পূর্ব দিকে মাটির ঘর। বারান্দা ঝাড়ু দিচ্ছেন মনোয়ারা বেগম। কাছে গেলে চেয়ার এগিয়ে দিয়ে বসতে বললেন। তাঁর চোখেমুখে বিষাদের ছায়া। সব থেকেও কী যেন নেই। বললেন, ‘এক দিন পর ঈদ। মনটা ভালো নাই। ধনসম্পদ এখন থাকি কী হবে। ছইল নাই, মনোত খুশি নাগে না।’ (ছেলে নেই, তাই মনে সুখ নেই)
মনোয়ারা বেগম শহীদ আবু সাঈদের মা। আবু সাঈদ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ১৬ জুলাই রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর ফটকের সামনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন। তিনি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জের বাবনপুর জাফরপাড়া গ্রামে।
গতকাল শনিবার সকালে আবু সাঈদের বাড়িতে গিয়ে মনোয়ারা বেগমের সঙ্গে কথা হয়। তখন আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন ও বড় ভাই আবু হোসেন পাশের খালাশপীর বাজারে ঈদের কেনাকাটা করতে গেছেন। আবু সাঈদরা ১০ ভাই–বোন। অভাবের সংসারে আবু সাঈদই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন বলে জানালেন মনোয়ারা বেগম। ছেলেকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখছিলেন তাঁরা; কিন্তু আবু সাঈদ মারা যাওয়ায় তাঁদের স্বপ্ন ভেঙে গেছে। মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘গত কোরবানির ঈদের আবু সাঈদ বাড়িতে ছিল। বাড়ি থেকে এক বন্ধুর বিয়েতে গিয়েছিল। তার এক দিন পর বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যায়। আর আসেনি। এরপর তার লাশ আসে।’
কথা বলতে বলতে মনোয়ারা বেগম আবু সাঈদের থাকার মাটির ঘর ও খাট দেখিয়ে দিলেন। মাটির ঘরের পশ্চিমে ইটের টিনশেড ভবন। ওই ঘরের পেছনে আবু সাঈদের কবর।
মনোয়ারা বেগমের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, আবু সাঈদ নতুন টিনশেড ঘরের নির্মাণকাজ শুরু করেছিলেন। সেখানে তাঁর থাকার কথা ছিল। এর মধ্যে আবু সাঈদ মারা গেলেন। সরকারি-বেসরকারি অনুদানে তাঁরা অসমাপ্ত ঘরের কাজ শেষ করেছেন। নতুন টিনশেড ভবনের একটি কক্ষে তাঁর মা–বাবা থাকেন।
মনোয়ারা বেগমের সঙ্গে কথা বলার একপর্যায়ে খালিশপুর বাজার থেকে বাসায় ফিরেন আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন। মকবুল হোসেন বলেন, ‘ছেলেটার কথা মনে হলে বাবা অন্তরে সয় না। ক্যাবা পড়বার দিলও। না পড়ি মূর্খ থাকিল হয় কিষান (দিনমজুর) দিয়া খাইত, তা–ও জীবত থাকিল হয়। এখন দেখতিছি তা নোয়ায়। উয়ার একটা উদ্দেশ্যে ছিল, দ্যাশকে পাল্টাবার। আমার ছেলে উপলক্ষ, আল্লার তরফ থাকি স্বৈরাচার বাধ্য হইছে পালাইতে।’
কথার এক পর্যায়ে আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেনের চোখে পানি চলে আসে। তিনি বলেন, ‘ছেলেটার পড়ালেখার খরচ জোগাতে পারিনি। সে প্রাইভেট পড়িয়ে লেখাপড়ার খরচ চালাত। ঈদের সময় মা–বাবার জন্য অবশ্যই কিছু আনত। এগুলো ভাবলে কষ্ট লাগে। সবকিছু খালি খালি মনে হয়।’
শহীদ বীর আবু সাঈদের দুই হাত প্রসারিত বুক টান করে দাঁড়ানোর অকুতোভয় দৃশ্যটি বীরত্বের প্রতীক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: মকব ল হ স ন স ঈদ র ব ব গম র মন য় র
এছাড়াও পড়ুন:
বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য হটলাইন চালুর ঘোষণা পুলিশের
বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জরুরি যোগাযোগের জন্য হটলাইন সেবা চালুর ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। সোমবার পুলিশ সদর দপ্তরে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুনের উপস্থিতিতে এক অনুষ্ঠানে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। হটলাইন নম্বরে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে নিরাপত্তাজনিত যেকোনো সমস্যা তাৎক্ষণিকভাবে জানানো এবং দ্রুত সহায়তা পাওয়ার সুযোগ তৈরি হলো।
সম্প্রতি গাজায় হামলা নিয়ে বিক্ষোভের সময় বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ছয়টি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন আইজিপি ও বিডা চেয়ারম্যান। বৈঠকে অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ছিল– নেসলে বাংলাদেশ, কোকা-কোলা বাংলাদেশ বেভারেজেস, ইউনিলিভার বাংলাদেশ, বাটা সু কোম্পানি বাংলাদেশ, রেকিট বেনকিজার বাংলাদেশ, পেপসিকো ও জুবিল্যান্ট ফুড ওয়ার্কস বাংলাদেশ।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ৭ ও ৮ এপ্রিল দেশের বিভিন্ন শহরে এসব কোম্পানির কার্যালয়ে ভাঙচুর চালানো হয়। এ ঘটনায় অন্তত ১৪০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং প্রায় এক ডজন মামলা হয়েছে।
বৈঠকে বিডা চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বলেন, ‘আইজিপি, জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা ও বিডার কর্মকর্তাদের একসঙ্গে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বসা শুধু সময়োপযোগী নয়, নজিরবিহীন। এটি কেবল একটি সৌজন্য সাক্ষাৎ নয়। এটি এক ধরনের বার্তা যে বাংলাদেশ বিনিয়োগকারীদের পাশে আছে, বিশেষ করে যখন চ্যালেঞ্জ আসে।’
তিনি বলেন, এই প্রতিষ্ঠানগুলো হাজার হাজার কর্মজীবী ও তাদের পরিবারের জীবিকার উৎস। প্রতিবাদের অধিকার আছে, কিন্তু যে প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মসংস্থান, স্থিতিশীলতা ও প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করে, সেগুলো ধ্বংস করা কোনো সমাধান নয়। পুলিশের তাৎক্ষণিক সাড়া ও দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করেন বিডা চেয়ারম্যান।
প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিরা ভাঙচুর, ক্ষয়ক্ষতি ও কার্যক্রমে বিঘ্ন নিয়ে সরাসরি অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। আইজিপি বাহারুল আলম বিনিয়োগকারীদের পূর্ণ সহায়তার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, ‘আমরা কেবল প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য এখানে আসিনি, বরং আস্থা গড়ে তুলতে এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা যেন না ঘটে, তা নিশ্চিত করতেই এসেছি।’
এ আলোচনার ফলে বিডা, পুলিশ ও ব্যবসায়িক সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে একটি প্রতিরোধ পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নতুন নিরাপত্তা প্রটোকল, দ্রুত সাড়া দেওয়া ইউনিট এবং সংকটকালে উন্নত যোগাযোগ চ্যানেল।