এবার ঈদুল ফিতরের ৯ দিনের লম্বা ছুটি পড়েছে। ঈদের ছুটিতে মানুষ শহর ছেড়ে যান পরিবার ও স্বজনদের সঙ্গে আনন্দ উদ্‌যাপন করতে। এবার লম্বা ছুটি থাকায় অনেকে বেরিয়ে পড়বেন বেড়াতেও। বিগত লম্বা ছুটিগুলোর অভিজ্ঞতা এমনটিই বলে। ফলে পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে বাড়তি ভিড় হবে বলে পর্যটন–সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে যথাযথ প্রস্তুতি নেওয়া দরকার।

দেশের ভ্রমণপ্রিয় মানুষের সবচেয়ে পছন্দের স্থান কক্সবাজার। হোটেল–মোটেলমালিকেরা জানাচ্ছেন, গত বছর ঈদুল ফিতরের টানা ছুটিতে ৯ লাখ ৭০ হাজার পর্যটক ভ্রমণ করেছিলেন কক্সবাজারে। এবারের ঈদের ছুটির দ্বিতীয় দিন থেকে হোটেল–মোটেলগুলো বুকিং হয়েছে। ঈদের ছুটি ৫ এপ্রিল পর্যন্ত হলেও ১২ এপ্রিল পর্যন্ত টানা কক্ষ বুকিং রয়েছে বেশির ভাগ হোটেলে। ইতিমধ্যে শহরের পাঁচ শতাধিক হোটেল, গেস্টহাউস, রিসোর্ট ও কটেজে ৫৫ শতাংশ কক্ষ অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে। অবশিষ্ট কক্ষগুলোও ৩১ মার্চের আগে বুকিং হয়ে যাবে।

পাঁচ শতাধিক হোটেলের দৈনিক ধারণক্ষমতা ১ লাখ ৮৭ হাজার। তবে এবারও গতবারের চেয়ে বেশি, অন্তত ১২ লাখ পর্যটক সমাগম হতে পারে বলে ধারণা করছেন হোটেল–মোটেলমালিকেরা। ফলে ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি পর্যটকের চাপ তৈরি হওয়ায় থাকা–খাওয়ার চরম দুর্ভোগ হতে পারে। আর এমন পরিস্থিতি কক্সবাজারের ক্ষেত্রে নতুন নয়। শুধু কক্সবাজার নয়; পার্বত্য চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে এবার পর্যটকের বিপুল চাপ দেখা দিতে পারে।

পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে ভিড় বেশি হলে প্রতারণার ঘটনাও বেশি ঘটে। ফলে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি হোটেল–মোটেল, রেস্তোরাঁ এবং যানবাহনে যাতে অতিরিক্ত টাকা আদায় না করা হয়, সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে প্রশাসনকে। আর অতিরিক্ত পর্যটকের চাপ এড়াতে প্রশাসনের পদক্ষেপও জরুরি। পর্যটনকেন্দ্রের ধারণক্ষমতা অতিক্রম করলে স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে প্রেস ব্রিফিং করতে পারে। অনেকে পরিস্থিতি না বুঝে পর্যটনকেন্দ্রে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়েন। এতে সময়, অর্থ ও আনন্দ—সবকিছুই মাটি হয়ে যায়। প্রশাসন থেকে সচেতনতার বার্তা পেলে ঘুরতে যাওয়ার আগে মানুষের জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া সুবিধা হবে।

তা ছাড়া ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত পর্যটকের কারণে পর্যটনকেন্দ্রের পরিবেশ, প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্যের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এ ব্যাপারেও প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোকে পদক্ষেপ নিতে হবে। সচেতন হতে হবে আমাদেরও। সবার ঈদের ছুটি উদ্‌যাপন ও ঘোরাঘুরি নিরাপদ হোক, সেটিই কাম্য।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ধ রণক ষমত ঈদ র ছ ট

এছাড়াও পড়ুন:

‘এই টাকা দিলে মান-সম্মান থাকে?’ বলা সেই ওসিকে বদলি

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার থানায় ‘ঘুষ’ নেওয়ার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর ওসি এনায়েত হোসেনকে ফরিদপুর জেলায় বদলি করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি এ কে এম আওলাদ হোসেন স্বাক্ষরিত এক আদেশে এ তথ্য জানানো হয়েছে। জনস্বার্থে এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে আদেশে।

বদলি আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (সি-সার্কেল) মেহেদী ইসলাম। এর আগে গত ১৮ এপ্রিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওসির টাকা নেওয়ার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। এতে দেখা যায়, জিডি বা অভিযোগের কাগজের সঙ্গে স্টেপলার করে রাখা কিছু টাকা হাতে নিয়ে ওসি এনায়েত হোসেন এক ব্যক্তিকে বলছেন, ‘এই টাকা দিলে মানসম্মান থাকে?’ এ সময় ওসির সামনে আরও দুই-তিনজনকে বসে থাকতে দেখা যায়।

জানা গেছে, উপজেলার খাগকান্দা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি বেলায়েত হোসেনের সঙ্গে ওসির কথোপকথনের ভিডিওটি কেউ ধারণ করেন। কোনো ঘটনা তদন্তে পৃথক দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ১৯ এপ্রিল দিনব্যাপী কমিটির সদস্যরা তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেন। এরপরই তাকে বদলির আদেশ দেওয়া হলো।

এর আগে গত বুধবার ওসি এনায়েত হোসেনের বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ মহাপরিদর্শকের কাছে ডাকযোগে অভিযোগ দেন যুবদলের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি সম্পাদক সালাউদ্দিন মোল্লা ও ভূক্তভোগী এক নারী। অভিযোগপত্রে সালাউদ্দিন বলেন, এসএসসি পরীক্ষা চলাকালে গত ১১ এপ্রিল শ্যামলদী গ্রামে অনুমোদনহীন বাউল গানের আসর টাকার বিনিময়ে চলার অনুমতি দেন।

এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে সরে যান ওসি এনায়েত হোসেন। এ ঘটনার ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনা মুখে পড়েন ওসি। এ ছাড়া অনিয়ম, দুর্নীতি ও সাধারণ মানুষকে হয়রানির অভিযোগ করেছেন কেন্দ্রীয় জিসাসে’র সহসাংগঠনিক রিয়াজুল ইসলাম খোকনের স্ত্রী আনোয়ারা আক্তার বেবী।

অভিযোগে আনোয়ারা উল্লেখ করেন, তার স্বামী মহিলা দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক পারভীন আক্তারের অনুসারী। দুপ্তারা বাজারে তার ছবি সংবলিত ব্যানার টানাতে গেলে প্রতিপক্ষ বাধা দেয়। এর প্রতিবাদ করলে গুলি করে মেরে ফেলার হুমকি দেন তারা। রাতে তোরণটি ভেঙে অস্ত্র নিয়ে তার বাড়িতে হামলা চালান। ফাঁকা গুলি ছুড়ে ঘণ্টাব্যাপী এলাকায় তাণ্ডব চালান হামলাকারীরা। 

এ ঘটনার পর আড়াইহাজার থানায় অভিযোগ দিতে গেলে না নিয়ে উল্টো টাকা দাবি করেন ওসি এনায়েত হোসেন। পরবর্তীতে থানার সহযোগিতা না পেয়ে এলাকা ছেড়ে স্বামী ও ছেলেকে নিয়ে পালিয়ে নিজেদের রক্ষা করেছেন বলে অভিযোগ করেন আনোয়ারা আক্তার।

সম্পর্কিত নিবন্ধ