দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর পবিত্র ঈদুল ফিতর সমাগত। এটি মুসলমানদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব, যার মাধ্যমে কেবল একটি ধর্মীয় অধিকার পূর্ণ হয় না, বরং এটি মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি ও ঐক্য গড়ার একটি উপায় হিসেবে কাজ করে। ঈদ উত্সবের মধ্যে সবার জন্য রয়েছে আনন্দের এক সমান অনুভূতি, ধনী-নির্ধননির্বিশেষে।

বিশ্বের অন্য দেশগুলোর মতো বাংলাদেশেও ঈদুল ফিতর উৎসাহ-উদ্দীপনা ও আনন্দের সঙ্গে উদ্‌যাপিত হয়। ঈদের সকালে মুসলমানরা একত্র হয়ে ঈদগাহে নামাজ আদায় করেন, যেখানে একে অপরকে ঈদের শুভেচ্ছা জানান। তারপর প্রতিটি ঘরে ঘরে ফিরনি-পায়েসের আয়োজন হয়, যা সমাজে ভ্রাতৃত্ববোধ এবং ঐক্যের বন্ধন আরও দৃঢ় করে।

ঈদের সময়ে শহর ছেড়ে বিপুলসংখ্যক মানুষ গ্রামে ছুটে যান তাঁদের প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে। আবার অনেকে নিজেদের পছন্দের স্থানগুলোতে ঘুরতে যান। এ সময়ে একত্রে অনেক মানুষ যাত্রা করায় সড়ক, নৌপথ ও ট্রেনে ব্যাপক ভিড় লক্ষ করা যায়। অনেকেই ইতিমধ্যে ঢাকা ছেড়ে গন্তব্যে রওনা হয়েছেন।

প্রতিবছর ঈদের ছুটির শুরুতে যাতায়াতের চাপ বেড়ে যায় এবং শেষ মুহূর্তে তা জনভোগান্তির কারণ হয়। তবে এবারের ঈদ অন্যান্য বছরের তুলনায় কিছুটা ভিন্ন। এবারের ঈদের আগে সঠিক সময়ে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে এবং বাস-লঞ্চের সেবা আগের তুলনায় অনেক শৃঙ্খলাপূর্ণ ছিল। এর ফলে ঈদযাত্রায় রেলস্টেশন বা বাস টার্মিনালে অস্বাভাবিক ভিড় এবং ব্যাপক জনভোগান্তি লক্ষ করা যায়নি। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার কারণে এটি সম্ভব হয়েছে, যা সরকারের জন্য একটি প্রশংসনীয় কৃতিত্ব। শেষ পর্যন্ত সবার যাত্রা যাতে নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ হয়, সে জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে আশা করি।

এ বছর আমরা ঈদ উদ্‌যাপন করছি এমন এক সময়ে, যখন গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন চলছে এবং সেখানে নারী-শিশুসহ হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। বিশ্বজনমত উপেক্ষা করে এখনো সেখানে হত্যাযজ্ঞ চলছে। গাজার মুসলমানদের জন্য এবার ঈদটি একটি দুঃখজনক বাস্তবতার মধ্যে উদ্‌যাপিত হবে। আমরা গাজার প্রতি গভীর সহমর্মিতা প্রকাশ করছি এবং বিশ্বের সব শান্তিপ্রিয় মানুষের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করছি।

অন্যদিকে গত শুক্রবার মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে ভূমিকম্পে বিপর্যয় নেমে এসেছে। সেখানে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন এবং বহু ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে। এসব শোকাবহ ঘটনার খবর ঈদের আনন্দের ওপর এক বিষাদ ছায়া ফেলেছে। আমরা এসব অঞ্চলের মানুষের প্রতি আমাদের গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।

প্রতিবছর ঈদকে কেন্দ্র করে ব্যবসা-বাণিজ্য ব্যাপক সম্প্রসারিত হয়। ধনী-গরিব সবাই সাধ্যমতো নতুন জামাকাপড় কেনেন। সে জন্য ঈদের আগে মার্কেট ও শপিং মলগুলোতে ব্যাপক জমজমাট দৃশ্য দেখা যায়। তবে দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, অন্যান্য দেশে যেখানে উৎসব বা ধর্মীয় পার্বণে পণ্যের দাম কমানো হয়, সেখানে আমাদের দেশে বিপরীত ঘটনা ঘটে। ঈদের সময়ে ব্যবসায়ীরা পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করে দেন।

ঈদুল ফিতর যে আনন্দের বার্তা নিয়ে এসেছে, তা যেন সমাজের সব স্তরের মানুষের জীবনে অর্থবহ হয়ে ওঠে। ঈদের আনন্দের সঙ্গে মানুষের জীবনে সবার জন্য তৌফিক অর্জিত হোক, এমনটাই আমাদের কামনা। ঈদ আমাদের সমাজে সামষ্টিক জীবনে সম্প্রীতি ও শুভবোধের চর্চা উজ্জীবিত করুক এবং মানুষের মধ্যে বৈষম্য দূর করুক, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

ঈদ সবার জীবনে অনাবিল আনন্দ নিয়ে আসুক এবং সবার জন্য ঈদের শুভেচ্ছা ও আনন্দের বার্তা বয়ে আনুক। সবাইকে ঈদ মোবারক।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আনন দ র আম দ র সব র জ ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

বান্দরবানে সাংগ্রাই উৎসবের সমাপ্তি

বান্দরবানের রাজার মাঠে ‘মৈতা রিলং পোয়ে’ বা মৈত্রী পানি বর্ষণ উৎসবের মধ্য দিয়ে মারমা জনগোষ্ঠীর প্রধান ও প্রাচীনতম উৎসব সাংগ্রাইয়ের আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয়েছে। 

গত ১২ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া এ উৎসব চলে টানা সাত দিন। উৎসবজুড়ে ছিল বর্ণাঢ্য আয়োজন, নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ঐতিহ্যবাহী ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবং সামাজিক সম্প্রীতির বহুমাত্রিক বার্তা। মারমা সম্প্রদায়ের এই ঐতিহ্যবাহী উৎসবটি শুধু আনন্দ ও উদযাপনের নয়, বরং এটি পারস্পরিক সৌহার্দ্য, ভ্রাতৃত্ব ও সংস্কৃতির মিলনের এক অনন্য নিদর্শন।

শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) মৈত্রী পানি বর্ষণ উৎসবের শেষ দিনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা। প্রধান অতিথি মৈত্রী পানি বর্ষণ উৎসবে পানি ছিটিয়ে উদ্বোধন করেন। 

এসময় বান্দরবান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যাপক থানজামা লুসাই, জেলা প্রশাসক শামীম আরা রিনি, পুলিশ সুপার শহিদুল্লাহ কাওছার ও অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। 

মারমা তরুণ-তরুণীরা বলেন, “মারমা জনগোষ্ঠীর প্রধান উৎসব সাংগ্রাইয়ের মাধ্যমে পুরাতন বছরের গ্লানি দূর করে নতুন বছরের আগমন উদযাপন করা হয়। উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ আয়োজিত রাজার মাঠে মৈতা রিলং পোয়ে বা মৈত্রী পানি বর্ষণ যেখানে পানি ছিটিয়ে শুভেচ্ছা ও সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে দেন সবাই। সাংগ্রাই উৎসব শুধু আনন্দের নয়, বরং সামাজিক বন্ধন, ধর্মীয় মূল্যবোধ এবং ঐতিহ্য রক্ষার প্রতীক। উৎসবের এই আয়োজনে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে পড়ে পুরো পার্বত্য অঞ্চলে।”

সাংগ্রাই উৎসব উদযাপন পরিষদের সদস্যরা বলেন, “সাংগ্রাই উৎসবের বিভিন্ন দিনে ছিল মারমা ঐতিহ্যবাহী নৃত্য-সঙ্গীত, বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, তরুণ-তরুণীদের পানি খেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। উৎসবের শেষ দিন ছিল সবচেয়ে রঙিন ও প্রাণবন্ত। রাজার মাঠে হাজারো মানুষের অংশগ্রহণে এক আনন্দঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এতে অংশগ্রহণ করেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ স্থানীয় ও বিদেশি পর্যটকরাও।”

ঢাকা/চাইমং/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আরাকান আর্মির বাংলাদেশের আকাশীমা লংঘ‌নের প্রতিবাদ
  • অনুপ্রবেশ করে আরাকান আর্মি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে: জামায়াত
  • ‘বিপ্লবীরা মরে না তারা মৃত্যুঞ্জয়ী’
  • মরতেই যদি হয় বীরের মতো মরব, গাজায় নিহত আলোকচিত্রীর পোস্ট
  • মরতেই যদি হয়, তবে বীরের মতো মরব: মৃত্যুর আগে গাজার আলোকচিত্রীর পোস্ট
  • অভিনয়শিল্পী সংঘের নির্বাচন, ভোট উৎসবে মাতলেন তারকারা
  • ‘মরতেই যদি হয়, তবে বীরের মতো মরব’
  • কান চলচ্চিত্র উৎসবে অ্যালিস
  • ‘পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে তৈরি বস্ত্রের প্রসার করতে হবে’
  • বান্দরবানে সাংগ্রাই উৎসবের সমাপ্তি