বাড়ির উঠানে পাতা প্লাস্টিকের বস্তা ও পাটি। সংসারের কাজ সামলে সেখানে এসে বসেছেন কয়েকজন নারী। সুখ–দুঃখের গল্প করছিলেন। সঙ্গে সুই–সুতা দিয়ে নকশা তুলছিলেন টুপিতে। প্রত্যন্ত গ্রামের নারীদের বানানো এই টুপি যায় মধ্যপ্রাচ্যে। বিনিময়ে দেশে আসে কোটি কোটি টাকা।

এই দৃশ্য নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার খাজুর ইউনিয়নের মধুবন গ্রামের। উপজেলার খোসালপুর, ডাঙ্গাপাড়া, ঘোষপাড়া, কুঞ্জবন গ্রামেও একই দৃশ্যের দেখা মেলে। ব্যবসায়ীদের তথ্য, জেলার মহাদেবপুর, মান্দা, নিয়ামতপুর, বদলগাছী ও সদর উপজেলার ৮০ থেকে ৯০টি গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার নারী টুপি বানানোর কাজের সঙ্গে যুক্ত। সারা বছর টুপি সেলাইয়ের কাজ চললেও পবিত্র রমজান ও দুই ঈদ সামনে রেখে ব্যস্ততা বেড়ে যায়। টুপি বিক্রি করে বছরে প্রায় ১০০ কোটি টাকার বাণিজ্য হয়। এর মধ্যে শুধু রমজান মাসেই ৫০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়।

নওগাঁর টুপি যায় মধ্যপ্রাচ্যের ওমান, সৌদি আরব, বাহরাইন, কুয়েত ও কাতার এবং আফ্রিকা মহাদেশের তানজানিয়া ও মরক্কোতে। রপ্তানিযোগ্য এসব টুপিতে চেইন, দেওয়ান, বোতাম, গুটিদানা ও মাছকাঁটা নামে পাঁচ ধরনের সেলাই করা হয়।

এক যুগ আগে মোরশেদ নামে ফেনীর এক ব্যবসায়ী মহাদেবপুরের কুঞ্জবনে আসেন। তায়েজ উদ্দিন নামের একজনকে সঙ্গে নিয়ে তিনি কুঞ্জবন ও মধুবন গ্রামে যান। মজুরির বিনিময়ে নারীদের টুপিতে নকশা তোলার কাজে উদ্বুদ্ধ করেন। শুরুতে দুই গ্রামের ২০ থেকে ৩০ নারী টুপিতে সুই-সুতা দিয়ে নকশা তোলার কাজ করতেন। বর্তমানে এই দুই গ্রামের সব বাড়ির নারীরা টুপি তৈরির কাজের সঙ্গে যুক্ত।

আট বছর ধরে টুপি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত মধুবন গ্রামের আখতারুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘শুরুতে আমার স্ত্রী উদ্যোক্তা তায়েজ উদ্দিনের কর্মী হিসেবে টুপিতে নকশা তোলার কাজ করতেন। ২০১৫ সালের ৫০ হাজার টাকার কাপড় ও সুতা কিনে আশপাশের বিভিন্ন গ্রামের নারীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাঁদের কাজের ধরনটা বুঝিয়ে দিয়ে নকশার ছাপ দেওয়া টুপির কাপড় ও সুই-সুতা দিয়ে আসি। ১৫ থেকে ২০ দিন পর তাঁদের কাছ থেকে নকশা করা টুপিগুলো নিয়ে আসি। সাইকেল নিয়ে এই গ্রাম, ওই গ্রামে ছোটাছুটি করতাম তখন। ধীরে ধীরে ব্যবসার পরিধি বাড়তে থাকে। এখন আমার অধীনে মহাদেবপুর ও নিয়ামতপুর উপজেলার প্রায় এক হাজার নারী কাজ করেন।

কারিগরদের সঙ্গে জনে জনে যোগাযোগ রাখা কঠিন। তাই একেক অঞ্চলে একেকজন করে প্রতিনিধি নিয়োগ দেওয়া আছে। বিনিময়ে তাঁরা কমিশন হিসেবে প্রতিটি টুপির জন্য ২০ থেকে ৩০ টাকা করে পান।’

টুপি বিক্রি করে বছরে প্রায় ১০০ কোটি টাকার বাণিজ্য হয়। এর মধ্যে শুধু রমজান মাসেই ৫০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপজ ল র ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

পৃথিবীতে ফেরার ১৩ দিন পর মুখ খুললেন সুনিতা ও বুচ, যা বললেন তাঁরা

যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার নভোচারী সুনিতা উইলিয়ামস ও বুচ উইলমোর ৯ মাসের বেশি সময় পর পৃথিবীতে ফিরে প্রথমবারের মতো কথা বলেছেন। গত ১৮ মার্চ তাঁরা পৃথিবীতে ফিরে এসেছেন। এরপর গতকাল সোমবার তাঁরা দুজনেই প্রথমবারের মতো সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রকাশ্যে কথা বলেছেন।   

নাসা ও স্পেসএক্সের এই মিশনের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ক্রু-১০’। জনসন স্পেস সেন্টারে নাসা আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সুনিতা উইলিয়ামস, বুচ উইলমোর ও ক্রু–১০–এ থাকা তাঁদের সহকর্মী নিক হেগ স্টারলাইনারসহ নানা প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন।

সুনিতা উইলিয়ামস বলেছেন, ‘আমরা ফিরেই আসতাম, আমার মনে হয়, এটা মানুষের জানা উচিত। শেষমেশ আমরা ফিরেও এসেছি। এখন আমাদের এ ঘটনা সবাইকে জানাতে হবে…কারণ, এটি একটি অনন্য ঘটনা। এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিতে হবে।’

 সুনিতা স্বীকার করেছেন, স্টারলাইনারের পরীক্ষামূলক মিশনে যে আলাদা কিছু একটা হবে, তা তাঁরা জানতেন। কিন্তু তাঁদের বিষয়ে মানুষের এত প্রত্যাশা থাকবে, মানুষ এত মনোযোগ দেবে, তা তাঁরা কেউই আশা করেননি। এই যাত্রায় আগ্রহের পরিমাণ দেখে তিনি ও বুচ উইলমোর অত্যন্ত সম্মানিত এবং বিনীত বোধ করছেন। তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে গিয়ে আমরা কাজ করেছি, প্রশিক্ষণ নিয়েছি এবং আশ্চর্যজনক বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছি।’

 সুনিতা ও বুচ উভয়েই বলেছেন, স্টারলাইনার ‘খুবই সক্ষম’। বুচের মতে, সুযোগ পেলে তাঁরা ভবিষ্যতে এটি আবার ওড়াবেন।

আরও পড়ুনমহাকাশ স্টেশনে ৯ মাস আটকে থেকে পৃথিবীতে ফিরলেন বুচ ও সুনিতা১৯ মার্চ ২০২৫

বুচ বলেছেন, ‘আমরা যেসব সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি, সেগুলো ঠিক করে ফেলব। এটাকে আবার কার্যকর করে তুলব। বোয়িং ও নাসা সম্পূর্ণরূপে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা আন্তরিকতার সঙ্গে এগিয়ে যাব।’

আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে থাকাকালে রাজনীতির প্রভাব সম্পর্কে বারবার সুনিতা ও উইলমোরকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। এ প্রসঙ্গে নিক হেগ বলেছেন, ‘যখন আমরা মহাকাশে কাজ করি, তখন রাজনীতির কোনো কিছুই অনুভব করি না।’

 গত জুনে মাত্র আট দিনের এক মিশনে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে গিয়েছিলেন দুই নভোচারী বুচ ও সুনিতা। মিশন শেষে পৃথিবীতে ফেরার কথা থাকলেও মহাকাশযানের ত্রুটির কারণে আটকে যান তাঁরা। পৃথিবীতে তাঁদের ফেরানো নিয়ে রাজনীতিও শুরু হয়। ট্রাম্প এবং তাঁর উপদেষ্টা ও স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইলন মাস্ক কোনো প্রমাণ ছাড়াই দাবি করেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রাজনৈতিক কারণে বুচ ও সুনিতাকে মহাকাশ স্টেশনে ফেলে রেখেছেন।   

আরও পড়ুনদ্রুত বুড়িয়ে যাওয়াসহ সুনিতা ও বুচের শরীরে কী কী প্রভাব পড়তে পারে২০ মার্চ ২০২৫

অবশেষে তাঁদের ফিরিয়ে আনতে গত ১৪ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে ‘ক্রু-১০’নামে  একটি মিশন পাঠায় নাসা ও ধনকুবের ইলন মাস্কের মহাকাশ প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স। এই মিশনে ছিলেন নাসার নভোচারী অ্যান ম্যাকক্লেইন, নিকোল আয়েরস, জাপান মহাকাশ অনুসন্ধান সংস্থা জেএএক্সএর নভোচারী তাকুইয়া ওনিশি ও রুশ মহাকাশ সংস্থা রসকসমসের নভোচারী কিরিল পেসকভ। ‘নাসা ক্রু–৯ মিশন’–এর অংশ হিসেবে ক্রু ড্রাগনে ফিরতি যাত্রা শুরু করার ১৭ ঘণ্টা পর এই চার নভোচারী পৃথিবীর আকাশমণ্ডলে প্রবেশ করেন। বাংলাদেশ সময় ১৮ মার্চ দিবাগত রাত ৩টা ৫৭ মিনিটে তাঁদের বহনকারী ক্যাপসুলটি বিশেষ প্যারাস্যুটের সাহায্যে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা উপকূল থেকে প্রায় ৫০ মাইল দূরে সমুদ্রে নেমে আসে।

আরও পড়ুনমহাকাশে আটকে পড়া ৯ মাসে কী খেতেন সুনিতারা১৯ মার্চ ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ