রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজারে ঈদের আগমুহূর্তে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ টাকা। তবে অন্যান্য বাজারে আরও ১০০-১২০ টাকা কমে গরুর মাংস বিক্রি হতে দেখা গেছে। ক্রেতারা বলছেন, গরুর মাংসের দাম অস্বাভাবিক বাড়িয়ে ৮৫০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।

আজ রোববার সকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউন হল, কৃষি মার্কেট, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও বাজার ঘুরে গরুর মাংসের দামের এ চিত্র পাওয়া গেছে।

সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক দেশে আজ রোববার পবিত্র ঈদুল ফিতর উদ্‌যাপিত হচ্ছে। সাধারণত চাঁদ দেখা সাপেক্ষে সৌদি আরবের পরদিনই বাংলাদেশে ঈদ হয়। সে চিন্তা করে অনেকেই ঈদের বাজার করছেন আজ। তাই গরুর মাংসের দোকানেও ভিড় দেখা গেছে।

ঈদের আগে এখন মানুষ শেষ মুহূর্তের প্রয়োজনীয় বাজার সারছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষের ভিড় দেখা গেছে গরু, খাসি ও মুরগির মাংস বিক্রির দোকানে। বাজারভেদে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৬৮০ থেকে ৮৫০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে।

আজ রাজধানীর চারটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ঈদ সামনে রেখে অনেকেই সাধ্যমতো গরুর মাংস কিনছেন। খাসি ও ছাগলের মাংসের চাহিদা কম হলেও ক্রেতার সংখ্যা আগের তুলনায় বেড়েছে। এ ছাড়া ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির বেচাকেনাও অনেক বেড়েছে।

বিক্রেতারা জানান, গত দুই দিনের মধ্যে বাজারভেদে গরুর মাংসের দাম কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আজ ঢাকার শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট ও টাউন হল বাজার ঘুরে দেখেন প্রথম আলোর এই প্রতিবেদক। এসব বাজারের মধ্যে টাউন হল বাজারে ৮৫০ টাকা, শেওড়াপাড়ায় ৮০০ টাকা, কৃষি মার্কেটে ৭০০ টাকা, আগারগাঁওয়ের খোলাবাজারে ৬৮০ টাকা কেজি গরুর মাংস বিক্রি হতে দেখা গেছে। মোটামুটি এক দামেই গরুর মাংস বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। চাহিদা বেশি থাকায় দর-কষাকষির সুযোগ কম।

আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মোহাম্মদপুরের টাউন হল বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সেখানকার মাংসের দোকানগুলোয় ৮৫০ টাকা কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে। এত বেশি দাম কেন জানতে চাইলে এ বিষয়ে কোনো বিক্রেতা কথা বলতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশ না করে এক মাংস বিক্রেতা বলেন, অন্যান্য বাজারের তুলনায় টাউন হল বাজারের দাম একটু বেশি থাকে। স্বাভাবিক সময়ে এ বাজারে ৭৫০-৮০০ টাকায় গরুর মাংস বিক্রি হতো, এখন সেটি বেড়ে ৮৫০ টাকায় উঠেছে।

সকালে টাউন হল বাজারে গরুর মাংস কিনতে আসেন মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা রাইসুল ইসলাম। মাংসের বেশি দাম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগামীকাল ঈদ হতে পারে। আজ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এ বাজার (টাউন হল) থেকে কিনেছি। এখন গরুর মাংস কিনতে এসে দেখি ৮৫০ টাকা কেজি। এটা তো অনেক বেশি দাম। এখন অন্য বাজারেও যেতে পারছি না দেখে বাধ্য হয়ে এ দামে মাংস কিনতে হচ্ছে।’

নিম্ন আয়ের মানুষেরাও কিনছেন

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে সঙ্গীত কলেজের পাশে একটি অস্থায়ী কাঁচাবাজার রয়েছে। এ বাজারে আজ এক কেজি গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে ৬৮০ টাকা। সকাল ১০টির দিকে বাজারটিতে গিয়ে দেখা যায়, নিম্ন আয়ের অনেক মানুষ এখানে গরুর মাংস কেনার জন্য ভিড় করেছেন। তাঁদেরই একজন ৬০ বছর বয়সী রীনা খাতুন।০

মিরপুরের ৬০ ফিট সড়কের ছয়তলা গার্মেন্টসের পার্শ্ববর্তী এলাকায় থাকেন রীনা খাতুন। তাঁর পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি স্বামী আবুল কালাম রিকশাচালক। সপ্তাহ দুই আগে রীনা খাতুন হাতের হাড়ে ব্যথা পান। সেটির চিকিৎসার জন্য কিছু টাকা জমিয়েছিলেন। জমানো সেই টাকা নিয়েই গরুর মাংস কিনতে আসেন তিনি।

রীনা খাতুন বলেন, ‘আগামীকাল ঈদ হতে পারে। ঈদের দিন এক কেজি মাংস পরিবারের সবাই মিলে খাব। এখানে কিছুটা কম দামে গরুর মাংস বিক্রি হয় শুনে এসেছি।’

মাংসের দাম তুলনামূলক কম কেন জানতে চাইলে একটি দোকানের বিক্রেতা মো.

রাজু জানান, তাঁরা পাইকারি দরে বিক্রি করছেন; এ জন্য দাম কম। তবে ওই দোকানের এক সহকারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এখানে পানি মেশানো মাংস বিক্রি করা হয়। এ জন্য অন্য বাজারের চেয়ে কম দামে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে। এ কাজকে অবশ্য তিনি খারাপ বলে মনে করছেন না। ওই বিক্রয় সহকারী বলেন, বেশি দাম দেখে সাধারণ (আয়ের) মানুষ মাংস কেনেন না। এখানে কম দামে পাওয়ায় অনেক রিকশাচালকও মাংস কিনছেন। আর পানি মেশানো হলেও মাংসের মান ভালো বলে দাবি তাঁর।

এদিকে মাংস বিক্রেতারা জানান, ঈদ কেন্দ্র করে গরুর মাংসের বিক্রি কয়েক গুণ বেড়েছে। রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের মাংস বিক্রেতা মঞ্জুর আলম বলেন, প্রতিবছরই ঈদের আগে বেচাকেনা তিন-চার গুণ বৃদ্ধি পায়। এবারও তা-ই হয়েছে। তিনি জানান, গতকাল শনিবার মোট পাঁচটি গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে তাঁর দোকানে। আর আজ বেলা ১১টার মধ্যেই পাঁচটি গরু বিক্রি শেষ হয়েছে।

খাসির মাংসের দামও চড়া

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আজ প্রতি কেজি খাসির মাংস ১ হাজার ১৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১ হাজার ৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা। যেমন ঢাকার মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে খাসির মাংস ১ হাজার ১৫০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। আবার আগারগাঁও তালতালা ও টাউন হল বাজারে সেটি ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।

মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের বিসমিল্লাহ খাসির মাংসের দোকানের স্বত্বাধিকারী আনোয়ার হোসেন জানান, এবারের ঈদে অন্যান্য বছরের তুলনায় খাসি ও ছাগলের মাংস আশানুরূপ বিক্রি হচ্ছে না। কারণ, দাম বেশি। ফলে অনেকেই পরিমাণে কম কিনছেন বা গরু কিনছেন। ঈদ উপলক্ষে খাসি ও ছাগলের মাংসে কেজিতে ১০০-১৫০ টাকা দাম বেড়েছে বলে জানান তিনি।

তবে এটি সত্ত্বেও ঈদের কারণে বিক্রি বেড়েছে বলে জানান আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, আজ বেলা থেকে ১১টা পর্যন্ত দোকানে ১৩টি ছাগল ও খাসি বিক্রি হয়েছে। গতকাল ১৯টি বিক্রি হয়েছিল। স্বাভাবিক সময়ে দিনে তিন থেকে পাঁচটির মতো বিক্রি হয়।

ব্রয়লারের কেজি ২৩০ টাকা

ঈদের আগের দিন আজ রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর সোনালি মুরগির দাম রাখা হচ্ছে ৩৩০ টাকা। অবশ্য পাড়া-মহল্লায় এ দাম কেজিতে আরও ১০ টাকা বেশি দেখা গেছে। আর কারওয়ান বাজারে দাম ১০ টাকা করে কম রয়েছে। সব কটি বাজারেই মুরগির দোকানেও ক্রেতাদের বাড়তি ভিড় দেখা গেছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম হ ম মদপ র ক ষ র ম হ ম মদপ র ৮৫০ ট ক ম রগ র স ক নত করছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

বাংলাদেশ থেকে চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্ন করার হুমকি ত্রিপুরার মহারাজার

ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের মহারাজা ও টিপরা মোথা নেতা প্রদ্যোৎ মাণিক্য বাংলাদেশ থেকে চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্ন করার হুমকি দিয়েছেন। মঙ্গলবার এনডিটিভি অনলাইন ও হিন্দুস্তান টাইমস এ তথ্য জানিয়েছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দুটির দাবি, সম্প্রতি চীন সফরের সময় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস নাকি বলেছিলেন, “উত্তর-পূর্বে ভারতের সাতটি রাজ্য স্থলবেষ্টিত অঞ্চল। তাদের সমুদ্রে পৌঁছনোর কোনো উপায় নেই। এই অঞ্চলে আমরাই সমুদ্রের দেখভাল করি। এটি একটি বিশাল সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করে। এটি চীনা অর্থনীতির একটি সম্প্রসারণ হতে পারে।”

প্রদ্যোৎ মাণিক্য দাবি করেছেন, ১৯৪৭ সালে চট্টগ্রামের পাহাড়ি মানুষজন ভারতের সঙ্গেই থাকতে চেয়েছিলেন। তখন চট্টগ্রাম বন্দর হাতছাড়া করা ভারতের জন্যে ঠিক হয়নি।

তিনি হুমকি দিয়ে বলেছেন, “চট্টগ্রাম বন্দর ত্রিপুরা থেকে খুব একটা দূরে নয়।  বাংলাদেশের মধ্যে দিয়েই ভারতের রাস্তা করে নেওয়া উচিত।”

তিনি বলেছেন, “আমাদের আদিবাসীদের সমর্থন করে সমুদ্রে যাওয়ার পথ তৈরি করার সময় এসেছে ভারতের। একসময় চট্টগ্রাম শাসন করত এই আদিবাসীরাই। তাই আমরা আর এই অকৃতজ্ঞ শাসনের উপর নির্ভরশীল নই। ভারতের সবচেয়ে বড় ভুল ছিল ১৯৪৭ সালে বন্দরটি ছেড়ে দেওয়া। সেখানে বসবাসকারী পাহাড়ি জনগণ ভারতের অংশ হতে চাইতেন। জনাব ইউনুস মনে করতে পারেন যে, তিনি সমুদ্রের অভিভাবক, কিন্তু বাস্তবতা হল তিনি প্রায় ৮৫ বছর বয়সি একজন স্টপ-গ্যাপ নেতা। ভুলে গেলে চলবে না, তিনি যে বন্দরের কথা বলছেন তা ত্রিপুরা থেকে মাত্র কয়েক মাইল দূরে।”

চিকেনস নেক করিডরে পরিকাঠামোগত উন্নয়নের ওপর জোর না দিয়ে বাংলাদেশকে ভেঙে ফেলার পরামর্শ দিয়ে ত্রিপুরার মহারাজা বলেন, “উদ্ভাবনী ও চ্যালেঞ্জিং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের জন্য কোটি কোটি টাকা ব্যয় করার পরিবর্তে আমরা বাংলাদেশকে ভেঙে ফেলতে পারি এবং সমুদ্রে যাওয়ার জন্যে আমাদের নিজস্ব রাস্তা পেতে পারি। পার্বত্য চট্টগ্রামে সবসময় আদিবাসী উপজাতিদের বসবাস ছিল। তারা ১৯৪৭ সাল থেকে সবসময় ভারতের অংশ হতে চেয়েছিল। সেখানে লাখ লাখ ত্রিপুরী, গারো, খাসি এবং চাকমা জনগোষ্ঠী রয়েছে। তারা ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে বসবাস করছে।”

ঢাকা/শাহেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ