Prothomalo:
2025-04-21@23:30:10 GMT

যেভাবে ইতিহাস হলো শোলাকিয়া

Published: 30th, March 2025 GMT

সেই ছোটবেলায় বাবার হাত ধরে ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া মাঠে ঈদের নামাজ আদায় করতে যেতেন আবদুল কুদ্দুস। তাঁর বয়স এখন ৭০ বছর ছুঁই ছুঁই। শুধু করোনাকালের দুই বছর ছাড়া তাঁর জীবনে শোলাকিয়ার কোনো জামাত বাদ যায়নি।

আবদুল কুদ্দুস কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের ঐতিহ্য তুলে ধরে প্রথম আলোকে জানান, এই মাঠের সঙ্গে তাঁর ঐতিহাসিক সম্পর্ক। তাঁর বাবা মৃত শোয়ায়েব আলীর সঙ্গে প্রথম এ মাঠে ঈদের নামাজ আদায় করতে গিয়েছিলেন। তাঁর বাবাও একইভাবে দাদা নজর আলীর সঙ্গে প্রথম এ মাঠে নামাজ পড়েছিলেন। মূলত এভাবেই মাঠটির সঙ্গে তাঁর নিবিড় সম্পর্ক তৈরি হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে আবদুল কুদ্দুসের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তিনি মাঠের এক প্রান্তে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। সেখানে পাওয়া গেল মিঠামইনের বাসিন্দা তাহের উদ্দিন মুন্সিকে। তাঁর বয়স ৮০ বছর। তিনিও ১০ বছর বয়স থেকে এই মাঠে ঈদের নামাজ আদায় করে আসছেন।

তাহের উদ্দিন মুন্সি স্মৃতিচারণা করে বলেন, একসময় এ মাঠে নামাজ পড়তেন জমিদারেরা। এরপর ধাপে ধাপে সব শ্রেণি–পেশার ধর্মপ্রাণ মুসল্লি আসতে শুরু করেন। এখন প্রতিবছর ঈদের দিন সকালে কয়েক লাখ মুসল্লির পদচারণে মুখর হয়ে ওঠে মাঠপ্রাঙ্গণ।

কিশোরগঞ্জের ইতিহাস নিয়ে লেখা বিভিন্ন বই এবং স্থানীয় কয়েকজন প্রবীণ ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ধর্ম প্রচারের জন্য এ দেশে আসা সৈয়দ আহাম্মদ (রহ.

) নামের এক বুজুর্গ প্রথম এ মাঠে ঈদের নামাজের ইমামতি করেন। তিনি ঈশা খাঁর বংশধর স্থানীয় হয়বতনগর দেওয়ান পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেওয়ানবাড়িতে থাকতেন। তখন থেকেই এ মাঠের প্রচলন ও প্রসার ঘটে।

১৮২৮ সালে শোলাকিয়ায় প্রথম ঈদের জামাত হয়। ঈশা খাঁর ষষ্ঠ বংশধর দেওয়ান হয়বত খান কিশোরগঞ্জে জমিদারি প্রতিষ্ঠার পরপরই এই ঈদগাহ প্রতিষ্ঠা করেন। এ মাঠের জন্য ১৯৫০ সালে দেওয়ান মান্নান দাদ খান সাড়ে তিন একর জমি ওয়াক্ফ করে দেন। পরবর্তী সময়ে জমির পরিধি আরও বৃদ্ধি পায়।

দেওয়ান মান্নান দাদ ছিলেন হয়বত খানের বংশধর। হয়বত খান ছিলেন বীর ঈশা খাঁর ষষ্ঠ অধস্তন পুরুষ। যে কারণে শুরু থেকে এ মাঠের সঙ্গে জমিদারির একটি ঐতিহ্য রয়েছে। হয়বতনগর সাহেববাড়ির বাসিন্দা সৈয়দ আলী আজহারের লেখা ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ বইয়ে ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ প্রতিষ্ঠার পেছনে হয়বতনগর জমিদারদের অকৃত্রিম অবদানের বিষয়টি উল্লেখ আছে।

স্থানীয় কয়েকজন প্রবীণ ব্যক্তি বলেন, ঈদের দিন জমিদারি ঐতিহ্যে ঘোড়ার গাড়িতে স্টেজ বানিয়ে তাঁর ওপর সিংহাসন বসিয়ে বাহিনী নিয়ে ঢাকঢোল পিটিয়ে শোলাকিয়া ঈদগাহে আসতেন জমিদারেরা। আসার পথে প্রজাদের উদ্দেশে বিভিন্ন ধরনের মুদ্রা ছিটাতেন। এ ছাড়া ইটনা হাওরের জমিদারসহ বিভিন্ন এলাকার জমিদারেরা নানা ধরনের নৌকায় করে এ ঈদগাহে নামাজ পড়তে আসতেন। জমিদারদের এসব তুলকালাম কাণ্ড আর স্বয়ং জমিদারদের সঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন বলে দূরদূরান্ত থেকে অসংখ্য লোকজন শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে নামাজ আদায় করতে আসতেন। ঈদের আনন্দের পাশাপাশি আগত মুসল্লিদের জন্য এটা ছিল বাড়তি আকর্ষণ। এভাবেই এ মাঠের ঐতিহ্য গড়ে ওঠে।

জনশ্রুতি আছে, মোগল আমলে এখানকার পরগনার রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল শ লাখ টাকা; অর্থাৎ এক কোটি টাকা। কালের বিবর্তনে শ লাখ থেকে বর্তমান শোলাকিয়া হয়েছে। অন্য আরেকটি বিবরণে রয়েছে, ১৮২৮ সালে শোলাকিয়া ঈদগাহে সোয়া লাখ মুসল্লি একসঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করেন। সেই থেকে ঈদগাহটি একসময় শোয়ালাকিয়া ঈদগাহ মাঠ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। লেখক মু. আ. লতিফের লেখা কিশোরগঞ্জের ইতিহাস-ঐতিহ্য বইয়েও এ দুটি বর্ণনা রয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, শোলাকিয়া মাঠের চারপাশের সীমানাপ্রাচীর ও মাঠের ভেতরের গাছের গোড়া রাঙানো হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য পর্যবেক্ষণ টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে। মাঠের চারপাশে বসেছে ক্যামেরা। আলোকসজ্জার জন্য বিদ্যুৎ–সংযোগও দেওয়া হয়েছে। মুসল্লিদের স্বাগত জানাতে স্থাপন করা হয়েছে কয়েকটি তোরণ।

কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফৌজিয়া খান প্রথম আলোকে বলেন, দূরের মুসল্লিদের আসা–যাওয়ার জন্য দুটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হবে।

জানা গেছে, বন্দুকের গুলির আওয়াজের মাধ্যমে এবার সকাল ১০টায় ১৯৮তম ঈদের জামাত শুরু হবে। এবার ঈদের জামাতের ইমামতি করবেন মুফতি আবুল খায়ের মোহাম্মদ ছাইফুল্লাহ।

অন্যদিকে মাঠে আগত মুসল্লিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চার স্তরের নিরাপত্তাবলয় তৈরি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক শ রগঞ জ র ঈদগ হ ম ঠ র জন য প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

গ্রিসের পর্যটন দ্বীপ সান্তোরিনির নিচে ঘুমিয়ে আছে ভয়ংকর আগ্নেয়গিরি

গ্রিসের জনপ্রিয় পর্যটন দ্বীপ সান্তোরিনি। যেখানে সাদা-নীল বাড়ি, সূর্যাস্ত আর নীল সমুদ্রের অসাধারণ প্রাকৃতিক দৃশ্যের টানে প্রতিবছর হাজার হাজার পর্যটক ভিড় করেন। কিন্তু অনেকের স্বপ্নের এই দ্বীপের নিচেই লুকিয়ে আছে এক ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি, যা আবারও ভয়াবহ বিস্ফোরণে ফেটে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা।

প্রায় ৩ হাজার ৬০০ বছর আগে আগ্নেয়গিরির বিশাল এক বিস্ফোরণে সান্তোরিনি দ্বীপের বর্তমান আকৃতি তৈরি হয়। সেই বিস্ফোরণে দ্বীপের মাঝখান দেবে গিয়ে একটি বিশাল গর্ত বা কালডেরা সৃষ্টি হয়। এর পর এই অঞ্চলটিতে বড় আকারের ভূমিকম্প আর দেখা যায়নি।

গত বছরের শুরুর দিক থেকে কয়েকবার ভূমিকম্পে দ্বীপটি কেঁপে ওঠায় নতুন করে সামনে এসেছে দ্বীপটির নিচে ঘুমিয়ে থাকা আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুৎপাতের সম্ভাবনা ও তার ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এ ধরনের ভূমিকম্প ভূগর্ভের ম্যাগমা চেম্বারে চাপ বাড়ার লক্ষণ হতে পারে।

ব্রিটেনের গবেষণা জাহাজ ‘আরআরএস ডিসকভারি’ থেকে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানীদের একটি দল সান্তোরিনির সমুদ্রতলের আগ্নেয়গিরি ও হাইড্রো-থার্মাল ভেন্ট নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন এখন। চলমান এ গবেষণার নেতৃত্ব দিচ্ছেন ব্রিটেনের ন্যাশনাল ওসিওগ্রাফি সেন্টারের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ইসাবেল ইয়ো। তিনি জানান, এই গবেষণার মূল উদ্দেশ্য হলো আগ্নেয়গিরির আচরণ বিশ্লেষণ করে কখন বড় বিস্ফোরণের আশঙ্কা তৈরি হতে পারে তা বুঝতে পারা। সান্তোরিনি দ্বীপের ৭ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে সাগরের নিচে থাকা আরেকটি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি কলোম্বো নিয়েও পর্যবেক্ষণ করছেন তারা।

চলমান এই গবেষণায় রোবটের মাধ্যমে সাগরের ৩০০ মিটার নিচ থেকে গরম পানি, গ্যাস ও আগ্নেয় পাথরের নমুনা সংগ্রহ করছেন তারা। এ ছাড়া ভূকম্পন এবং ভেতরে থাকা জ্বলন্ত লাভার গতিবিধি বোঝার জন্য ভূতাত্ত্বিক মানচিত্রও তৈরি করছেন গবেষকরা। এই গবেষণা শেষে পাওয়া তথ্য গ্রিস সরকারকে সরবরাহ করা হবে। গ্রিসের সিভিল প্রটেকশন এজেন্সি এই গবেষণার ফল বিশ্লেষণ করে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করছে। অধ্যাপক পারাস্কেভি নোমিকো– যিনি নিজে সান্তোরিনির বাসিন্দা এবং সরকারিভাবে জরুরি পরিকল্পনায় যুক্ত– বিবিসিকে বলেন, ‘এই গবেষণা আমাদের জানাবে, কোথায় কতটা ঝুঁকি এবং কোন এলাকায় আগ্নেয়গিরি জেগে উঠলে সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে হবে।’

সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের ফলে সান্তোরিনির ১১ হাজার বাসিন্দার প্রায় অর্ধেকই দ্বীপ ছেড়ে চলে গেছেন। পর্যটন খাতেও এর প্রভাব পড়েছে। অনেকেই তাদের পূর্বনির্ধারিত ভ্রমণ পরিকল্পনা বাতিল করেছেন। স্থানীয় ফটোগ্রাফার ইভা রেন্ডল বলেন, ‘আমার অনেক ক্লায়েন্ট তাদের শুটিং বাতিল করেছেন। আগে এপ্রিল থেকেই কাজ শুরু হতো; এবার মে পর্যন্ত কেউ আসেনি।’

তবে দ্বীপ ছেড়ে চলে যাওয়া অনেকেই জায়গাটির অতুলনীয় সৌন্দর্যের প্রেমে পড়ে আবার ফিরেও আসছেন। সান্তোরিনিতে বিয়ের ছবি তুলতে আসা এক নবদম্পতি বলেন, ‘আমরা ইচ্ছা করেই আগ্নেয়গিরির পাশে বিয়ে করতে চেয়েছি!’ এখন পর্যন্ত তাৎক্ষণিক বিস্ফোরণের আশঙ্কা না থাকলেও বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এটি ‘শুধু সময়ের ব্যাপার।’ বিবিসি।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ