একটি গোষ্ঠী বিএনপিকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে উঠেপড়ে লেগেছে
Published: 30th, March 2025 GMT
দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে বিএনপি আজকে আবারও একা, এবং সেটা যতটা নিজেদের দোষে তারচেয়ে অনেক বেশি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে। বাংলাদেশ নিয়ে হিন্দুস্থানের মিডিয়ার ক্রমাগত অপরাজনীতি, ১৬ বছর ধরে তথাকথিত আওয়ামী সুবিধাভোগী মধ্যবিত্ত শ্রেণি, পুরনোকে ছাড়িয়ে গিয়ে পুরনো বন্দোবস্তেরও শীর্ষে অবস্থান করা কথিত নতুন বন্দোবস্তের কথা বলা একটি গোষ্ঠী আবারও বন্দুক ঘুরিয়ে ফেলেছে বিএনপির দিকে, যে কোনো মূল্যে তারা বিএনপিকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে উঠেপড়ে লেগেছে।
এই পরিস্থিতিতে জামায়াতসহ পরিস্থিতির সুবিধাভোগী অন্যান্য গোষ্ঠীগুলো বরাবরের মতোই চুপ। সব সময়ের মতো এবারও পরিস্থিতি থিতিয়ে গেলে সুবিধাজনক অবস্থানে গিয়ে বন্ধু হয়ে ওঠার অপেক্ষায় রয়েছে এই গোষ্ঠীগুলো। এই সুযোগে তারা নিজেদের পুনর্বাসন ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত, যার একটা বড় অংশ হয়ে উঠেছে আওয়ামী লীগ।
এই অবস্থায় যদি আপনাদের বিএনপিকে নার্ভাস এবং দলীয় ঝামেলায় জর্জরিত বলে মনে হয়, তাহলে ভুল করছেন। বিএনপি অন্তর্কোন্দল, খুনোখুনি, চাঁদাবাজি, প্রতিষ্ঠানের টেন্ডার নিয়ে মারামারিতে লিপ্ত নয়। বরং বিএনপিকে ঘিরে আবারও মিডিয়া ট্রায়াল শুরু হয়েছে।
দেশের কয়েকটি মিডিয়া গ্রুপের বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেখবেন, বিএনপিকে টার্গেট করে একের পর এক মিথ্যা এবং ফ্যাব্রিকেটেড অপতথ্য ছড়ানো হচ্ছে। দেশের যাবতীয় প্রান্তিক পর্যায়ের অপরাধের জন্য বিএনপিকে দায়ী করা হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় পর্যায়ে সেলিব্রেট করে মব সৃষ্টি করা উশৃঙ্খল জনতার মধ্যে বিএনপির কোনো পদ-পদবি নেই এমন লোকদের ছবি প্রচার করে তাদের নেতা হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। এমনকি কোনো মিছিলে হাঁটা সাধারণ কর্মীকেও বিএনপির নেতা হিসেবে প্রচার করে বাহাদুরি নেওয়া হচ্ছে। এলাকাভিত্তিক মারামারি অথবা এই ধরনের বিভিন্ন ঘটনাতেও বিএনপির নাম জড়িয়ে দীর্ঘদিন ধরে লড়াই করে আসা এই দলটির ইমেজ নষ্ট করার পায়তারা চলছে।
বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের রাজনীতির কেন্দ্রে অবস্থান করছে। সারা দেশে দলটির কোটি কোটি নেতা-কর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষী। স্বভাবতই তাদের সবাইকে সার্বক্ষণিক নিয়ন্ত্রণে রাখা বিএনপির পক্ষে সম্ভব হয় না, সেই দায় দল হিসেবে বিএনপি মাথা পেতে নেয় সবসময়। তারই অংশ হিসেবে বিএনপির দলীয় নেতা কারো বিরুদ্ধে, যখনই অভিযোগ পাওয়া গেছে, কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ তাৎক্ষণিক তদন্ত কমিটি গঠন করে দোষীদের শাস্তি দিয়েছেন এবং বহিষ্কার করেছেন। এটি বিএনপির চলমান শুদ্ধি অভিযান, যা অন্য কোনো দল মোটাদাগে করছে না। বরং অন্যরা নিজেদের দোষ ঢাকতে ব্যস্ত। বিএনপি যেখানে সততা বজায় রেখে বহিষ্কার কার্যক্রম চালাচ্ছে, সেখানে অন্যেরা শুধু জানাজানি হবে এই ভয়ে নিজেদের দলের ভেতরে থাকা অপরাধীদের নিয়ে কোনো কথা বলছে না।
বিএনপির কর্মীরা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছে। নির্বাচন সামনে রেখে আবারও বিএনপিকে নিয়ে চক্রান্ত চলছে। দেশে এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে যেখানে নির্বাচন বা গণতন্ত্রের কথা বলাই যেন অপরাধ। চলমান সংস্কার এবং নির্বাচনকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে ফায়দা লুটতে চাইছে বিভিন্ন গোষ্ঠী। অথচ বিএনপি সবসময় সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে লড়াই করেছে।
একইসঙ্গে আরও একটি ব্যাপার লক্ষণীয়, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অংশ হিসেবে নির্বাচনের কথা বললেও তৃণমূল পর্যায়ে বিএনপি কোনো ধরনের নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করেনি। অথচ বারবার নির্বাচনের বিরোধিতা করা দল ও গোষ্ঠীগুলোকে নিয়মিত শোডাউন, গণসংযোগ, প্রার্থী ঘোষণা করতে দেখা যাচ্ছে। যেটি সুস্পষ্ট স্ববিরোধীতা। অনেক তরুণ নেতাকে দেখা যাচ্ছে চোখ ধাঁধানো শোডাউন করছেন, এই অর্থের উৎস নিয়ে কথা উঠলে সেসব পাশ কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছে। অথচ তরুণদের কাছে আমাদের প্রত্যাশা ছিল পরিচ্ছন্ন রাজনীতি, তারা নিজেরাও বারবার নতুন বন্দোবস্তের কথা বলছেন কিন্তু আচরণে সেটা প্রকাশ পাচ্ছে না।
অথচ বিএনপি দল হিসেবে সব সময় এদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের, দেশে গণতন্ত্রের যাত্রাকে সুসংহত রাখার জন্য কাজ করেছে, রাজপথে লড়াই করেছে, জেল খেটেছে, জীবন দিয়েছে। আমাদের নেতা তারেক রহমান দীর্ঘদিন যাবত নির্বাসনে, আপোসহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে ছিলেন, জটিল সব অসুখ নিয়েও নূন্যতম মানবিক আবেদনে সাড়া না পেয়ে উন্নত চিকিৎসাটুকুও নিতে পারেন নি। অথচ বিএনপি এখনো গণতন্ত্রের সংগ্রামে অটল।
দেশের উন্নয়নে প্রতিযোগিতা করতে বিএনপি সবসময় প্রস্তুত। ২০০৭-২০০৮ সালে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর যে নির্যাতন নেমে এসেছিল, সেই স্মৃতি এখনো তাজা। আমাদের লাখ লাখ নেতা-কর্মী ঘরে থাকতে পারেনি, লাখের ওপর মেরিটহীন মামলা করা হয়েছে তাদের নামে। গণতান্ত্রিক লড়াই করার শাস্তি হিসেবে তাদেরকে কোণঠাসা করে রাখা হয়েছে, গুন-খুন-গ্রেফতার করা হয়েছে। সামনের দিনগুলোতেও এই ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করা হলে সেটা অত্যন্ত হতাশাজনক ব্যাপার হবে।
দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য বিএনপি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান যে পথ দেখিয়েছিলেন, আপোসহীন নেত্রী খালেদা জিয়া সেই পথেই হেঁটেছেন এবং তারেক রহমানও সেই পথেই চলছেন। যে কোনো রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে বিএনপি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম অব্যাহত রাখবে। তাই আপনারা আজ যে পথে হাঁটবেন বলে আজ গল্প করেন, সে পথে হেঁটে শহীদ হওয়া, পঙ্গুত্ব বরণ করা বিএনপির কর্মীরা অবাক হয়।
একজন বর্ষীয়ান রাজনীতিবীদ এবং রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমি বারবার দেখেছি কেউ কোনো কু-পরিকল্পনা করলে, অন্যায়ভাবে কোনো কিছু করতে চাইলে তার পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ হয়। এর সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ উদাহরণ ১৬ বছর ধরে অন্যায়ভাবে ক্ষমতায় বসে থেকে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনা। সব মিলিয়ে আপনাদের কাছে এটুকুই প্রত্যাশা, আসুন আমরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এই দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাই। হাসিনার ১৬ বছরের জঞ্জাল সরিয়ে প্রতিদিন নতুনের পথ ধরে হেঁটে আমরা একটা অনন্য উচ্চতায় দেশকে পৌঁছে দেই। তবেই ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং ২০২৪ এর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মহান শহিদদের আত্মা শান্তি পাবে, তাদের স্বপ্নের বাস্তবায়ন হবে।
লেখক: বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ
তারা//
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গণতন ত র পর স থ ত র জন ত ক ব এনপ র ব এনপ ক অবস থ অথচ ব
এছাড়াও পড়ুন:
জনগণের স্বার্থে আঘাত এলে আবারও মাঠে নামবে বিএনপি: মির্জা ফখরুল
দল ও দেশের জনগণের স্বার্থে আঘাত এলে বিএনপি আবার মাঠে নামবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে যেকোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে বিএনপি সফল হবে।
আজ শনিবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে ঈদ উপহার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিকেলে রাজধানীর মাদানী অ্যাভিনিউর ১০০ ফিটের বেরাইদ ঈদগাহ মাঠে দলটির ঢাকা মহানগর উত্তর শাখা এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশি ও বিদেশি ষড়যন্ত্র চলছে, কোনোভাবে কোনো চক্রান্ত সফল হতে দেওয়া হবে না। ফ্রান্স, লন্ডন, আমেরিকা থেকে কেউ যদি দেশের মানুষকে উত্তেজিত করার চেষ্টা করেন, তবে তা রুখে দেওয়া হবে। দেশে কোনো অস্থিতিশীল পরিবেশ মেনে নেওয়া হবে না। মানুষের ভোটের অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ে লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে।
বিএনপি বাংলাদেশের পক্ষে জানিয়ে ফখরুল বলেন, ‘আমরা ভারতের পক্ষেও না, পাকিস্তানের পক্ষেও না। আবার আমরা আমেরিকার পক্ষেও না ইংল্যান্ডের পক্ষেও না, আমরা বাংলাদেশের পক্ষে। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেছেন সবার আগে বাংলাদেশ।’
বিএনপি সব পরিবর্তন এনেছে দাবি করে দলটির মহাসচিব বলেন, সংস্কার করেছে বিএনপি, একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাতিল করে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাও প্রতিষ্ঠা করেছে তার দল।
বিগত ১৭ বছরে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি করে এমন ৯৯ শতাংশ মানুষ নির্যাতনের শিকার হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকার প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ড. ইউনূসকে দেশের মানুষ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বানিয়েছে স্বল্প সময়ের মধ্যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে নির্বাচন দেওয়ার জন্য। সব সংগ্রাম হয়েছে নির্বাচনের জন্য, সে জন্য বিএনপি নির্বাচনের কথাই বলে। তবে অনির্দিষ্টকালের জন্য এই সরকার ক্ষমতায় বসে থাকবে, জনপ্রতিনিধিত্বে কেউ থাকবে না, এমনটা মেনে নেওয়া হবে না।
একটি মহল দেশে বিশৃঙ্খলা তৈরির জন্য নির্বাচনকে পেছাতে চাইছে অভিযোগ করে তিনি দ্রুত নির্বাচন দিয়ে জনপ্রতিনিধির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করার আহ্বান জানান।
ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক তহিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ক্ষুদ্র ঋণবিষয়ক সম্পাদক এম এ কাইয়ুম, ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক।