আকস্মিক ঘন কুয়াশায় পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ফেরি ও লঞ্চ চলাচল এক ঘণ্টা বিঘ্নিত
Published: 30th, March 2025 GMT
ঘন কুয়াশার কারণে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ও রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া নৌপথে চলাচল কিছুটা বিঘ্নিত হচ্ছে। আজ রোববার সকালে প্রায় এক ঘণ্টা ফেরি ও লঞ্চ বন্ধ ছিল। এতে ঈদযাত্রায় পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বেড়ে যায়। তবে কুয়াশা কেটে যাওয়ার পর চলাচল শুরু হওয়ার পর পর্যাপ্তসংখ্যক ফেরি থাকায় অনেকটা ভোগান্তি ছাড়াই যাত্রীরা নৌপথ পারাপার হচ্ছেন।
এদিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কেও যানবাহনের কিছুটা চাপ থাকলেও স্বাভাবিক গতিতেই যানবাহনগুলোকে চলাচল করতে দেখা গেছে। তবে বাস স্টপেজগুলোতে যাত্রী ওঠানামা করানোর কারণে সাময়িক জটের সৃষ্টি হলেও দীর্ঘ সময়ের যানজটের সৃষ্টি হয়নি।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের আরিচা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আজ ভোরে আকস্মিকভাবে কুয়াশা পড়তে থাকে। একপর্যায়ে কুয়াশার তীব্রতা বেড়ে গেলে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ফেরি ও লঞ্চ চলাচলে বিঘ্নিত হয়। এতে সকাল সোয়া ছয়টার দিকে ফেরি ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকে। এ সময় পদ্মা নদীর মাঝে এ নৌপথে তিনটি ফেরি নোঙর করে থাকে। পারাপার বন্ধ থাকায় ঘাট এলাকায় যাত্রী ও যানবাহনের সংখ্যা বাড়তে থাকে। প্রায় এক ঘণ্টা পর সকাল সোয়া সাতটার দিকে কুয়াশা কেটে গেলে ফেরি ও লঞ্চ চলাচল শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে ঘাটের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে থাকে।
বিআইডব্লিউটিএ-এর আরিচা কার্যালয়ের বন্দর কর্মকর্তা মো.
ঘাটসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পাটুরিয়া ফেরিঘাট এলাকায় দূরপাল্লার যানবাহন ও যাত্রীর কিছুটা চাপ রয়েছে। ঢাকার গাবতলী, নবীনগরসহ আশপাশের এলাকা থেকে এসব যানবাহন যাত্রী নিয়ে পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় আসছে। অল্প সময়ের মধ্যেই এসব যাত্রীবাহী এসব যানবাহন ফেরিতে উঠে নদী পারাপার হচ্ছে।
এদিকে ঢাকা, গাজীপুরসহ আশপাশের লোকাল বাসে করে পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় আসছেন ঈদে ঘরমুখী যাত্রীরা। যাত্রীদের অধিকাংশই বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিক। পাটুরিয়ার পুরোনো ট্রাক টার্মিনাল এলাকায় লোকাল বাস থেকে নেমে এসব যাত্রী হেঁটে, রিকশায়, ইজিবাইকে করে লঞ্চঘাটে আসছেন। এরপর টিকিট কেটে লঞ্চে উঠে পড়ছেন তাঁরা।
বিআইডব্লিউটিসির আরিচা কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মো. সালাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, রোববার ভোর থেকে ঈদযাত্রায় ঘাট এলাকায় যাত্রী ও যানবাহন কিছুটা বেড়ে যায়। ঘন কুয়াশার কারণে ফেরি বন্ধ থাকায় যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বেড়ে যায়। তবে ফেরি চালু হওয়ার পর এই চাপ স্বাভাবিক হয়ে আসে। ঘাটে যাত্রী ও যানবাহনের কিছুটা চাপ থাকলেও পর্যাপ্তসংখ্যক ফেরি থাকায় ভোগান্তি ছাড়াই যাত্রীরা নৌপথ পারাপার হচ্ছেন।
আরও পড়ুনচিরচেনা রূপে ফিরেছে লঞ্চের ঈদযাত্রা, বরিশাল বন্দর যাত্রীদের পদচারণে মুখর১৯ ঘণ্টা আগেউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ঘ ট এল ক য় দ লতদ য় এসব য
এছাড়াও পড়ুন:
ঈদের আগের রাতে নদী পথে বাড়ি ফিরছে মানুষ
বাংলাদেশের আকাশে শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেছে। রাত পোহাইলে পবিত্র ঈদুল ফিতর। ঈদের খুশি ছড়িয়ে পড়েছে দেশে। অবশ্য তার মধ্যেই শেষ মুহূর্তে বাড়ি ফিরছে বহু মানুষ। ঢাকার সদরঘাটে দেখা গেছে ঘরমুখো মানুষের চাপ।
সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে রবিবার বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন রুটে যাত্রীবোঝাই করে লঞ্চ ছাড়তে দেখা গেছে।
এদিন সন্ধ্যায় সদরঘাটে গিয়ে দেখা ঘুরমুখো মানুষের ভিড়; সেই চিরচেনা দৃশ্য। ঈদের আগের আগে পন্টুন থেকে ঘাটে ভেড়া লঞ্চ সর্বত্রই যাত্রী।
আরো পড়ুন:
ঈদের চাঁদ উৎসব
রংপুরের প্রধান ঈদের জামাত সকাল সাড়ে ৮টায়
লঞ্চ টার্মিনালে দেখা গেল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থায় রয়েছেন। ঈদদযাত্রার শুরু থেকে এবার সেখানে শৃঙ্খলাজনিত সমস্যার কথা শোনা যায়নি।
ঘাটে ভেড়া প্রতিটি লঞ্চের প্রবেশমুখে দেখা গেছে চার-পাঁচজন করে আনসার সদস্যকে। তারা যাত্রীদের ওঠা নির্বিঘ্ন করতে কাজ করছেন, সেই সঙ্গে হুড়োহুড়ি যাতে না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখছেন।
নৌ পথে ঈদযাত্রা নিয়ে সতর্ক বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। সংস্থাটি জানিয়েছে, অতিরিক্ত ভাড়া কিংবা বাড়তি যাত্রী নিলেই লাইসেন্স বাতিল করার হুঁশিয়ারি দিয়ে রাখা হয়েছে।
রবিবার সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ৪৮টি যাত্রীবাহী লঞ্চ সদরঘাট টার্মিনাল ছেড়ে গেছে। দুপুরের মধ্যে বেশকিছু লঞ্চ যাত্রী নিয়ে নিজ নিজ গন্তব্যে পৌঁছেও গেছে।
পন্টুনে নোঙর করা লঞ্চগুলোর সামনে কর্মচারীরা যাত্রীদের আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন সুবিধার কথা ঘোষণা করছেন। দেখা গেল, লঞ্চের ডেকে যাত্রীরা বসে আছেন। আগেই বুকিং করা কেবিনগুলোতে যাত্রীরা উঠে বসেছেন। নির্দিষ্ট সময়েই লঞ্চগুলো ছেড়ে যেতে দেখা গেল।
পারাবত-৭ লঞ্চের সামনে কথা হয় ওবায়দুল হক নামে এক যাত্রীর সঙ্গে। তিনি বলেন, “লঞ্চে বাড়ি যাচ্ছি বৃদ্ধ মা-বাবাকে নিয়ে। গ্রামের বাড়িতে ঈদ করব। আমাদের কেবিন বুকিং করা ছিল। বাবা-মাকে নিয়ে প্রতিবছরই লঞ্চে বরিশালে গ্রামের বাড়িতে যাই। রাত ৯টায় ছেড়ে ভোর ৫টায় পৌছে দেয়। কোন কষ্ট নাই। ক্লান্তিহীন যাত্রা তাই নদী পথে বাড়ি যাচ্ছি।”
রবিবার সন্ধ্যার আগে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের অবস্থা। ছবি: রাইজিংবিডি
পটুয়াখালীগামী এমভি সুন্দরবন-৯ লঞ্চে কথা হয় হাসান মাহমুদ রিপনের সঙ্গে। তিনি বলেন, “এই তো সেদিনের কথা। ঈদের সময় লঞ্চে জায়গা পাওয়া যেত না। অনেক সময় ছাদে ঝুঁকি নিয়ে যেতে হতো। আজ আগের মতো ভিড় না থাকলেও যাত্রীর চাপ আছে। লঞ্চ বলা হলেও এটা তিনতলা জাহাজ। হাজার হাজার লোক উঠলেও বোঝা যায় না। ডেকে শুয়ে-বসে যাওয়া যায়। এ কারণে লঞ্চে আমি বাড়ি যাই।”
এমভি পারাবাত-৭ লঞ্চের সুপারভাইজার মনির হোসেন বলেন, “আমাদের লঞ্চে ৯০টি কেবিন আছে। এরই মধ্যে সব বুকিং হয়ে গেছে। যাত্রীর চাপ ভালোই আছে।”
অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল সংস্থার সদস্য ও এমভি অভিযান লঞ্চের মালিক হামজা লাল শেখ বলেন, “আজ (সোমবার) যাত্রীর চাপ মোটামুটি। ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে পর্যাপ্ত লঞ্চ প্রস্তুত রাখা হয়েছে।”
মের্সাস সুরভি শিপিং লাইনস কোম্পানির পরিচালক রেজিন উল কবির বলেন, “ঢাকা সদরঘাট থেকে বরিশাল রুটে ২৬টি লঞ্চ তিন ভাগ করে ঈদে বিশেষ সার্ভিস পরিচালনা করছে। বরিশাল ও ঢাকার কাউন্টার থেকে টিকিট সংগ্রহের ব্যবস্থা রয়েছে।”
বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের ঢাকা নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক মোবারক হোসেন বলেন, “নৌপথে চলাচলকারী যাত্রীদের সেবা ও নিরাপত্তার জন্য বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তা–কর্মচারীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা দিনরাত কাজ করছেন। নির্ধারিত সময়ে পন্টুন থেকে লঞ্চ ছাড়ছে। এ ব্যাপারে সার্বক্ষণিক তদারকি করা হচ্ছে।”
পদ্মা সেতু হওয়ার পরও দক্ষিণাঞ্চলের একাংশের মানুষ লঞ্চে যাতায়াত করে থাকে। তবে এখন আগের মতো তেমন ভিড় নেই। যাত্রী কম, লঞ্চও কম। তবে এখন যে পরিমাণ যাত্রী আছে, তাদের জন্য সুন্দর ব্যবস্থাপনা দেখা গেছে সদরঘাটে।
বিআইডব্লিটিসির তথ্য অনুযায়ী, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগে ঈদযাত্রায় দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ৩৫ শতাংশ নৌপথ ব্যবহার করলেও বর্তমানে সেটি ১৫ শতাংশে এসে ঠেকেছে।
ঈদ বাদে ঢাকা থেকে আগে ৪৩টি রুটে ২২৫টির মতো লঞ্চ নিয়মিত চলাচল করত। তবে বর্তমানে দিনে ৬০ থেকে ৬৫টির মতো লঞ্চ সদরঘাটে ছেড়ে বিভিন্ন গন্তব্যে যায়। অবশ্য এবার ঈদের পর্যাপ্তসংখ্যক লঞ্চ প্রস্তুত রাখা হয়। যে কারণে ঈদের আগের দিনও যাত্রীদের তরফে সে অর্থে কোনো অভিযোগ নেই।
বরিশালগামী এমভি সুন্দরবন-৯ লঞ্চের যাত্রী আফসানা মিম বলেন, “পদ্মা সেতু চালুর পরও আমাদের বরিশালের মানুষ ঈদে পরিবার-পরিজন নিয়ে লঞ্চে যেতে পছন্দ করে। এই সময় বাসে ভাড়া বেশি থাকে। তাই বেশিরভাগ মানুষ স্বস্তির যাত্রার জন্য সড়ক ছেড়ে নৌপথ বেছে নেয়। আমি সবসময়ই লঞ্চে যাওয়া-আসা করি। লঞ্চের মতো শান্তির যাত্রা আমার কাছে আর কিছুতেই হয় না।”
ভোলাগামী এমভি কর্ণফুলী লঞ্চের যাত্রী তানজিল চৌধুরী বলেন, “আমাদের ভোলায় যাওয়ার জন্য একমাত্র পথ হল নৌপথ। লঞ্চগুলোও খুব আরামদায়ক। এবারের যাত্রাটা আমার কাছে অন্যবারের তুলনায় একটু ব্যতীক্রম মনে হলো। আগে এই শেষ সময়ে এসে বাড়িতে ফিরতে হলে আমাদের বাড়তি ভাড়া গুনতে হতো। কিন্তু এবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় লঞ্চ মালিকরা বেশি সুবিধা করতে পারছে না।”
“লঞ্চের ধারণ ক্ষমতার বেশি যাত্রীও তারা নিতে পারছে না। ফলে সাধারণ যাত্রীরা নির্বিঘ্নে, স্বাচ্ছন্দ্যে ঈদযাত্রা করছে। এজন্য অবশ্য সরকার ধন্যবাদ পেতে পারে,” বলেন তানজিল চৌধুরী।
ঢাকা/রাসেল