ঈদের আগে জমে উঠেছে আতরের বেচাকেনা। বড়-ছোট সবাই চান আতরের সৌরভ মেখে ঈদের নামাজে যেতে। ফলে ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে আতরের চাহিদাও বাড়ছে। তবে আতরের বাড়তি বেচাকেনা শুরু হয়েছে রোজার প্রথম থেকেই।
বাজারে দেশি-বিদেশি নানা ধরনের আতর রয়েছে। বিক্রেতারা জানান, অধিকাংশ দেশি আতরই সাধারণ মানের হয়। দামেও সস্তা। আর বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের আতরের সৌরভ বা ফ্রেগনেন্স বেশি ও দীর্ঘ সময় থাকে। এ ধরনের আতরের দামও বেশি। এ প্রতিবেদক বিভিন্ন বাজার ঘুরে যেসব আতরের সন্ধান পেয়েছেন, এর মধ্যে সবচেয়ে দামি আতর হলো আল হারামাইন আতর শেখ। এর ৬০ মিলির বোতলের দাম ৪৭ হাজার টাকা।
বাজারে আল হারমাইন, কস্তুরি, মুস্তাহ আল তাহারা, আল আরাবিয়া, গুপি, সুলতান, কিং হোয়াইট, জান্নাতুল নাঈম, আল-ফারেজ ও হাজরে আসওয়াদের মতো বিভিন্ন দামি আতর রয়েছে। আবার আলিফ, আল ফারহান, আল ইসরাত, আল রিসাব, জান্নাতুল ফেরদাউস, রজনীগন্ধা, বকুল, সুরভি ও বেলি ফুলের মতো কম দামের আতরও পাওয়া যায়।
বাংলাদেশে আতর বিক্রির বড় কেন্দ্র রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদ মার্কেট। এ ছাড়া রাজধানীর কাঁটাবন, মিরপুর, ধানমন্ডিসহ বিভিন্ন স্থানে, বিশেষ করে মসজিদ-মাদ্রাসাকেন্দ্রিক দোকানে আতর বিক্রি হয়। এসব দোকানের বেশির ভাগই সাধারণ মানের আতর বিক্রি করে থাকে। তবে দামি আতর কিনতে হলে যেতে হবে আতরের ব্র্যান্ডের নিজস্ব বিক্রয়কেন্দ্রে।
দেশে দামি আতরের জন্য বিখ্যাত হচ্ছে আল হারামাইন ব্র্যান্ড। বর্তমানে আল হারামাইনের আতরের দাম সর্বনিম্ন ২ হাজার ৪০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৪৭ হাজার টাকা পর্যন্ত রয়েছে। তবে অর্ডার করলে এর চেয়েও দামি আতর বিদেশ থেকে এনে দেওয়া হয়। সাধারণত ১২ মিলিলিটারের শিশি বা ছোট বোতলে আতর বিক্রি করা হয়। তবে ১৮ মিলি, ২৫ মিলি ও ৬০ মিলির শিশিও রয়েছে। এ ছাড়া খোলা আতরও বিক্রি করা হয়।
যত দামি আতরবাংলাদেশের বাজারে নানা সৌরভের বাহারি আতর পাওয়া যায়। দাম যত বেশি, তত বেশি অভিজাত সৌরভের আতর মেলে।
আতরের জন্য আল হারামাইন ব্র্যান্ড বেশ জনপ্রিয়। আল হারামাইনের জনপ্রিয় আতর সিরিজের মধ্যে রয়েছে মাস্ক, অ্যাম্বার ও উদ প্রভৃতি। এর মধ্যে অ্যাম্বারের রয়েছে কোমল সৌরভ (সুইট ফ্রেগনেন্স), উদের রয়েছে কড়া সৌরভ (ডিপ ফ্রেগনেন্স) এবং মাস্ক সিরিজের আতরের রয়েছে হালকা ও কোমল সৌরভ। মাস্ক সিরিজের আতর সব বয়সীরা পছন্দ করেন। বাংলাদেশে অ্যাম্বারের চাহিদাও বেশ রয়েছে। আর উদের আতর বেশি ব্যবহার করেন আরবের অধিবাসীরা। তবে বাংলাদেশেও ৩০ বছরের বেশি বয়সীদের মাঝে এ আতরের জনপ্রিয়তা রয়েছে।
এর বাইরে উদ, অ্যাম্বার, মাস্ক, জাফরান প্রভৃতি সৌরভের সংমিশ্রণে একধরনের আতর তৈরি হয়। বিশেষ সৌরভের এই আতরকে বলা হয় মোকাল্লাদ। বিক্রেতারা জানান, একাধিক সুবিধার কারণে মোকাল্লাদ আতরের জনপ্রিয়তা রয়েছে। যেমন সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া রাফিয়া গোল্ডের দাম ৪ হাজার ২০০ টাকা। আবার এপিক ফ্রেগনেন্সের মোকাল্লাদ আতরের দাম ৩০ হাজার টাকা।
এখন পর্যন্ত বাজারে আল হারামাইনের সবচেয়ে দামি আতর পাওয়া গেছে। আল হারামাইনের প্রিমিয়াম উদ জাতীয় সৌরভের আতর শেখের ৬০ মিলির বোতলের দাম ৪৭ হাজার টাকা। আবার ওয়ার্ড তাইফি নামের বিশেষ ফ্রেগনেন্সের আতরের দাম ১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। বর্তমানে এটি বাংলাদেশের বিক্রয়কেন্দ্রগুলোতে নেই। অর্ডার করলে এনে দেওয়া হয়।
রাজধানীর গুলশান সেন্টার পয়েন্টে অবস্থিত আল হারামাইনের শোরুম ইনচার্জ নাদিম আহমেদ জানান, চলতি বছর রমজান উপলক্ষে ‘রমজান স্পেশাল আতর’ নামে নতুন আতর এনেছে আল হারামাইন। ১২ মিলিলিটারের এ আতরের মূল্য ২ হাজার ৭৩০ টাকা। এ ছাড়া লুজ আতরও বিক্রি করে কোম্পানিটি। এ ধরনের আতরের সর্বনিম্ন বিক্রির পরিমাণ ৬ মিলিলিটার। দাম সর্বনিম্ন ২ হাজার ২৫০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৭ হাজার ৬০০ টাকা। রয়েছে মাস্ক, অ্যাম্বার ও উদ প্রভৃতি ফ্রেগনেন্সের আতরই লুজ বা খোলা আকারে বিক্রি করা হয়। তবে কিছু আউটলেটে এর চেয়ে কম দামে পাওয়া যায়। যেমন ১৫ মিলিলিটারের আল হারমাইন আতরের দাম মাত্র ৯০০ টাকা।
সস্তায় আতরও মেলেবায়তুল মোকাররম আতরের জন্য বিখ্যাত। এই বাজারের কয়েকজন দোকানির কাছ থেকে জানা গেছে, ভালো মানের আতর ৩ এমএল ২০০-৫০০ টাকা; ৬ এমএল ৫০০-১০০০ টাকা এবং ১২ এমএল ১০০০-১৫০০ টাকায় বিক্রি হয়। মধ্যম মানেরটা বিক্রি হয় ৩ এমএল ১০০-২০০ টাকা, ৬ এমএল ৩০০-৬০০ টাকা এবং ১২ এমএল ৫০০-১২০০ টাকা। সাধারণ মানের বেলায় ৩ এমএল ৫০-২০০ টাকা, ৬ এমএল ২০০-৫০০ টাকা এবং ১২ এমএল ৪০০-৮০০ টাকা।
রাজধানীর কাঁটাবন এলাকায় বেশ কয়েকটি দোকানে আতর বিক্রি হয়। সেখানে মূলত খোলা আতর (বড় বোতল থেকে ছোট শিশিতে ঢেলে দেওয়া হয়) বিক্রি করা হয়। এখানে ৩ মিলিলিটার আকারের শিশিতে ৫০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১ হাজার টাকা পর্যন্ত দামের আতর বিক্রি হয়। এর মধ্যে কিছু আতর ভারত ও পাকিস্তান থেকে আমদানি করা।
বিক্রেতারা জানান, ঈদের আগে আতর বিক্রির চাহিদা বেড়েছে। রাজধানীর কাঁটাবনে ফাতেমা হিজাব অ্যান্ড ফ্যাশন নামের দোকানে অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে আতরও বিক্রি হয়। এই দোকানের স্বত্বাধিকারী মশিউর রহমান জানান, প্রতিবছরই দুই ঈদের সময় আতরের বেচাকেনা বেড়ে যায়। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি।
মশিউর রহমান বলেন, সাধারণ সময়ে প্রতি মাসে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকার আতর বিক্রি করতে পারি। তবে ঈদের মৌসুমে এখন দিনে পাঁচ-সাত হাজার টাকার আতর বিক্রি হচ্ছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ৪৭ হ জ র ট ক র আতর ব ক র আতর র দ ম জনপ র য় ২০০ ট ক ন র আতর আতর র স র আতর র আতর র ব ন আতর
এছাড়াও পড়ুন:
আমলযোগ্য অপরাধের ঘটনায় মামলা নিতে হবে: ডিএমপি কমিশনার
ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেছেন, “আমলযোগ্য অপরাধের ঘটনায় অবশ্যই মামলা নিতে হবে। কোনো ঘটনা আড়াল করা যাবে না। মামলার রহস্য উদঘাটন করে প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।”
সোমবার (২১ এপ্রিল) রাজারবাগ বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়ামে মার্চ মাসের মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় উপস্থিত ডিএমপির পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সাজ্জাত আলী বলেন, “অপরাধ যাতে না ঘটে তার জন্য প্রতিরোধমূলক পুলিশি কার্যক্রম বাড়াতে হবে।আপনারা আন্তরিকভাবে কাজ করছেন বলে ছিনতাই অনেকাংশে কমেছে। আবার যেন এর পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেজন্য সবাইকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।”
আরো পড়ুন:
খুলনায় শিশু ধর্ষণ মামলার ২ আসামি কারাগারে
গোপালগঞ্জ শেখ রাসেল শিশু কিশোর পরিষদের সম্পাদক গ্রেপ্তার
মামলা নিষ্পত্তি ও ওয়ারেন্ট তামিল বাড়াতে জোর দেন ডিএমপি কমিশনার। তিনি বলেন, “সর্বোচ্চ বিনয়ী থেকে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই দৃষ্টিকটু ও অপেশাদার আচরণ করা যাবে না। পবিত্র মাহে রমজান, ঈদুল ফিতর ও বাংলা নববর্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আন্তরিকভাবে দায়িত্ব পালন করায় ডিএমপির সব সদস্যকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।”
ডিএমপি কমিশনার বলেন, “ডিবিকে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অপরাধীদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার আরো বাড়াতে হবে। ডিএমপির প্রতিটি থানার ওসিকে মামলা তদন্ত করতে হবে। থানা এলাকার প্রতিটি ভবনের সিকিউরিটি গার্ডদের সঙ্গে থানার টহল টিমের সমন্বয় করে দায়িত্ব পালন করতে হবে। কোনো অপরাধের তথ্য তাদের কাছে থাকলে পুলিশকে সেই তথ্য প্রদান করে সেভাবে কাজ করতে হবে।”
অপরাধ সভায় অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. সরওয়ার বলেন, “ডিএমপির পুলিশ সদস্যদেরকে আউট অফ বক্স কাজ করতে হবে। ট্রাফিক বিভাগের সদস্যদের ক্রাইম বিভাগের পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে।”
উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন মো. নজরুল ইসলাম বলেন, “জনগণের চাওয়া পাওয়াকে সর্বোচ্চ মূল্যায়ন করে পুলিশি দায়িত্ব পালন করতে হবে। মাদক উদ্ধার ও ওয়ারেন্ট তামিল আরো বাড়াতে হবে। চিহ্নিত অপরাধী গ্রেপ্তারে ব্লক রেইড নিয়মিত করতে হবে।”
সভায় যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) মো. ফারুক হোসেন মার্চ মাসের সার্বিক অপরাধ পরিস্থিতি যেমন-ডাকাতি, দস্যুতা, চুরি, সিঁধেল চুরি, খুন, অপমৃত্যু, সড়ক দুর্ঘটনা, নারী ও শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ, মাদকদ্রব্য ও অস্ত্র উদ্ধারসহ বিভিন্ন মামলা সংক্রান্ত তথ্য উপস্থাপন ও পর্যালোচনা করা হয়।
এ সময় ডিএমপি কমিশনার উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের বিভিন্ন নির্দেশনা প্রদান করেন। মাসিক অপরাধ সভায় মার্চ মাসে ঢাকা মহানগরের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও জননিরাপত্তা বিধানসহ উত্তম কাজের স্বীকৃতি হিসেবে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ডিএমপির বিভিন্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে পুরস্কৃত করেন ডিএমপি কমিশনার।
সভায় অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি) মো. মাসুদ করিম, যুগ্ম পুলিশ কমিশনাররা, উপ-পুলিশ কমিশনাররা, ডিএমপির সব থানার অফিসার ইনচার্জরা ও বিভিন্ন পদমর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/এমআর/এসবি