ঈদের দিন রান্না করা যায় এমন কিছু সুস্বাদু খাবারের রেসিপি দিয়েছেন আলিফ’স ডেলিকেট ডিসেজের শেফ আলিফ রিফাত।

তেরিয়াকি চিকেন অ্যান্ড পাইনআপেল ইন ফয়েল প্যাকেট

উপকরণ: মুরগির বুকের মাংস ২ পিস, আনারসের টুকরা ১ কাপ, ক্যাপসিকাম টুকরা ১ কাপ, গাজর ১ কাপ স্লাইস করা, পেঁয়াজ ৪ ফালি করা ২ টা, কালো গোলমরিচ গুঁড়া ১/২ চা চামচ, অলিভ অয়েল ২ টেবিল চামচ, তেরিয়াকি সস ১ কাপ।

প্রস্তুত প্রণালি : গোলমরিচ, লবণ ও অলিভ অয়েল দিয়ে মুরগির বুকের মাংস ম্যারিনেট করে রাখুন ১ ঘণ্টা। এবার ফয়েল পেপার বক্সের মতো বানিয়ে নিয়ে তাতে ম্যারিনেট করা মাংস রেখে কেটে রাখা সব সবজি ও তেরিয়াকি সস ওপরে ছড়িয়ে দিন। প্রিহিট ওভেনে ২০০ ডিগ্রি টেম্পারেচারে ৩০ মিনিট বেক করুন। 

আফগানি মালাই চিকেন শিক গ্রেভি

উপকরণ: মালাই শিকের জন্য– কিমা ১/২ কেজি, চিলি ফ্লেক্স ১ টেবিল চামচ, কাঁচামরিচ ৩/৪ টা, পেঁয়াজ ১টি, জিরা গুঁড়া ১ চা চামচ, গরম মসলা গুঁড়া ১ চা চামচ, ব্রেডক্রাম্ব ১/৪ কাপ, ফ্রেস ক্রিম ২ টেবিল চামচ, আদা-রসুন পেস্ট ১ টেবিল চামচ, ধনিয়া-পুদিনা পাতা কুচি ১/৪ কাপ, লবণ স্বাদমতো।

গ্রেভির জন্য: ঘি ৩ টেবিল চামচ, পেঁয়াজ ২টি বড়, কাজুবাদাম ১০-১২টি, কাঁচামরিচ ৪-৫টি, লং ৪-৫টি, ছোট এলাচ ৩-৪টি, দারচিনি ১ ইঞ্চি, আদা-রসুন বাটা ২ টেবিল চামচ, তেজপাতা ১টি, সাদা ও কালো গোলমরিচের গুঁড়া ১/২ চা চামচ করে, জিরা গুঁড়া ১ চা চামচ, গরম মসলা গুঁড়া ১/২ চা চামচ, ফেটানো দই ১/২ কাপ, ফ্রেশ ক্রিম ১/২ কাপ, কাঁচামরিচ আস্ত ৩-৪টি, লেবুর রস ১/২ চা চামচ, লবণ ও চিনি স্বাদমতো।

প্রস্তুত প্রণালি: ধনিয়া পাতা ও পুদিনা পাতা বাদে শিকের সব উপকরণ একত্রে ব্লেন্ড করে নিয়ে ধনিয়া পাতা ও পুদিনা পাতা কুচি ভালো করে মাখিয়ে ম্যারিনেট করে রাখতে হবে ১/২ ঘণ্টা। এবার শিক কাবাবের আকারে কাবাব তৈরি করে গ্রিলারে মাখন ব্রাশ করে ভেজে নিতে হবে।

গ্রেভির জন্য: ১ চামচ ঘি গরম করে তাতে পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ ও কাজুবাদাম দিয়ে ভাজুন। পেঁয়াজ গোলাপি রং ধারণ করলে নামিয়ে ঠান্ডা করে মিহি পেস্ট বানান। এবার কড়াইয়ে ঘি গরম করে আস্ত মসলার ফোড়ন দিন। সুন্দর গন্ধ বের হলে আদা-রসুন বাটা দিয়ে ভালো করে কষান। এখন পেঁয়াজের পেস্ট ও শুকনো গুঁড়া  মসলাগুলো একে একে দিন ও অল্প অল্প গরম পানি দিয়ে কষান। ফেটানো দই দিয়ে আবারও কষান। ঘি ওপরে চলে এলে ভেজে রাখা শিকগুলো দিয়ে ওপরে ফ্রেশ ক্রিম ও আস্ত কাঁচামরিচ দিয়ে একেবারে লো হিটে দমে বসিয়ে রাখুন ১০ মিনিট। গরম গরম পোলাও, পরোটা বা নানের সঙ্গে পরিবেশন করতে হবে এই মজাদার আফগানি মালাই চিকেন শিক গ্রেভি।

মোগলাই কাবাব ই নূর

উপকরণ: মুরগির বুকের মাংস ৫০০ গ্রাম, আদা-রসুন বাটা ১ টেবিল চামচ, ফ্রেশ ক্রিম ১/৪ কাপ, চিলি ফ্লেক্স ১/২ চা চামচ, কালো গোলমরিচ গুঁড়া ১/২ চা চামচ, জাফরান ১/৫ চা চামচ, মোজারেলা চিজ ১ কাপ, লবণ স্বাদমতো, ঘি ৩/৪ টেবিল চামচ।

প্রস্তুত প্রণালি: মাংস পাতলা করে কেটে হালকা থেঁতো করে নিতে হবে। এবার এতে আদা-রসুন বাটা, গোলমরিচ গুঁড়া, চিলি ফ্লেক্স, গরম মসলা গুঁড়া, ফ্রেশ ক্রিম ও লবণ দিয়ে ভালো করে মাখাতে হবে। জাফরান সামান্য গরম দুধে ভিজিয়ে নিয়ে সেটা মাংসের সঙ্গে মাখাতে হবে। এই ম্যারিনেট করা মাংস মিনিমাম ১ ঘণ্টা ফ্রিজে রেখে দিতে হবে। ম্যারিনেট করা মাংসের স্লাইস বিছিয়ে তার ওপর মোজারেলা চিজ দিয়ে রোল করে টুথপিক দিয়ে আটকে দিতে হবে। প্যান গরম করে তাতে ঘি দিয়ে মিডিয়াম লো ফ্লেমে কাবাব দু’পাশ ভেজে ৮-১০ মিনিট নিতে হবে। পোলাও বা রুটি-পরোটার সঙ্গে খেতে লা জওয়াব এ মোগলাই কাবাব ই নূর।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ম য র ন ট কর রস ন ব ট গ লমর চ

এছাড়াও পড়ুন:

সলেমানের সোলার পাম্পে উপকৃত ১১০০ কৃষক, সাশ্রয় একরে ৪০০০ টাকা

কৃষির উপকরণ হচ্ছে বীজ, সেচ ও সার। তার মধ্যে অন্যতম উপকরণ সেচ। দেশের সেচ ব্যবস্থা ডিজেল ও বিদ্যুৎ নির্ভর। কিন্তু এই দুই ব্যবস্থার থেকে কম খরচ ও পরিবেশবান্ধব সোলার প্যানেল দিয়ে তৈরি করা সেচ পাম্প দিয়ে সেচ সুবিধা নিয়ে উপকৃত হচ্ছেন ঠাকুরগাঁওয়ে ১১০০ বোরো ধান চাষি। এতে কৃষকের একরপ্রতি সাশ্রয় হচ্চে ৪ হাজার টাকা। শুধু টাকায় নয়, সোলার সেচ পাম্পে নেই কোনো শব্দ, নেই জ্বালানি খরচসহ কোনো রকম ঝামেলা। আর এটি সম্ভব করেছেন সলেমান আলী নামে এক কৃষি উদ্যোক্তা।

সদর উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের মোলানী গ্রামের মো. সলেমান আলী। ব্যাটারিবিহীন সোলার সেচ পাম্প তৈরি করে এলাকায় সাড়া ফেলার পাশাপাশি অর্জন করেছেন সুনাম। তিনি ১৯৯৬ সাল থেকে শুরু করেন সোলার নিয়ে সেচ। দীর্ঘ বছরের পরিশ্রম ও চেষ্টার ফলে ২০১৪ সালে তৈরি করেন ব্যাটারিবিহীন সোলার সেচ পাম্প। ২০১৫ সাল থেকে সোলার দিয়ে তিনি স্থানীয় কৃষকদের সেচ সুবিধা দিয়ে  আসছেন। বর্তমানে তার ২৫০০, ২৬০০, ৩৩০০ ওয়ার্ডসহ মোট ২৬টি সোলার প্যানেল ও পাম্প রয়েছে। যার মধ্যে ৬টি পাম্প দিয়ে তিনি নিজে কৃষকদের সেচ সুবিধা দেন। বাকি পাম্পগুলো তিনি মৌসুমভিত্তিক ৩৬ হাজার টাকায় ভাড়া দিয়েছেন।

বর্তমানে তার তৈরি করা সোলার সেচ পাম্প দিয়ে সেচ সুবিধা নিয়ে উপকৃত হচ্ছেন ১১০০ কৃষক। এতে এবার প্রায় ৮ লাখ টাকা আয় করার আশা করছেন সলেমান আলী। গত বছর আয় করেছিলেন ৭ লাখ ২৮ হাজার টাকা। একেকটি সোলার প্যানেলসহ পাম্প তৈরি করতে খরচ হয় প্রায় ১ লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত বলে জানান সোলার সেচ পাম্প উদ্ভাবনকারী উদ্যোক্তা সলেমান আলী।

আরো পড়ুন:

গাজীপুরে বজ্রপাতে প্রাণ গেল ২ কৃষকের

কৃষি জমিতে ‘বোমা বিস্ফোণ’, কৃষক আহত

স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, শ্যালোমেশিন ও বৈদ্যুতিক পাম্প দিয়ে সেচ দিতে অনেক বেশি খরচ হয় ও প্রয়োজনের সময় বিদ্যুৎও থাকে না। শ্যালোমেশিন দিয়ে সেচ দিতে একর প্রতি খরচ ১০ হাজার আর সোলারে খরচ হয় ৬ হাজার টাকা। এতে খরচ কম ও ঝামেলামুক্ত। এছাড়াও মাটির অভ্যন্তরীণ পাইপ স্থাপন করায় ড্রেনের ঝামেলা নেই এবং ড্রেনের সেই জায়গায় তারা আবাদ করতে পারছেন। এতে ফসল ভালো ও বেশি হচ্ছে। সলেমানের সোলার সেচ ব্যবস্থার মাধ্যমে অনেক উপকৃত হচ্ছেন তারা।

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার লালাপুর শুকানি গ্রামের কৃষক আব্দুর রশিদ বলেন, ‘‘আমি সলেমান আলীর সোলার সেচ পাম্প দিয়ে গত চার বছর ধরে ফসলে পানি নেই। এতে বিশেষ করে মানুষ থাকার কোনো প্রয়োজন হয় না। আর শ্যালোমেশিন দিয়ে পানি নিলে তেল কিনতে হয় ও মেশিন আনা নেওয়া করতে কমপক্ষে দুইজন মানুষ লাগে ও পরিশ্রম হয় বেশি। আর আগে একর প্রতি মেশিনের পানি নিতে বর্তমানে লাগে ১০ হাজার টাকা। আর সোলার সেচ দিতে লাগে ৬ হাজার টাকা। এতে আমাদের অনেক খরচ ও পরিশ্রম কম হয়।’’

একই উপজেলার কালমেঘ বাজার এলাকার কৃষক মো. নূর ইসলাম বলেন, ‘‘আমাদের এইদিকে সোলার পাম্প দেওয়ার পর থেকে কৃষকদের খুবই উপকার হয়েছে। আগে ডিজেলচালিত মেশিনের মাধ্যমে আমাদের পানি নিতে কষ্ট হতো ও খরচ বেশি হতো। সলেমান ভাই সোলার নিয়ে আসাতে আমরা খুব সহজেই বোরো ধান ক্ষেতে পানি দিতে পারছি। পানি দিতে আমাদের ক্ষেতে আসতেও হয় না। শুধু সকালে সোলার পাম্প একবার চালু করে দিলে সারা দিন এমনিতে পানি হয়ে যায়। আর বিকাল ৫-৬টার দিকে সেটি অটোমেটিক বন্ধ হয়ে যায়।’’

সদর উপজেলার মোলানি গ্রামের কৃষক মো. মমিনুল ইসলাম বলেন, ‘‘সোলারের মাধ্যমে এক ঘণ্টায় বোরো ধানের এক বিঘা জমিতে পানি হয়ে যায়। শ্যালোমেশিন ও ডিপ-টিউবওয়েলের মাধ্যমে আমাদের পানি নিতে ড্রেন করতে হতো। এতে পানির চাপে অনেক সময় মাটির ড্রেন ভেঙে যেত। এখন সলেমান চাচা মাটির নিচ দিয়ে পাইপ পুতে দিয়েছে। যার ফলে আমাদের আর ড্রেন করতে হয় না ও ড্রেনের যে জায়গাটি পড়ে থাকতো সেটিতে ধান করতে পারছি। এতে আমাদের ধানের ফলনও বেশি হচ্ছে।’’

আরো অনেক কৃষক সলেমানের মাধ্যমে উপকৃত হতে পেরে তাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।

সলেমান আলী জানান, তিনি তার বাড়িতে লাইট, ফ্যান, টিভি, ফ্রিজসহ মাছের ও মুরগির খামারে বিদ্যুতের যাবতীয় কাজ সৌর বিদ্যুৎ দিয়ে চালান। তার এই প্রযুক্তি দেশে তিনি ছড়িয়ে দিতে চান। তাহলে বিদ্যুৎ ও ডিজেল সাশ্রয়, পরিবেশ দুষণ রোধ ও দেশ অর্থনৈতিকভাবে উপকৃত হবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. মাজেদুল ইসলাম বলেন, সলেমান আলীর এই উদ্ভাবন কৃষিক্ষেত্রে আর্শীবাদ স্বরূপ। শুধু এই জেলায় নয়, দেশের বিভিন্ন জেলাসহ সুনামগঞ্জ পর্যন্ত ছড়িয়ে গেছে তার এই উদ্ভাবন প্রযুক্তি। সোলার সেচ পাম্প দিয়ে জেলার প্রায় ৭ হাজার হেক্টর জমিতে সেচের ব্যবস্থা করেছেন। তার এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে এখানকার কৃষকরা সাশ্রয় মূল্যে, প্রয়োজন ও সাধ্যমতো সেচ দিতে পেরে লাভবান হচ্ছেন। ফলে তাদের ফসল উৎপাদন খরচ কম হচ্ছে।

সলেমানের এই প্রযুক্তি সারা দেশে ছড়িয়ে যাবে বলে আশা করেন এবং কৃষি অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে তাকে যথাসাধ্য সহযোগিতা করা হবে জানান উপপরিচালক মো. মাজেদুল ইসলাম।

ঢাকা/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সলেমানের সোলার পাম্পে উপকৃত ১১০০ কৃষক, সাশ্রয় একরে ৪০০০ টাকা
  • রাবিতে ভর্তিচ্ছুদের পাশে শিবির-ছাত্রদল