ধান-চালের দাম বাড়ার পেছনে যত কারণ
Published: 30th, March 2025 GMT
বাজারে এখন সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হচ্ছে চাল। দফায় দফায় বেড়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন খুচরা বাজারে মধ্যবিত্তের চাল হিসেবে পরিচিত মিনিকেট চাল ৮৫ থেকে ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। আর কাটারিভোগ ও জিরাশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা পর্যন্ত। ফলে বেড়ে গেছে নিত্যদিনের বাজার খরচ, কষ্টে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
ধান-চাল উৎপাদনে প্রসিদ্ধ জেলা হিসেবে পরিচিত নওগাঁ। এই জেলায় চালের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, সরু ধানের সরবরাহ কমে যাওয়া, সরু চালের সরবরাহের তুলনায় চাহিদা বেশি থাকা, চালের বাজারে করপোরেট কোম্পানি ও গুটিকয় বড় মিল কোম্পানি একচ্ছত্র আধিপত্য এবং অবৈধ মজুতদার গোষ্ঠী ধান-চালের ব্যবসায় যুক্ত হয়ে ধান-চাল কিনে মজুত করায় দাম বাড়ছে।
চালকলমালিকেরা বাজারে ওঠা ধানের এক-তৃতীয়াংশ কিনলেও বাকি অংশ এই মজুতদার গোষ্ঠী কিনে থাকে। এদের অনেকেরই ফুড গ্রেইন লাইসেন্স নেই।শেখ ফরিদ, অটোমেটিক রাইস মিলের মালিকনওগাঁর সুলতানপুর এলাকায় অবস্থিত ফারিহা অটোমেটিক রাইস মিলের মালিক শেখ ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘চালকলমালিকেরা বাজারে ওঠা ধানের এক-তৃতীয়াংশ কিনলেও বাকি অংশ এই মজুতদার গোষ্ঠী কিনে থাকে। এদের অনেকেরই ফুড গ্রেইন লাইসেন্স নেই। এরা অন্য খাত থেকে টাকা এনে ধান-চাল মজুতের ব্যবসা করছে। এদের কারণে আমাদের মতো ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা পথে বসে গেছি। এদের কাছে থাকা প্রচুর অলস টাকা কাজে লাগিয়ে এরা মৌসুমের সময় কম দামে ধান কিনে মজুত করে রাখে। বাজারে ধানের সরবরাহ কমে গেলে এরা মিলারদের কাছে বেশি দামে ধান বিক্রি করে।’
আমন ও বোরোর ভরা মৌসুমে এই জেলায় প্রায় ৮০০ মিল সচল থাকে। তবে বাজারে ধানের সরবরাহ কম থাকায় বর্তমানে ৩৯৪টি চালকল সচল আছে। এর মধ্যে ৭৯টি অটোমেটিক রাইস মিল ও ৩১৫টি হাসকিং মিল চাল উৎপাদন করছে। দেশের অন্যতম বড় এই মোকামে চালের দাম বাড়লে কিংবা কমলে সারা দেশের বাজারে প্রভাব পড়ে।
নওগাঁর কারখানায় উৎপাদিত চালের মধ্যে ডায়মন্ড, নবান্ন ও রজনীগন্ধা ব্র্যান্ডের চাল সারা দেশে বেশ জনপ্রিয়। এসব ব্র্যান্ডের মিনিকেট, জিরাশাইল ও কাটারিভোগ চাল মিলগেটে বর্তমানে ৭৮ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। দুই থেকে তিন সপ্তাহে আগে এসব ব্র্যান্ডের চাল মিলগেটে বিক্রি হয়েছে ৭২ থেকে ৭৫ টাকা কেজি দরে। এ ছাড়া অন্যান্য অটোমেটিক ও হাসকিং মিলে উৎপাদিত জিরাশাইল ও কাটারিভোগ চালের দামও কেজিতে ৩ থেকে ৫ টাকা বেড়ে বর্তমানে ৭৫ থেকে ৭৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মিলমালিকদের দাবি, সরবরাহের তুলনায় চাহিদা বেশি থাকায় গত বোরো মৌসুমে উৎপাদিত প্রতি মণ জিরাশাইল ও কাটারিভোগ ধান ১ হাজার ৯০০ থেকে ২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মৌসুমের সময় এই সব ধানের দাম ছিল সর্বোচ্চ ১ হাজার ৫০০ টাকা। ধানের দাম বাড়ার কারণে চালের দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা।
মিলারদের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, ৬০ কেজি জিরা কিংবা কাটারিভোগ ধান ভাঙালে সাড়ে ৩৮ থেকে ৩৯ কেজি চাল পাওয়া যায়। সেই হিসাবে বর্তমান বাজারদর ও ক্র্যাশিং খরচ অনুযায়ী, প্রতি কেজি জিরাশাইল ও কাটারি জাতের চাল উৎপাদন খরচ বর্তমানে প্রায় ৭৫ টাকা। স্থানীয় বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে বাজারে বোরো মৌসুমে উৎপাদিত জিরা ও কাটারি জাতীয় ধানের সরবরাহ নেই। বোরো মৌসুমের শুরুতে চালকলমালিক ও মজুতদারেরা কম দামে বিপুল পরিমাণ ধান সংগ্রহ করে রেখেছেন। মৌসুমের সময় কম দামে কেনা ধান ভেঙে চাল উৎপাদন করে এখন তাঁরা বেশি দামে বিক্রি করছেন।
ছাতড়া বাজারের ধান আড়তদার শীষ মোহাম্মদ বলেন, ‘আমরা ছোটখাটো আড়তদার রানিং ব্যবসা করি। কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনে জড়ো করে একসঙ্গে মিলারদের কাছে কিছু লাভ দিয়ে বিক্রি করি। অনেক সময় লোকসানও গুনতে হয়। তবে মজুতদার যারা আছে, তাদের কখনো লোকসান নেই। এরা দিনের পর দিন ধান মজুত করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে।’
আড়তদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এসব বাজারে এক মাস ধরে বোরো মৌসুমে উৎপাদিত জিরাশাইল ও কাটারিভোগ ধানের সরবরাহ নেই। বর্তমানে বাজারে আমন মৌসুমে উৎপাদিত গুটি স্বর্ণা ও স্বর্ণা-৫ এবং চিনি আতপ ধানের সরবরাহ রয়েছে।
নওগাঁ জেলা চালকলমালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বলেন, ‘মিলারদের বিরুদ্ধে অবৈধ মজুতদারির অভিযোগের সব ক্ষেত্রে সত্যতা নেই। কোনো কোনো মিলে দিনে ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার মণ চাল উৎপাদনের ক্ষমতা থাকে। আবার কোনো মিলে ২ হাজার থেকে ৩ হাজার মণ উৎপাদন ক্ষমতা। মিলিং ক্যাপাসিটির ২ গুন ধান ও তিন গুণ চাল মজুত রাখা বিধিসম্মত। এখন কেউ যদি মিলিং ক্যাপাসিটির বাইরে ধান-চাল মজুত করে থাকে, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব সরকারের। শুধু মিলাররা নয়, ফুড গ্রেইন লাইসেন্স ছাড়া ধান-চাল মজুতের ব্যবসা করছেন, এমন অনেক ব্যবসায়ী আছেন। তাঁদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে। শুধু মিলারদের দায়ী করলে অন্যায় হবে।’
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল আউয়াল বলেন, সম্প্রতি নওগাঁর একটি মিলে অবৈধভাবে ধান ও চাল মজুত রাখার দায়ে এক মিলমালিকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে এবং তাঁর গুদাম সিলগালা করা হয়েছে। কারও বিরুদ্ধে অবৈধ মজুত গড়ে তোলার প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ধ ন র সরবর হ উৎপ দ ত
এছাড়াও পড়ুন:
বে ডেভেলপমেন্টস ও আনোয়ার গ্রুপের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর
দেশের শীর্ষস্থানীয় নির্মাণসামগ্রী প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান আনোয়ার গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ এবং রিয়েল এস্টেট খাতের অন্যতম স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান বে ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের মধ্যে একটি কৌশলগত সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। বে ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের করপোরেট অফিসে গত মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) এ সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
এই কৌশলগত অংশীদারত্বের আওতায় আনোয়ার গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ তাদের নির্মাণসামগ্রী বিভাগ থেকে বে ডেভেলপমেন্টস লিমিটেডের কাছে কঠোর মানদণ্ড অনুযায়ী উচ্চমানের নির্মাণসামগ্রী সরবরাহ করবে।
বে ডেভেলপমেন্টস তাদের উচ্চমানের আবাসিক প্রকল্পের মাধ্যমে বিলাসবহুল ও আধুনিক জীবনযাত্রার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, সেটি পূরণে আনোয়ার গ্রুপের পণ্যের গুণমান, উদ্ভাবন এবং উৎকর্ষ ভূমিকা রাখবে।
এ অংশীদারত্ব শুধু মানসম্পন্ন নির্মাণসামগ্রী সরবরাহের চেয়ে বেশি কিছু। এটি উভয় প্রতিষ্ঠানের উচ্চমানের রিয়েল এস্টেট খাতে টেকসই উন্নয়নের প্রতি অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি এবং মূল্যবোধ ও উচ্চাকাঙ্ক্ষার কৌশলগত সমন্বয়ের প্রতিফলন।
এ অংশীদারত্বের মাধ্যমে উভয় প্রতিষ্ঠান উন্নত গুণমান, উদ্ভাবনী সমাধান ও টেকসই নির্মাণব্যবস্থা বজায় রাখার লক্ষ্যে একত্রে কাজ করবে। বিলাসবহুল ও আধুনিক জীবনযাত্রার মান তৈরিতে এ দুই গ্রুপের অংশীদারত্ব আবাসন শিল্পে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।
চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেন আনোয়ার গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ওয়াইজ আর হোসেন এবং বে ডেভেলপমেন্টস লিমিটেডের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মুস্তফা হাসান।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বে ডেভেলপমেন্টস লিমিটেডের ভাইস প্রেসিডেন্ট জি এম শিফাতুর রহমান, সহকারী ভাইস প্রেসিডেন্ট এ এন এম তাওহিদুজ্জামান এবং আনোয়ার গ্রুপের নির্মাণসামগ্রী বিভাগের করপোরেট সেলস প্রধান দিবাকর বিশ্বাস, হেড অব মার্কেটিং মো. ফাহিম হোসেনসহ উভয় প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা।
এ অংশীদারত্ব শুধু পণ্যের গুণমান রক্ষায় নয়, বরং দেশের রিয়েল এস্টেট খাতের টেকসই উন্নয়ন ও ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধির পথকে আরও সুদৃঢ় করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।