হঠাৎ বদহজম বা ডায়রিয়া হলে কী করবেন
Published: 30th, March 2025 GMT
রোজার সময় আমাদের খাওয়াদাওয়া একটা নিয়মকানুনের মধ্যে চলে আসে। এরপর ঈদের আনন্দে হঠাৎ ভারী খাবার খেয়ে অনেকেই পেটের সমস্যায় ভোগেন। বদহজম, ডায়রিয়া, পাতলা পায়খানা, বমি...গ্যাসের সমস্যার কারণে অনেকে পেটের অস্বস্তিতেও কষ্ট পান। এ ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে কীভাবে? প্রতিরোধের উপায়ই–বা কী?
সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য কিছু নিয়ম পালনের চেষ্টা করতে পারেন:
১.
২. সারা দিনে অল্প অল্প করে খাবার খান, একেবারে পেট পুরে খাবেন না।
৩. দুধজাতীয় খাবার, কফি ও গুরুপাক খাবারগুলো যতটুকু সম্ভব এড়িয়ে চলুন।
৪. পানি এক বা দুই গ্লাস করে সারা দিনে ১০ থেকে ১২ গ্লাস (অসুস্থতার কারণে পানি খেতে বারণ না থাকলে) খাবেন।
৫. রিকশা বা গাড়ি ব্যবহার না করে একটু হাঁটার চেষ্টা করুন।
৬. খাবারের মধ্যে একটু বিরতি দিন। উপর্যুপরি খাবেন না।
ঈদের দিন বা ঈদের পর সবচেয়ে বেশি যে সমস্যা দেখা দেয়, তা হলো বদহজম। বদহজম বা গন্ধযুক্ত ঢেকুর হলে হাতের কাছে সিরাপ পিঙ্ক–বিসমল বা পেপটোসিড রাখতে পারেন। সমস্যা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চার থেকে ছয় চা–চামচ আধা ঘণ্টা পরপর খেতে হবে। তবে অবশ্যই সারা দিনে আটবারের বেশি খাওয়া যাবে না। আর এটা খেলে পায়খানা কালো হতে পারে, ভয় পাবেন না। নিয়মিত কোনো ওষুধ থাকলে সেটা খাবেন এই ওষুধ খাওয়ার দুই ঘণ্টা পর।
বমি ভাব বা বমি হলে এমিসট্যাট–জাতীয় বমির ওষুধ খেতে পারেন। প্রতিবার বমির জন্য দুই গ্লাস করে ওরস্যালাইন খাওয়ার চেষ্টা করুন। আগে বমির ওষুধ খেতে হবে, এর আধা ঘণ্টা বা ৪০ মিনিট পরে ওরস্যালাইন খাওয়া শুরু করবেন।
হালকা পেটব্যথা থাকলে অ্যান্টিস্পাসমোডিক ওষুধ কাজে লাগতে পারে। পাতলা পায়খানা হলে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানিজাতীয় খাবার খেলেই অধিকাংশ ক্ষেত্রে সুস্থ হয়ে যাবেন। অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন নেই। প্রতিবার পাতলা পায়খানার জন্য দুই গ্লাস করে ওরস্যালাইন খাবেন। এ সময় সহজপাচ্য খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন, যেমন জাউভাত, চিড়া, কলা ইত্যাদি। যাঁরা ওরস্যালাইন খেতে পারেন না, তাঁরা ডাবের পানি, বাসার তৈরি লবণ ও চিনির শরবত, বাজারে কিছু স্পোর্টস ড্রিংকস পাওয়া যায়, সেগুলো কিংবা ইলেকট্রোলাইট ড্রিংকস খেতে পারেন। তবে মনে রাখতে হবে, প্রতিবার পায়খানা বা বমির জন্য অন্তত ৫০০ মিলিলিটার, মানে দুই গ্লাস খেতে হবে।
খাবার পরে যাঁদের পেট ফেঁপে যাচ্ছে বা গ্যাস হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে, তাঁরা উপসর্গ হলেই সিরাপ গ্যাভিসল বা গ্যাভিলাক এম চার চামচ করে খেয়ে নিতে পারেন। দিনে চারবার পর্যন্ত এটা খেতে পারবেন। তবে মনে রাখতে হবে, এটা খেলে পাতলা পায়খানা হতে পারে।
তীব্র পেটব্যথা, জ্বর, দুর্বলতা, পেট অত্যধিক ফুলে যাওয়া, শরীরে ব্যথা কিংবা শরীরে লবণের ঘাটতি দেখা দিলে দ্রুত কাছের হাসপাতালে যোগাযোগ করতে হবে।
সংযমের মাস শেষে অসংযমী খাবারদাবার আমাদের অসুস্থতা ও বিপদের কারণ হতে পারে। তাই এ দিনটা একটু সাবধানে চলতে পারলে আমরা ঈদের খুশিটা আনন্দের সঙ্গে পার করতে পারব।
লেখক: ডা. এ বি এম শাকিল গনি, সহকারী অধ্যাপক লিভার বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ঈদে যেসব বিষয়ে সচেতন থাকলে আনন্দ মাটি হবে না
খাবারদাবার নিয়ে সতর্কতা: এক মাস সিয়াম সাধনার পর ঈদের দিন সবার বাড়িতেই উপাদেয় রান্নাবান্না হয়। ঈদে থাকে প্রচুর মিষ্টি বা ডেজার্ট-জাতীয় খাবার; সাথে পোলাও বা বিরিয়ানি, মাংস, কাবাব ইত্যাদি। রোজার শেষে প্রথম দিনে অনেক খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন কেউ কেউ। তাই এ ক্ষেত্রে সংযম দেখাতে হবে। যাঁদের ডায়াবেটিস আছে, তাঁরা ডেজার্ট আইটেম এড়িয়ে নোনতা বা ঝাল খাবার বেছে নিন। চাইলে পরিবারের ডায়াবেটিক রোগীর জন্য বিশেষ ডেজার্ট তৈরি করে রাখতে পারেন। দুপুরে ভারী খাবার খেলে রাতে একেবারে হালকা রুটি-সবজি বা স্যুপ-জাতীয় খাবার রাখুন। সব মাংসের আইটেম না খেয়ে কিছুটা সবজি সালাদ খান, যাতে কোষ্ঠকাঠিন্য না হয়। বাড়ি বাড়ি বেড়াতে গিয়ে একসঙ্গে অনেক না খেয়ে অল্প খান। বদহজম বা ডায়রিয়া হলে ভারী খাবারদাবার একেবারেই বাদ দিন।
পানিশূন্যতা যেন না হয়: এবার ঈদুল ফিতর পড়েছে চৈত্র মাসে। এ সময় ঝা ঝা রোদ্দুর। বাইরে বেড়াতে গিয়ে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। এই গরমে প্রচুর পানি খান, যেন পানিশূন্যতা না হয়। মনে রাখবেন, কোমল পানীয় বা কেনা জুস নয়, বরং পানিই সবচেয়ে সেরা পানীয়। তরমুজ, আনারস, বাঙ্গি ইত্যাদি ফলে প্রচুর জলীয় উপাদান থাকে। এসব রাখতে পারেন ঈদের টেবিলে। শশা, টমেটো, ক্যাপসিকামেও পানি আছে। এসব দিয়ে সালাদ বা রায়তা তৈরি করে নিতে পারেন। টক দই গরমে প্রশান্তি আনবে। খেতে পারেন লাচ্ছি বা ঘোল।
আরও পড়ুনঈদ উৎসবেও ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখবেন যেভাবে১৭ জুন ২০২৪শিশুদের দিকে নজর রাখুন: যাঁরা গ্রামের বাড়ি বেড়াতে গেছেন, তাঁরা শিশুদের কখোনোই একা ছাড়বেন না। পুকুর বা জলাধারের কাছে যেতে দেবেন না। যাঁরা ঈদে সমুদ্র বা পাহাড়ে বেড়াতে যাচ্ছেন, তাঁরাও বিশেষ করে নজর রাখুন যেন শিশু কোন দুর্ঘটনায় না পড়ে। শিশুদের সহজপাচ্য খাবার খেতে দিন, খাবার নিয়ে জোরাজুরি করবেন না। যথেষ্ট পানি খাচ্ছে কি না আর যথেষ্ট প্রস্রাব হচ্ছে কি না, সেদিকে খেয়াল রাখুন।
বয়স্কদের খেয়াল করুন: পরিবারে বয়স্করা সবচে নাজুক পরিস্থিতিতে থাকুন। বয়স্কদের অনেকেই ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ বা কিডনি রোগে ভুগছেন। তাই তাঁদের উপযোগী কিছু খাবার আলাদা করে প্রস্তুত করা উচিত। উৎসব উপলক্ষে একদিন নিয়মের বাইরে খেলে কিছু হবে না ভেবে যদি খেতেও চান, তবে পরিমিত দিন। হুল্লোড়-ব্যস্ততায় ওষুধপত্র ঠিকমতো খাচ্ছেন কি না, খেয়াল রাখুন। যথেষ্ট ওষুধ আগেই কিনে রাখুন।
আরও পড়ুনকখনো হিমশীতল পাহাড়ে, কখনো সাইকেলে কেটেছে ঈদ৩০ মার্চ ২০২৫কাজ ভাগাভাগি: উৎসব-পরবে সবচেয়ে বেশি ব্যস্ত থাকেন পরিবারের নারী সদস্যরা। রান্নাবান্না, পরিবেশন, ধোওয়া-পাকলা, অতিথি আপ্যায়ন করতে গিয়ে প্রায়ই অসুস্থ বা দুর্বল হয়ে পড়েন তাঁরা। অনেক সময় গৃহ সহকারী ছুটিতে গেলে অবস্থা আরও শোচনীয় হয়। পরিবারের সবার উচিত এ সময় তাঁকে কাজে সাহায্য করা। অতিথি আপ্যায়নে বা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় বাড়ির ছোটবড় সবার অংশগ্রহণ থাকা উচিত, যাতে মা বা স্ত্রী একটু বিশ্রাম পান।
অসুস্থতায় অবহেলা নয়: ডায়রিয়া হলে খাবার স্যালাইন, জ্বর বা ব্যথা-বেদনায় প্যারাসিটামল সেবন করা যায়। বদহজম বা অ্যাসিডিটির জন্য অ্যান্টাসিড বা গ্যাসের ওষুধ। কিন্তু কিছু কিছু উপসর্গ অবহেলা করা যাবে না। যেমন হঠাৎ বুকে প্রচন্ড ব্যথা বা চাপ, রক্তচাপ অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়া, কোনো দিক অবশ হওয়া বা মুখ বেঁকে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি জরুরি অবস্থায় দ্রুত হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিতে হবে। ঈদের ছুটিতেও হাসপাতালের ইমার্জেন্সি খোলা থাকে।
আরও পড়ুনছোটবেলার ঈদ বড়বেলার ঈদ১০ ঘণ্টা আগে