ঈদ ও ফিতর দুটিই আরবি শব্দ। ‘ঈদ’ অর্থ উৎসব বা আনন্দ। ‘ফিতর’ অর্থ বিদীর্ণ করা, উপবাস ভঙ্গ করা, স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাওয়া। পবিত্র রমজানে মাসব্যাপী সিয়াম সাধনা ও সংযম পালনের পর হিজরি শাওয়াল মাসের ১ তারিখে মুসলমানদের স্বাভাবিক কর্মজীবনে ফিরে যাওয়ার দিনটি ঈদুল ফিতর নামে অভিহিত। রমজান মাসের নতুন চাঁদ দেখে যেমন সিয়াম সাধনা বা রোজা রাখা শুরু হয় তেমনি শাওয়াল মাসের নতুন চাঁদ দেখে রোজা ভঙ্গ করা হয়।
ঈদের পরিভাষাগত অর্থ
আরবদের কাছে ঈদ বলা হয় এমন সময়কে, যে সময় আনন্দ ও দুঃখ ফিরে আসে। (লিসানুল আরব, ইবনে মুনজির: ৬/৫১০)
আল মুনজিদ অভিধানে বলা হয়েছে, ঈদ এমন দিনকে বলা হয়, যাতে লোকজনের সমাগম হয় বা কোনো সম্মানিত ব্যক্তি অথবা গুরুত্বপূর্ণ কোনো ঘটনার স্মৃতিচারণা করা হয়। (আল মুনজিদ পৃ.
মুসলমানরা বছরে যে দুটি দিবসকে আনন্দ ও উৎসবের দিবস হিসেবে পালন করে থাকে, তাকে ঈদ বলা হয়। (আনওয়ারুল মিশকাত: ৩/৬০৫)
ঈদকে ঈদ বলে নাম করার কারণ হলো, তা প্রত্যেক বছরে ফিরে আসে, আর তার মূল রূপ হলো আওদ, যার অর্থ ফিরে আসা। (মেরকাত শরহে মেশকাত: ৩/৪৭৭)
আরও পড়ুনঈদ যেভাবে এল১১ এপ্রিল ২০২৪ঈদ কেন পালন করা হয়
মূলত পুরো এক মাস রোজা রাখা ও তারাবি পড়ার পর ঈদের দিন আল্লাহ রোজাদারদের তাদের সওয়াব ও পুরস্কার দান করেন। জাহান্নামিদের তালিকা থেকে তাদের নাম মুছে দেন। তাই রোজাদাররা খুশি হয়ে শুকরিয়াস্বরূপ দান-সদকা করে এবং ঈদের নামাজ আদায় করে।
এই নামাজকে নবীজি (সা.) এতটাই গুরুত্ব দিতেন যে, ইসলামের শুরু যুগে নারী ও শিশুদেরও ঈদগাহে নিয়ে যাওয়া হতো।
এ দিনের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে জামাতে ঈদের নামাজ আদায়, গরিব-দুঃখীদের মধ্যে ফিতরা বিতরণ এবং ভালো খাওয়াদাওয়ার আয়োজন করা। তবে ঈদুল ফিতর উৎসবের একটি তাৎপর্যময় অঙ্গ হলো ফিতরা বিতরণ। রোজার সময় সংযম সাধনায় কোনো ত্রুটিবিচ্যুতি ঘটে থাকলে তা সংশোধন এবং সমাজের সর্বস্তরের লোক যাতে উৎসবে অংশগ্রহণ করতে পারে, সে জন্য গরিব-দুঃখীদের মধ্যে একটা নির্দিষ্ট হারে সদকায়ে ফিতরা বিতরণ করতে হয়। প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমানের জন্য ফিতরা প্রদান করা ওয়াজিব। নিয়ম হলো, ঈদের নামাজ পড়তে যাওয়ার আগে এই ফিতরা পরিশোধ করা।
আরও পড়ুনইসলামে যেভাবে রোজা এল১৪ মার্চ ২০২৫তারপর ঈদগাহ কিংবা তার অভাবে বড় মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করতে হয়। ঈদুল ফিতরের নামাজে অতিরিক্ত ছয় তকবিরসহ দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ পড়তে হয়। নামাজের শেষে ইমাম সাহেব পর পর দুটি খুতবা পাঠ করেন। নামাজ শেষে মুসলমানরা পদমর্যাদা ও বয়সনির্বিশেষে পরস্পরের সঙ্গে কোলাকুলি, সালাম ও কুশল বিনিময় করে।
এ ছাড়া এদিন আত্মীয়স্বজন ও পুণ্যবানদের কবরও জিয়ারত করা হয় এবং গরিবদের সাধ্যমতো খাদ্য, বস্ত্র ইত্যাদিও দান করা হয়।
আরও পড়ুনফিতরা কীভাবে হিসাব করব১১ মার্চ ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ঈদ র ন ম জ ম সলম ন
এছাড়াও পড়ুন:
তারেক রহমানের ঈদ শুভেচ্ছা, চাইলেন স্বৈরাচারের বিচারও
দেশবাসীকে পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। একই সঙ্গে ‘পলাতক স্বৈরাচার’ এবং তাদের দোসরদের বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেশে আইন ও ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠা করাকে এবারের ঈদের অঙ্গীকার হিসেবে বর্ণনা করেছেন তিনি।
যুক্তরাজ্যের লন্ডনে রয়েছেন তারেক রহমান। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও সেখান পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করবেন।
লন্ডন থেকে বাংলাদেশসহ বিশ্বের মুসলিম উম্মাহর সুখ, শান্তি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির জন্য দোয়া কামনা করেছেন তারেক রহমান।
আরো পড়ুন:
সারজিসের ১০০ গাড়ি নিয়ে ‘শোডাউন’, যা বললেন ফখরুল
দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র চলছে: মির্জা ফখরুল
রবিবার ঈদের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর দেশবাসীর সঙ্গে সেই খুশি ভাগাভাগি করে নেন তারেক রহমান। একইসঙ্গে জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ ও জুলাই যোদ্ধাদের বিষয়ে তার মনঃকষ্ট ব্যক্ত করে বিবৃতি দিয়েছেন তিনি।
রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানে ‘ফ্যাসিবাদের’ পতন হওয়ায় এবার ঈদ আনন্দের উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনায় নতুন মাত্রা যোগ হওয়ার কথা তুলে ধরেছেন তারেক রহমান।
বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, “তবে মানুষের মনে পবিত্র আনন্দ-উচ্ছ্বাসের এমন এক বাধাহীন ঊর্মিমুখর সময়েও অনেক মায়েদের মনে আনন্দ নেই। অনেক পরিবারে নেই উৎসবের আমেজ। কারণ ফ্যাসিবাদের দীর্ঘ দেড় দশকের গুম, খুন, অপহরণ, জুলুম নির্যাতনে সন্তান-স্বজনহারা লাখো পরিবারে নেমে এসেছিল জাহেলিয়াতের অন্ধকার।”
তারেক রহমান বলেছেন,‘‘দীর্ঘ দেড় দশক ধরে ফ্যাসিবাদী শাসন চালাতে গিয়ে যারা মানুষের ঈদ উৎসবের আনন্দকে ধ্বংস করে দিয়েছে, যারা অস্ত্রের জোরে মায়েদের বুক থেকে তাদের প্রিয় সন্তানদের কেড়ে নিয়েছে, যারা দেশের অসংখ্য অগণিত সন্তানকে পিতৃহারা-মাতৃহারা করেছে, এই বাংলাদেশে তাদের বিচার হতেই হবে।
“যে কোনো মূল্যে পলাতক স্বৈরাচার আর তাদের দোসরদের বিচারের মুখোমুখি করার মাধ্যমে দেশে আইন ও ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠা করে সন্তানহারা মায়েদের মনে স্বজন হারা শোকসন্তপ্ত পরিবারে একটু হলেও সান্ত্বনার বার্তা দেয়া হবে। এবারের ঈদে এটাই হোক আমাদের অঙ্গীকার,” বলেন তিনি।
তারেক রহমান বলেন, “আন্দোলনে হতাহতদের পরিবারগুলোতে ঈদ উৎসবের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস নেই। ঈদের দিনেও হয়তো সন্তানহারা কোনো মায়ের চোখে অশ্রু থাকবে। এই আনন্দঘন সময়েও স্বজনদের হৃদয়ে আপনজন হারানোর নিঃশব্দ কান্না।”
“মাফিয়া চক্রের নির্মমতায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত প্রিয় মানুষটির কাছে বসেই অনেককেই ঈদ আনন্দের এই দিনটি কাটাতে হচ্ছে আশা-নিরাশা আর হতাশায়।”
বিবৃতিতে তারেক রহমান বলেন, ‘‘ঈদুল ফিতর নির্মল আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ মর্মবাণী মানবজাতির কাছে পৌঁছে যায় তা হচ্ছে ‘সকলের তরে সকলে আমরা’। এই মর্মবাণী মানসিক কদর্য, অন্যায়, অবিচার ও নিষ্ঠুর সামাজিক অসাম্যকে অতিক্রম করে এক নিবিড় ভ্রাতৃত্ববোধের প্রেরণা জাগায়।”
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।