ওয়াসিমের কণ্ঠ এখনো কানে বাজে মা জোসনা বেগমের
Published: 30th, March 2025 GMT
২০১৭ সাল থেকে চট্টগ্রাম শহরে থাকতে শুরু করেন মোহাম্মদ ওয়াসিম। প্রতিবছর ঈদে টিউশনির টাকায় মায়ের জন্য শাড়ি কিনতেন। ঈদের এক বা দুদিন আগে বাড়ি ফিরতেন। শহর থেকে গাড়িতে উঠেই মাকে ফোন করতেন। বলতেন, ‘মা আসছি, হালিম করো।’ সেই কথাগুলো এখনো কানে বাজে মা জোসনা বেগমের।
গতকাল শনিবার এভাবে ওয়াসিমের কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন মা জোসনা বেগম। গত বছরের ১৬ জুলাই চট্টগ্রামের মুরাদপুর এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে নিহত হন ছাত্রদল নেতা ও চট্টগ্রাম কলেজের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ ওয়াসিম। তাঁর বাড়ি কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের বাঘগুজারার বাজারপাড়া এলাকায়।
আনোয়ারা-বাঁশখালী-চকরিয়া (এবিসি) আঞ্চলিক মহাসড়কের পেকুয়া সদর ইউনিয়নের বাঘগুজারা সেতুর পাশ ঘেঁষে পূর্ব দিকে ইট বিছানো সড়কে ৮০০ মিটার গেলে মোহাম্মদ ওয়াসিমদের বাড়ি। গতকাল দুপুর ১২টায় গেলে দেখা যায়, মা জোসনা বেগম ছাদে মরিচ শুকানোর কাজ করছেন। বাবা শফিউল আলম বসতঘরে যাওয়ার রাস্তা মেরামত নিয়ে ব্যস্ত। খবর পেয়ে জোসনা বেগম ও শফিউল আলম দোতলা ভবনের নিচতলায় অতিথিকক্ষে আসেন। ছেলের কথা তুলতেই চোখ ভিজে যায় জোসনা বেগমের। বলেন, ‘বাবাজি আঁর পোয়ার হতা ফুচার গরইলে হাঁন্দানি রাহিত নপারি।’ (বাবা আমার ছেলের কথা জিজ্ঞেস করলে কান্না চেপে রাখতে পারি না।)
ওয়াসিমকে ছাড়া এবারই প্রথম ঈদ করছেন জোসনা বেগম। প্রতিবছর ওয়াসিম মায়ের জন্য শাড়ি, বোনের জন্য থ্রি–পিস ও ছোট দুই ভাগনে-ভাগনির জন্য রঙিন কাপড় কিনতেন চট্টগ্রাম শহর থেকে। এটি করতেন টিউশনির টাকা জমিয়ে। এসব কথা স্মরণ করে কান্নায় ভেঙে পড়েন মা জোসনা বেগম। তিনি বলেন, ‘প্রতিবছর আমার জন্য শাড়ি আনত ওয়াসিম। বাহানা ধরত, তার দেওয়া শাড়িটিই ঈদের দিন পরতে হবে। পুরো ঘর মাতিয়ে রাখত সে। শহর থেকে এলে কমপক্ষে ১০-১২ দিন গ্রামে থাকত। সহজে আমাদের ছেড়ে শহরে যেতে চাইত না।’
ওয়াসিম অনেক স্মৃতি রেখে গেছেন বলে জানালেন তাঁর বাবা শফিউল আলম। তিনি বলেন, ‘আসলে ওয়াসিম আমাদের মাঝে এত স্মৃতি রেখে গেছে যে কোনটি ফেলে কোনটি বলব। সে ছিল বাড়ির প্রাণভোমরা।’
শফিউল আলম ১৮-২০ বছর বিদেশে ছিলেন। মাঝেমধ্যে কয়েক মাসের জন্য আসতেন। ওয়াসিমের মৃত্যুর পর একেবারে দেশে ফিরে এসেছেন তিনি। শফিউল আলম বলেন, ‘পরিবারের সুখের জন্য বড় একটা সময় বিদেশে কাটিয়েছি। বাচ্চাদের সবকিছু দেখত ওদের মা-ই।’ এ কারণে প্রতিটি কাজে, প্রতিটি কথায় ছেলেকে খুঁজে বেড়ান তিনি (জোসনা)। দিনের বেশির ভাগ কাজকর্মে ওয়াসিমের কথা মনে করেন। এরপর আর কোনো কাজ করতে পারেন না। কয়েক ঘণ্টা পর স্বাভাবিক হলে আবার কাজ শুরু করেন জোসনা।
জোসনা বেগম বলেন, ‘এবার ওয়াসিম আমার কাছ থেকে অনেক দূরে। তবে ওয়াসিমের বন্ধু, দলীয় সহকর্মী অনেকে ইফতারি পাঠিয়েছেন, আমাদের জন্য নতুন কাপড় পাঠিয়েছেন। এসবের মাঝে আমার ছেলেকে খুঁজে ফিরি।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
যশোরের দুঃখ ভবদহ পরিদর্শনে ৩ উপদেষ্টা, নদী খনন করবে সেনাবাহিনী
যশোরের দুঃখ হিসেবে পরিচিত ভবদহের জলাবদ্ধ সমস্যার স্থায়ী সমাধানে পরিদর্শন করলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম, পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
মঙ্গলবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ভবদহ স্লুইসগেট ২১ ভেন্ট এলাকা পরিদর্শন করেন তিন উপদেষ্টা।
তিন উপদেষ্টার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ছাড়াও সেনাবাহিনীর যশোর এরিয়া কমান্ডার ও জিওসি মেজর জেনারেল জে এম ইমদাদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
পরিদর্শন শেষে ভবদহ কলেজ মাঠে ব্রিফিংয়ের সময় পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, গতবারের মত এবার বর্ষায় যাতে জলাবদ্ধতা না হয়, সেজন্য সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ভবদহ এলাকার নদী খনন কাজ শুরু হবে। জলাবদ্ধতা নিরসনে যেসব সেচ পাম্প কাজ করছে, সেগুলোর বিদ্যুৎ বিল ইতোমধ্যে ৪৬ শতাংশ কমিয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ। এ এলাকার জন্য কৃষি ব্যাংকের ঋণের সুদ মওকুফের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ভবদহ জলাবদ্ধতা সমস্যার স্থায়ী সমাধান যাতে হয়, সে ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ২০০৫ সালে ভবদহ সমস্যার সমাধান করা সহজ ছিল। কিন্তু সে সময় সরকার সদিচ্ছা দেখায়নি। বর্তমান সরকার এ সমস্যার চিরস্থায়ী সমাধানের জন্য ইতোমধ্যে ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি শুরু হয়েছে। পক্ষ-বিপক্ষ সবার কাছ থেকে এ ব্যাপার মতামত নেওয়া হবে। এরপর বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা বলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এর আগে এদিন সকাল ১০টার দিকে যশোরের অভয়নগরের নওয়াপাড়া সরকারি কলেজ মাঠে হেলিকপ্টারে নামেন তিন উপদেষ্টা। পরে ধান খেত পরিদর্শন করেন তিন উপদেষ্টা।
এর আগে থেকে ভবদহ পাড়ের মানুষেরা বিভিন্ন ভবদহ স্থায়ী সমাধানে বিভিন্ন দাবি দাবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে অবস্থান নেন। এসময় তারা দ্রুত টিআরএম চালুসহ স্থানীয় নদীগুলো খনন করার দাবি জানান।
উল্লেখ্য, যশোরের অভয়নগর, মনিরামপুর ও কেশবপুর এবং খুলনার ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলার অংশবিশেষ নিয়ে ভবদহ অঞ্চল। পলি পড়ে এই অঞ্চলের পানি নিষ্কাশনের মাধ্যম মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রী ও হরি নদী নাব্য হারিয়েছে। ফলে বর্ষা মৌসুমে নদী দিয়ে পানি নামতে পারে না। বর্ষায় জলাবদ্ধতায় খেতের ফসল, ঘেরের মাছ সবই কেড়ে নেয় পানি। জলাবদ্ধতায় মগ্ন থাকে শতাধিক গ্রামের ঘরবাড়ি, ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট, কৃষিজমি এবং মাছের ঘের। এই অঞ্চলের ৪ লক্ষাধিক মানুষের ঠাঁই হয় মহাসড়কের ধারে বা স্কুল কিংবা আশ্রয়কেন্দ্রে। অথচ বিগত চার দশকে ভবদহ অঞ্চলের জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রায় ৬৫০ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলেও জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান হয়নি।
অভিযোগ, বিগত সরকারগুলোর স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও কর্মকর্তারা সিংহভাগ লুটপাটে জড়িত ছিলেন। তাই বছরের পর বছর জলাবদ্ধতায় ভোগা মানুষেরা দীর্ঘদিন স্থায়ী সমাধানে টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট (টিআরএম) চালু ও আমডাঙ্গা খাল সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসছে।