক্সট, চিত্র বা গ্রাফিকস, ভিডিও, শব্দ বা অডিওর সঙ্গে তৃতীয় অধ্যায়ের বিষয় টেক্সট, ছবি, শব্দ, অডিও, ভিডিও, অ্যানিমেশনের মধ্যে ভুল করে থাক। মাল্টিমিডিয়ার অংশসমূহ টেক্সট বা বর্ণ, চিত্র ও গ্রাফিকস, শব্দ বা অডিও, ভিডিও, অ্যানিমেশন ও ইন্টারঅ্যাকটিভ কম্পিউটিং সম্পর্কে ভালো করে পড়বে।
মনে রেখো কয়েকটি কথা১.
প্রতিটি অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ তথ৵ ও তত্ত্বগুলো মনোযোগসহকারে আরেকবার দেখে নেবে।
২.
খেয়াল রাখবে তোমার পড়া ও জানা কোনো তথ্য ভুল না হয়।
৩.
বহুনির্বাচনি প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় অবশ্যই সতর্ক থাকবে। যাতে ভুল করে অন্য কোনো প্রশ্নে বৃত্ত ভরাট না করো। কারণ, ওএমআর শিটে ভুল ঠিক করা যাবে না।
৪.
পরীক্ষার আগের দুদিন সময় পাবে। তাই পাঠ৵বইয়ের প্রতিটি অধ্যায় ভালো করে রিভিশন দাও। তাতে ভালো প্রস্তুতি নিতে পারবে।
*লেখক: প্রশান্ত কুমার দাস, সহকারী অধ্যাপক, মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা