কারাগারে ঈদ কাটবে যেসব নেতার, পাবেন যে খাবার
Published: 30th, March 2025 GMT
শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয় গত বছরের ৫ আগস্ট। ওই দিন দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন তিনি। এরপর আত্মগোপনে চলে যান তার দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। কেউ কেউ বিদেশে পালিয়ে গেছেন। তবে, অনেকে পালানোর সুযোগ পাননি। ধরা পড়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে। তারা এখন বিভিন্ন মামলায় কারাগারে আছেন। শিগগিরই কারামুক্ত হওয়ার সম্ভাবনাও নেই। তাই, এবার কারাগারেই ঈদ পালন করতে হবে তাদের।
গত ১৩ আগস্ট নৌপথে পালানোর সময় গোপন তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর সদরঘাট এলাকা থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে গ্রেপ্তার কর হয়। এরপর একে একে গ্রেপ্তার করা হয় আওয়ামী লীগের কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে। তাদের মধ্যে অনেকে শেখ হাসিনা সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী-এমপি ছিলেন।
কিছু দিন আগেও যারা আরাম-আয়েশে প্রাচুর্যের মধ্যে ঈদ উদযাপন করতেন, তাদের অনেককেই এবার কারাগারের চার দেয়ালের মধ্যে ঈদ পালন করতে হবে জৌলুসহীনভাবে। চারপাশে থাকবে না তোষামোদকারীদের ভিড়।
কারা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ঈদে ডিভিশনপ্রাপ্ত ভিআইপি আসামিদের জন্য থাকবে বিশেষ সুবিধা। ঈদের দিন দেখা করার সুযোগ মিলবে পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের সঙ্গে। পাবেন স্বজনদের পাঠানো ঘরে বানানো খাবার খাওয়ার সুযোগ।
নিরাপত্তার জন্য তাদের ফোনে কথা বলার সুযোগ বন্ধ ছিল। তবে, ঈদ উপলক্ষে দেওয়া হবে ফোনে কথা বলার সুযোগ। শুধু তাই নয়, ঈদের দিন এসব ভিআইপি কারাবন্দির জন্য বিশেষ খাবার পরিবেশন করা হবে। পায়েস, পোলাও, গরুর মাংস, ডিমের কোরমা, মুরগির রোস্ট, মাছসহ থাকবে নানা পদের খাবার। থাকবে মিষ্টান্ন ও পান-সুপারির ব্যবস্থাও।
কারা অধিদপ্তর ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের মাধ্যমে জানা গেছে, কাশিমপুর কারাগারে আছেন সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, সাবেক সংসদ সদস্য হাজী সেলিম, বি এম ফজলে করিম চৌধুরী, এম এ মালেক, আব্দুর রহমান বদি, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক এমপি মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ও সাবেক এমপি আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপ, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক এমপি আহমদ হোসেন, সাবেক এমপি ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত, সাংবাদিক মোজ্জাম্মেল হক বাবু, শ্যামল দত্ত, শাকিল আহমেদ ও দেশ টিভির এমডি আরিফ হোসেনসহ অনেকে। কাশিমপুর কারাগারে নারীদের ভবনে সাবেক শিক্ষা ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা.
ঢাকার কেরানীগঞ্জে কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন—সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় মহাজোটের মুখপাত্র আমির হোসেন আমু, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক তথ্যমন্ত্রী ও জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাবেক মন্ত্রী ও বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, সাবেক ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, সাবেক সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম, সাবেক বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুহাম্মদ ফারুক খান, সাবেক ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, সাবেক এমপি সাদেক খান, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সাবেক মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান, দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. শাহ কামালসহ অনেকে।
কারা অধিদপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি- উন্নয়ন ও গণমাধ্যম) জান্নাত-উল-ফরহাদ জানিয়েছেন, সকল বন্দি সাধারণ নিয়মে ১৫ দিনে একবার স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে পারেন। এর বাইরে ঈদ উপলক্ষে ভিআইপিসহ সব আসামি একবার স্বজনদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাবেন। ঈদের দিন ও পরের দুই দিনে একবার দেখা করার সুযোগ পাবেন আসামিরা। এই তিন দিনে যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে একবার কারাগারের বাইরে থেকে স্বজনদের দেওয়া খাবার পাবেন ভিআইপিসহ সব আসামি। খাবার নিরাপদ কি না, তা যাচাইয়ের সুযোগ থাকবে।
তিনি বলেন, ঈদের দিন ও পরের দুই দিন মিলে তিন দিনে সব আসামি একবার ৫ মিনিট ফোনে কথা বলার সুযোগ পাবেন। তবে, আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিসহ ভিআইপি আসামিদের ক্ষেত্রে কোন নাম্বারে কথা বলা হবে, তা আগেই জানাতে হবে। সে নাম্বার যাচাই-বাছাই শেষে কারা কর্তৃপক্ষ নিরাপদ মনে করলে তারা কথা বলার সুযোগ পাবেন।
ঈদের দিন যা যা খাবার থাকবে ভিআইপি বন্দিদের জন্য:
কারা কর্তৃপক্ষ সকল আসামির জন্য ঈদের দিনে উন্নত খাবারের ব্যবস্থা করবে বলে জানিয়েছেন জান্নাত-উল ফরহাদ। তিনি বলেছেন, ঈদের দিন তিন বেলা সব বন্দির জন্য ভালো খাবারের ব্যবস্থা থাকবে। সকালে খাবারের তালিকায় থাকবে পায়েস ও মুড়ি। দুপুরে থাকবে পোলাও, গরুর মাংস, মিষ্টি ও সালাদ। দুপুরের খাবার শেষে থাকবে পান-সুপারির ব্যবস্থা। রাতের খাবারের তালিকায় থাকবে মাছ, ডিমের কোরমা, ভাত ও আলুর দম।
জান্নাত-উল-ফরহাদ বলেন, নিরাপত্তার জন্য ডিভিশনপ্রাপ্ত ভিআইপি বন্দিদের আলাদা সেলে রাখা হয়। ঈদের দিন প্রত্যেক কারাগারে ভিআইপি বন্দিদের একসঙ্গে নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা থাকবে, সাধারণ কয়েদিদের সঙ্গে নয়। কারাগারে খোলা মাঠে ঈদের নামাজ পড়ার ব্যবস্থা থাকবে। নারীদের জন্য ঈদের নামাজের কোনো ব্যবস্থার নির্দেশনা এখনো পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
ঢাকা/রফিক
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র র ব যবস থ বল র স য গ স ব ক এমপ স বজনদ র ঈদ র দ ন দ র জন য যমন ত র মন ত র একব র সদস য ভ আইপ আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
হাতীবান্ধা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত হাসিবুলের বাড়িতে জামায়াতের আমির, চাইলেন বিচার
মনিরহাটের হাতীবান্ধা সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে নিহত হাসিবুল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে স্বজনদের সমবেদনা জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান। আজ শনিবার দুপুরে তিনি হাতীবান্ধার মধ্য সিঙ্গিমারী গ্রামে হাসিবুলের বাড়িতে যান। এ সময় হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করে তিনি হাসিবুলের স্বজনদের হাতে উপহারসামগ্রী তুলে দেন।
গত বুধবার দুপুরে উপজেলার মধ্য সিঙ্গিমারী সীমান্তের ৮৯৪ নম্বর মেইন পিলালের সাব ৬ এস পিলার–লাগোয়া এলাকায় বিএসএফের গুলিতে আহত হন হাসিবুল। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় বিএসএফের সদস্যরা তাঁকে ধরে নিয়ে যান। বুধবার রাতে ভারতের কোচবিহারের এমজেএন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এরপর বৃহস্পতিবার রাতে বিজিবি ও পুলিশের কাছে লাশটি হস্তান্তর করে বিএসএফ। হাসিবুল সিঙ্গিমারী গ্রামের জাহিদুল ইসলামের ছেলে।
নিহত হাসিবুলের পরিবার ও এলাকাবাসীর ভাষ্য, ভারতের সীমান্ত–লাগোয়া জমিতে হাসিবুলসহ কয়েকজন বাংলাদেশি ঘাস কাটতে গিয়েছিলেন। তখন বিএসএফের ফুলবাড়ী ক্যাম্পের টহল দলের সদস্যরা তাঁদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে হাসিবুল গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে বিএসএফ আহত অবস্থায় তাঁকে ধরে নিয়ে যায়।
আজ হাসিবুলের বাড়িতে গিয়ে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা এই ঘটনার নিন্দা জানাই, এটার বিচার চাই। ভারত বলে, তারা আমাদের বন্ধু দেশ। ফেলানীর বিচার এখনো পেলাম না। অসংখ্য সীমান্ত হত্যার বিচার পাইনি। ভারতের কাছে আহ্বান জানাব, অন্তত এই বিচারটা করে প্রমাণ করেন, আপনারা আমাদের বন্ধু। বন্ধুত্বের জন্য ভালোবাসা বিনিময় করতে হয়, দায়িত্ব নিতে হয়।’
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে জামায়াতের আমির বলেন, ‘হত্যাকাণ্ড হয়েছে এ দেশের মাটিতে আর লাশ নিয়ে গেছে ভারতে, এর বিচার হতে হবে বাংলাদেশে। এ হত্যাকাণ্ডের বিচারের জন্য উদ্যোগ নিন। ভারতকে বলেন, সৎ ইচ্ছা নিয়ে সহযোগিতা করুন।’ এ সময় ভারতের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা যত এগিয়ে আসবেন, আমরাও তত আপনাদের দিকে এগিয়ে যাব। এই জাতি বন্ধুত্বের মর্যাদা দিতে জানে। আমরা প্রমাণ করব, আমরা মর্যাদা দিতে জানি।’ নিহতের পরিবারকে এ ব্যাপারে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি।’
আরও পড়ুনহাতীবান্ধা সীমান্তে গুলিতে নিহত বাংলাদেশি তরুণের লাশ ফেরত দিয়েছে বিএসএফ১৮ এপ্রিল ২০২৫