আজ বাদে কাল ঈদ, তবু যে কারণে ছুটি নেননি শুঁটকিমহালের ফাতেমা
Published: 30th, March 2025 GMT
প্রচণ্ড গরমের ভেতরে দরদর করে ঘামছিলেন ফাতেমা বেগম (৫৪)। কাঁচা ছুরি মাছ পরিষ্কার করে বাঁশের মাচায় ঝুলিয়ে দিচ্ছিলেন তিনি। একানব্বইয়ের ঘূর্ণিঝড়ে কুতুবদিয়ার আলী আকবরডেইল ইউনিয়নের খুদিয়ারটেকে ঘরবাড়ি হারিয়ে পরিবারের সঙ্গে কক্সবাজার শহরের নাজিরারটেক এলাকায় বসতি শুরু করেন। সাত বছর আগে স্বামী আবু তালেবের মৃত্যু হলে সংসারের হাল ধরেন তিনি। দুই বছর আগে দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। এখন তিনি একাই থাকেন বাড়িতে।
তবুও শুঁটকিমহালে পড়ে আছেন কেন—জানতে চাইলে ফাতেমা বেগম (৪৫) বলেন, সন্তানদের সুখশান্তির জন্য রাত–দিন পরিশ্রম করছেন। বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন কুতুবদিয়ায়। ছোট মেয়ের বিয়ে হয়েছে নাজিরারটেকে। দুই মেয়ের ঘরে দুজন করে সন্তান আছে। সামনে ঈদ। মেয়ে, মেয়ের জামাই ও নাতনিদের নতুন জামাকাপড় কিনে দিতে হবে। ঈদের বাজারও করে দিতে হবে। এ জন্য দরকার ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা; কিন্তু এত টাকা হাতে নেই। তাই ছুটি না নিয়ে এখনো কাজ করছেন তিনি।
ঈদুল ফিতর দরজায় কড়া নাড়ছে। কক্সবাজারের বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ ইতিমধ্যে ঈদের কেনাকাটা সেরে ফেললেও ব্যতিক্রম শহরের সমুদ্র উপকূলবর্তী নাজিরারটেক শুঁটকিমহালের হাজারো শ্রমিক। এর মধ্যে ফাতেমার মতো দুই শতাধিক নারী বিভিন্ন মহালে শুঁটকি উৎপাদনের কাজ করছেন শুধু পরিবারের সুখশান্তির জন্য। বেশির ভাগের উদ্দেশ্য, সন্তান ও স্বজনদের ঈদের নতুন জামাকাপড় কিনে দেওয়া।
গত শুক্রবার সকালে শুঁটকিমহালে গিয়ে নারী শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে। নাজিরারটেকে শুঁটকি উৎপাদনের মহাল আছে ৭০০টির বেশি। মহালগুলোতে কাজ করেন অন্তত ৩৫ হাজার শ্রমিক। এর মধ্যে নারী শ্রমিক প্রায় ১২ হাজার। সামুদ্রিক মাছের সংকট এবং ঈদের কারণে ৭০ শতাংশ মহালে শুঁটকি উৎপাদন বন্ধ হয়েছে কয়েক দিন আগে। তবে খোলা রাখা হয়েছে ১২০টির বেশি মহাল। এসব মহালে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে শুঁটকি উৎপাদন করছেন কয়েক শ শ্রমিক।
একটি মহালে গিয়ে দেখা গেল, শুঁটকি উৎপাদনে ব্যস্ত চারজন নারী। তাঁদের একজন কুলসুমা বেগম (৪২) জানান, তাঁর ঘরে তিন ছেলেমেয়ে। সবার জন্য ঈদের নতুন জামাকাপড় দরকার। কিনতে হবে চাল, ডাল, তেল, দুধ, সেমাইসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। কিন্তু হাতে তেমন টাকা নেই। তাই শুঁটকিমহালে পড়ে আছেন। তিন-চার দিন কাজ করে দুই হাজার টাকা জোগাড় হয়েছে। এই টাকায় সবকিছু কেনা সম্ভব নয়। সন্তানদের জামাকাপড় কিনে দিতে না পারলে ঈদের আনন্দ মাটি হয়ে যাবে।
কুলসুমার বাড়ি মহেশখালীর ধলঘাটা উপকূল। দেড় বছর আগে বঙ্গোপসাগরে ট্রলারডুবিতে নিখোঁজ হন তাঁর স্বামী, এ পর্যন্ত খবর নেই। তিনি তাই সংসারে হাল ধরেছেন।
আরও কয়েকজন নারী শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুঁটকিমহালে তাঁরা কাজ করছেন পাঁচ থেকে সাত বছর ধরে। সারা দিন কাজ করে পুরুষেরা ৮০০ টাকা মজুরি গোনেন। আর নারীরা সমান কাজ করেও বেতন পান পুরুষের অর্ধেক। এই টাকায় সংসার চলে না। রোজার মাসেও তাঁরা ৩০০-৩৫০ টাকা মজুরিতে কাজ করছেন। এখন কাজ করছেন ঈদের খরচ তুলতে।
নারী শ্রমিকদের অধিকাংশের বসতি পৌরসভার ১ ও ২ নম্বর ওয়ার্ডের নাজিরারটেক, কুতুবদিয়া পাড়া, সমিতিপাড়া, ফদনারডেইল, মোস্তাইক্যা পাড়া, বাসিন্যাপাড়া, নুনিয়ারছটা, সিসিডিবি মোড়, পানিকূপ পাড়া শিল্প এলাকাতে। ঘরে ঘরে চলছে অর্থসংকট। এ পর্যন্ত কোনো পরিবারে ত্রাণসহায়তাও পৌঁছেনি।
১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আকতার কামাল বলেন, এই ওয়ার্ডে ৭০ হাজার শ্রমজীবী মানুষের বসবাস। এর ৯০ শতাংশ জলবায়ু উদ্বাস্তু। সম্প্রতি জেলা প্রশাসন, প্রথম আলো বন্ধুসভা ও কয়েকটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার উদ্যোগে পাঁচ শতাধিক জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবারকে খাদ্যসহায়তা দেওয়া হয়েছে। তবে উপকূলে এমন আরও ৮ হাজার শিশু আছে, যারা এবার ঈদে নতুন জামাকাপড় পাবে না। কিনে দেওয়ার সামর্থ্য নেই পরিবারের।
কক্সবাজার জেলা শুঁটকি ব্যবসায়ী ঐক্য সমবায় সমিতির সভাপতি জয়নাল আবেদীন বলেন, সাগরে দুই মাস ধরে মাছের নাগাল পাচ্ছেন না জেলেরা। এ কারণে চার শতাধিক মহালের শুঁটকি উৎপাদন বন্ধ রাখা হয়েছে। তাতে বিপাকে পড়েন কয়েক হাজার শুঁটকিশ্রমিক। দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে শ্রমিকেরা মহালে কাজ করেন বলে মালিকদের পক্ষ থেকে তেমন অর্থসহায়তা মেলে না। তবে ব্যক্তিগত উদ্যোগে কিছু শ্রমিককে অর্থসহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
পশ্চিম কুতুবদিয়া পাড়ার শুঁটকিশ্রমিক হামিদ উল্লাহ (৪৫) বলেন, ২০-২৫ দিন ধরে তাঁর মহালটিতে শুঁটকি উৎপাদন বন্ধ আছে। আশপাশের কোনো মহালে কাজ মিলছে না। সংসার চালাতে গত তিন দিন তিনি শহরে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক (টমটম) চালিয়েছেন; কিন্তু পর্যটক না থাকায় রোজগার করতে পারেননি। গত বৃহস্পতিবার থেকে তিনি ঘরে বেকার বসে আছেন। সংসারে স্ত্রী ও তিন ছেলেমেয়ে। নতুন জামার জন্য সন্তানেরা কান্নাকাটি করছে, কিন্তু কোনো পথ খোলা নেই। কারও কাছে গিয়ে যে হাত পাতবেন, সে সুযোগও নেই।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক জ করছ ন ন ক জ কর র জন য পর ব র
এছাড়াও পড়ুন:
ইউক্রেনে ট্রাম্পের ১০০ দিনের ব্যর্থতা
ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ফিরে আসার প্রায় ১০০ দিন পার হয়ে গেছে। কিন্তু এখনো রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ইউক্রেনের সাধারণ মানুষের ওপর আঘাত হানছে। ট্রাম্প ‘প্রথম দিনেই’ যুদ্ধ বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিলেও এখনো কোনো শান্তির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। প্রশ্ন হলো, ট্রাম্প প্রশাসন কবে স্বীকার করবে যে তারা ব্যর্থ হচ্ছে?
শুরুতে ট্রাম্পের দাবি ছিল খুব সহজ, ‘যুদ্ধ থামাও, আলোচনায় বসো।’ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে প্রথম ফোনালাপের পর তিনি বলেছিলেন, খুব দ্রুত যুদ্ধ বন্ধ হবে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও সেই সম্ভাবনাকে স্বাগত জানিয়েছিলেন।
কিন্তু এরপর যা ঘটেছে, তা হলো পুতিন ও তাঁর ক্রেমলিনের ছোট একটি দল ট্রাম্পের অনভিজ্ঞ আলোচক স্টিভ উইটকফকে এমন এক জটিল ও অসম্ভব শর্তের গোলকধাঁধায় ফেলেছেন, যেখান থেকে বেরোনো কঠিন। এত দিন ধরে এই নাটক চলার পর এমনকি সবচেয়ে বোকা আলোচকেরও বোঝার কথা, পুতিনের যুদ্ধ থামানোর কোনো ইচ্ছা নেই। তিনি ট্রাম্পের পরিকল্পনা বা সময়সূচিও মানবেন না।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে পুতিন যখন ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রায় হামলা শুরু করেন, তখন থেকেই তিনি মূলত রুশ সামরিক শক্তির ওপর ভরসা করেছিলেন, যাতে তিনি ইউক্রেনের ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারেন। প্রথমে তাঁর সেনাবাহিনীতে প্রায় দুই লাখ ভাড়াটে সৈনিক ছিলেন। এরপর তিনি কয়েক দফা আংশিক মোতায়েন এবং বিশাল আর্থিক প্রণোদনার মাধ্যমে সেনাসংখ্যা বাড়িয়ে তা প্রায় ছয় লাখে নিয়ে যান।
এই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত রাশিয়ার সাত–আট লাখ সেনা হতাহত হয়েছেন, যার মধ্যে দুই লাখের বেশি নিহত হয়েছেন। এত বড় ক্ষয়ক্ষতির পরও কথিত শক্তিশালী রুশ সেনাবাহিনী এখন ইউক্রেনের আগের চেয়ে কম ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছে। সুনির্দিষ্টভাবে বললে, মাত্র ১৮ দশমিক ৩ শতাংশ ভূখণ্ড রুশ সেনারা নিয়ন্ত্রণ করছে।
এই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে সামরিকভাবে পুতিনের যুদ্ধকে এক ভয়াবহ ব্যর্থতা বলা যেতে পারে। হয়তো তিনি এখনো বিশ্বাস করেন, তাঁর বাহিনী ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়ে কোনো না কোনো বড় সাফল্য অর্জন করবে। কিন্তু নিরপেক্ষ বিশ্লেষকেরা মনে করেন, এর সম্ভাবনা খুবই কম।
রাশিয়া হয়তো ইউক্রেনের তুলনায় যুদ্ধে বেশি সংখ্যায় সেনা পাঠাতে পারবে, বেশি বোমাও ফেলতে পারবে, কিন্তু যুদ্ধের ময়দানে থাকা সেনাদের মধ্যে লড়াই করার মানসিকতা জাগিয়ে তুলতে পারবে না। এখন পর্যন্ত দেখা গেছে, আত্মরক্ষা যত সহজ, আক্রমণ করা ঠিক ততটাই কঠিন। এর মানে দাঁড়ায়, শেষ পর্যন্ত পুতিন কোনো ধরনের বিজয়ের ছবি তুলে ধরতে চাইলে তাঁকে রুশ সেনাবাহিনীর চেয়ে ট্রাম্পের ওপর বেশি ভরসা করতে হবে।
তাত্ত্বিকভাবে ট্রাম্প চাইলে নিজেই নিজের অবস্থান বদলে পুতিনের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারেন এবং ইউক্রেনকে আরও সহায়তা দিতে পারেন। যদি তিনি এটা করেন, তাহলে হয়তো সেই যুদ্ধবিরতি আদায় করতে পারবেন, যার প্রতিশ্রুতি তিনি দিয়েছেন। তা না হলে তিনি ব্যর্থই হবেন, আর পুতিন ও তাঁর ঘনিষ্ঠরা তাঁর পেছনে বসে হেসেই যাবেন।এ কারণে ট্রাম্পকে প্রভাবিত করার জন্য পুতিন তাঁর হাতে থাকা সব কৌশল কাজে লাগাচ্ছেন। সবাই জানে, ট্রাম্প প্রশংসায় দুর্বল হয়ে পড়েন। আর সেই সুযোগ নিয়েই পুতিন বাড়াবাড়ি রকমের চাটুকারিতা করছেন। তিনি দাবি করেছেন, ২০২০ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ‘চুরি’ হয়েছিল এবং যদি ট্রাম্প তখন ক্ষমতায় থাকতেন, তাহলে এই যুদ্ধ কখনোই হতো না।
এমনকি পুতিন বলেছেন, ২০২৪ সালে ট্রাম্পের ওপর হামলার পর তিনি তাঁর ব্যক্তিগত প্রার্থনাকক্ষে গিয়ে ট্রাম্পের জন্য প্রার্থনা করেছেন। শুধু তা–ই নয়, তিনি ক্রেমলিনের দরবারি শিল্পীকে দিয়ে ট্রাম্পের একটি প্রতিকৃতি আঁকিয়ে তা উপহার হিসেবে পাঠিয়েছেন।
শুধু প্রশংসা নয়, পুতিন ট্রাম্প ও তাঁর প্রতিনিধি স্টিভ উইটকফকে ব্যবসার প্রলোভনও দেখাচ্ছেন। রিয়াদে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার প্রথম আলোচনায় পুতিনের দল একটি বিশাল বিনিয়োগ সম্ভাবনার তালিকা নিয়ে আসে, যেগুলো নাকি বাস্তবায়ন করা হবে যদি ট্রাম্প ইউক্রেনকে ছেড়ে দেন এবং রাশিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন।
উইটকফ জানিয়েছেন, পুতিনের সঙ্গে তাঁর সাম্প্রতিক বৈঠকের একটি বড় অংশ এই বিনিয়োগ পরিকল্পনা নিয়েই আলোচনা হয়েছে।
আরও পড়ুনট্রাম্পকে রুখতে চীন-ইউরোপ কি হাত মেলাবে১৯ এপ্রিল ২০২৫দুই ধরনের কৌশলই স্পষ্টভাবে কাজ করেছে। পুতিন জানেন, কীভাবে কাজ করতে হয় এবং তিনি জানেন, কার সঙ্গে কীভাবে ব্যবহার করতে হয়। এখন পর্যন্ত কোনো যুদ্ধবিরতি হয়নি এবং পুতিন যে এমন কিছুতে রাজি হবেন, তার কোনো লক্ষণও নেই। তিনি নির্দ্বিধায় ইউক্রেনের শহরগুলোতে বেসামরিক লক্ষ্যে হামলা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এই তথাকথিত আলোচনায় ক্রেমলিন মূলত দুটি দাবি তুলেছে। প্রথম দাবি হলো, ইউক্রেন যেন লুহানস্ক, দোনেৎস্ক, জাপোরিঝঝিয়া ও খেরসন—এই চারটি অঞ্চল রাশিয়ার হাতে তুলে দেয়। উইটকফ এ বিষয়ে ইতিমধ্যে একপ্রকার রাজিও হয়ে গেছেন: যুক্তরাষ্ট্র নাকি রাশিয়ার দখল করা এই চার অঞ্চলের ওপর রাশিয়ার মালিকানা মেনে নিতে প্রস্তুত।
কিন্তু রাশিয়া এখনো এ চার অঞ্চলের পুরোটা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি।
জাপোরিঝঝিয়া ও খেরসনের আঞ্চলিক রাজধানীগুলোতে (যেখানে যুদ্ধের আগে এক মিলিয়ন লোকের বসবাস ছিল) এখনো ইউক্রেনীয় পতাকা উড়ছে। কিয়েভের কোনো সরকার এসব শহর হেলায় ছেড়ে দিলে টিকে থাকতে পারবে না। হয়তো ইউক্রেন বর্তমান যুদ্ধরেখাকে কেন্দ্র করে একধরনের ‘জমে থাকা’ সংঘাত মেনে নিতে পারে, কিন্তু এর চেয়ে বেশি নয়।
রাশিয়ার দ্বিতীয় দাবি হলো, ইউক্রেনের ওপর নিরাপত্তাগত কর্তৃত্ব বজায় রাখা। অর্থাৎ ভবিষ্যতে ইউক্রেনে পশ্চিমা সামরিক উপস্থিতি বা সহায়তা যেন না থাকে। ট্রাম্প ইতিমধ্যেই ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ ন্যাটো সদস্য পদ প্রশ্নে হার মানিয়েছেন এবং তিনি সম্ভবত পুতিনকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সহায়তা পুরোপুরি বন্ধ করার প্রতিশ্রুতিও দিতে যাচ্ছেন।
কিন্তু এখানেই ইউরোপীয়দের ভূমিকা শুরু হয়। পুতিন ও ট্রাম্প—দুজনেই ইউরোপীয়দের আলোচনার টেবিলে আনতে চাননি। কিন্তু এটাই ভালো হয়েছে। ইউরোপীয়রা যদি ইউক্রেনকে আর্থিক ও সামরিক সহায়তা অব্যাহত রাখার ব্যাপারে দৃঢ় অবস্থানে থাকেন, তাহলে পুতিন ও ট্রাম্প যা-ই নিয়ে নিজেদের মধ্যে একমত হোন না কেন, তা বাস্তব মাটিতে কোনো প্রভাব ফেলবে না।
এ অবস্থায় ইউরোপের হাতে রয়েছে সবচেয়ে বড় তাস। যদি তারা রাজনৈতিক সদিচ্ছা দেখাতে পারে, তাহলে ইউক্রেনকে ‘মিউনিখ চুক্তি’র মতো লজ্জাজনক বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হওয়া থেকে রক্ষা করা সম্ভব। ইউরোপীয় নেতাদের স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া উচিত, যেভাবেই হোক তাঁরা ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা ও সার্বভৌমত্বের পক্ষে তাদের সহায়তা অব্যাহত রাখবেন।
তাত্ত্বিকভাবে ট্রাম্প চাইলে নিজেই নিজের অবস্থান বদলে পুতিনের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারেন এবং ইউক্রেনকে আরও সহায়তা দিতে পারেন। যদি তিনি এটা করেন, তাহলে হয়তো সেই যুদ্ধবিরতি আদায় করতে পারবেন, যার প্রতিশ্রুতি তিনি দিয়েছেন। তা না হলে তিনি ব্যর্থই হবেন, আর পুতিন ও তাঁর ঘনিষ্ঠরা তাঁর পেছনে বসে হেসেই যাবেন।
● কার্ল বিল্ডট সুইডেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী
স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট, অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ