মৃত্যুর আগে ছেলে হত্যার বিচার দেখতে চান ব্লগার ওয়াশিকুরের বাবা
Published: 30th, March 2025 GMT
টিপু সুলতানের বয়স প্রায় ৮০ বছর। জীবনে একের পর এক আঘাত পেয়েছেন। ৯০ দশকের শুরুর দিকে মারা যান বড় ছেলে। এরপর ১৯৯৫ সালের দুই সন্তানসহ তাকে রেখে চলে যান স্ত্রী। সন্তানদের ওপর সৎ মায়ের আঁচড় যেন না পড়ে, সেজন্য আর নতুন সংসার গড়েননি টিপু সুলতান। কোলে-পিঠে করে ছেলে-মেয়েকে মানুষ করেছেন। ১০ বছর আগে ছেলে ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবুকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। মৃত্যুর আগে ছেলে হত্যার বিচার দেখে যেতে চান ওয়াশিকুর রহমান বাবুর বাবা।
২০১৫ সালের ৩০ মার্চ রাজধানীর তেজগাঁওয়ের বেগুনবাড়ীর দিপীকা মোড়ে ওয়াশিকুর রহমানকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। পালানোর সময় দুই হামলাকারীকে আটক করে তৃতীয় লিঙ্গের লোকজন ও স্থানীয় বাসিন্দারা।
এ ঘটনায় ওয়াশিকুর রহমানের ভগ্নিপতি মনির হোসেন মাসুদ বাদী হয়ে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় একটি মামলা করেন।
২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর পাঁচ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক মশিউর রহমান। পরের বছরের ২০ জুলাই আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের তৎকালীন বিচারক এস এম জিয়াউর রহমান। সাড়ে চার বছর বিচারকাজ চলার পর রায় ঘোষণার জন্য ২০২০ সালের ২৭ অক্টোবর তারিখ ধার্য করা হয়। কিন্তু, তখন চার্জ গঠনে কিছু ত্রুটি ধরা পড়ে। পরে মামলাটি রায় থেকে উত্তোলন করে পুনরায় চার্জ গঠন করা হয়। এরইমধ্যে মামলাটি ওই আদালত থেকে ১২তম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে বদলি করা হয়। এরপর আর তেমন অগ্রগতি নেই এ মামলার বিচারকাজে।
গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এ মামলায় চার আসামি কারাগার থেকে মুক্ত হয়েছেন। সর্বশেষ গত ১২ জানুয়ারি মামলাটির ধার্য তারিখ ছিল। ওইদিন শুনানির তারিখ পিছিয়ে ৮ এপ্রিল পরবর্তী তারিখ ধার্য করেন বিচারক আব্দুল্লাহ আল মামুন।
মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে ওয়াশিকুর রহমান বাবুর বাবা টিপু সুলতান বলেন, “ছোটবেলায় ছেলে-মেয়েকে ফেলে তার মা চলে যায়। কোলে-পিঠে করে ওদের বড় করেছি। ওয়াশিকুরকে ঢাকায় কলেজে ভর্তি করি, যেন মানুষের মতো মানুষ হয়। সেই ছেলেটাকে খুন করল। ১০ বছর হয়ে গেছে। বিচার পেলাম না। বয়সও হয়েছে। মৃত্যুর আগে যেন ছেলের হত্যাকারীদের বিচার দেখে যেতে পারি। বিচার হলে কিছুটা শান্তি পাব।”
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী বলেছেন, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার এসব মামলার বিচারে যত্ন নেয়নি৷ তারা মিথ্যা রাজনৈতিক মামলা নিয়েই ব্যস্ত ছিল। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এসব মামলার বিচার নিশ্চিতে কাজ করছে৷ ইতোমধ্যে মামলার তালিকা করা হয়েছে। আশা করছি, দ্রুত এ মামলার বিচারকাজ শেষ হবে৷
সংশ্লিষ্ট আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মরিয়াম লাকি বলেন, “আমাদের স্যার যথেষ্ট আন্তরিক মামলা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে। তিনি কোনো মামলা ঝুলিয়ে রাখার পক্ষে না। সাক্ষী হাজির করে মামলার বিচার শেষ করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।”
২০১৫ সালের ৩০ মার্চ রাজধানীর তেজগাঁওয়ের বেগুনবাড়ীর দিপীকা মোড়ে ওয়াশিকুর রহমান বাবুকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। পালানোর সময় দুই হামলাকারীকে আটক করে তৃতীয় লিঙ্গের লোকজন ও এলাকাবাসী। তখন পুলিশ জানিয়েছিল, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগে ওয়াশিকুর রহমান বাবুকে হত্যা করার কথা বলেছে আটককৃত দুই জন। ওয়াশিকুর রহমানের লেখালিখির অন্যতম বিষয় ছিল—ইসলামসহ নানা ধর্মের সমালোচনা। তার বিভিন্ন মন্তব্য নিয়ে তুমুল বিতর্ক হতো।
ওয়াশিকুর রহমান বাবুকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় তার ভগ্নিপতি মনির হোসেন মাসুদ বাদী হয়ে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় একটি মামলা করেন।
২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক মশিউর রহমান। চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন—জিকরুল্লাহ ওরফে হাসান, আরিফুল ইসলাম ওরফে মুশফিক ওরফে এরফান, সাইফুল ইসলাম ওরফে মানসুর, মাওলানা জুনায়েদ আহম্মেদ ওরফে তাহের ও সাইফুল ইসলাম। আসামিদের মধ্যে জুনায়েদ আহম্মেদ মামলার শুরু থেকে পলাতক। অপর আসামিরা জামিনে আছেন।
আসামি জিকরুল্লাহ ও আরিফের আইনজীবী আব্দুর রশীদ মোল্লা বলেছেন, “তারা ঘটনাস্থলে ছিল না। এ হত্যাকাণ্ডের আগেই দুই মাদ্রাসা ছাত্রকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ এ মামলায় প্রতিটি পদে পদে ভুল হয়েছে। আমরা প্রত্যাশা করছি, বিচার প্রক্রিয়া শেষে তারা খালাস পাবেন।”
ওয়াশিকুর রহমান বাবু রাজধানীর মতিঝিলে ফারইস্ট অ্যাভিয়েশন নামের একটি ট্রাভেল এজেন্সিতে ট্রেইনি অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি বাবার সঙ্গে বেগুনবাড়ীর ৪/৩-এ ভবনের দ্বিতীয় তলায় একটি কক্ষে সাবলেট থাকতেন। তাদের গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপেজলার উত্তর হাজীপুরে।
মামলার বাদী ওয়াশিকুর রহমানের ভগ্নিপতি মনির হোসেন মাসুদ ফ্রান্স প্রবাসী বলে জানিয়েছেন টিপু সুলতান। তিনি আদালতে সাক্ষ্য দেননি।
ঢাকা/রফিক
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ২০১৫ স ল র ল ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য হটলাইন চালুর ঘোষণা পুলিশের
বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জরুরি যোগাযোগের জন্য হটলাইন সেবা চালুর ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। সোমবার পুলিশ সদর দপ্তরে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুনের উপস্থিতিতে এক অনুষ্ঠানে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। হটলাইন নম্বরে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে নিরাপত্তাজনিত যেকোনো সমস্যা তাৎক্ষণিকভাবে জানানো এবং দ্রুত সহায়তা পাওয়ার সুযোগ তৈরি হলো।
সম্প্রতি গাজায় হামলা নিয়ে বিক্ষোভের সময় বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ছয়টি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন আইজিপি ও বিডা চেয়ারম্যান। বৈঠকে অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ছিল– নেসলে বাংলাদেশ, কোকা-কোলা বাংলাদেশ বেভারেজেস, ইউনিলিভার বাংলাদেশ, বাটা সু কোম্পানি বাংলাদেশ, রেকিট বেনকিজার বাংলাদেশ, পেপসিকো ও জুবিল্যান্ট ফুড ওয়ার্কস বাংলাদেশ।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ৭ ও ৮ এপ্রিল দেশের বিভিন্ন শহরে এসব কোম্পানির কার্যালয়ে ভাঙচুর চালানো হয়। এ ঘটনায় অন্তত ১৪০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং প্রায় এক ডজন মামলা হয়েছে।
বৈঠকে বিডা চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বলেন, ‘আইজিপি, জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা ও বিডার কর্মকর্তাদের একসঙ্গে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বসা শুধু সময়োপযোগী নয়, নজিরবিহীন। এটি কেবল একটি সৌজন্য সাক্ষাৎ নয়। এটি এক ধরনের বার্তা যে বাংলাদেশ বিনিয়োগকারীদের পাশে আছে, বিশেষ করে যখন চ্যালেঞ্জ আসে।’
তিনি বলেন, এই প্রতিষ্ঠানগুলো হাজার হাজার কর্মজীবী ও তাদের পরিবারের জীবিকার উৎস। প্রতিবাদের অধিকার আছে, কিন্তু যে প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মসংস্থান, স্থিতিশীলতা ও প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করে, সেগুলো ধ্বংস করা কোনো সমাধান নয়। পুলিশের তাৎক্ষণিক সাড়া ও দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করেন বিডা চেয়ারম্যান।
প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিরা ভাঙচুর, ক্ষয়ক্ষতি ও কার্যক্রমে বিঘ্ন নিয়ে সরাসরি অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। আইজিপি বাহারুল আলম বিনিয়োগকারীদের পূর্ণ সহায়তার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, ‘আমরা কেবল প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য এখানে আসিনি, বরং আস্থা গড়ে তুলতে এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা যেন না ঘটে, তা নিশ্চিত করতেই এসেছি।’
এ আলোচনার ফলে বিডা, পুলিশ ও ব্যবসায়িক সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে একটি প্রতিরোধ পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নতুন নিরাপত্তা প্রটোকল, দ্রুত সাড়া দেওয়া ইউনিট এবং সংকটকালে উন্নত যোগাযোগ চ্যানেল।